0

প্রাচীন কথা - অনিন্দিতা মণ্ডল

Posted in



প্রাচীন কথা


ধ্রুব জাতক 
অনিন্দিতা মণ্ডল


পর্ব ৩

শ্রাবস্তীর জেতবন বিহার এমন সুবিশাল ও এমন সুন্দর হলো যে, সমস্ত জনপদগুলিতে তার প্রশ্বস্তি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ল। এবং শ্রেষ্ঠী সুদত্ত ও জেতকুমারের মিলিত উদ্যোগ ও শ্রদ্ধায় এই বিহার যেন সকলের অতি প্রিয় হয়ে উঠল। যথাকালে তথাগত তাঁর অনুগত শ্রমন ও ভিক্ষুদের নিয়ে পদার্পণ করলেন।

সেদিন সকাল থেকেই চারিদিকে সাজ সাজ রব। একটি শ্বেত হস্তীকে রাজকীয় সজ্জায় সজ্জিত করে বিহারের মূল প্রবেশ দ্বার দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হস্তীটি শুঁড়ে করে ক্রমাগত সুগন্ধপূর্ণ জল সিঞ্চন করে চলেছে। তার পাশে পাশে চারটি সুন্দরী রমণী জলপূর্ণ কলস লয়ে হাতিটির পাশে পাশে চলেছে। হাতি কখনও এ কলস কখনও ও কলস থেকে জল নিয়ে শুঁড় দিয়ে যেন বৃষ্টিপাত করছে। দুই পাশে সমবেত মানুষ সেই সুগন্ধি জলের পরশ পেয়ে যেন পবিত্রতা অনুভব করছে। হাতির পেছনে যুক্তকর সম্মুখে নুইয়ে আসছেন সুদত্ত। তাঁর পিছনে আসছেন তথাগত ও আরও ভিক্ষুগণ। তাঁদের ওপরে পুষ্পবৃষ্টি করছে জনতা। ধীর সুস্থির পদক্ষেপে প্রবেশ করছেন তথাগত। সম্মুখে শ্রদ্ধাবনত সুদত্ত। তথাগত অনুভব করছেন। এক মহৎ প্রাণ। দুঃখীর দুঃখে যার প্রাণ কাঁদে। দুই হাতে অক্লেশে উপার্জিত সম্পদ দান করেন। এর আর নির্বাণের জন্য সাধনার কি প্রয়োজন? নিবৃত্তি না হলে কি এমন করে ত্যাগ সম্ভব? তথাগত প্রবেশ করলেন মুল গন্ধকুটীতে। চারিদিকে চেয়ে দেখলেন এক অদ্ভুত নির্জনতা। সংখ্যায় প্রচুর ভিক্ষুকে স্থান দেওয়া সত্ত্বেও নির্জনতা বজায় থাকবে। ধ্যান ধারণার উপযোগী স্থান বটে। তিনি কিছুক্ষণ একা থাকবেন এবার। উপস্থিত সকলেই তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন। শ্রান্তি অপনোদন প্রয়োজন। এমন সময়ে অনাথপিণ্ডদ এলেন। করজোড়ে নিবেদন করলেন, তাঁর কিছু বন্ধু তথাগতর শ্রীচরণ দর্শনপ্রত্যাশী।

অনাথপিণ্ডদের এই সব বন্ধুরা বহুকাল ধরে অজস্র তীর্থিকের সঙ্গ করেন। আজও যেন একটা নতুন কিছুর আমোদ পেতে এখানে এসেছেন। পাঁচশ বন্ধুর দল এলেন বুদ্ধের সম্মুখে। বুদ্ধ স্থির চোখে দেখলেন এঁদের। উপদেশ বিতরণ বৃথা। এঁরা সদাচঞ্চল। আবারও কোনও অন্য সাধুর কাছে যাবেন। ধর্ম এঁদের কাছে মহত্তর জীবন সন্ধান নয়। ধর্ম এঁদের কাছে অবসরের আমোদ। তবু তাঁর সেই মধুর কণ্ঠস্বর শোনা গেলো। তিনি এক এক করে বলে চললেন, তাঁর প্রচারিত ধর্মের মহত্ত্ব কি। কেন এখন জনপদে প্রচারিত সমস্ত ধর্মের মধ্যে তাঁর ধর্ম শ্রেষ্ঠ। বুদ্ধত্বের ওপরে আর কিছু নেই। থাকতে পারেনা। পরিনির্বাণ হলো ধর্মের শ্রেষ্ঠ পরিণতি।

অনাথপিণ্ডদ শুনছিলেন। আপ্লুত হচ্ছিলেন। এমন ভাগ্য যে তাঁর হতে পারে, এ কল্পনাতীত। তিনি লক্ষ্য করলেননা, তাঁর সখাদের সকলেই ঠিক এতটা শ্রদ্ধাশীল নন। তথাগত শুধু অনুভব করলেন।

এই জেতবন বিহারে তিনি অনুভব করলেন পরম শান্তি। আর তাই তাঁর জীবনের বেশির ভাগ বর্ষাবাস ঘটেছিল এই বিহারে। 

সূত্রঃ অপণ্ণক জাতক

0 comments: