0

ধারাবাহিক - সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

Posted in

ধারাবাহিক


এক কিশোরীর রোজনামচা - ২৯
সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়



Diary Entry - 27
7th. November, 1942, Saturday.



প্রিয় কিটী,

মায়ের মেজাজ সব সময় তুঙ্গে। সবসময় আমাদের তিনজনের কাউকে না কাউকে, (বেশীরভাগ সময় আমাকে) মেজাজ দেখিয়েই যাচ্ছেন। কেন যে যাচ্ছেন, তা’ বোধহয় নিজেও জানেন না। বিশেষকরে আমার প্রতি মায়ের হাব-ভাব,আচার আচরণ সবসময় বিরস আর নিরানন্দময় । একটা সত্যি কথা কি' জান, বাবা বা মাকে কখনই তুমি মারগটের প্রতি বিরস বা বকাবকি করতে দেখতে পাবে না। কারণ তাঁদের বিরসতার অর্ধাংশের বেশীই ত' আমার জন্যেই বরাদ্দ। তার মানে কি, মারগটের জন্যে বকাবকি করার দরকার হয় না?সবটাই আমার জন্যে হয়? তুমি একটা ঘটনা শোন, তা'হলে বুঝতে পারবে, আমার কথার সত্যতা। 

গতকাল মারগট একটা বই পড়ছিল। বইটাতে বেশ কয়েকটা সুন্দর সুন্দর ছবি ছিল। মারগট বইটা পড়তে পড়তে, পাতা মুড়িয়ে রেখে, নিজের কাজেই একবার ওপরে গিয়েছিল। পাতা মুড়ে বইটা উল্টে এমনভাবে রেখে গিয়েছিল, যাতে ওপর থেকে এসে আবার পড়তে পারে। আমি তখন ঘরেই ছিলাম। কিছুই তেমন করছিলাম না। মারগট উল্টে রেখে যাওয়াতে, আমি বইটা হাতে নিয়ে, ওর পড়ার জায়গাটাকে আঙ্গুল দিয়ে ধরে, বইটার মধ্যেকার সুন্দর ছবিগুলো দেখছিলাম। মারগট ফিরে এলেই ওর বই আমি ওকেই ফেরত দিয়ে দিতাম। ঠিক যেমন ভেবেছিলাম, মারগট ওপর থেকে নীচে নেমে দেখে, "ওর" রেখে যাওয়া বইটা আমার হাতে আর আমি বইটার ছবিগুলো দেখছি। আমাকে ও'ভাবে দেখে, ওর কপালটা হঠাতই কুঁচকে গেল, আর আমার দিকে ভ্রূ-কুঁচকে তাকিয়ে কোন কথা না বলে, সরাসরি আমার কাছে বইটা ফেরত চাইল। আমি মারগটের দিকে তাকিয়ে "দিচ্ছি" বলে, আরও কয়েকটা ছবি দেখছিলাম। আমাকে বইটা তৎক্ষণাৎ ফেরত না দিতে দেখে, হঠাতই মারগট আমার ওপর ভয়ানক রেগে গেল। আমি বুঝতেই পারলাম না, কেন মারগট আমার ওপর রেগে গেল!! মারগটকে রাগতে দেখে, আমার মাও ওর সঙ্গে যোগ দিয়ে, অকারণে আমায় ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, "মারগট বইটা পড়ছিল, এক্ষুনি ও'টা ওকে দিয়ে দাও।" মায়ের উচ্চগ্রামে রাগত কণ্ঠস্বর শুনে বাবাও ঘরে ঢুকলেন। ঘরে ঢুকে কোন কিছু না শুনে, না বুঝে, মারগটের কোঁচকানো কপালের ভ্রূ দেখে হঠাতই আমায় বকতে শুরু করলেন। আমার মনে হল, আমি যেন এক ভয়ানক অন্যায় করে ফেলেছি। বাবা বললেন, "তোমার কাছ থেকে মারগট যদি কোন বই চেয়েই থাকে, তোমার উচিৎ এক্ষুনি সেটা তাকে দিয়ে দেওয়া।" আমি বাবা বা মাকে কোন কথা না'বলে হাতের বইটা ধপ করে খাটের ওপর নামিয়ে রাখলাম, তারপর গট গট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম, যাতে ওরা বুঝতে পারে, যে ওদের ব্যবহারে আমিও রেগে গেছি। আমি ওদের এই ব্যবহারে যতটা না মর্মাহত বা অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম, তার চেয়ে বেশী বিষয়টা আমার কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর বলে মনে হয়েছিল। আসল বিরোধের কারণ বা ঝগড়ার বিষয় না জেনে, হঠাত করে ঘরে এসে, বাবা আমায় বকতে শুরু করলেন। আমার মতে বাবা মোটেই এটা ঠিক করেন নি। প্রথমে মা, তারপর বাবা এইভাবে অকারণে আমায় বকাবকি শুরু না করলে, আমি হয়তঃ অনেক আগেই মারগটকে বইটা দিয়েই দিতাম। আর আমি বইটা পড়ছিলামও না। সুতরাং কাউকেই কিছু বলতেই হোত না। কিন্তু তাঁরা দু'জনেই সেটা করলেন না। উল্টে আমায় অকারণে বকতে শুরু করলেন। ঠিক যেন ওরা প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন, যে মারগটের প্রতি সবসময় ভয়ানক এক অন্যায় হয়, আর তার প্রতিকার করাটা এক্ষুনি ভীষণ জরুরী ।

