গল্প - সনাতন সিংহ
Posted in গল্প(১)
শীতের রাত। আবছা আবছা অন্ধকারের সঙ্গে কুয়াশাও গাছের পাতায় পাতায়, মেখে মেখে রয়েছে।পাড়ের কলাগাছের পাতা থেকে শিশির টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে গোঁসাইয়ের পুকুরে। তবে শীতটা তেমন জমিয়ে না পড়লেও ভোরের দিকে বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগে।
নতুন জায়গায় মোহনের ঘুমটা থেকে থেকে ভেঙে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পড়েছিল তারা।কিন্তু চোখের পাতা কিছুতেই এক হচ্ছিল না।ছ্যাঁক-ছেঁকে ঘুম। ভাঙছে তো ভাঙছে। ভোরের দিকে চোখের পাতা কখন একটু জুড়ে এসেছিল, টের পায়নি। বাঁ-পাশ ফিরে শুল। কিছু একটা জড়িয়ে ধরতে চাইছিল হাতটা। কিন্তু ধপ করে সেটা বিছানা ছুঁল।
…কি হলো? ফাঁকা কেন?
ধড়ফড় করে উঠে পড়ল মোহন।
…একি! অহনা কোথায়? একটু আগেই তো ছিল !
ঘরটা বেশ অন্ধকার। জানালাও বন্ধ।তার উপর একেবারে নতুন জায়গা। অজানা-অচেনা ঘর-দোর।হাতের কাছে মোবাইলটাও নেই। জানালাটা খোলা থাকলে হয়তো একটু আলো আসত। কিন্তু দরজাটা খোলা আছে বলে মনে হচ্ছে ! তার ফাঁক দিয়ে মোহনের নজর বাইরের তরল অন্ধকারে হারিয়ে গেল।
না, ভালো করে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। মোবাইলটা নেবে কি করে? শোবার আগে সেটা টেবিলের উপর রেখেই চার্জে দিয়েছিল। টেবিলটাও দূরে।
…তবে কি একবার কাউকে ডেকে দেখব? দূর...হয়তো বাথরুমে গেছে! থাক গে, দেখি না একটু। কিন্তু কত রাত হলো কে জানে?
হঠাৎ কি মনে হলো, দেওয়ালের দিকে সরে গিয়ে হাত বুলাতে লাগল। হাতে বালিশ আর দেওয়াল ছাড়া কিছুই ঠেকল না।
বুকটা ঢিপঢিপ করে উঠল। ঘন ঘন শ্বাস পড়ছে। শীতের আঁচটা সে এখন আর টের পাচ্ছে না। গা যেন ঘেমে উঠছে। পায়ের দিকে সরে গেল। আবার হাতড়াতে লাগল
…অনু,অনু-মা, কো-কোথায় তুই? কোথায় রে?
কোনো সাড়া পেল না।বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে গেল।
হাতড়ে হাতড়ে সারা বিছানা একাকার করে ফেলল। হতাশ হয়ে শূন্য বিছানায় হাঁটু গেড়ে বসে রইল।একটা অজানা আতঙ্ক আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরল তাকে।
...অহনাই বা কোথায়? ঘরে সে ছাড়া আর কি কেউ নেই? আলো জ্বলছে না কেন?
নানান প্রশ্ন কিলবিল করছে তার মাথায়। যদি সে বাথরুমে যায় তাহলে মেয়েটাই বা কোথায়? নাকি সে মেয়েকে নিয়ে বাথরুমে...? তবে বাথরুমটা অন্ধকার কেন? নাকি অহনা তাকে নিয়ে কোথাও বেরিয়ে...
কি যা-তা ভাবছে সে? রাতও এখনো বাকি। যা-যা-যাবেই বা কোথায়?
আচ্ছা, এবাড়ির কেউ তাদেরকে তুলে...
কিছুতেই কিছু মিলছে না যে! কোনো উত্তর সে খুঁজে পাচ্ছে না। তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে সব।
গোঁসাই অহনার পাতানো বাবা। অহনা তাঁর মেয়ের মতো। আজই সকালে তারা এখানে এসেছে।বিকেলে অহনাকে দিয়ে উঠোনের এক কোণে কিসব পুতে দিয়েছেন। একটা তাগাও কালো সুতোয় আটকে বেঁধে দিয়েছেন অহনার বাঁ-হাতে। পই পই করে বলেছেন। ...তিনদিন এটা খুলবি না।
তাহলে সেইই বা অহনার ক্ষতি করবে কেন?
কিন্তু সংশয় দূর হচ্ছে না যে! নামে গোঁসাই,কিন্তু তান্ত্রিক মানুষ। কত কিছু জানেন। প্রতি অমাবস্যার রাতে নাকি শ্মশানে যান!
যদি তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে...?
কিন্তু এ-কথায় তার মন সায় দিল না। তুলে নিয়ে গেল, আর সে টের পেল না? এমনকি তারা কোনো সাড়া-শব্দও করল না ?
টেবিলের কাছে যাওয়ার মতো সামর্থটুকুও যেন সে হারিয়ে ফেলেছে। পা যেন অবশ হয়ে আসছে।
তবে কাউকে কি ডাকবে? আর সত্যিই যদি এবাড়ির কেউ তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তাদের ডাকাটা কি ঠিক হবে?
না, না, তা করার আগে ভালো করে দেখে নেওয়া দরকার।
জোর করে সে বিছানা থেকে নামল।
…ঘরের মধ্যে কেউ আবার কোথাও ওঁৎপেতে নেই তো?
শরীর থরথর করছে তার।
তবুও সে আন্দাজে আন্দাজে টেবিলের কাছে যাচ্ছে।কি একটা পায়ে লেগে দূরে সরে গেল। নিজের নিঃশ্বাস সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। টেবিলের কাছে গিয়ে মোবাইল খুুঁজতে গেল। কি একটা মেঝে পড়ে ঝনঝন করে উঠল। পুরো ঘর সেই আওয়াজে মুখরিত হচ্ছে। হাতের টোকায় একটা জলের বোতল বুঝি,ধপ করে পড়ল তার পায়ের উপর। ভারি বোতলের আঘাতে বুড়ো আঙ্গুলটা টনটন করছে। সুইচ বোর্ডটাই বা কোথায়? ঘরে-বাইরে কোথাও একফোঁটা আলোও জ্বলছে না। ভয়ে আড়ষ্ঠ হয়ে উঠছে তার শরীর। আবার হাতড়াতে শুরু করল।
মোবাইলটা হাতে লাগতেই চার্জার থেকে খুলে নিল সেটা। মোবাইলের আলোটা জ্বেলে ধরল।
ফাঁকা ঘর।সে ছাড়া আর কেউ নেই।
কোথাও কোনো কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়েও নেই।বিছানার বালিশ-চাদর প্রায় ঠিকই আছে,যেটুকু অগোছালো, সে তারই জন্য। ওদিকে দরজাটা খোলা। পর্দাটা ঝুলে রয়েছে। হয়তো বা একটু আগেই পর্দার ফাঁকফোকর থেকে তার নজর বাইরে হারিয়ে যাচ্ছিল।
…কিন্তু তারা কোথায়? কোথাও আলো জ্বলছে না কেন? না ঘরে, না বাথরুমে, না বসার ঘরে !
একটা আতঙ্কের স্রোত বইতে লাগল তার শিরায় শিরায়।
রাতের নিস্তব্ধতা আরো প্রকট হয়ে উঠল। ঘড়ির খচ খচ আওয়াজ নিস্তব্ধতাকে আরো আরো বাড়িয়ে দিল।
মোহন ঘরেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সারা গা দিয়ে এবার দরদরিয়ে ঘাম ঝরছে। শূন্য বিছানার দিকে তাকিয়ে বউ ও মেয়ের জন্য প্রাণটা হু হু করে উঠল। ভয়ে আতঙ্কে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল
…অহনা, অনুনুনুনু...
ধপাস করে মেঝেই বসে পড়ল।
মোবাইলটাও পড়ে রইল মেঝে।
অন্ধকার ঘরে মোবাইলের আলোটা ছাদেই আটকা পড়ল।
মোহনের কান্নার আওয়াজ, রাতের শরীরে মিশে গেল
...অহনা, অনুরেএএএএ...
অহনাকে নিয়ে সারাদিন গোঁসাই ও তাঁর স্ত্রীর কম ধকল যায়নি। বিকেলে তাকে নিয়ে জপ-তপও করেছেন। কি সব ভেবে অনেক রাত পর্যন্ত জেগেও ছিলেন। কিন্তু শেষ রাতের দিকে তাঁদের শরীর যেন আর অনুমতি দিল না। বেঘোরেই ঘুমাচ্ছিলেন। কিন্তু মোহনের কান্নায় তাঁদের ঘুম গেল ভেঙে।
বুড়ি ধড়ফড় করে উঠলেন। জোরে জোরে শ্বাস পড়ছে তাঁর। ঘরে-বাইরে আলোগুলো জ্বেলে দিলেন।গোঁসাইও হুড়মুড় করে নামলেন।
দু'জনেই পড়িমরি করে এলেন সেই ঘরে। মোবাইলের আলো ঘরের ছাদে আটকে আবছা হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। মোহন মেঝের উপর বসে বসে কাঁদছে
…অহনা, অনুরেএএএএ...
গোঁসাই আলোটা জ্বেলে দিলেন। বিচলিত হয়ে পড়লেন দুজনেই।কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না।
মোহন আগের মতোই বসে কাঁদছে তো কাঁদছে। তার কপালের ঘাম আর চোখের জল এক হয়ে গিয়ে, টপটপ করে ঝরে পড়ছে কোলের উপর।
বুড়ির মমতামাখা হাতটা মোহনের পিঠ ছুঁল।
…কি হলো বাবা? এমন করে কাঁদছ কেন?... অহনা কোথায়?মেয়েটাকেও দেখছি না যে?
কাঁদতে কাঁদতে মোহন ঘনঘন মাথা নাড়ল।
…সে কি! ...অ-অন্য কোথাও নেই তো?ঐইইই...টয়লেটে?
মোহন বাথরুমের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিল।
…ওঠা তো বন্ধ ! তাহলে...
মোহনের কোনো কথার অপেক্ষা না করেই গোঁসাই আশঙ্কার সুরে বললেন
…যা ভেবেছিলুম তাইইই হলো।
…মানে, কি বলছ তুমি?
…তাড়াতাড়ি বাইরে চলো।
…বলছি কি, ছাদটা একবার...
…তার দরকার নেই। দেখছ না, বসার ঘরের দরজাটা খোলা। খিলটাও পাশেই পড়ে আছে। চলো।
তিনজনেই বেরিয়ে পড়লেন সেই আবছা অন্ধকারে।কুয়াশার পাতলা চাদর ভেদ করে উঠোন টপকে তাঁরা পা ফেলল রাস্তায়।
বাড়ির পিছনটা ফাঁকা। খোলা মাঠ।
বাঁ-পাশে টালির ঘর। ডানদিকে পাঁচিল। তার ওপারে পুকুর আর কলার পাড়। পুকুরে টুপ টুপ করে শিশির ঝরছে।
রাস্তার ওপারে দুটো বাড়ি আর বাঁশঝাড়। শীতের স্পর্শে তারাও ঘুমে নিমগ্ন হয়ে আছে।
হিমেল হাওয়া বইছে ফুরফুর করে।
মোহনের এখন শীত শীত করছে। কোন দিকে যাবে তারা? কোথায় খুঁজবে তাদেরকে? নতুন জায়গায় সে বা কোথায় যাবে ?
তিনটে কালো কালো শরীর এখন সেই বাঁশঝাড়ের তলায় মিলিয়ে গেল।কারো মুখে কথা নেই।বাঁশের পাতা থেকে শিশির ঝরে পড়ছে তাদের মাথায় গায়ে। শিশিরের জলে বাঁশঝাড়ের তলাটা একেবারে ভিজে জবজবে। ইটের রাস্তা কাদায় প্যাচ-প্যাচ করছে। পা হড়কাচ্ছে। আঙুল টিপে টিপে তাঁরা শানের পুকুরটার কাছে এসে থমকে গেলেন।
যে বাঁশগাছটা ঘাটের উপর ঝুঁকে রয়েছে, ঠিক তার নিচে একটা কালো মূর্তি। জলের দিকে মুখ করে ঘাটের উপর বসে গুন গুন করছে। কোলের মধ্যে কিছু একটা জ্যাপ্টে ধরে আছে মনে হয়। গানের তালে তালে তার গা'টাও দুলচ্ছে। পা দুটো ঠিক জলের উপরে আসছে,যাচ্ছে।
নিমেষে গা কাঁটা দিয়ে উঠল মোহনের। ভয়ে পায়ের তলা জমে যেতে লাগল। লোমগুলো খাড়া হয়ে উঠল নিমেষে। গোঁসাই ফিসফিসি করে উঠলেন
…আরে, ও-ও-ওখানে ওঠা কে?
বুড়ি ভয়ে পিছন থেকে গোঁসাইয়ের হাতটা শক্ত করে ধরলেন। তাঁর হাত যেন বরফের মতো ঠাণ্ডা।
...আ-আ-আমাদের অ-অ-অহনা নয় তো?
গোঁসাই কিন্তু শক্ত গোছের মানুষ। এসব যেন তার চিরপরিচিত। একটুও বিচলিত হলেন না। পা টিপে টিপে ধাপ বেয়ে বেয়ে ঘাটের দিকে নামতে শুরু করলেন।
মোহন আর বুড়ি দূরেই দাঁড়িয়ে রইল।
হঠাৎ মূর্তিটা আরো জোরে জোরে দুলতে শুরু করল। গানের গতিও গেল বেড়ে। পা দুটো এখন জলের উপর ছলাৎ ছলাৎ করে ফিরছে।
জলে ঢলে পড়ার আগেই গোঁসাই সেই মূর্তিটাকে সজোরে টেনে নিল নিজের দিকে।
…অহনাআআআ...
সকলেই পড়ল ধাপের উপর।
অনু তীব্র চিৎকারে কেঁদে উঠল
…আঁ-আঁ-আঁ...
অহনা অচৈতন্য হয়ে পড়ে রইল সেখানে।
গোঁসাই আর মোহন তাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে চলল বাড়ির দিকে।
অনু এখন বুড়ির কোলে। কেঁদেই চলেছে।
বাঁশঝাড়ের মধ্যে দিয়ে অনুর সেই কান্না প্রলম্বিত হতে হতে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল গোঁসাইয়ের বাড়িতে।
(২)
বাঁচার মধ্যে এত জটিলতা আছে,তা মানুষ
না বাঁচলে জানবে কি করে? আর এই বাঁচতে বাঁচতেই তো স্তরীভূত জটিলতার প্রতি স্তরে স্তরে নিজের অস্থায়ী-জীবন-জীবাশ্ম রেখে রেখে যায়।তা না'হলে মানুষ কি করে বুঝবে যে, বাঁচার মধ্যে আকুতি কতখানি? যত সময় গড়ায় জীবন তত বুড়ো হতে হতে জটিলতার পর জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে। বাঁচার জন্য প্রাণ তখনও ছটফট করে, শেষ পর্যন্ত চেষ্টাও করে যায়।
সম্পর্কের অলিগলিগুলো সেই চেষ্টার বেড়াজালে বন্ধন, বিচ্ছেদ, বিরহ-ব্যথা-বেদনার ভার সইতে সইতে আরো তীব্রতর হয়ে ওঠে।
মোহনের জীবনও দিনের পর দিন তীব্রতর হয়ে উঠেছে। তার কারণ অহনাই। মোহন নিজে দেখে বিয়ে করে এনেছিল তাকে। কেউ তাদের বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি।না তার নিজের বাড়ি, না অহনাদের।একদিন বাবা-মা ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে অহনাকে নিয়ে কলকাতায় আসা।
ভাড়া বাড়ি। কোনো কিছুর অভাব নেই। উপার্জন তার বেশি নয় বটে। কিন্তু অভাব কোনোদিন তার ঘরে প্রবেশ করতে পারেনি।
কিন্তু কাল হলো তার বিয়ের বছর দুই পর। বাবা-মার বিচ্ছেদ-ব্যথা অহনাকে দিনের পর দিন কুরে কুরে খাচ্ছিল। মোহন তা বুঝতে পারত না, তা নয়।
একদিন গাড়ি ভাড়া করে সোজা গিয়ে উঠল অহনাদের বাড়ি।
না, অভিমানের সংকীর্ণ-গলি এখন স্নেহের অভাবে প্রশস্ত হয়েছে।
আপ্যায়নের কোনো খামতি রাখেনি। ফেরার সময় কান্নাকাটির একসা। কে কাকে থামায়? কাঁদতে কাঁদতে অহনার মা জোর করেই নতুন শাড়ি পরিয়ে দিল অহনাকে। দেশলাই-কাঠি জ্বালিয়ে পাড়ের সুতো পুড়িয়ে দিল একটু। রাস্তায় এসে খেজুরপাতা ছিঁড়ে সুতোর মতো করে, অহনার কোমরের ঘুনসিতে বেঁধে দিল। থুতু ছিটিয়ে দিল তার গায়ে।
যেন নতুন কোনে বিদেয় নিচ্ছে বাপের ভিটে থেকে।
বাড়ি ফিরে অহনা খাটেই ছুঁড়ে ফেলল শাড়িটা। ব্লাউজটা খুলতে খুলতে কি মনে হলো আবার শাড়িটার দিকে তাকাল। চমকে ওঠে সে।
... একি! আঁচলের খুঁ-খুঁটটা কাটা কেন? মোহন তখন বাইরের সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়েছে।
…শুনছ, একবার ঘরে এসো না।
... কি হলো বলো। আর উঠতে ইচ্ছে করছে না।বলো।
… আরে, এসোই না।
…একটু বসতেও দেবে না দেখছি!
মোহন উঠে গেল ঘরের ভেতরে।
শাড়ির খুঁটটা অহনার হাতে। দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথা নিচু করে।ব্লাইজের ফাঁক থেকে তার অর্ধ-অনাবৃত বুকের নরম যেন উদ্বেলিত ভঙ্গিমায় বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
মোহন সেই অর্ধ-উন্মুক্ত উচ্ছ্বাসময় কিনারায় এসে দাঁড়িয়ে শিহরিত হয়ে উঠল। ঘরের আলোয় অহনা যেন তার শরীরের উত্তাল ঢেউ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মোহনকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বলে। মোহন এসেই খপ করে জড়িয়ে ধরল তাকে।
…কি? ফিরে এসে একেবারে যে...
…কি করছ? ছাড়ো। ছাড়ো বলছি।
অহনা মোহনের বাহুজালে আটকে পড়ছে ক্রমশ। কিন্তু সেদিকে তার যেন হুঁশই নেই।বিষণ্নতা আর বিস্ময় তার চোখে-মুখে চেপে বসেছে।
…দেখো না, শাড়ির খুঁটটা কেউ কেটে নিয়েছে মনে হচ্ছে! দেখো। খুঁটটা কে-কেটে নিল বলে, নি-নিলই!
সে বিষয়ে মোহনের কোনো উদ্বেগ নেই। অহনার নরম শরীরে সে যেন তলিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।অহনার সুবাস তাকে টেনে নিয়ে চলেছে গভীর থেকে গভীরে।
…আরে,ও কিছু নয়।দেখো হয়তো কোথাও লেগে...
…বললেই হলো, ছাড়ো বলছি, ছাড়ো। ছাড়োওওও...
অহনা ছিটকে বেরিয়ে এল মোহনের বন্ধন থেকে।
কি যেন একটা বাসা বেঁধে বসল তার মনে। সেই বাসায় তার সেই বিষণ্ণ মন, একটু একটু করে সংশয়ের ভিতরে সেঁধিয়ে যাচ্ছে।
সেও ধীরে ধীরে আশ্রয় নিল তার ভিতরে।
মোহন হকচকিয়ে গেল।অহনার মুখের দিকে তাকিয়ে কি ভেবে সে আস্তে আস্তে বাইরে বেরিয়ে গেল।
অহনা শাড়ির আঁচলটা ধরে বসে রইল খাটের উপর। খুঁটের সেই কাটা অংশটা তাকে যেন কোথায় নিয়ে চলল...
সন্ধ্যে গড়িয়ে এল। কোনো কাজে মন বসছে না অহনার। হাত থেকে এটা ওটা থেকে থেকে খসে পড়ছে।
রাতে খেতে বসে পাতে ভাত রেখে উঠে গেল।
মোহন আগেই শুয়ে পড়েছিল। অহনা সব গুছিয়ে রেখে শুল।ঘুম আসছে না। চোখের সামনে সেই কাটা আঁচলখানা ভেসে ভেসে উঠছে।
সারা গা যেন ভারি হয়ে আসছে। কেউ যেন শরীরে চেপে বসে আছে।
মোহন ঘুমের মধ্যে তাকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিল। মোহনের হাত এখন তার বুকের নরমে সাঁতার কাটছে ধীরে ধীরে। বাহুর চাপে তার শরীরটা মোহনের শরীরে মিশে যাচ্ছে।
গা ঘিনঘিন করে উঠল অহনার। সজোরে ছাড়িয়ে নিল তার নাগপাশ থেকে।
জোরে জোরে বুক ওঠা-নামা করছে তার। মোহন মোহাবিষ্ট হয়ে আবার তাকে কাছে টেনে নিতে চাইল।
অহনা ফ্যাস ফ্যাস করছে।তার সারা শরীরে যেন আগুন জ্বলছে। নিমেষের মধ্যে তার ধারালো নখের তীব্র আঁচড় আছড়ে পড়ল মোহনের শরীরে।
…এই, ছাড় বলছি,ছাড়। ছাড় শয়তান। ছাড় আমাকে। ছাড় বলছি.....
মোহন ভয়ে ছিটকে নামল। আলোটা জ্বালিয়ে দিল।নখের আঁচড়ে তার শরীর জ্বলছে। মুখ থেকে, বুক থেকে, পিঠ থেকে রক্ত ঝরছে। হাত দিয়ে রক্ত মুছতে মুছতে চেয়ারে গিয়ে বসল।
অহনা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখ-মুখ লালে লাল। খোলা চুল ছড়িয়ে পড়েছে তার মুখের উপর, বুকের উপর। ঘাড় হেঁট করে সে মোহনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ফুঁসছে।
…আলো নিভা,বলছি। আলো নিভিআআআ...
থতমত খেয়ে গেল মোহন।গা কাঁটা দিয়ে উঠল তার।
…তো-তো-তোমার কি হয়েছে অহনা?
…আলো, নিভা বলছি শয়তান। নিভাআআ...
খাট থেকে সে লাফিয়ে পড়ল মোহনের সামনে।
মোহন পড়িমরি করে বেরিয়ে গেল। দরজা আটকে শিকলটা তুলে দিল।
দরজায় তখন ওপার থেকে চাপড়ের পর চাপড় পড়ছে।
...দরজা খোল বলছি। খোলললল...
কিছুক্ষণ পরে দরজায় ঠোকা বন্ধ হলো।
ধপাস করে কিছু একটা পড়ে গেল মনে হলো।
অহনার গলা আর শোনা যাচ্ছে না।
ভয়ে ভয়ে মোহন দরজা খুলল। একটু ফাঁক করে দেখে, অহনা মেঝের উপর পড়ে আছে অচেতন হয়ে।
(৩)
দিন দিন অহনা শ্রী হারাতে লাগল। আগের মতো আর তার সাজগোজ নেই। কোথায় যেন হারিয়ে যায়।বাইরে সহজে বের হয় না। দোকানে যেতে গেলে তাদের পাশের খেলার মাঠ টপকে যেতে হয়। সেখান দিয়ে গেলেই গা তার ছমছম করে। বাতাস যেন তাকে ঘিরে পাক খায়।
গা ভারি ভারি হয়ে ওঠে।
চুলের উপর কেউ যেন বারবার ফুঁ দেয়।
ঠিক মতো রান্না-বান্নাও করে না। মোহনকে দেখলে তার হাত নিশপিশ করে। দাঁত কড়কড় করে ওঠে।দু'হাতে নিজের চুল টানতে টানতে ঘাড় বেঁকিয়ে মোহনকে দেখে আর খিলখিল করে হাসে।
দিনকে দিন পোড়া কাঠ হয়ে উঠছে সে। ঠিক মতো খায় না। ঘর অন্ধকার করে রাখে। ফিসফিস করে কথা বলে।
এমনকি অনুকেও বুকের দুধটুকুও ঠিক করে খাওয়ায় না। মাঝে মাঝে তাকে বুকের মধ্যে এমন করে চেপে ধরে, দেখে শিউরে ওঠে মোহন।
দুধ খাওয়াতে গিয়ে তার মুখের মধ্যে দুধ এমন করে ঠেসে ধরে যে, অনুর দম বন্ধ হয়ে আসে। হাঁফিয়ে ওঠে সে।কেঁদে ফেলে। তখন অহনা আরো রেগে যায়।
…খা, খেয়ে নে। খেয়ে নে বলছি। আমার রক্ত টেনে টেনে খাচ্ছিস তবু আশা মিটছে না, না? বেশ করে খা। খেয়ে নে।...তারপর তোকে আমি অনেক দূরেএএএএ নিয়ে যাব। কেউ খুঁজে পাবে না। খেয়ে নে...
মোহন এসব দেখে আর ভয়ে ভয়ে থাকে। মসজিদ-দরগা, এ গুনীন, সে গুনীন, তাবিজ-মানত কিছুই বাকি রাখেনি। ডাক্তার-বদ্যিও বাদ যায়নি।
তবু অহনা শুকিয়ে যাচ্ছে। দু'চার দিন অন্তর অন্তর সে কেমন অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
ঠাকুর ঘরে ঢুকে জোরে জোরে ঘন্টা বজায়। কপাল ঠুকে। কপাল ফেটে রক্ত ঝরে।
দেখলে মনে হয় সে যেন সে নয়। গলা পাল্টে যায়। তার গম্ভীর স্বরে ঠাকুর ঘরের বাতাস কেঁপে ওঠে।
…মা, মাগো মাআআআ...
মোহন রাতে তার পাশে শোয় ঠিকই কিন্তু ঘুমতে পারে না। সব সময় সে ভয়ে ভয়ে থাকে। কোনো কোনো রাতে সে মেয়েকে নিয়ে মেঝেই শোয়। তার শাশুড়ি এলে, অনু তারই কাছে থাকে। কিন্তু শাশুড়ি না থাকলে, সে রাত জেগে জেগে কাটায়।
ইদানিং অহনা সেই কাপড়খানা মেঝের উপর বিছিয়ে শোয়। সেই কাটা খুঁটটা ধরে চোখে-মুখে বুলায়।আর বিড়বিড় করে। কেউ তার দিকে তাকালে সে তখন চোখ বড়ো বড়ো করে। হাত নেড়ে নেড়ে ডাকে
…আয় না,আয়। কা-কাছে আয়। ঘুম পাড়িয়ে দেব। আয়...
দেখলে গা শিরশির করে ওঠে। রক্ত জল হয়ে যায়।
এখন গভীর রাত। অহনা খাটের উপর শুয়ে রয়েছে। ঘরের নীল আলোয় তার ফ্যাকাসে শরীরটা মরার মতো দেখাচ্ছে। মোহনরা যেন এমন দিনের অপেক্ষায় ছিল।
অহনার মা চুপিসাড়ে ঘরে ঢুকলেন। ফিসফিস করছেন
…বাবা, এই সুযোগ। ওর কাছ থেকে ঐ শাড়িখানা টেনে নাও। রাতেই ওটা পুড়িয়ে দেব। টান, টেনে নাওওওও...
…কিন্তু যদি জেগে...
…টানই না...
মোহন শাড়িটা সুড়-সুড় করে টানতে লাগল।
অহনা খপ করে কাপড়টা একহাতে টেনে ধরল। সোজা হয়ে উঠে বসল। উন্মুক্ত চুল এসে পড়েছে মুখের উপর।চোখদুটো যেন ফেটে বেরিয়ে আসছে। ফ্যাস ফ্যাস করে উঠল
…কাপড় পুড়িয়ে দিবি? নে পু-পুড়িয়ে দে। আয়। নে...
হাড় হিম হয়ে গেল তাদের। দৌড়ে পালিয়ে গেল।
মোহন আগের মতো আর কাজে যায় না। গেলেও মেয়েকে অন্য বাড়িতে রেখে যায়। শাশুড়ি থাকলে অনুকে নিয়ে আর ভাবতে হয় না। পাড়ার লোক নানান কথা শোনায়
…ভায়া, এবার ওকে পাগলা গারদে পাঠিয়ে দেওয়াই ভালো।
…সবার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ভেবে দেখো।
কিন্তু মেয়ের দিকে তাকিয়ে সে একথা কোনোদিন ভাবেনি।
সম্পর্কের অসহনীয় গলিতে দাঁড়িয়ে সে এখনো ভালো দিনের অপেক্ষা করে।
আজকাল অহনা ঠাকুর ঘরে ঢুকলে সহজে বের হয় না। কান পাতলে শোনা যায়
…কেউ আমায় ভালোবাসে না। আমাকে দেখে সবাই হাসে। ওরা আমার কাপড়টা কেড়ে নিতে চায়। মেয়েটাকেও আমার কাছে আসতে দেয় না।
হু হু করে কাঁদে। আবার শুরু করে …রাতে, ঐ ওরা, সকলে মিলে আমাকে চেপে ধরে। রক্ত শুষে খায়। তুই বাকি থাকিস কেন? তুইও খা?
জ্ঞান হারায়। সেখানেই পড়ে থাকে।
অনুও বড়ো হয়ে উঠছে। অহনার কাছে সে থাকতে চায় না। কিন্তু অহনা কোলে নিলে সে কেমন যেন জড়োসড়ো হয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে থাকে।
সেদিন রাতে অনুর কান্না শুনে মোহন জেগে ওঠে। দেখে, অনু তার কাছে নেই।অহনার কোলে। হাত দুটো মুচড়ে ধরে আছে।
…ঘুমা বলছি। ঘুমা। ঐ দেখ কারা এসেছে দেখ। না ঘুমালে, তোকে ওদের কাছে দিয়ে দেব। ওদের চিনতে পারছিস না? দেখনা দেখ। ওরা এবাড়িতে অনেক অনেক দিন ধরে আছে। কাঁদলে ওরা তোকে কোথায় নিয়ে চলে যাবে, কেউ পাবে না।
মোহন শুনছিল। তার সারা গা কাঁটা দিয়ে উঠল। ঘরের নীল আলোয় অহনার মুখ যেন চেনা যাচ্ছে না।
অনু চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ চুপ করে গেল। কান্নাটা যেন তার গলায় দলা পাকিয়ে আটকে আছে।
মোহনের শরীর অবশ হয়ে এল।
গোঁসাইয়ের কথা মনে পড়ল তার।
…অহনা, মা, শুনতে পাচ্ছিস? এই অহনা, ওঠ। চা খা দেখি। কত বেলা হয়ে গেছে। ওঠ মা, ওঠ।
গোঁসাই তার গায়ে ঠেলা দিতে লাগল। অহনা এপাশ ওপাশ করে বিছানায় উঠে বসল। হাই তুলছে।
…অ-অনু কোথায়?
…ঐ তো, উঠোনে। ওর বাবার সঙ্গে খেলছে। তুই চা খা। আমি আসছি।
দুজন লোক উঠোন ডিঙিয়ে গোঁসাইয়ের বসার ঘরে ঢুকল।অহনা তাদের দেখে কি একটা অনুমান করে বাইরে বেরিয়ে এল। চায়ের কাপটা ছুঁড়ে মারল তাদের দিকে।
…যা,বলছি যা।বের হ এখান থেকে। কি ভেবেছিস তোরা? যাবিইইই.....
তাদের মধ্যে একজন বলেই ফেলল
…আর দেরি নয় গোঁসাই। ধরো ওকে। নইলে...
গোঁসাই ঘর থেকে ছুটে এসে অহনাকে ধরে ফেলল।
তাদের একজন মেঝের উপর কি একটা দিয়ে আঁক কাটছে আর বিড়বিড় করছে।
গোঁসাইয়ের স্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে কত রকম পাতা, ঘি, সরু সরু কাঠ, বালি এনে বসিয়ে দিলেন।
অহনা গঁ গঁ করছে। গোঁসাই চেপে রাখতে পারছেন না। মোহনের কোলে অনু। দূরেই দাঁড়িয়ে আছে তারা। অনু মা'কে দেখে ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠল।
হোমের আগুনের ধোঁয়া সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ল। অহনা যেন ঝিমিয়ে পড়ছে। তাকে ধরে বসিয়ে দিল লোকগুলোর সামনে। সরে গেল সবাই। কিসব ছিটিয়ে দিল অহনার গায়ে। খানিকটা গা ঝাঁকুনি দিয়ে নেতিয়ে পড়ল সে।
…যাও। ওকে এবার ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দাও। আর ভয় নেই।
লোকগুলোর মুখে এখন প্রসন্ন হাসি।
যাওয়ার সময় বলল
…আজই ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাও।
সত্যিই তো,অহনাকে আজ বিকেল থেকে একটু অন্য রকম দেখাচ্ছে। পায়ে চওড়া আলতা। সিঁথিতে লম্বা সিঁদুর। কপালে লাল টিপ।
অনেক দিন পর আজ মোহন নিশ্চিন্তে ঘুমাবে। তার শাশুড়িও এসেছেন।মেয়েকে দেখে তাঁরও মনটা ভরে গেছে।রাতে
অনু দিদার কাছে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
গলা জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।
তা দেখে,অহনাই হাসতে হাসতে বলল
…দেখো, মা'র গলা জড়িয়ে ধরে কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে! ও মা'র কাছেই থাক। চলো।
মাঝরাতে মোহনের ঘুমটা হালকা হয়ে এল। কিন্তু পাশ ফিরতে পারছে না কেন? হাতে-পায়ে একটা টান পড়ল বলে মনে হল? আবার ঘুরতে গেল, আবার টান পড়ল।
নীল আলোয়,আবছা অন্ধকারে ঘরটা ডুবে আছে। সিলিংয়ে ফ্যানটা বনবন করে ঘুরছে। চোখটা টান টান করে দেখে, অহনা সেই শাড়ি দিয়ে তার হাত-পা খাটের সঙ্গে বাঁধছে।
ভয়ে সারা শরীর তার কাঁটা দিয়ে উঠল। কি করতে চাইছে সে? কথা জড়িয়ে আসছে তার। জিভ শুকিয়ে আঠা হয়ে গেল।
…অ-অহনা, এ-এসব কি করছ, অহনা?
আ-আ-আমাকে ছেড়ে দাও, অহনা...
…আমার সঙ্গে চালাকি না? আমাকে না জানিয়ে ওখানে নিয়ে যাওয়া? দেখ, আমি তোর কি করি। ওরা আমার গায়ে কিসব ছিটিয়ে দিয়েছে। ছিঃ, কি গন্ধ!
থুতু ছিটিয়ে দিয়ে সে মোহনের শরীরের উপর উঠে বসল। ধারালো নখগুলো জোরে জোরে বসিয়ে দিল মোহনের মুখে-বুকে, শরীরে শরীরে।
…আর কোথাও নিয়ে যাবি? বল শয়তান...বল...
রক্তের ধারা গড়াতে লাগল মোহনের শরীর বেয়ে। জ্বালায় বেদনায় তীব্র চিৎকার করে উঠল সে।
…আমাকে ছাড়ো অহনা,ছাড়ো...আমি মরে যাব অহনা। ছাড়োওওও...
তার চিৎকারে অনুর দিদা ধড়ফড় করে উঠে বসলেন। অনুকে নিয়ে দৌড়ে এলেন।
আলোটা জ্বালিয়ে দেখেন মোহনের শরীরে উপর অহনা। মোহনকে আঁচড়ে-কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত করছে। রক্তে রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে মোহন। ভয়ে তিনি থরথর করে কাঁপছেন।
…ওরে, ছেলেটাকে মেরে ফেলল রে...অহনা ছাড় ওকে, ছাড়...
অনু কখন খাটের কাছে চলে গেছে, তিনিও টের পাননি। খাটের কাছে দাঁড়িয়ে সে জোরে জোরে কাঁদছে
…মা, মাআআআ...
অহনা তার দিকে তাকিয়ে রইল ভয়ঙ্করভাবে।
মোহন কাতরাচ্ছে
…দোহাই অহনা, ওকে কিছু করো না...অহনা...
অনুকে হঠাৎই খাটের উপর তুলে নিল অহনা। বুকের মধ্যে জ্যাপ্টে ধরল।
ধপাস করে পড়ে গেল বিছানায়।
অনুর কান্না তখন ধাক্কা খেতে লাগল
দেওয়ালে-দেওয়ালে
...মা, মাআআআ...
0 comments: