0

ধারাবাহিক - প্রিয়াঙ্কা চ্যা্টার্জী

Posted in





পর্ব-৮ 

উজ্জয়িনীতে পৌঁছানো মাত্র লক্ষ্য করলেন সম্রাট, পুরবাসীগন ভীতসন্ত্রস্ত। অত্যাচারীর অত্যাচারে তারা বিদ্ধস্ত। উজ্জয়িনী রাজা সাদরে তাকে বরণ করে নিয়ে গেলেন। তার ভগিনী পদ্মগন্ধাকে বিবাহের জন্য এই আগমন। বিবাহ সম্পন্ন হল। সম্রাটের মুখে খেলে যায় ক্রুর হাসি। এই আগমনের উদ্দেশ্য তিনি জানেন। 

সহদেব বিশেষ কার্য সমাপ্ত করে ঐ আচার্যের সন্ধান করলেন। কিন্তু বিফল মনোরথে মগধে ফিরে জানতে পারেন, সম্রাট অশোক উজ্জয়িনীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। সহদেব মহাদেবীর বার্তা পেয়ে কালাতিক্ষেপ না করে তক্ষশীলার উদ্দেশ্যে রওনা দেবার মাসাধিককাল পরেই, এক প্রাতে তক্ষশীলা পৌঁছে যান। 

মহাদেবীকে সুরক্ষিত দেখে সহদেব নিশ্চিন্ত বোধ করলেও মহাদেবী নিকট সেই রাত্রির বর্ণনা শুনে তার অন্তরাত্মা শুকিয়ে যায়। মহাদেবীর কোলের দুই যমজ পুত্র ও কন্যাকে দেখে সহদেব আনন্দিত হলেন। এসময় এক পরিচিত কন্ঠস্বর কানে আসে। অবাক হয়ে দেখেন মারীচ। মারীচ বলে 

--- আমি তক্ষশীলাতে আছি। তুমি সৌভাগ্যবান। আচার্য উপগুপ্ত উপস্থিত এখানে সহদেব। 

মারীচের সাথে আচার্যের দর্শনের উদ্দেশ্যে গমন করে, মঠে প্রবেশ করতেই সহদেব দেখলেন শান্ত, সমাহিত এক দিব্যপুরুষ। এক জ্যোতির বলয় তাঁকে ঘিরে রয়েছে যেন। প্রণাম করে তিনি অনুরোধের সুরে বললেন, 

--প্রভু আপনি তো সকল জানেন। এই কি সেই অঙ্গুরীয়? প্রতিকারের উপায় কি? 

প্রভু উপগুপ্ত বললেন 

--এই সেই অঙ্গুরীয়। কিন্তু এখনো অঙ্গুরীয়র অধিকারিণী মার রূপী নরকবাসিনী এখনো প্রকৃত শক্তি পায়নি। চারি স্থানে বিশেষ পূজা ও নরবলী দিয়ে সেই আত্মাকে উৎসর্গ করলে তবেই সে নরকবাসিনী মার পাবে তার পূর্ণ শক্তি। আবার যাদের বলি দিতে হবে তাদেরকে রাজরক্তের অধিকারী হতে হবে। এই চার জনের মধ্যে একটি নারীকে বলি দিতে হবে। কুমারের আধার দুর্বল তাই রাজজ্যোতিষী সুবল বারবার বাঁধা দেবার চেষ্টা করেছিলেন যাতে কুমার বাইরে না যান। দারুকের অভিপ্রায় ছিল কুমারকে বলি দিয়ে এই পদ্ধতির সূচনা করা। সহদেব তুমি দারুকের মুণ্ডচ্ছেদ করলে নরকবাসিনী পেয়ে যায় তার প্রথম আত্মা। প্রথমধাপ অতিক্রান্ত। দারুক পূর্বেই নিজের আত্মাকে উৎসর্গ করেছিল। একটি আশার আলো বর্তমান, কুমারের আত্মা নিষ্কলুষ। প্রাগজ্যোতিষপুরে সুসীমকে হত্যা করে, দ্বিতীয় ধাপ অতিক্রম করেছেন সম্রাট। অর্ধেক শক্তি সে আহরণ করেছে। দারুক ও সুসীম দুজনের শরীরে রাজরক্ত ছিল। বিশেষ যোগে, অমাবস্যা তিথিতে, এই নরবলি দিলে তবে শয়তানের শক্তি বৃদ্ধি হবে। সম্ভবতঃ সেই তিথি আসতে চলেছে। উজ্জয়িনী অথবা কলিঙ্গের কিছু বিশেষ জায়গায় বলী দিতে হবে। 

সহদেব চমকে উঠে বললেন 

---প্রভু কি উপায়? মহারাজতো উজ্জয়িনীতে। আর একমাস পরেই অমাবস্যা, সাথে সূর্যগ্রহণ। তাহলে কি আবার কোনো হত্যা ? 

প্রভু স্মিত হেসে বললেন 

--কালকে রোধ করা দুঃসাধ্য , ভরসা রাখ পরমশক্তির উপরে। ঐ অঙ্গুরীয়কে বিনষ্ট করতে হবে। বিশেষ তিথিতে বলি দিতে না পারলে অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘসময়। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন, তা আমার নেই। আমি কাল রওনা দেব হিমালয়ের নির্জন প্রান্তে। এখন শুধুই অপেক্ষা। 

---সহদেব, মারীচ তোমাকে বলে দেবে , আবার কোথায় আমার দেখা পাবে। 

এই বলেই তিনি অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। যে ঝড় উঠেছে, তাতে সহদেব চিন্তিত, তিনি জানেন বলি সম্পন্ন হলেই শয়তানের পূর্ণ প্রকাশ ঘটবে। অন্তরের অন্তঃস্থল অবধি কেঁপে ওঠে সহদেবের। 




ক্রমশ

0 comments: