1

ধারাবাহিক - অনিন্দিতা মণ্ডল

Posted in



















২ 


“The first stage of sleep is the lightest, the brief letting go, like the skipping of a stone across the water.” 

ঠিক এরকমই লেখা ছিল লাল রঙের খাতাতে। যদিও খুব অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু লেখা ছিল। 

এখন কস্তুরী জানে ও পাড়াটা। অন্ধগলি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একদিন দিনের আলোয় যাওয়া গেছে ওখানে। সত্যিই ঘুমন্তপুরী যেন। একটা তেতলা বাড়ি। তার অর্ধেক পুড়ে যাওয়া দেওয়ালের গা বেয়ে মোটা শেকড় মেলেছে অশ্বত্থ গাছটা। 

বড় তেতলা বাড়িটার ভগ্নদশা। মাঝে হয়ত বাড়ি ছিল একটা। খুবই ঘিঞ্জি গলি তো। কিন্তু এখন সেখানে একটা উঁচু ঢিবি। সদ্য মাটি খুঁড়ে যেন একটা গুপ্তধন ভরা হয়েছে। জায়গা নেহাত কম নয়। এপাশের বাড়িটা একতলা। অবশ্য তাতে যে তার কিছু কম এসে গেছে তা মোটেই নয়। উল্টোদিকের বাড়িগুলোরও একই দশা। যেন একটা ভীষণ প্রলয় ঘটে গিয়েছে। যেন বিশ্বযুদ্ধ ঘটে গিয়েছে। যেন রেডিয়েশানে মারা পড়েছে তাবৎ বাসিন্দা। আর বাড়িটা যেন পুড়ে গিয়েছে বোমার আঘাতে। ছোট একতলাটা বেঁচে গিয়েছে নেহাতই বরাতজোরে। নয়তো ওরকম একটা ভয়ংকর যুদ্ধে ওই বা বাঁচে কি করে? 

কিছুদিন আগে থেকে শুরু করা যাক। আমাদের হাতে লাল খাতাটা আছেই। খানিক কেটেছেঁটে আর একটু জুড়ে পেশ করা যাক। 

প্রথম যেদিন যুদ্ধটা শুরু হল সেদিন পাড়ায় একটা উত্তেজনা ছিল। সবাই সবার সঙ্গে ফিসফাস গুজগুজ করছিল। কী হবে বলো তো সত্যিকারে? যুদ্ধ আর হয় নাকি? আমরা কি জানিনা যে একটা যুদ্ধ শুধু আমাদের পতনের দিকেই টেনে নিয়ে যায়? কী হবে ওসবে? কিন্তু খবরের কাগজওলা যেদিন এলো না, টিভিতে যেদিন সম্রাট বক্তৃতা দিয়ে জানালেন -হে দেশবাসী, আমি আর একবার আপনাদের কাছে ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে এসেছি। জাতির এই দুর্দিনে আপনারা দেশের পাশে দাঁড়ান। রকে বসে হারুকাকা হেসেছিল -দেশের পাশে কেন? আমরা তো দেশের মধ্যেই আছি! দেবেশবাবু ভারি গলায় বলেছিলেন -সেটা এখনও সম্রাট ঠিক করেননি। ওই সংক্রান্ত নথি তৈরি হবে এই দুর্যোগের পর। হারুকাকা বিনয়ে বিগলিত হয়ে বলেছিল -তা সম্রাট কি আপনাকে এ বিষয়ে বিশদে জানিয়েছেন নাকি? দেশের পাশে যারা থাকবে পরে তারা দেশের মধ্যে থাকতে পারবে তো? 

এসব ছোটোখাটো অরাজনৈতিক আলোচনার মধ্যেও সম্প্রীতি বেশ অটুট ছিল কিন্তু। দেবেশবাবু বাজার যাবার পথে হারুকাকাকে হেঁকে যেতেন -আরও দেরি করে বাজারে কি পচা বাঁধাকপির পাতা আনতে যাবেন? কান্তিজ্যাঠা আবার বড্ড রাশভারী। বাজারে নিজে যাননি কখনও। মুটের মাথায় করে চাকর বাজার আনতো। তেতলা বাড়ির আভিজাত্য অটুট ছিল তখন। সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। মিলেমিশে কতগুলো পুরনো মানুষ দিব্যি দিন কাটিয়ে যাচ্ছিল। এ পাড়ায় অল্পবয়সী তেমন কেউ নেই। বাইরের লোকেরা এ গলিটাকে বলেই আন্ধি গলি, বৃদ্ধাশ্রমের গলি। তা সেই অন্ধগলির মধ্যে শান্ত পাড়াটা বন্ধ হয়ে গেল ব্যারিকেডে। কান্তিজ্যাঠার ছেলে স্টেটসে কুড়ি বছরের বেশি। ফলে এখানে এরা মিলেমিশে থাকেন। একে অন্যের ভরসা। দেবেশবাবু আবার বেশিই স্বাধীনচেতা। ছেলেমেয়েদের সংসারে থাকলে নিজের মাথাটা উঁচু থাকেনা। আর বড্ড ওদের আদেশ নির্দেশ। ওসব পোষায় না আর। যদিও মেয়ে এই শহরেই থাকে। কিন্তু অন্ধগলিতে তার বড় একটা আসা হয়ে ওঠেনা। 

অন্ধগলিতে সাকুল্যে সাতখানা বাড়ি। বিশাল বড় প্রাসাদোপম না হলেও কান্তিজ্যাঠার বাড়িখানা জব্বর। গায়ে লাগানো দেবেশবাবুর বাড়ি মোটামুটি দোতলা। দেবেশবাবুর গায়ের বাড়িটি একতলা। হারুকাকার ছাইরঙের ঘরদুয়োর। এককালে সাদা ছিল হয়তো। এখন এটাই পার্মানেন্ট রং। ছাই। হারুকাকার বাড়ির ছাদ দিয়ে দেবেশবাবুর দোতলার বারান্দায় অনায়াসে চলে আসা যায়। একদেয়ালের বাড়ি সব। গলির মুখে একটা টিনের চাল দেওয়া নড়বড়ে দোকানঘর। সাইকেল গ্যারাজ। এখন বন্ধ। অন্ধগলির শেষ বাড়িটা, মানে যেখানে গলিটা ধাক্কা খায় সেখানে মিত্তিরদের দোতলা। সে বাড়ির বাইরের বারান্দার ভারী বাহার। জাফরির কাজ করা কাঠের জালি নেমে এসেছে ফুট তিনেক। গোল বারান্দায় বসে বসে বড় রাস্তা দেখতে দেখতে মিত্তিররা মনে হয় একরকমের গর্ব অনুভব করেছে এতকাল। মিত্তিরদের বাড়ির ডানপাশে, মানে কান্তিজ্যাঠার বাড়ির উলটোদিকে বুড়িপিসিদের বাগান ঘেরা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি। ওরা দাবি করে যে এ বাড়ি ইংরেজ সায়েবের বানানো। লাল রঙের যত বাড়ি এরকম বাগান দিয়ে ঘেরা, সব নাকি সায়েবরা সে সময় বানিয়ে ছিল। রকের লোকে অনেক ঠাট্টাই করেছে এ নিয়ে। “আচ্ছা, বুড়িদি, ওই গাছগুলো কি বিলেতের? না মানে ওরা কি বাড়ি তৈরির সময় থেকেই আছে?” এসব কথার উত্তর বুড়িপিসি দেয়নি। বুড়িপিসিদের বাড়ির গায়ে লাগানো বাড়ি নেই। একটু বাগান আড়াল আছে আর কি। ওদের বাড়ির গায়ে রায়চৌধুরীদের বাড়ি। রায়চৌধুরীদের বাড়ি প্রায় গলির মুখে। কিন্তু বড়রাস্তাতে কোনো সদর নেই। থাকা সম্ভব নয়। বরং বড় বড় খড়খড়িসহ জানলাগুলো বন্ধ রাখতে হয়। যা ধুলো! তার ওপর ফুটপাত জুড়ে বড় গাছ আছে তিনটে। ঝাঁকড়া একটা ছাতিম, সরু সরু পাতাসমেত বুড়ো নিমগাছ, আর একটা কদম গাছ। অনেকেই বলেছে নিমের হাওয়া ভালো গো। জানলা কটা খুলে দাও না! কিন্তু রায়চৌধুরী গিন্নি একটু বাতিকগ্রস্ত। ধুলো ঢুকবে যে! এ বাড়ির দোতলার মাথায় ন্যাড়া ছাদ। কেউ ওঠে না। বাড়িটা বিশ্রিরকমের ন্যাড়া। আজকের দিনে ওকে কেউ এরকম করে রাখত না। অনায়াসে সুন্দর একটা বাড়ি হতে পারত ওখানে। কিন্তু ওদের একমাত্র মেয়ে বিয়ে হয়ে বহুকাল বম্বেবাসিনী। আসে বছরে একবার। শীতকালে। তখন গিন্নি বাতের ব্যাথায় কাতর। মেয়ে জামাইকে, নাতিদের তেমন যত্নআত্তি করে উঠতে পারেন না। মনে মনে কষ্ট পান। কিন্তু ওদের ছুটি বড় কম। পুজোয় ওরা আসতে পারেনা। ওদের মহল্লায় নাকি সেসময়ে খুব হইচই। আসা হয়না তাই। রায়চৌধুরীদের দেশের বাড়ি হাওড়া ডিসট্রিক্টে। মাঝে মাঝে তারা গাড়ি চেপে সেখানে যান। দিন কতক কাটিয়ে আসেন। ওখানে তাদের জ্ঞাতিগুষ্টি আছে। 

বুড়িপিসিদের সব কটা ভাইবোন হাঁপানি রুগী। সাত সাতটা ভাইবোন উচ্চশিক্ষিত। সব স্কুল কলেজে মাস্টারি করেছেন। কেউ বিয়ে করেননি। ওই রোগ নিয়ে আবার বিয়ে? অবসর নিয়েছেন সেও অনেকদিন। ওদের ছাত্রছাত্রীরাও সম্ভবত অবসর নিয়েছে। এখন আর তেমন কেউ আসেনা। ওরা বেশ চুপচাপ। দেবেশবাবু মাঝে মাঝে গলা খাঁকারি দেন -বলি রাতদিন কটা শুকনো কাগজে মুখ গুঁজে কি সুখ পাও গো? একটু কি মানুষের মুখ দেখতে নেই? কিন্তু তেমন কেউ বাইরে আসেন না। বুড়িপিসি ছাড়া। ওদের বাড়িতে বারো নম্বর থেকে একটি পরিবার আসে পুরো। স্বামীটি বাগান করে, ছাদ নালা সব পরিষ্কার করে। বাইরের কাজ করে। স্ত্রীটি ঘরের কাজ করে দিয়ে যায়। 

মিত্তিরদের বাড়িতে শুধু ছোট ভাই বিয়ে করে উদ্ধার করেছেন। দেবেশবাবু মাঝে মাঝে বলেন -এই মান্টা যদি বিয়েটা না করত তো তোরা সব না খেয়ে মরতিস। কেউ তো এক গেলাস জল পর্যন্ত গড়িয়ে খাস না। মিত্তিররা চিরকালের ফিচেল। ওরা ওসব কথা গায়ে মাখে না। পাঁচজনের সংসারে একজন গৃহিণী সত্যিই ওদের জন্য যথেষ্ট। দেবুদা কি বুঝবে? তালপুকুরে ঘটি ডোবে না ওদের। সাইকেল গ্যারাজ চালিয়ে মান্টা যা রোজগার করে। বাকি তো ঘটির জল গড়িয়ে খাওয়া। মান্টা বা মানস মিত্তিরেরও বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গিয়েছে। সেদিনের বউটি এখন পৃথুলা রমণী। নিঃসন্তান বলেই কিনা জানা নেই, বাড়িতে তাদের একগাদা পুষ্যি বেড়াল। যার মধ্যে দিলীপ কুমার আর মধুবালা যাকে বলে ফেমাস। ঠিক ফেমাস নয়, প্রায় প্রতিদিন তারা সংবাদের শিরোনামে আসে। মাঝে মাঝেই এবাড়ি ওবাড়ি ছোঁচামি করে পাড়া মাথায় তোলে। 

এহেন পাড়ায় যে এতকালের বসবাসে মানুষগুলো একে অপরের আত্মীয় হয়ে উঠেছেন বলাই বাহুল্য।   

একদিন কান্তিজ্যাঠা নিজের লম্বা কাঁচের জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে নীচের রকের উদ্দেশ্যে গলা খাকারি দিলো। 

কি হল গো কান্তিদা? জিজ্ঞেস করে উঠল সকলে। “কিছু তেমন নয়। বাপন কাল রাতে ফোন করেছিল। বলল, ওদের ওখানে নাকি কী একটা অসুখ এসেছে, সব্বাইকে একেবারে পেড়ে ফেলছে, বুঝলে কিনা। বড্ড ছোঁয়াচে”। কান্তিজ্যাঠার কথায় সকলেই খোরাক পায়। ছেলে তিন বছর চার বছরে একবার দেশে আসে আর সব কিছু দেখেই ‘রাবিশ’! ‘ন্যাসটি’! বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। পরনে একটা হাফ প্যান্ট, গায়ে গেঞ্জি আর হাতে লম্বা জলের বোতল। স্টেটসের ট্রেডমার্ক সিটিজেন। হারুকাকা নির্দোষ মন্তব্য করে -অ। তা বাপন কি এখানে আসছে নাকি? -আমি তো বললুম, চলে আয়। তা এখন নাকি টিকিটের বড় দাম। আর তাছাড়া ওরা খুবই এফিসিয়েন্ট কিনা, ওসব সামলে নেবে। বলছিল, তোমাদের ওখানে হলে যে কী হতো ভাবতেও ভয় করে। দেবেশবাবু চুপ করে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াচ্ছিলেন। একবার কান্তিজ্যাঠার জানলার দিকে চেয়ে বলে উঠলেন -কান্তিদা তোমার পুত্রকে ওদেশের জ্ঞান ওদেশেই রাখতে বলো। সব ব্রেনগুলো এখান থেকে আমদানি করেছে। আমাদের ছেলেপুলেরাই ওদের বাঁচিয়ে রেখেছে। আগে ছিল ব্রিটিশ এখন হয়েছে এই বড়দাদা। দেবেশবাবুর কথায় কান্তিজ্যাঠা রাগ করতে পারেননা। কথাটা সত্যি। বাপন তো খুবই ব্রিলিয়ান্ট ছিল। চলে গেল ওখানে। প্রথমে পড়াশুনোর সুযোগের কথা মনে করেই গিয়েছিল। তারপর সে কি রমরমা! অত রোজগার এদেশে দশ হাতেও করা যায়না। আর ফেরে? 

