ধারাবাহিক - প্রিয়াঙ্কা চ্যাটার্জী
Posted in ধারাবাহিক
পর্ব-৭
মগজে ফিরেই সহদেব পিতার নিকটে অঙ্গুরীয় নিয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন
--- সহদেব সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন সুবল। চল তাঁর গৃহে যাই।
রাজজ্যোতিষী সুবল বললেন, প্রকৃত ঘটনার কথা।
তিনহাজার খ্রীষ্টপূর্বাব্দ:
--মহর্ষি মনুষ্য মাত্র সে কালের অধীন। কালকে অতিক্রম করা দুঃসাধ্য। সর্বশক্তিমান স্বয়ং এই কালকে মান্যতা দেন। আমার নিবেদন, এই বিশেষ অঙ্গুরীয় একমাত্র আপনার নিকটে সুরক্ষিত থাকবে। আপনি পারেন এর রক্ষাকবচ হতে।
---বাসুদেব আপনার মুখে এ কথা কেন? কোন বিপদ অপেক্ষা করে আছে? কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর আর্যাবর্তে শান্তি বিরাজিত, তাহলে?
---মহর্ষি দ্বৈপায়ণ আপনার নরকাসুরের কথা মনে আছে? ভূমিদেবী ও বিষ্ণুর পুত্র নরকাসুর। আমার হাতেই নিহত হয়েছিল। প্রথমে সে সৎ,ও সুশাসক হলেও পরবর্তীকালে বানাসুরের সাথে সখ্যতা হয় তার। তিনি ছিলেন তার প্রিয় সখা। বানাসুর তাঁকে এই অঙ্গুরীয় উপহার দেয়। এই অঙ্গুরীর মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তি বিস্তার করে তার প্রভাব, সে বড় সাংঘাতিক। নরকাসুরের স্বভাব পরিবর্তনের জন্য এই অঙ্গুরীয় দায়ী। আমার সময় শেষের মুখে। এই অঙ্গুরীয় সাধারণ মানুষের হাতে পড়লে, ধ্বংস অনিবার্য। মহর্ষি আপনি রক্ষা করুন। আপনি এই অঙ্গুরীয়র দায়িত্ব নিন।
দ্বৈপায়ন এই তত্ত্ব গুহ্য রাখেন। ভবিষ্যতে গুরু শিষ্য পরম্পরায় অঙ্গুরীয় রক্ষা করছিলেন। তাদের মধ্যে এক শিষ্য বাইরের আক্রমণ ও অন্যান্য কারণের জন্য এই অঙ্গুরীয়কে তক্ষশীলার গভীর অরণ্য মধ্যস্থ মন্দিরের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
কাহিনী শেষ করে সুবল বললেন
---আমার পিতামহ ও তার পূর্বজরা ঐ মন্দিরের সেবায়েত ছিলেন। সেই শিষ্য আমার পূর্বপুরুষকে উপযুক্ত মনে করে এই গোপনীয় তত্ত্ব বলেছিলেন। পরে আমার পিতা মগধে আসেন, তার দূর সম্পর্কিত আত্মীয়কে দায়িত্ব দিয়ে। পিতামহ সাবধান করে গেছিলেন এই অঙ্গুরীয়র গোপনীয়তা রক্ষার জন্য।
সহদেব কিছু গোপনীয় রাজকার্যের জন্য বাইরে গেলেন বেশ কিছু সময়ের জন্য। মহাদেবী অন্তঃসত্ত্বা। রাজঅন্তঃপুরে মহাদেবী মনে মনে ক্ষনেকের তরে আনন্দিত হলেও, তার মন বিষাদে পূর্ণ। যে সম্রাট মহাদেবীকে এত ভালবাসতেন তিনি এখন বারবনিতার সাথে রাত্রিবাস করেন। তিনি বিবাহ করেছেন আরো দুটি। সেই রাত্রিতে তিনি যা দেখেছিলেন, তার সাথে এই নিষ্ঠুরতা, চারিত্রিক অবনমন তাকে বড় কষ্ট দেয় । বড্ড ভয় লাগে তার। প্রায়শঃ এক পরভৃৎ (কাক) কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তার দিকে। সখীরা বলে সব তার মনের ভ্রম। কিন্তু তার মন যে মানে না। এক দাসী এসে বলেন
-- দেবী কুমার আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।
মহাদেবী গেলেন কুমারের কক্ষে।
--প্রিয়ে তোমার শরীর কেমন আছে? আজ রাত্রি তুমি আমার কক্ষে কাটাও।
মহাদেবী মুখে হাসি টেনে বললেন
--আমার পরম সৌভাগ্য।
সেই দিন, মহাদেবী অসুস্থ শরীরে বৌদ্ধ বিহারের উদ্দেশ্যে যান। দেখা হয়ে যায় এক বৌদ্ধ শ্রমনের সাথে। তার বেদনাতুর মুখমণ্ডল দেখে শ্রমণ বলেন
--মা আপনার কিসের কষ্ট?
চরণে লুটিয়ে পড়লেন মহাদেবী, বলেন
--- প্রভু আমার মনে বড় সংশয়। আমার স্বামীকে নিয়ে। তিনি সম্রাট হলেও তার আচরণ সম্পূর্ণ পালটে গেছে।
শ্রমন বলেন,
--আগত শিশু মহাপবিত্র, মা। আপনাকে একটি কবচ দেব। যেক্ষনে আপনার মনে হবে আপনি অসুরক্ষিত, সেক্ষণে আপনি আশ্রমে আসবেন। কোনো বিপদ স্পর্শ করতে পারবে না।
এরপরেই ভিক্ষু একটি কবচকে মন্ত্রপূতঃ জলে ডুবিয়ে পরিয়ে দেন মহাদেবীর দক্ষিণ হস্তে।
আকাশে ঘন মেঘ। প্রচণ্ড বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। নিদ্রাভঙ্গ হয় মহাদেবীর। পুঞ্জীভূত অন্ধকার, কক্ষের বাতি নিভু নিভু। তাতে অনুভব করেন পাশে সম্রাট নেই। কক্ষে তীব্র কটু গন্ধ। বিদ্যুতের আলোকে মহাদেবী দেখেন কুমারের উপরে এক নগ্নিকা শুয়ে আছে। ভীত মহাদেবীর চিৎকারে সেই সুন্দরী তার দিকে জিঘাংসা পূর্ণ নয়ণে তাকিয়ে, ধেয়ে এলেন দেবীর দিকে। কিন্তু মহাদেবীকে স্পর্শ করতে পারলেন না। তীব্র ঘৃণা সহ মহাদেবী দিকে তাকিয়ে সেই নগ্নিকার সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়ে পরিণত হল এক ভয়াবহ পুঞ্জীভূত অন্ধকারের, তারপরেই মিলিয়ে গেল সে কুমারের শরীরে। কুমার অশোক তৎক্ষণাৎ উঠে বসেন, কুমারের চোখ এই অন্ধকারেও জ্বলছে। চতুষ্পদীর মত চার পায়ে হেঁটে শিকার করার মত এগিয়ে আসছেন তিনি। ভয়বিহ্বলা মহাদেবীর কণ্ঠ শুষ্ক, হাত পা কাঁপছে। কুমার মহাদেবীর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেছিটকে পড়ে গেলেন, যেন এক অদৃশ্য শক্তিবলয় তাকে ঠেলে ফেলে দিচ্ছে। এরপরেই চেতনা হারিয়ে ফেলেন দেবী।
চেতনা ফিরলে দেখেন বিশাখা বাতাস করছে। সম্রাট চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। মহাদেবীর মন শঙ্কাকুল । তাই তিনি পিতৃগৃহে যাবার অনুমতি চাইলেন।
মহারাজের অনুমতি নিয়ে মহাদেবী তক্ষশীলার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সহদেবের জন্য একটি বার্তা দিয়ে গেলেন বিশাখার হাতে।
কিছুমাস পরে সম্রাট সংবাদ পান তিনি পিতা হয়েছেন। তার যমজ পুত্র ও কন্যা হয়েছে। সমস্ত জগৎ হতে বিচ্ছিন্ন মহারাজ নিজ সন্তানদের সংবাদ নিলেন না। মনের মধ্যে অধিষ্ঠিত শয়তানের কাছে তিনি পরাভূত।
এরপরেই সম্রাট অশোক বিশেষ জরুরী কাজে রওনা দিলেন উজ্জয়িনীর উদ্দেশ্যে।
এতোদিন পর!!! খুব সুন্দর হয়েছে।
ReplyDeleteThank u
Deleteঅনেকদিন পর আপডেট পেলাম... খুবই সুন্দর আর ইন্টারেস্টিং গল্প... এত ছোট আপডেটে আর মন ভরছে না। খুব সুন্দর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত এই লেখাটা। টানটান উত্তেজনা নিয়ে এগোচ্ছে গল্পটা। পরের পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteThank u
DeleteDurdanto laglo Didi..anobbodo..tomar proti golpo asadharon hoy..ETA to onno swader.
ReplyDeleteThank u bonu
Delete