0

গল্প - শুক্লা মালাকার

Posted in

গল্প


খেলা
শুক্লা মালাকার 


পরি দৌড়ে ঘরে ঢুকে পড়ল। কাল রাতে মা যখন তার ধোয়া স্কুল ড্রেস বের করছিল তখনই বুদ্ধিটা খুলেছিল। যেখানেই লুকোয় বরখা ঠিক পেয়ে যায়। রোজ রোজ হেরে যেতে কাহাতক ভালো লাগে! আলমারি খুলে মায়ের ঝোলানো শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে পড়ল। হু হু!বাবা! আজ আর কিছুতেই খুঁজে পাবে না।

একটু পরেই ঘরের দরজায় আওয়াজ হল। তবে কি বরখা টের পেয়ে গেল! খুব চেপে চেপে নিশ্বাস নিচ্ছে পরি। মোটেই আওয়াজ করা চলবে না। ঘরের ভিতর হুটোপুটির আওয়াজ হচ্ছে কেন? ফিসফিস করে কারা কথা বলছে? চাপা খিলখিলে হাসির আওয়াজও হলো! ভয় করছে পরির। মা তো অফিসে। এখন কি করবে সে? দরদর করে ঘামছে। বাইরে হুটোপুটির আওয়াজ বাড়ল। সঙ্গে কান্না কান্না মতো গোঙাচ্ছে কেউ। না! না! অন্য রকম আওয়াজ। আরে! ছেলের গলায় ফিসফিস করছে কে? বাবা তো কবেই তারা হয়ে গেছে। তাহলে! মা যে কখন আসবে! ভয়ে, গরমে অস্থির হয়ে যাচ্ছে পরি।

বাইরের আওয়াজ বন্ধ হয়েছে। মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করল পরি। আরো খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। দূরে কোথাও গান হচ্ছে।আস্তে করে পাল্লা খুলে দেখার চেষ্টা করল। বুকের মধ্যে ধুমধুম হাতুড়ির বাড়ি। মুখ বের করে দেখল কেউ নেই। কাঁপতে কাঁপতে দরজার দিকে যেতে গিয়েই ধাক্কাটা খেল। রনিকাকু! চার পাঁচটা বাড়ি পরে থাকে। পিছন দিকে পাঁচিলের ভাঙা জায়গাটার কাছে একদিন পিসির সঙ্গে অন্ধকারে কথা বলছিল। যাহ! মাকে বলতে একদম ভুলে গেছে। আর একদিন পিসি জলের ট্যাঙ্কের ওপর বসে কাঁদছিল। রনিকাকু জড়িয়ে ধরে বলছিল – ওষুধটা খেয়ে নাও,সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাত নটার সময় পুলিশ এসে পড়ল। সবকিছু দেখে বুঝে রিপোর্ট লিখে নিয়ে গেল। বরখা কিছুই বলতে পারল না। পরিকে অনেকক্ষণ খুঁজেও পায় নি সে। তাই বাড়ি ফিরে গেছিল। মা ঠাম্মা আর পিসির তিনটে মন দপদপ করছে আতঙ্কে, আশঙ্কায়। পরি ওদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। মায়ের গর্ভের মতো চারিদিকে জল, সে সাঁতার কাটছে। চারপাশে চিত্রবিচিত্র শ্যাওলাদের ঘোরাঘুরি। অপরিণত জলপোকাদের আদর। একসময় চাঁদ ঢলে পড়ে ট্যাঙ্কের ভাঙা মুখটার কাছে। পরি তখন আবার ভ্রূণঘুমে যাওয়া প্রাকটিস করছে।

0 comments: