0

ধারাবাহিক - রঞ্জন রায়

Posted in

ধারাবাহিক 


আহিরণ নদী সব জানে 
রঞ্জন রায়

১ 

সাঁঝবেলায় গাছপালা ফলপাকুড় পাখপাখালির গপ্পোসপ্পো 

কত দিন আগের কথা? তা প্রায় দু’কুড়ি কি তারও আগের বছর। আহিরণ নদীর তখন ভরা যৌবন। ছলছল টলটল। ওর রকমসকম দেখে চিন্তিত মুখে মাথা নাড়ে প্রাজ্ঞ বট আর বুড়ো পাকুড়গাছ। বুঝলে, অত ছটফটানি ভাল নয়, একটু রয়ে সয়ে। যা বলেছ যৌবন হল ভগবানের দান, হেলাফেলার জিনিস নয়, একটু সামলে সুমলে, নইলে কিছু একটা হতে কতক্ষণ! বট ফের মাথা নাড়ে আর দু’চারটে বাদুড়ে ঠোকরান ফল মাটিতে ছিটকে পড়ে। 

বাবুলগাছ এসবে পাত্তা দেয় না; বরং মিচকি হেসে বলে হিংসে হচ্ছে? তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে পড়শি অশ্বত্থ। হাসিস কেন লা? 

হাসব না? আরে ভগমান যাকে রূপ-যৌবন দিয়েছে, তাকে রক্ষা করার শক্তি -বুদ্ধিও দিয়েছে। তোমরা নিজের চরকায় তেল দাও দিকি! আহিরণের চিন্তা করবে ওর বাপ হসদেও নদী। 

ব্যস, ফুটন্ত তেলে জলের ছিঁটে পড়ল। 

কিন্তু বাবুলের হয়ে গলা তুলল কোসম-পলাশ-শিমুলের দল। হক কথা। বাবলাগাছের কাঁটা আছে। আর আমাদের আছে ঠাকুরদেবের দয়া। গতবছরের কথা এর মধ্যেই ভুলে গেলে! সবার বাক্যি হরে গেল। বল না কোসম, নিজের মুখে বল! 

কোসম গাছ হাসে। ও বেড়ে উঠেছে ঠিক যেখানটায় আহিরণের কোমর নাচের ছন্দে বাঁক নিয়েছে। ও ফিসফিসিয়ে বলে যে বেড়ে ওঠা বিধির বিধান, এতে আহিরণের কোন হাত নেই, কিন্তু গৌরব আছে। বুড়োগুলো খালি ভয় দেখায়, আসলে হিংসে করে। সবাইকে ওদের মত জবুথবু হয়ে বাঁচতে হবে নাকি! হ্যাঁ, বিপদ-আপদ আছে, তাতে কি? নিজেকে রক্ষা করতে জানতে হয়। কোসম গাছ জানে। 

হ্যাঁ, সে এক কাণ্ড হয়েছিল বটে। খেল দেখিয়েছিল কোসম গাছ। কয়েকবছর আগে এক ভরা বরষার দিন। 

ভিন গাঁ থেকে এসেছিল তিনজন কাঠুরে। তারা এদিক ওদিক দেখে সামনের অশত্থ গাছের তলায় বসে বিড়ি খেল। গামছা দিয়ে গায়ের ঘাম মুছল। তারপর বেছে নিল কোসম গাছটিকে। ওরা তিনবার প্রদক্ষিণ করে বয়স্ক লোকটিকে বলল-- লে, বুড়উ, তঁয় শ্রীগণেশ কর। 

বুড়ো পিচ করে থুতু ফেলল আর কুড়ুল তুলে মনে মনে মনে কোন মন্তর আউড়ে ঘা বসাল কোসমের গায়ে। তারপর ওর ভুরূ কুঁচকে গেল। সামান্য ছিলকা ছিটকে উঠেছে। কিন্তু দাগটা তেমন গভীর হয় নি। ও গম্ভীর হল। এবার কুড়ুল হাঁকড়াল বেশ জোরে, হাঁ: করে শ্বাসের শব্দ তুলে। কোথায় কী! 

বুড়োর হাত থেকে ছিটকে পড়েছে কুড়ুল, আর বুড়ো এক পায়ে লেংচে বেড়াচ্ছে। ওর পায়ে হুল ফুটিয়েছে এক কাঁকড়াবিছে। কোসমগাছের গোড়ায় কোন গর্তে ওর বাসা কে জানে! 

দলটা চলে গেল। প্রবীণ সঙ্গী বাকি দুজনের কাঁধে লেংচাতে লেংচাতে যাচ্ছে দেখে কোসম গাছ ফিকফিকিয়ে হাসল। 

কাঁকড়াবিছে গাছকে বলল--কেইসন সঙ্গী? বনে বনে? 

গাছ বলল--বনে বনে! 

কেমন হলো সাথী? ঠিক করলাম তো? 

ঠিক ঠিক। 

তারপর কার্তিক মাসে হল আরেক ফ্যাসাদ।

[চলবে]

0 comments: