প্রবন্ধ - খালেদ হামিদী
Posted in প্রবন্ধচলমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় কবিতাভাবনার প্রকাশ বলতে কবির রাজনৈতিক-দার্শনিক দায়িত্ববোধের পরিচয় জ্ঞাপন ছাড়া আর কি বুঝে নিতে পারি? কেননা ফিলিস্তিনের পরে, ইরাক, সিরিয়া ও মিয়ানমার থেকে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ, লক্ষ লক্ষ মানুষকে, ঠিকানা ও রাষ্ট্রহীন করে চলেছে। ধনতান্ত্রিক এই সভ্যতা এর নিজের হিসেবে অপূর্ণাঙ্গ নয়। কিন্তু ধনতান্ত্রিক রাজনীতির সব অপশক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মানুষের এতো উৎকর্ষ লাভ সত্ত্বেও, সভ্যতাকে অসম্পূর্ণ করে রাখে। তাই স্থানিক-বৈশ্বিক পুঁজিবাদ, পুঁজিতন্ত্রের সমস্ত সহায়ক শক্তি, সাম্রাজ্যবাদ এবং ধনতান্ত্রিক চিন্তা ও প্রকল্পের তুমুল বিরোধিতাই আমাদের পরম প্রাথমিক কর্তব্য বলে মনে হয়। আমাদের সাহিত্যে, বিশেষত কবিতায়, এই দায়িত্ববানতার অনুবাদ, বলতে গেলে, খুবই জরুরি। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বকথাসাহিত্যের অন্যতম দিকপাল দস্তয়েভস্কিও, পশ্চিমের তথা ইয়োরোপীয় চিন্তা এবং আধুনিকায়নের, বিরোধিতা করেন। ওরহান পামুক যেমন বলেন: It is from Dostoyevsky’s gloomy, damning ambivalence-his familiarity with European thought and his anger against it, his equel and opposite desires to belong to Europe and to shun it…(Orhan Pamuk; chapter thirty-six; Dostoyevsky’s Notes from Underground: The Joys of Degradation; Other Colours; in UK in 2007; in USA in 2008)
দস্তয়েভস্কির ইডিয়ট, ব্রাদার্স কারামাজভ এবং ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট-এর চরিত্রগুলো সেই পৃথিবীর বাসিন্দা, যে-জগৎ এখনো মনুষ্যোপম হয়ে ওঠেনি, হয়ে ওঠার জন্যে প্রক্রিয়াধীন:
... it is set in world still in the process of becoming. (Orhan Pamuk; chapter thirty-eight; The Brothers Karamazov; Other Colours; in UK in 2007; in USA in 2008)
দস্তয়েভস্কি যা নেই তার উপস্থিতির ঔচিত্যের বোধ দ্বারা তাড়িত একজন অতীব মহান লেখক। মুনাফাভিত্তিক পুঁজিবাদী সমাজে কি নেই? নেই মনুষ্যত্ব। ধনতন্ত্র-উপনিবেশবাদ-সাম্রাজ্যবাদ হত্যা করে এই মানবতাকেই। যদিও, গেলো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ্বে উদ্ভূত প্রতীচ্যের পোস্ট মডার্ন চিন্তা বিষম সমাজভুক্ত শ্রেণীর ভেতরকার নানা শ্রেণী, যেমন নারী, সমপ্রেমী, তৃতীয় লিঙ্গ ও রূপান্তরকামী মানুষদের অস্বীকৃত-অবহেলিত থাকার বিষয়গুলি শনাক্ত করে। সেই সঙ্গে তাদের সকলের মুক্তিসংগ্রাম আর প্রকৃতিবিধ্বংসী শিল্পায়ন ও প্রযুক্তির বিপরীতে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনও সূচিত হয়। কিন্তু এই পোস্ট মডার্নিজম পুঁজিবাদবিরোধী নয়, তা ধনতন্ত্রের আওতার ভেতরে ওই পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের ক্ষেত্র সম্প্রসারণেরই দিকনির্দেশনা, বলা যায়। পাশাপাশি, ক্ষেত্রবিশেষে আপাত চমকের আড়ালে পুঁজিতন্ত্র ধ্বংস করে মানুষের এখনো-অবশিষ্ট মৌলিক বা আদিম গুণাবলী, যেমন : সহানুভূতি, প্রেম ও শ্রদ্ধাবোধ; জঁ জাক রুসো যে আদিম সাম্যবাদী সমাজের প্রসঙ্গ বিশদ করেন তাঁর মানব জাতির অসমতার উৎস এবং ভিত্তি শীর্ষক প্রথম রচনায়ই, আশ্চর্য সাবলীলতায়। দস্তয়েভস্কি তাই পশ্চিমের বিরোধিতা করেন। তাঁর ইডিয়টকে খুব মনে পড়ে। আমাদের উপলব্ধির গভীরে বেজে ওঠে এই প্রতীতি: মানুষের আসলে ইডিয়টের অনুরূপই হওয়া উচিত। কিন্তু পামুক দস্তয়েভস্কির ইয়োরোপ-বিরোধিতাকে, উপর্যুক্ত প্রবন্ধে, বর্তমান মুসলিমদের মার্কিন বিরোধিতার সঙ্গে মেলান কেন? দস্তয়েভস্কির পশ্চিমের প্রতি ঘৃণা আর ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ইসরায়েল-এমেরিকা-বিদ্বেষের মধ্যে মূলত কোনো অমিল নেই বলেই হয়তো।
... it is a notable irony that Dostoyevsky, who wrote one of the greatest novels ever, hated the West, and Europe, as much as today’s provincial Islamists.
মনুষ্যজগতে তো জাতি বাস্তবে দুটিই, ধনী ও দরিদ্র। তাই গরিব জাতির ঐক্যের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের মোকাবেলার আগে, আমরা, অন্তত সচেতন মধ্যবিত্ত মানুষেরা, এই সভ্যতার সীমাবদ্ধতা বা অসম্পূর্ণতার ক্ষেত্রগুলো বার বার চিনে নিতে পারি, যেভাবে, পামুক, উপরের একই গদ্যে, বলেন:
For a writer like Dostoyevsky, the world is a place that is in the process of becoming; unfinished, it is somehow lacking. It resembles our own world, which is also in the process of becoming, so we want to dig deep: to understand the rules that govern this world, to find inside it a corner wherein we might live by our own ideas of right and wrong.
এই আগ্রাসী হিংস্র পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শ্রেণীহীন মানবতাবাদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিক কবিতা।
ReplyDeleteউশকে দেবার জন্য ধন্যবাদ কবিবর।
আদিম সাম্যবাদ থেকে যত সামনের দিকে এগিয়েছে মানুষ, ততই ক্ষমতা হারিয়েছে মানুষ, সর্বাগ্রে নারী, তারপর বৃহত্তর মানবগোষ্ঠী। যাকে সভ্যতা বলছি, তা হলো বহুত্ববাদ থেকে একত্ববাদের দিকে, তথা বহুচিন্তা থেকে একচিন্তা তথা স্বৈরতন্ত্রের দিকে। ধনতন্ত্র সেই স্বৈরাচারী ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক চাদর। কবি এর মধ্যে বাস করে অসহ যন্ত্রণায়। আর সেই যন্ত্রণাবোধ কবিতা হয়ে ফুটে উঠছে। আপনার বক্তব্যের সাথে একাত্মবোধ করছি
ReplyDelete