বলা বাহুল্য কান্তিজ্যাঠার কথায় এত গুরুত্ব কেউই দেয়নি। মানুষটা নীচে নামতে পারেননা। ওই জানলা দিয়ে দিনে দু একবার নীচের দিকে চেয়ে হয় গিন্নি নয় ছেলের কথা বলে সুখ পান। কিন্তু সুখ স্থায়ী হলনা। উড়ো খবর দিলেন দেবেশবাবুও। ছেলেমেয়ে বাড়ি থেকে অদরকারে বেরোতে বারণ করছে। 

সেদিন রক জমজমাট। পাঁচটা বাড়ির সব লোকই প্রায় একতলার রকে এসে পড়েছে। উন্নাসিক রায়চৌধুরী থেকে হ্যা হ্যা করা মিত্তির। সব রকে। সবারই অভিভাবকেরা বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করেছে। দেবেশবাবুর ছেলে অন্য শহরে থাকে। সে বলেছে বাবাকে -রোজ রোজ অত বাজারে যাও কেন? মাত্র একটা লোক! তার ওপরে সব খাওয়া বারণ! কতটুকু বাজার লাগে? একদিন বাজার করে আমরা সাতদিন খাই জানো? অতক্ষণ চুপ করে লেকচার শোনা দেবেশবাবুর ধাতে নেই। তিনি কেটে কেটে বললেন -তোমার অত চিন্তার দরকার নেই। নিজেরা সাবধানে থাকো। তবেই হবে। তোমাদের মতন বেপরোয়া জীবন আমাদের নয়। আমার চলাফেরা নিয়ে জ্ঞান দিতে অকারণে ফোন কোরো না। হারুকাকা পুরো গল্প শুনে চোখ গোল করে ফেলল -বাবা! দেবুদা তো দারুন কামাল করলে! বকে দিলে? চৌধুরী গিন্নি একটু খুঁড়িয়ে হাঁটেন। বাতের শরীর। বললেন -ওদের সব তো বরফ খাবার। ওসব কি আমাদের হেঁসেলে চলে? ওটুকু বললেই বুঝত, বুঝলে দেবু। অত বড় ছেলেকে বকাঝকা ভালো দেখায় না। ওপর থেকে কান্তিজ্যাঠা সায় দিলেন -একথাটা বউদি ঠিক বলেছে। দেবেশের রাগ বড্ড বেশি। 

হাতে বড় ব্যাগটা নিয়ে ঝুম্পা আসছে দেখে সকলেই নড়ে বসলেন। এই একটি যোগসূত্র এঁদের। বাইরের পৃথিবীতে কী কী ঘটনা ঘটছে সব এই গলিতে এসে পৌছয় ঝুম্পা মারফত। মেয়েটা অনেক কিছু জানে। পড়াশোনা জানা মেয়ে। দেবেশবাবুই একদিন বলেছিলেন -আমার চাকরি থাকাকালে যদি দেখা হতো তো তোকে একটা ভালো কাজে ঢুকিয়ে দিতুম, বুঝলি। ঝুম্পা হেসেছে। কলেজ পাশ করে একটা চাকরি ও পেয়েছিল। একটা গয়নার দোকানে সেলসগার্ল। ওই পাঁচহাজারের চাকরির চেয়ে দশ হাজারের আয়ার কাজ ঢের ভালো। ও টাকায় সংসার চলে না। 

কয়েকদিন ধরে বুড়িপিসিদের বাড়ির সেই স্বামী স্ত্রীর পরিবারটি আসছে না। ওদের আসা বারণ। বুড়িপিসিরা নিজেরাই বারণ করেছেন। হোম সার্ভিসে খাবার আসছে। বাড়ির আনাচেকানাচে ধুলো জমছে। হাঁপানি রুগীদের কষ্ট বাড়ছে। এহেন অবস্থায় বাইরের খবরের জন্য ঝুম্পাই ভরসা। বাজার দোকানে গেলেও কিছু জানা যায়। গলির মুখের একমাত্র রিকশা রাজুর। সে অবশ্য ঝুম্পার সব কিছুকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় ঝুম্পার গুজব সত্যি হয়েছে। ওঁরা তাই রাজুর চেয়ে ঝুম্পার ওপরে বেশি নির্ভর করেন। ঝুম্পা এসে হাসি হাসি মুখে দাঁড়ালো। ওদের দিকে চেয়ে বলল -তারপর? এখন তো বাইরে মোটেই বেরনো চলবে না। একটা রোগ এসেছে একথা সত্যি। আর এদেশেও সে রোগ পৌঁছে গেছে। 

দেবেশবাবু ঝুম্পার দিকে চেয়ে চোখ বড় বড় করলেন -এদেশে আসলো কি করে? ও তো বিদেশী ব্যাপার! ঝুম্পা হাসল -কাকু, রেগে কি হবে? এসেছে এসেছে। প্লেনে চড়ে এদেশে সে রোগ পৌঁছে গেছে। 

ও! তাই এমন সতর্কতা? তা যাক। ওঁরা কেউ গলির বাইরে যান না। যান না মানে যেতে পারেন না। ওই একটু আধটু দোকান বাজার ছাড়া কোথাও যান না। আর যেতে হয় ডাক্তারখানায়। এই বয়সে ওটা তো নিত্যপ্রয়োজনীয়। ঝুম্পা কান্তিজ্যাঠার আয়া। সে এসব অসুখ বিসুখের কথাটা ঠিক মতো জানে। গুজব মোটেই নয়। সাহিল বলেছে। ডাক্তারবাবুরা ভীষণ চিন্তায়। এ রোগ নাকি নিদারুণ। 

ওদের পাশ কাটিয়ে ঝুম্পা কান্তিজ্যাঠার বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল। ওপরের বারান্দা লাগোয়া ঘরে এসে সে তার ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বের করে চলে গেল বাথরুমে। ঝুম্পার বাড়ি হাঁটা পথ। এখানে এগার ঘণ্টার ডিউটি সেরে সে সন্ধ্যেরাতে বাড়ি যায়। ঝুম্পার বয়স তিরিশের কোঠায়। অন্ধগলির একমাত্র অল্পবয়সী ডে বোর্ডার। একেবারে স্নান সেরে ঠাকুর ঘরে যেতে হয় ওকে। গিন্নির হুকুম। উনি মেঝেতে বসে ঠাকুরের সেবা করতে পারেন না কিনা। তা ঝুম্পার অসুবিধে নেই। ঠাকুরঘর থেকে এসে সে কান্তিজ্যাঠার কাছে যায়। ধরে ধরে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া থেকে খাবার এনে খাওয়ানো আর ওষুধপত্র করে ওর কাজ শেষ হয়ে যায়। কান্তিজ্যাঠা জানলার ধারে বসে যান। গিন্নি রান্নাঘরের কাজ বলে শুয়ে পড়েন। হ্যাঁ, রান্নাটা ঝুম্পাই সেরে নেয়। ও এখানেই দুপুরের খাবার খায়। তারপর দুপুরের অখণ্ড অবসর। কর্তা গিন্নি ঘুমিয়ে থাকেন। ভেতরের বারান্দার এককোণে চারিদিকে ঘরের আড়ালে ঝুম্পা গিয়ে বসে। একটা সতরঞ্চি পেতে তার ওপরে ও কাগজ কলম নিয়ে রাখে। কিছুদিন ধরে ও রাতের ইস্কুলে পড়াশুনো করায়। এই সময়টা নিজে পড়ে। নষ্ট করেনা। 

ওর পড়াশুনোর বাইরে আর একটা কাজ ও করে। সেন্টারের মিনুদি ওকে একটা মোটা বাঁধানো লাল রঙের খাতা দিয়ে বলেছিল, তুই কেমন গল্প লিখতে শিখেছিস দেখাবি তো। তোর কাছে ওই বুড়োগলির যা গল্প শুনি! লিখে রাখ। শুনবো। ঝুম্পা হেসেছিল -কি? ডায়েরি? মিনুদি ঘাড় কাত করেছিল -হ্যাঁ, ডায়েরি। 

সেই থেকে ঝুম্পা খাতাতে লিখে যায় এ পাড়ার কথা। লেখে ওর দেখা পৃথিবীর কথা। ওর ব্যক্তিগত কিছুই এতে থাকেনা। 

ঝুম্পার ডায়েরিতে হারুকাকা, দেবেশবাবু, চৌধুরী গিন্নি, কান্তিজ্যাঠা, বুড়িপিসি, মিত্তিরদের মধুবালা, ইত্যাদি নামগুলো পাওয়া গিয়েছে। তাই থেকে জানা গিয়েছে এরা কারা। কে কোন বাড়িতে থাকতেন। কে কেমন করে কথা বলতেন। এঁদের জীবন কাটত কি করে। 

ঝুম্পার ডায়েরি থেকে এরপরের অংশ তুলে দেওয়া হল। 

ধাক্কাটা এলো সম্রাটের ওই ভিক্ষে চাওয়ার পরদিন। সারা পাড়া পুলিশে ভরে গেল। মোলায়েম গলায় ঘোষণা হল -কেউ বাড়ি থেকে বেরোবেন না। চারিদিকে শত্রুর শাণিত অস্ত্র। হারুকাকা একতলার ছাদে উঠে আকাশে চোখ মেলল। রোদে ভুরু কুঁচকে চোখ ছোটো করে দেখতে চাইল আকাশে কিছু দেখা যাচ্ছে কিনা। শত্রুর যুদ্ধজাহাজ টাহাজ আর কি। কারণ, এ পাড়ার আশেপাশে তো আর সমুদ্র নেই। সুতরাং নৌবহর আসবেনা। এলে আকাশপথে আসবে শত্রু। তারপর চিরটা কাল যেমন শুনেছেন, আকাশ থেকে টুপটাপ তারার মতো, শিলাবৃষ্টির মতো ঝরে পড়বে বোমা। কিন্তু সেরকম তো চোখে পড়ল না? পুলিশও ছাদে উঠতে বারণ করেনি। এমনকি বাড়ির খোলা অংশে ঘোরাফেরা করতেই বলেছে। একটাই শর্ত, বাড়ি থেকে বেরনো মানা। 

বেশ কাটছিল দিনগুলো। রকে না হোক, লাগোয়া ছাদ সব। ছাদের আড্ডা রোখে কে? প্রথম প্রথম যা হয় আর কি। ছুটির মেজাজ। তার ওপরে শত্রুর অস্তিত্ব টের পাওয়াই যাচ্ছে না! একটা নিশ্চিন্ততা পেয়ে বসছে। কান্তিজ্যাঠা ভেতর বারান্দায় এসে চেয়ার পেতে বসেন। ফোলডিং ইজি চেয়ারে বসে মাঝের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কথা শুনতে পান সকলের। নিজেও কিছু কিছু বলেন। আলোচনায় রোজ রোজ উঠে আসছে অদ্ভুত সব তথ্য। বুড়িপিসির বড়দা, আশির ওপরে বয়স, সেদিন ছাদে উঠেছেন বহু কষ্টে। বললেন -জিওমেট্রিক প্রগ্রেসান বোঝো? সেই হারে ইনফেকশান বাড়ছে। বড়দা অঙ্কের অধ্যাপক ছিলেন। সুতরাং অসুখ নিয়েও তাঁর থিয়োরি চলবে। চলবেই। সকলে সম্ভ্রম করে। কান্তিজ্যাঠা আর বড়দা সমবয়সী। জ্যাঠাই জিজ্ঞেস করলেন -হ্যাঁ চানু? এ কথাটা কোত্থেকে শুনলি? বড়দা বিড়বিড় করলেন -সিকোয়েন্স, বুঝলি কিনা সিকোয়েন্স। একটু স্টাডি করতে হয় নেচারটা। সুবল মিত্তির বিজ্ঞের মতো বলে উঠলেন -হ্যাঁ হ্যাঁ। বুড়িদি তো সারাদিন নেচারের সঙ্গেই আছে। যাকগে। তোমরা সাবধানে থাকো বড়দা। বয়স্ক লোকেদের ভয় বেশি। তার ওপরে তোমাদের যা শ্বাসের রোগ! বড়দা অন্যমনস্ক ভাবেই উত্তর দিলেন -সুবল? সিগারেটটা ছাড়লি? 

সবাইকে আরও বেশি দুশ্চিন্তায় রেখে সংক্রমণ বাড়তে লাগল। শেষ পর্যন্ত হারুকাকা একদিন বলেই ফেলল -এখানে বাইরের কেউ আসেনা। এক ঝুম্পা ছাড়া। তা তেমন হলে ঝুম্পাকে না হয় কান্তিদা এখানেই থাকতে বলবে। অসুখ চলে গেলে ঝুম্পা চলে যাবে খন। এ তো আর সারা জীবনের গল্প নয়। কথাটা সত্যি। কিন্তু ঝুম্পা থাকবে কি করে? তার বাড়ি না গেলে চলবে কি করে? ঝুম্পা নিজে কিছুই বলে না। শুধু লিখে রাখে। গিন্নি কখনও দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এত ভয়ের কথা এরা কেন বলে সবসময়? 

