2

Someপ্রতীক - নাসের হোসেন

Posted in
 


একবার অরুণদা কবিতাপাক্ষিক - এর জন্য দুটো বই রেডি করেছিলেন। প্রভাতদা ও আমি গিয়েছিলাম। কবিতার বইটির নাম " ওড়াউড়িতে নয়" এবং গদ্যের বইটি " কবির কথা,কবিদের কথা"। বইদুটির নাম অন্যরকম দিয়েছিলেন অরুণদা। প্রভাতদা সেটা বদলে দিয়ে এই দুটি নাম দিলেন এবং অরুণদারও নামদুটি পছন্দ হয়েছিল।

ঠিক হল বইমেলায় (পার্কস্ট্রিটের মুখে) কোনো একদিন অরুণদা তাঁর বইদুটিতে সই করবেন স্টলে একঘণ্টা বসে। অটোগ্রাফ যারা নিতে চায়, তারা নেবে।একদিন ঘোষণাও করে দেওয়া হল,আগামীকাল অরুণদা কবিতাপাক্ষিক স্টলে বসবেন,তাঁর কাব্যগ্রন্থ ও গদ্যগ্রন্থ সই করবেন।

নির্ধারিত দিনে আমি যথাসময়ে পৌঁছে গেলাম অরুণদার অ্যাপার্টমেন্টে। ওনার মেয়ে ও জামাই বলে দিলেন,নাসের আপনি বলেই একা ছাড়ছি। তবু খুব চিন্তায় থাকবো।স্টলের বসা শেষ হলেই যথাসময়ে বাড়িতে নিয়ে আসবেন। অরুণদা তৈরি হয়ে নিয়ে স্বভাবসিদ্ধ হাসতে হাসতে বললেন, আরে নাসের আছে,ও খুব সিনসিয়ার এবং পারটিকুলার এসব ব্যাপারে। 

ট্যাক্সি থেকে নেমে বইমেলায় কিছুটা পথ হাঁটতে হবে,সামনেই কবিতাপাক্ষিক স্টল। অরুণদা বললেন, বইমেলায় হাঁটতে খুব ভালো লাগছে। বলতে না বলতে সামনে এসে গেল কয়েকজন ফুটফুটে সুন্দরী 

ফরাসি মেয়ে, ইউনিভার্সিটির ছাত্রী এরা, গবেষিকা। অরুণদা ওদের সঙ্গে হাসতে হাসতে ফরাসিভাষায় কথা জুড়ে দিলেন। আমার সঙ্গে ওদের পরিচয়ও করিয়ে দিলেন, বললেন,নাসের হোসেন বাংলার কবি,আমার তরুণ কবিবন্ধু। যাইহোক মেয়েগুলির সঙ্গে তাঁর কথা আর থামে না। হাতঘড়ি দেখছি, সই করার সময়টা প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে।বাধ্য হয়ে বললাম,অরুণদা স্টলে সকলে অপেক্ষা করছে।যাইহোক, কোনোমতে মেয়েগুলিকে বিদায় জানিয়ে শেষপর্যন্ত কবিতাপাক্ষিক স্টলে পৌঁছে গেলেন। সময়ের নড়চড় হয়নি। তবু প্রভাতদা ভেবেছিলেন,আমরা আর- একটু আগে এসে পৌঁছোবো। প্রভাতদা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, একটু দেরি হয়ে গেল যে! অরুণদা হাসতে হাসতে বললেন, স্টলের কাছেই ফরাসি সুন্দরীদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। নাসের এমনি বেরসিক, বারবার তাগাদা দিচ্ছে। ফরাসি সুন্দরীদের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে না, বলো তো?

যাইহোক, বইদুটির ক্রেতারা এবং সইশিকারিরা অরুণদার সই নিতে থাকলো। অরুণদার মেজাজ সবসময় খোশমেজাজ। যেন কোনো চাপই লাগছে না তাঁর।

ঠিক একঘণ্টা পর অরুণদা উঠে পড়লেন। যথাসময়ে মেয়ে ও জামাইয়ের কাছে পৌঁছতে হবে। অরুণদা ও আমি বইমেলার বাইরে এসে ট্যাক্সির খোঁজ করছি, কিন্তু পাচ্ছি না। এমনসময় স্বস্তিক অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার মিনিবাস এসে সামনে দাঁড়ালো। অরুণদা 'এসো নাসের' বলেই ঝপ করে উঠে পড়লেন মিনিবাসে। লোক বেশি ছিল না,কিন্তু সিটগুলো ভর্তি ছিল। তিনি দুহাত উপরে তুলে রড ধরে দাঁড়ালেন।আমি একটু জোরেই বলে উঠলাম, বিখ্যাত কবি অরুণ মিত্র- কে বসবার একটা সিট দিন। সঙ্গেসঙ্গে ঠিক সামনের ভদ্রলোক উঠে দাঁড়লেন। অরুণদা বসলেন।পরে আমিও বসার জায়গা পেলাম।স্বস্তিকে যথাসময়েই পৌঁছে গেলাম আমরা।উপরে ফ্ল্যাটে পৌঁছতেই উমাদি ও আশিসদা প্রায় সমস্বরেই বলে উঠলেন, বাহ্ যথাসময়ের আগেই তো এসে গেছেন! অরুণদা আমাকে আর- একটু বসে যেতে বলছিলেন। কিন্তু আমার অন্য জায়গায় যাওয়ার ছিল। অরুণদা বললেন, তোমার কাল কি অন্য কোনো কাজ আছে? না থাকলে কাল অবশ্যই এসো আমার কাছে। তাঁর মুখের হাসি তখনো অমলিন।

2 comments:

  1. Kobi Arun Mitra ke niye lelhata pathokder kache tothyopurno .

    ReplyDelete
  2. সুন্দর এক স্মৃতিচারণ পড়লাম।

    ReplyDelete