গল্প - অচিন্ত্য দাস
Posted in গল্পবিয়ের পর এরকম তো আকছার হচ্ছে, কিন্ত আমারই ঘরে এমনটি যে ঘটে যাবে তা ভাবিনি। সাগরিকার সঙ্গে বছর খানেকের আলাপের পর বিয়ে করলাম আমরা। প্রথমেই ধাক্কা খেলাম – আমার মা ব্যাপারটা ভালো ভাবে নেয়নি। সাগরিকাকে ঘোর অপছন্দ। তা সত্ত্বেও চলছিল। সাগরিকা চৌকস মেয়ে, ভালো চাকরি করে। আমিও বেশ তরতর করে চাকরিতে ওপরে উঠেছি। দুজনেরই রোজগার ভালো। এর মধ্যে আমাদের কন্যা-সন্তান জন্মালো। মা বাচ্চাটাকে ভালোবাসতো, তবে বাড়িতে দেখাশোনা করতে রাজি হলো না। আয়া রাখা হল। সে আয়াকে মা বেশিদিন টিকতে দিলো না। বলল – বৌমা, তুমি সংসার কিংবা চাকরি, যে কোনও একটা বেছে নাও। আমাদের আলাদা হতেই হলো।
বছর তিনেক চলল মোটামুটি। কিন্তু তার পরে আর একটা কালবৈশাখি। আমার বড় প্রমোশন এবং মুম্বইতে বদলি। এটাকে লোভ না উচ্চাশা বলব তা ঠিক জানি না, সুযোগটা আমি ছাড়তে পারলাম না। সাগরিকার মত ছিলো না, অতএব অশান্তি এবং তা থেকে সম্পর্কে ফাটল ধরল। আমি মুম্বই থেকে মাসে দুবার আসা যাওয়া করতাম কিন্তু তাতে দূরত্ব বাড়ল বই কমল না। একবার ভেবেছিলাম মা যদি মাঝখানে দাঁড়িয়ে মিটমাট করে দেয়... ও বাবা! মা সাগরিকাকে সটান বলল – তুমি যেখানে যেতে চাও যাও। মেয়েটাকে দিয়ে যাবে। আমি ছেলের আবার বিয়ে দেবো।
বাড়ি এলে বা ফোনে তুমুল ঝগড়া হত, তারপর যা হয় তাই হল। মামলা শুরু হল এবং মহামান্য আদালত থেকে রায় দেওয়া হল যে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার আগে আমাদের আলাদা থাকতে হবে। মানে, আমি মুম্বই থেকে এলে ওদের সঙ্গে থাকতে পারব না। মেয়ে থাকবে তার মায়ের কাছে। অবশ্য আমি চাইলে মাসে একবার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারব, সাগরিকার সম্মতি নিয়ে।
পাঁচ-ছটা বছরের ভেতরে এত কিছু ঘটে যাওয়াতে আমি কেমন যেন পাথরের মত হয়ে গিয়েছিলাম। প্রথম দিকে নিয়ম করে মাসে একবার আসতাম। অফিসে কাজ অনেক বেড়ে যাওয়াতে সময় বের করতে পারছিলাম না। মেয়েকে দেখার জন্য আমার আসা কমে এসেছিলো।
সেবার মাস তিনেক পরে কোনোরকমে সময় করে কলকাতা এলাম মেয়েকে দেখতে। ‘ওদের’ ঘর আর আমার নয় তাই একটা পাঁচ-তারা রেস্টুরেন্টে দেখা করতে এসেছিলাম। সাগরিকার পাশে মেয়েকে দেখে অবাক লাগছিলো। সংসারের ঘুর্ণিঝড়ে পড়ে এই আট বছরেরই সে কত যেন বড় হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে খাচ্ছে। এটা খাব, ওটা ঝাল এসব কিছুই বলে না আর। সে কি এখন পুরোপুরি তার মায়ের মেয়ে? সে কি আমাকে আর চায় না? আমার না-থাকা কি তার সয়ে গেছে? কি জানি!
তিনজনে কাঠকাঠ হয়ে বসে খাওয়া শেষ করলাম। তেমন কোনো কথা হলো না। কোণার টেবিলে কমবয়েসি দুটো ছেলে আর মেয়ে ঘন হয়ে বসে আছে। পাশে এক দম্পতি এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে হইচই করে খাচ্ছে। আমাদের এবার উঠতে হবে, কাল ভোরের উড়োজাহাজে আবার মুম্বই। সকালের দিকেই বড় মীটিং আছে।
অবস্থা স্বাভাবিক করতে আমি বললাম – এই জানিস, এখানে না দারুণ ভালো ক্যারামেল পুডিং করে। পুডিংটা চকোলেট আর বাদাম দিয়ে এত সুন্দর করে ঘিরে দেয় যে কী বলব! যা খেতে না! একবার খেয়েছিলাম… খাবি?
দু-এক মুহূর্ত চুপ করে থাকার পর মেয়ে আমার দিকে তাকালো, তারপর চোখ নামিয়ে আস্তে আস্তে বলল – ভালো জিনিসটা আজ খেয়ে নিলে তো শেষই হয়ে যাবে। আমরা ওই জিনিসটা কালকে যদি খাই তাহলে কাল তুমি আবার এখানে আসবে?
বেশ।
ReplyDeleteBhalo laglo
ReplyDeleteবেশ হয়েছে ...
ReplyDelete