কিন্তু অবস্থাটা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠল ক্রমে। ছাদের আড্ডায় লোক কমতে শুরু করল। কেউ যেন তেমন উৎসাহ পায়না। একটা আতঙ্ক সবদিক থেকে জড়িয়ে ধরছে। কান্তিজ্যাঠার ছেলে সেদিন ফোনে বলে ফেলল -বাবা, দেশের জন্য মন খারাপ লাগছে। তোমাদের কাছে থাকলে ভালো হতো। জ্যাঠা বলেছিল -ওখানে কি অবস্থা রে? উত্তরে বাপন এই প্রথম বলল -একটা ফালতু জায়গা বাবা। আমাদের পাশের বাড়ি, মানে আমাদের থেকে অনেকটা দূরেই, সেখানে এক অ্যাফ্রোঅ্যামেরিকান বুড়োলোক মারা গিয়েছেন। দেখলাম চোখের সামনে। পুলিশ এলো। বাড়িটা সিল করে দিলো। বাড়ির বাকি লোকজন সব ভেতরেই রইল। একটা বড় পলিব্যাগে ভদ্রলোকের বডি ভরে ওরা নিয়ে চলে গেল। এমন অপমানের মরা আর দেখিনি। কান্তিজ্যাঠা দুঃখ পেলেন। সেই তো! তাঁরা তো শুনেছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের সৈনিক নিহত হলে অপরপক্ষ তাকে মর্যাদা দেয় সৈনিক বলে। এ কী ব্যবহার! দেবু কথাটা ভুল বলে না। আপাতত তিনি ছেলেকে বললেন -দ্যাখ বাবা, যদি তেমন মনে করিস চলে আয় কিছুদিনের জন্য। টাকাপয়সা তো দুঃসময়ের জন্যই। নয় একটু বেশি পয়সা দিয়েই টিকিট কাট। -দেখছি বাবা। ছেলে ফোন রেখে দিলো। 

প্রথম দেখা গেল, একতলা বাড়ির উল্টোদিকে বাগানঘেরা বাংলোটায় গাছ শুকোতে শুরু করেছে। রোজ সে গাছে যে জল দেয় বুড়িপিসি। আজ কদিন জল দিতে বেরোয় না। ছাদ থেকে কেউ গলা বাড়িয়ে বলে, কি গো বুড়িদি? গাছপালা যে শুকিয়ে গেল? উত্তর আসেনা। অন্যসময় হলে ঝুম্পা গিয়ে ওদের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে। কী হল? কিন্তু এখন সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়লে মুশকিল। 

প্রত্যেকদিন পুলিশভ্যান এসে লম্বা চোঙায় ঘোষণা করে -ভয় পাবেন না। সম্রাট আপনাদের সঙ্গে আছেন। তিনি প্রজাবৎসল। এ ক্ষণিকের কষ্ট। আমরা আবার নতুন দিন দেখব। সেদিন হারুকাকারা ছাদ থেকে নীচে তাকিয়ে বলল -ওই বাংলো বাড়ির কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। অফিসার এমনিই ক্লান্ত। খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠল -বলাই তো হচ্ছে না বেরোতে! কোথায় বেরোবেন শুনি? পুলিশকে কে না ভয় করে বাবা! হারুকাকা বিনয়ের সঙ্গে বলল -তা নয়, বুড়িদি রোজ গাছে জল দেয় কিনা। শুকিয়ে যাচ্ছে গাছ। ওদের সাত সাতটা ভাইবোনের কারুর গলা পর্যন্ত পাচ্ছিনা কিনা। হারুকাকার বলা শেষ হতেই ভ্যান থেকে লাফিয়ে নামল গোটা তিনেক পুলিশ। তারা ঢুকে গেল বাংলোতে। সকলেই উৎসুক হয়ে দেখছে। খানিক কথাবার্তা কান্নাকাটি ধ্বস্তাধ্বস্তি বোঝা যাচ্ছে বটে। অন্য সময় হলে সকলেই দৌড়ে যেত। এখন তো অসম্ভব। নীচে নামলেই নাকি ডাণ্ডার বাড়ি খেতে হবে। “নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে! আপনারা কি?” অগত্যা উৎকণ্ঠা বুকে চেপে পাড়ার সকলে দেখতে লাগল, বাংলো থেকে একে একে ওদের সাতজনকে বের করা হচ্ছে। বুড়িপিসি ও তার ওপরের দুই দাদা স্ট্রেচারে শুয়ে। বাকিরা ধুঁকতে ধুঁকতে। পুলিশ এ্যাম্বুলেন্সে ওদের তুলতে তুলতে আর একবার চোঙায় মুখ দিয়ে বলে গেল -কেউ বাইরে বেরোবার চেষ্টা করবেন না। অসুখ এ পাড়ায় পৌঁছে গেছে। সমস্ত পাড়াটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। হতাশার ধূসর চাদর ছেয়ে দিলো পাড়াটাকে। কি করে ওবাড়িতে ঢুকল অসুখ? কেউ ভেবে ঠিক করতে পারেনা। তবে কি হোম সার্ভিস থেকে? নাকি মানুষগুলো এই বয়সে নিজের কাজ নিজে করো প্রকল্পে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে গেলেন? হতাশা ছুঁয়ে যায়। তবু সবাই আশায় থাকেন। বুড়িদিরা ফিরে আসবে। খুব তাড়াতাড়িই ফিরে আসবে। 

এখন দিনে একবার করে পুলিশের গাড়ি এসে দেখে যেতে লাগল। আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিছু কিছু সরবরাহ করতে লাগল। কান্তিজ্যাঠা একদিন গিন্নির বায়না শুনে বলেছিলেন -একটু পাকা কাতলার পেটি চাই। পুলিশের লোকটি হেসে বাঁচে না। “না জ্যাঠা, আপনি সত্যিই রসিক। আজ মাছ খেয়ে কাল বাঁচবেন কিনা জানেন না, পাকা কাতলার পেটি চাই?” 

বলা বাহুল্য যে ঝুম্পা আটকে গিয়েছে। তার ভরসা রাজু। রাজু বলেছে -চিন্তা করিস না। ওসব অসুখ আমাদের ঘরে আসেনা। তোর মাকে দেখভাল করে নেবো। আমাদের তো রেশন আছে, রিলিফ আছে। ঝুম্পা মনে মনে চিন্তায় আছে তবু। মাকে কতদিন দেখেনা। ফোনে কথা বলে শুধু। সুবিধে অসুবিধে মায়ের থেকে জেনে নিয়ে রাজুকে ফোন করে। আজ রাতে ডায়েরি টেনে বসল ও। ঘুম আসছে না। লিখতে বসাই ভালো। সারাদিন বড় দুশ্চিন্তায় কেটেছে। কে জানে বুড়িপিসিরা আর সুস্থ হবে কিনা? বয়স্করা নাকি বাঁচে না এই অসুখে। কর্তা গিন্নি আজ খেতে বড় গোলমাল করেছে। দুজনেরই মন খুব খারাপ। সাত সাতটা লোক পাড়ার বাইরে বেরিয়ে গেল। কবে ফিরবে কে জানে? ঝুম্পা যথাসাধ্য বুঝিয়েছে। চিন্তার কারণ নেই। চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে ওদের। এখানে কে দেখত? 

ঝুম্পার খাতার পাতা ভরে উঠছে। 

“শুরু হল যুদ্ধ। শত্রু কে, জানা গেল না। কেন তারা আক্রমণ করেছে জানা গেল না। রেডিওতে শুধু জানা গেল কোনো এক দেশ শত্রুতা করে ছড়িয়ে দিয়েছে এক অদৃশ্য জীবাণু। সে জীবাণুর সঙ্গে কেউ এঁটে উঠতে পারছে না। মাত্র দুটি সপ্তাহে সমস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ওষুধ নেই প্রতিষেধক নেই, সে এক বিভীষিকা”। 

গলির মাথায় পুলিশ সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে। কেউ ঢুকতে পারবেনা। কোনো হকার কোনো দুধওয়ালা মাছওয়ালা কেউ না। ওদিকে দেবেশবাবুদের সাহায্য করে যে মহিলা, মায়া, তার আবার ব্যাঙ্ক একাউন্ট নেই। তাই মাইনে ট্রান্সফার সম্ভব হচ্ছে না। দেবেশবাবুর মেয়ে কঠিন গলায় বকছে বাপকে -কী করেছ এদ্দিন? অনলাইন ব্যাংকিং শেখোনি? এই সময়ে মাইনে পাবো কি কে জানে! এত টাকা আমি পাঠাই কি করে? দেবেশবাবু ঠাণ্ডা গলায় বলেন -তোকে পাঠাতে হবে না। মায়ার ব্যাংকিং শেখা নেই। ও আসলে ওর হাতেই দেবো। মেয়ে আঁতকে উঠেছে -একদম না বাবা! একদম ডাকবে না! আমি অনলাইনে অর্ডার দিয়েছি। মাস্ক আর স্যানিটাইজার পৌঁছে যাবে। মায়াকে এখন ডাকা চলবে না। দেবেশবাবু কঠিন গলায় বললেন -ওরা খাবে কি? মায়ার বরের সবজি বেচা বন্ধ তা জানিস? থাকিস তো কুড়ি মিনিট দূরে। খবর রাখিস না বলে মনে হয়না। থাক। তোকে আর চিন্তা করতে হবে না। দেবেশবাবু ঠকাস করে ফোন রেখে দিলেন। সেদিন বিকেলে ছাদে উঠে কান্তিজ্যাঠার বারান্দার ফোঁকরে তাকিয়ে ডাক দিলেন -ও ঝুম্পা, একবার শোন। ঝুম্পা মুখ বাড়াতেই বললেন, রাজুর হাতে কটা টাকা মায়াকে পাঠাতে পারিস? ঝুম্পার নিজের ব্যাংক একাউন্ট আছে। সে অনলাইনে টাকা তুলতে পারে। দেবেশবাবুর কথায় হেসে বলল -কাকু, তুমি আমার একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দাও। আমি রাজুর ব্যাঙ্কে দেবো। ও তুলে মায়াদিকে দিয়ে দেবে। মায়াদিকে ওর সঙ্গে দেখা করতে বোলো। দেবেশবাবু হতাশ হলেন -আমি যে অনলাইনে টাকা ট্রান্সফার করতে জানিনা রে। 

অগত্যা ঝুম্পাকে ছাদে যেতে হল। দেবেশবাবুর সিঁড়ি ধরে ওদের ঘরেও পৌঁছে গেল ও। তারপর কাকুর ফোনে সব কিছু ডাউনলোড করে ও যখন টাকা পাঠালো দেবেশবাবু উচ্ছ্বসিত। বাঃ! দারুন শিখেছিস তো মা? ঝুম্পা জানে এটুকু না করতে পারলে দেবেশবাবু বা ও, দুজনেই বড় অশান্তিতে থাকত। 

সেদিন রাতে ও ওর স্কুলের অতীনদাকে মেসেজ করল। “স্কুল মিস করছি দাদা। কি করব এখন?” উত্তরে অতীনদার মেসেজ এলো। সঙ্গে কিছু পিডিএফ। কতগুলো বই। মেসেজে অতীনদা নামক ব্যক্তিটি লিখেছেন, ঝুম্পা তুমি কলেজে ঢুকে যা পড়েছিলে ভুলে গেছ নিশ্চয়, তাই এগুলো পাঠালাম। এগুলো অন্যরকম গল্প। পড়ে ফেলো। বার বার পড়লে ঠিক বুঝতে পারবে কী লেখা আছে। কি? ঠিক তো? 

ঝুম্পা হাসে। অতীনদার ছবিটা একটু এনলার্জ করে দেখে নেয়। এখন এখানে আটকে পড়ে স্কুলে যাওয়া হচ্ছেনা। ছেলেমেয়েগুলোর মুখ মনে পড়ছে। ওরাও তো স্কুলে যেতে পারছেনা। অবশ্য তন্ময় সাহিল ওরা বাচ্চাদের খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। সবাইকে বাড়িতেই পড়াশুনো করতে বলছে। ঝুম্পা সে দায়িত্বের কোনো ভাগ নিতে পারছেনা। অন্ধগলি রেড জোন। অতএব বইগুলো পড়ে সময় কাটাতে হবে। না বুঝতে পারলে অতীনদা তো আছেই। 

এরপরে ঝুম্পার ডায়েরি স্থিরমস্তিষ্কে লেখা বলে মনে হচ্ছেনা। যেমন- 

“দেবেশকাকার হঠাৎ খুব পেট খারাপ হয়েছে। কাকা গাল পেড়ে বলল -দ্যাখ ঝুম্পা, চিরটা কাল নিজের হাতে বাজার করে খেয়েছি। এখন এই পুলিশ ছোঁড়াগুলো কী সব বাসি কাশি এনে দিচ্ছে! নিশ্চয় পচা মাছ বা সবজি। বুঝলি। জ্যাঠার পেট খারাপের হোমিওপাথির ওষুধ খেতে দিলাম। এসময়ে ওষুধ আনতে যাবার লোক নেই। পুলিশ এখন নেই। আবার কাল সকালে আসবে। আর এসে যদি শুনতে পায় দেবেশ কাকার অসুখ তাহলে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে চলে যাবে। কোথায় নিয়ে যাবে কেউ জানেনা। বলে অবিশ্যি হাসপাতালে নিচ্ছে। ভয়ানক রোগ। কারুকে সঙ্গে যেতে দেয়না। রোগ ভালো হয়ে গেলে বাড়িতে ফিরিয়ে আনবে। 

...রাত্তিরটা কাটলে বাঁচি। আজ এবাড়িতেই আছি। জ্যাঠাদের রাতের খাবার আর ওষুধ দিয়ে এসেছি। কাকার অবস্থা তো মোটেই ভালো নয়। একেবারে কলেরা রুগীর মতো পায়খানা হচ্ছে। বমি হচ্ছে। কাকা নিস্তেজ হয়ে আসছে। বলছে শেষমেশ কলেরা হল? কাকিমা বহুকাল মারা গিয়েছে। একার সংসার। কাকা বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে। কাকার নির্দেশ কড়া। কারুকে ফোন করবিনা ঝুম্পা। ওরা ওদের মতো থাকুক। ফলে, ছেলেমেয়েকে ফোন করা হয়নি। ভয়ে ভয়ে সেবা করছি। জ্যাঠা তো ক্যান্সারের রুগী। জেঠিমা বাতের। কোনোভাবে ছোঁয়া লেগে গেলে কী করব জানি না”। 

পরের দিন সকালে যখন পুলিশের গাড়ি এলো তখন দেবেশবাবুর শরীর নীল। পুলিশ ছুঁয়ে দেখল না। একটি কমবয়সী সদ্য চাকরি পাওয়া ছেলে বলল -রাইগর শুরু হয়ে গেছে, তাই না? অফিসার বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়লেন -রাইগর মর্টিস। এ্যাম্বুলেন্স যখন এলো তখন দেবেশবাবুর ঘর থেকে বিশ্রী গন্ধ উঠছে। মৃত শরীরটা বের করে নিতে নিতে ওরা একদল ওভারঅল পরা মানুষকে লাগিয়ে দিলো বাড়িটা স্যানিটাইজ করতে। ঠিক যেন কতগুলো রোবট। 

মনটা ভীষণ ভেঙে গিয়েছে ঝুম্পার। ভালো করে কাঁদবার ফুরসত নেই। তবু স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। জ্যাঠা ক্যান্সারের পেসেন্ট। এখন ঝুম্পা ভালো করে স্নান সেরে নিয়েছে। নানাভাবে নিজেকে জীবাণুমুক্ত করেছে। একটা ছোট্ট মেসেজ পাঠিয়েছে অতীনকে। হারাধনের আর একটি ছেলে শেষ। 

ঠিক তখনই স্বাস্থ্য দফতরের একটি লোক এসে দাঁড়ালো ঝুম্পার সামনে। “তিন মিটার দূরত্ব রাখুন। এবার বলুন, আপনি কি যথাযথ প্রটেকশান নিয়ে এনার দেখাশুনো করছিলেন? যা শুনলাম আপনি অলরেডি একজন ক্যান্সার পেসেন্টের দেখভাল করেন। তাহলে কি করে এনাকে দেখতে এলেন? এত টাকার লোভ আপনাদের যে বলার নয়!” লোকটার গলা থেকে বিরক্তি ঝরে ঝরে পড়ছে। ঝুম্পা বলতে চেয়েছিল, এরকম লাগোয়া বাড়িগুলোতে সবাই সবার জন্য হাজির থাকে। এখানে ওরকম হিসেব চলেনা। কিন্তু কিছুই বলা হয়ে উঠল না। লোকটা ঘুরে গিয়ে কাউকে একটা ডাকল। তারপর বলল -এই মেয়েটা মনে হচ্ছে সাইলেন্ট ক্যারিয়ার। বোঝা যাচ্ছে না। শুধু শুধু টেস্ট কিট নষ্ট করতে হবেনা। দেখাই যাচ্ছে যে ও এদের সবার সঙ্গেই টাচে আছে ও ছিল। ফলে অনেকেই অসুস্থ হলেন। এর কিছু হল না। সুতরাং প্লেন লজিক বলছে এ ক্যারিয়ার। এসিম্পটমেটিক। অন্য লোকটার মুখও হেলমেটের মতন মাস্কে ঢাকা। কারুর মুখ স্পষ্ট নয়। সে লোকটা মাথা নেড়ে সায় দিল। আগের লোকটা রায় দেওয়ার ভঙ্গিতে ঘোষণা করল -তুমি এই পাড়া ছেড়ে বেরোবে না। এখন এই বাড়িতেই কোয়ারানটাইনে থাকো। যতদিন না সরকারি নির্দেশ আসে এখানেই থাকবে। 

ঝুম্পা নিস্তেজ হয়ে গেছে। বসে পড়েছে বারান্দায়। মিত্তিরদের ওরা তুলে নিয়ে গিয়েছে। এখানে থাকা চলবে না। বড় কোয়ারানটাইন সেন্টার হয়েছে। ওদের টাকাপয়সা মোটামুটি আছে। সেখানে নজরে থাকবে। রায়চৌধুরীদের কপাল ভালো। ওদের দেশের গ্রামের মানুষ ওখানকার এমএলএ। তিনি গাড়ি দিয়ে ওদের দেশে নিয়ে গেছেন। হারুকাকা নিজের ঘরের রাস্তার দিকের জানলা দরজা যেভাবে বন্ধ রেখেছে যে কারুর বোঝার উপায় নেই যে বাড়িতে কেউ আছে। কান্তিজ্যাঠা আর জেঠিমাকে ওরা নিয়ে যেতে ভরসা পেলো না। কি থেকে কি হবে কে জানে? অলরেডি ইনফেক্টেড কিনা কে বলবে? বিশেষত এই মেয়েটাই তো ওনাদের দেখাশুনো করছে! ওরা এখানেই থাকুন বরং। 

ওদিকে গলির মুখে ব্যারিকেডের সামনে তখন জোর গণ্ডগোল। দেবেশবাবুর মেয়ে চিৎকার করছে -আমার বাবাকে আমাকেই দেখতে দেবেন না? এ কেমন ব্যাপার? অল্পবয়সী ছেলেটি মিষ্টভাষী। ড্যামেজ কন্ট্রোলে আছে হয়তো। সে বলল -ম্যাডাম, নিশ্চিন্ত থাকুন। আপনার বাবা কষ্ট পাননি। মাত্র একটি রাতেই তাঁর কষ্ট শেষ। এখন দেখা না দেখা সমান। দেবেশবাবুর মেয়ে কেঁদেকেটে বলছিল -আমার ভাই আসুক ব্যাঙ্গালোর থেকে। তারপর আপনারা নিয়ে যান। ছেলেটি আবার হেসেছিল -হয়না। নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের খুব দ্রুত দেহ সৎকার করতে হবে। ম্যাডাম, এটা প্যান্ডেমিক। ভুলবেন না। গলির মোড়ে রাজুর রিক্সার আড়ালে বসে তখন গোপু পাগলা মুড়ি কিছু খাচ্ছিল আর কিছু ছড়াচ্ছিল। দেবেশবাবুর মেয়ের দিকে চেয়ে বলল -হ্যাঁ রা রাজু? এরে কই এদ্দিন দেকিনি তো? রাজু কটমট করে চাইল -বড়লোকেদের কতায় কতা কেন শুনি? 

সেদিন দেবেশবাবুর বাড়ি স্যানিটাইজ করতে গিয়ে এক ছোকরা ঝামেলাটা পাকালো। পুরনো বাড়ির নড়বড়ে তারের জালে গেল শর্ট সার্কিট হয়ে। বাড়িটা ফাঁকা ছিল যদিও। কিন্তু আগুন তো আর শুধু ফাঁকা বাড়িতে আটকে থাকেনা। কান্তিজ্যাঠাদের পূবের দেওয়াল হাঁ হাঁ করে জ্বলে উঠল। দমকল এসে পড়ল তাড়াতাড়ি। আগুন নিভল। জ্যাঠাদের দেওয়ালটা বোমায় পোড়া বাড়ির মতো চেয়ে রইল। 

দেবেশবাবুর বাড়ি থেকে সবাই বেরিয়ে এসেছিল সময়মত। শুধু সেই বোকা ছেলেটা বেরোতে পারেনি। লাশটা বেরিয়েছিল। 

পাড়া এখন সবসময় চুপচাপ। ঝুম্পার পড়াশুনো থমকে আছে। ভয় চেপে ধরছে। সেদিন রাতে ও অতীনকে মেসেজ করল -কোল্যাটারাল ড্যামেজ হিসেবে সাফাইয়ের ছেলেটা মরল। কাল যদি আমি মরি? উত্তর এলো একটা চোখ পাকানোর ইমোজি। আমাকে সাইলেন্ট ক্যারিয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। আপাতত এখানেই বন্দী। এবার উত্তর এলো। “চিন্তা কোরো না। সাহিল বা তন্ময় মাঝরাতে ব্যারিকেড পেরিয়ে দেখে আসবে। জিনিসপত্র দিয়ে আসবে। মায়ের জন্য ভেবো না। আমরা দেখে নেবো ওদিকটা।” 

সেদিন গভীর রাতে সকলেই যখন ঘুমের ভান করে বিছানায় শুয়ে তখন ঝুম্পা একা একা পিডিএফগুলো নাড়ছিল। কিছুতেই মন বসছেনা। হঠাৎ একটা বীভৎস আওয়াজে চমকে ও দৌড়ে ছাদে চলে গেল। রাতের ভয় পেলো না। মানুষের ভয়ও না। পাড়াটা খালি। এরকম আওয়াজ কোথা থেকে এলো? ছাদে গিয়ে দেখতে পেলো, বুড়িপিসিদের বাংলোর অর্ধেকটা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। রায়চৌধুরী বাড়ির দিকের অংশটা। একটা ঠাণ্ডা স্রোত ওর শিরদাঁড়া দিয়ে নামতে লাগল। তাহলে কি বুড়িপিসিরা আর ফিরবেনা? ছাদেই বসে পড়েছিল ও। 

নীচে নেমে টের পেলো জ্যাঠারা ঘুমে অচেতন। ও ইচ্ছে করেই ঘুমের ওষুধের ডোজ বাড়িয়েছে। ঘুমটুকুও যদি না হয় তবে বেঁচে থাকা কেন? 

ঝুম্পা সেদিনের ডায়েরিতে লিখেছে -অন্ধগলির তিনজন এখনও আছে। আমাকে নিয়ে চারজন। এবাড়ির কর্তা গিন্নি আর হারুকাকা, এবং আমি। রোজ রোজ নিজের অজান্তেই সময় গুনি। আর কতদিন আতঙ্কে কাটবে? কেউ তো বলছেনা অসুখ কমল কিনা! আমাকে এবার পালাতে হবে। জ্যাঠা আর জেঠিমাকে ফেলে যেতে ভয় করে। কি করে চলবে ওদের? আর হারুকাকা? সেদিন বলছিল, বুঝলি ঝুম্পা, দেবুদার তো ভালো পয়সাকড়ি ছিল। আমি এই কটা টাকার সুদে চালাই, তো সেই সুদ এখন আর ব্যাংক দেয়না। আসল ভেঙে কদ্দিন চলে বলতো? দেবুদার বদলে আমি গেলেই ভালো ছিল রে। ত্রাণের লাইনে তো আর মুকুজ্যেরা কোনোকালে দাঁড়ায়নি। কি বলি হারুকাকাকে? সরে এসেছিলাম। 

ঝুম্পার ডায়েরি থেকে জানা গিয়েছে ও গলিতে এরপরও চার চারটে প্রাণ বেশ কিছুকাল বেঁচে ছিল। রাতের অন্ধকারে বাংলোর গুঁড়িয়ে দেওয়া অংশে খোঁড়া বিশাল গর্তে বাইরে থেকে অসুখে মড়া মানুষগুলোকে এনে টাল করে ফেলা হতো। তারপর ওপরে ডিজেল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হতো। এতটা আতঙ্কই কি ওদের কাল হলো? সে উত্তর দেবার আগেই ডায়েরি শেষ। কান্তিজ্যাঠা আর জেঠিমার চলে যাওয়ার সময় বা হারুকাকার ভবিতব্য, এসব জানা গেলনা। 

শুধু একটা লাইন ছিল। 

“One by one, the college students fall asleep into a heightened state of dreaming, but… they don’t wake up. The survivors are forced into quarantine on campus and forbidden from leaving in case they spread the illness to the wider population”। 

গলিটা এখন স্বপ্নের দুনিয়ায়। 

কস্তুরী ডায়েরিটা মুড়ে রাখে। ঘুমন্তপুরী। কিন্তু এই মেয়েটা কে? ডায়েরিতে ও লিখেছে ও কান্তিজ্যাঠার আয়া। এদিকে এমন লিখেছে? সাহিলের সঙ্গে দেখা হলে জেনে নেবে খন। ফোনে একটা মেসেজ ঢুকল। এক জুনিয়র চাকরি হারিয়েও পাড়ায় পাড়ায় খবর যোগাড় করে। লিখেছে -এদিকে স্লামে সেবাশ্রমের মহারাজরা গাড়ি ভর্তি করে গরম ভাত ডাল এনেছিল। ভিডিও পাঠালাম দেখো। পাড়ার দাদার প্রিয় ভাইয়েরা তাদের হটিয়ে দিয়েছে। ত্রাণ আমরা দেবো, যান বাড়ি যান। তারপর শুধু শুকনো পাউরুটি ধরিয়েছে। বস্তি উত্তাল। ব্যাটারা ভেগেছে। পুরোটা তুলেছি। দেখো। সোশ্যাল মিডিয়াতে দেবো? দেখে বলছি, কস্তুরী উত্তর দেয়। 

সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিডিও চলে গেছে। যদিও কস্তুরী জানে এ মাত্র কটা দিনের উত্তেজনা। লোকে খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যায়। পাব্লিক মেমরি ইজ শর্ট।

1 comment:

  1. খুব কঠিন এমন হিমশীতল লেখা নামানো; দক্ষতা প্রশ্নাতীত।

    ReplyDelete