আমি ত' এটা জানি, যে মা সবসময় মারগটকে আগলে রাখেন, আড়াল করে রাখেন। শুধু তাই নয়, বলা ভাল, মা আর মারগট সবসময় পরস্পরকে রক্ষা করে চলে। তাই মাকে হয়তঃ দোষ দেওয়া যায় না। আমি এটা দেখতে অভ্যস্ত। মারগটের বিষয়ে মায়ের বিজ্ঞতাপূর্ণ মন্তব্য আর মারগটের পরিবর্তনশীল "মুড" এই দুটো বিষয়েই আমি অভ্যস্ত এবং ওয়াকীবহাল। কিন্তু বাবা, তার কাছে এটা আমি প্রত্যাশা করিনি। 

তবে আমি এ'সব সত্ত্বেও ওদের ভালবাসি। আর ভালবাসব না'ই বা কেন, ওরা আমার মা, আর মারগট আমার বড়বোন (দিদি)। তবে বাবার বিষয়টা আলাদা। বাবা যদি আমায় কখনও মারগটের উদাহরণ দিয়ে বকাবকি করেন, কিংবা আমার পরিবর্তে মারগট যা' করেছে, সেটাকে ভাল বলেন, মারগটের অকারণে প্রশংসা করেন বা তাকে আদর করেন, তা'হলে ভিতরে ভিতরে আমি কেমন যেন যন্ত্রণা অনুভব করি। তুমি বলবে এটা আমার হিংসা, আমি কিন্তু তা’ মানব না। কারণ আর কিছুই নয়, আমি বাবাকে ভীষণ ভালবাসি। বাবাই আমার জীবনে একমাত্র পুরুষ, যার দিকে আমি কারণে অকারণে তাকিয়ে থাকি। আমার মনে হয়, আমি তাঁকে পৃথিবীর যেকোন পুরুষের থেকে বেশী ভালবাসি। কিন্তু গতকাল তিনি মারগটের বিষয়ে আমার সাথে যে ব্যবহারটা করেছেন, সেটা অবশ্যই ঠিক করেন নি। হতে পারে মারগট পৃথিবীর সবথেকে মনোরম, মিষ্টি আর সুন্দর মহিলা। কিন্তু তা' সত্ত্বেও আমাকে কি অগ্রাহ্য করা যায়? আমারও নিজেকে সুন্দর বলে দাবি করার পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু আমার পরিবারের সকলে আমায় একটি কম বুদ্ধি সম্পন্ন প্রায় "গবা" মার্কা মেয়ে সদস্য বলে মনে করে। তাই আমার সাথে কেউ কখনও ভাল ব্যবহারও করেন না। আমায় সবসময় আমার অপরাধের জন্যে দু'বার শাস্তি পেতে হয়। প্রথমে সবার কাছে খুব খারাপভাবে বকুনি খেতে হয়, তারপর শুনতে হয় আমার ব্যবহার কি'ভাবে অন্যকে আঘাত করেছে। এই দুটো বিষয়েই সবাই আমাকে কথা শুনিয়েই ছাড়ে। আমার প্রতি সকলের এই বিশেষ "অতিরিক্ত অনুকম্পা" আমার আর সহ্য হচ্ছে না। আমি চাই বাবা আমার কথাটা বুঝুক। আমি বাবার কাছ থেকে কি'রকম ব্যবহার প্রত্যাশা করি, সেটা যে আমি পাচ্ছি না, এটা বাবার জানা দরকার।

এ'সব কথা লিখলাম বলে ভেব না যে, আমি মারগটকে হিংসা করি। আদৌ তা' আমি করি না। আর সবথেকে বড় কথা, আমি হিংসা করবই বা' কেন? সে আমার থেকে ভাল, বা, সে সুন্দরী, এ'সবের জন্যে কখনই আমি তাকে হিংসা করি না। আমি শুধু একলষেঁড়ের মত, আমার বাবার ভালবাসা প্রশংসা, এ'সব কিছুর ওপর একচ্ছত্র অধিকার চাই। সেটা আমি কারুর সাথে ভাগ করতে পারব না। শুধুমাত্র তার মেয়ে হিসাবেই তার ভালবাসা চাই, তাই নয়, আমি অ্যানি হিসাবেও তার ভালবাসা চাই। আর তা কারুর সঙ্গে আমি ভাগ করতে পারব না।

সত্যি কথা বলতে কি, আমি বাবাকে একান্তভাবে নিজের করে জড়িয়ে ধরে থাকতে চাই। করণ বাবাকে জড়িয়েই আমি আমার পরিবারের আর সকলের অনুভূতি খুঁজে পাই। বাবাকে বাদ দিলে, পরিবারের আর কারুর প্রতি কোন বিশেষ অনুভূতি আমার মধ্যে জাগে না। বাবা ঠিক জানেন না, হয়তঃ বা' বোঝেন না, যে মায়ের প্রতি আমার অভিব্যক্তির জন্যেও আমার বাবাকেই প্রয়োজন। মায়ের প্রতি আমাদের অনুভূতির বিষয়েও বাবা খুবই সচেতন। তাই মায়ের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে, বাবা আমাদের বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন, যে, আমাদের ঠিক কোনটা করা উচিৎ আর কোনটা করা উচিৎ নয়। তবে এ'বিষয়ে বাবা সাধারণতঃ সরাসরি কিছু বলতে চান না। এমন'কি কোন কোন সময় আমাদের প্রতি করা মায়ের আচরণে কোথাও কোন ঘাটতি থাকলেও, তিনি সেটা আমাদের বলতে বা দেখিয়ে দিতে চান না। মাকে সরাসরি প্রথমেই কিছু না বলার, কারণ বোধহয়, প্রথমতঃ তাতে তার মনে আঘাত লাগতে পারে ; আর দ্বিতীয়তঃ মায়ের প্রতি আমাদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমার প্রতি মায়ের আচরণে প্রায়শই অনেক ঘাটতি থেকেই যায়। সবসময়, সত্যি কথা বলতে কি, আমার পক্ষে চুপ করে থাকাও সম্ভব হয় না, বা থাকাটাও বেশ কষ্টকর। বাবা স্বাভাবিকভাবেই চান, আমরা যেন মায়ের বাধ্য হয়ে চলি। কিন্তু আমার প্রতি মায়ের অহরহ কটাক্ষ আর বক্রোক্তি , এ'সব ছাড়াও আমার সঙ্গে ব্যবহারে মায়ের মুখমিষ্টতার অভাব, ইত্যাদি স্বত্বেও আমি কখনই এটা বিশ্বাস করি না যে, মা আমার সাথে ইচ্ছা করে খারাপ ব্যবহার করে, বা মায়ের যেকোন ব্যবহারই খারাপ। আমার কোন দোষই নেই। এটা ঠিক যে আমি অধিকাংশ সময়ে, বা প্রায় ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু ভুল করি। আসলে আমার যেটা অভিযোগ, তা'হল, মা আমার যে কোন ভুলই একটু বেশী বড় করে দেখেন। এটা তিনি নিশ্চিতভাবে মারগটের ক্ষেত্রে করেন না।

মারগটের সাথে আমার অনেক ক্ষেত্রেই অমিল আছে। সেজন্যেই মা বা বাবার ক্ষেত্রে আমরা দু'জনে একই রকম চিন্তা করি না। এর একটা বড় কারণ হল, দু'জনের পক্ষে একই রকম চিন্তা ভাবনা করা সম্ভব নয়। দু'টো মানুষ ত' আর এক হতে পারে না। তা'ছাড়া আমি, মায়ের আচার আচরণ কেমন, এ' বিচার করতে পারি না। বিষয়টা এমনই, যার সম্পর্কে বিচার করা আমার শোভা পায় না। আমি কেবল আমার মাকে মা' হিসাবে দেখতে পারি, তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিতে পারি। মা' আমাকে মেয়ে হিসাবে, সেই সম্মান বা আমার প্রাপ্য সম্মান দেন কি'না, আমি জানি না। আমার মনের মধ্যে মায়ের একটা ছবি আছে। আমি সেই ছবিটা, আমার মা'কে বাদ দিয়ে, নিজের মনের কল্পনায় রঙ দিয়ে এঁকেছি। আমার কল্পনায় লুকানো আছে, আমার মা কেমন হবে, আমার বাবার স্ত্রী কেমন হবে ---- এ'সবই আমি আমার মনের চোখ দিয়ে দেখতে পাই। আমার কল্পনার সেই মহিলাকে আমি মা বলে ডাকতে চাই। আমার সেই কল্পনার সঙ্গে আমার চারদিকের এই বাস্তবের কোন মিল না'ও থাকতে পারে,--- আসলে নেই।

আমি সব সময় মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি,যে, মায়ের ব্যবহারের খারাপ দিকগুলোর দিকে নজর দেব না। আর যদি কোন ভাবে নজর পড়েও যায়, তা'হলে সেগুলো আমি মনে রাখব না। আমি শুধু মায়ের ব্যবহারের ভাল দিকগুলোকেই দেখতে চাই; আর সেগুলোকেই শুধু মনে রাখতে চাই। আমি আমার মায়ের মধ্যে ভাল দিকগুলোকে আমার মনের কল্পনার মধ্যে দিয়ে দেখার বা খোঁজার চেষ্টা করলেও, তা' খুঁজে পাই না। কিন্তু বলতে পার, তাতে কার কি ক্ষতি বৃদ্ধি হল ? আমার মা অথবা আমার বাবা কেউই আমার মনের মধ্যেকার এই না পাওয়ার শূন্যতাকে বুঝতেই চান না। এটা অবশ্যই তাঁদের ব্যর্থতা। আমি জানি না পৃথিবীতে এমন কোন বাবা বা মা আছেন কি'না যারা তাঁদের ছেলে মেয়ের মনের চাহিদাকে বুঝতে পারেন ? এবং শুধু বোঝা নয়, তার মর্যাদাও দিতে পারেন ?

মাঝে মাঝেই আমার মনে হয়, ঈশ্বরও চেষ্টা করছেন, আমি যাতে আমার মনের মত মা'কে খুঁজে পাই। অন্ততঃ উনি চান আমি যেন এই চেষ্টাটা ক্রমাগত চালিয়ে যাই। কারুর কোন নিদর্শন বা উপদেশ ছাড়াই আমি একদিন ঠিক খুঁজে পাব। তারপর আমি আমার কল্পনার মাকে খুঁজে পাওয়ার পর, আমার মানসিক জোর আরও অনেকগুণ বেড়ে যাবে। আমি জানি, তোমাকে লেখা আমার এই চিঠি আমি ছাড়া আর কে'ই বা' পড়বে ? একমাত্র আমি ছাড়া কে আর আমায় শান্তি দেবে? কিন্তু দুঃখের কথা হল, আমি যখনই এই শান্তি আর আনন্দকে খুঁজি, তখনই মনে মনে আমি দুর্বলতা আর অসন্তুষ্টিতে ভুগতে শুরু করি। আসলে আমার অনেক দোষ আছে। যেমন এইধরনের কল্পনা করা বা মিথ্যা অনুসন্ধানের নামে অসন্তুষ্টিতে ভোগা। এর কোনটাই আমার ঠিক কাজ বা উচিৎ কাজ নয়। আমি এ'সবই জানি। প্রতিদিন আমি নিজেকে বোঝাই, বার বার বোঝাই, যে, যা ভাবছি, তা ভাবা ঠিক নয়।

আমার মনের চিকিৎসার প্রয়োজন। হয়তঃ কোন দিন আমার মনে হয়, অ্যানি অনেক সংবেদনশীল হয়ে গেছে ; এবং সেভাবেই সে সব কিছু বিচার করতে চাইছে। তারপর দিনই অ্যানির বুদ্ধি হয়ে যায় ছাগলের মত, যে কিছুই বোঝে না, কিছুই জানে না। কেবল ভাবে সে তার পড়ার বিভিন্ন বই থেকে অনেক ভাল ভাল কথা শুনেছে, আর অন্ধের মত বিশ্বাস করেছে। অথচ ভেবে দেখ, আমি শিশুও নই, অথবা কোন আদুরে ন্যাকা খুকিও নই, যে, সে যা বলবে বা যা করবে, তাতেই সকলে হেসে উঠবে!! আমি একটি মেয়ে যার নিজস্ব ভাবনা, চিন্তা, পরিকল্পনা আছে, কিন্তু তার কোনটাই আমি বাস্তবায়িত করতে পারি না। তার কোনটাই আমি সঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না। আমি রাত্রে যখন বিছানায় শুয়ে থাকি, তখন কত অদ্ভূদ চিন্তা, জীবন বিষয়ে ধারণা, আমার চারপাশে যারা আছে, তাদের বিষয়ে ভাবনা মনের মধ্যে বুদবুদের মতো ওঠে, আর মনের হাওয়ায় ভেসে ভেসে বেড়ায়। আমার মনে হয়, আমার চারপাশের লোকজনেরা যাদের সাথে আমি অহরহ গায়ে গা লাগিয়ে চলে ফিরে বেড়াই, তারা কেউই আমায় সঠিকভাবে বোঝে না, বা, বোঝার চেষ্টা করে না। আর তাই দিনের শেষে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমি আমার ডাইরির কাছে ফিরে ফিরে আসি। আমি এখানেই একমাত্র আমার মনের সব কথা বলতে পারি; আমি কথা বলা শুরু করে শেষ করতে পারি। আর সেটাও আমার ইচ্ছামত। প্রিয় কিটী, আমার এত ভাল শ্রোতা, যে বিনা বাক্যব্যয়ে আমার সব কথা শোনে। কোনরকম উত্তর দেয় না, সব কথা মনে রেখে দেয়। আমি ভুলে গেলে আমায় মনে করিয়ে দেয়। আমি তাকে কথা দিয়েছি, আমি সারাজীবন তার সাথে আমার কথা চালিয়ে যাব। কোন শক্তিই এ'কে বন্ধ করতে পারবে না। আমি এ'ভাবেই আমার মনের সব কথা তাকে জানাব, আর তার চোখ দিয়ে দেখতে দেখতে আমি আমার চোখের জলকে সংবরণ করব। আমি শুধু চাই এমন একজনকে, যে আমায় ভালবাসবে আর এইভাবে মনের ভাব প্রকাশে উৎসাহিত করবে।

আমায় দোষ দিও না। মনে রেখ, আমার মনের এইসব অনুভূতিগুলোকে চেপে রাখতে রাখতে, আমিও কোনদিন ফুটন্ত বারুদ বা আগুনের গোলা হয়ে উঠতে পারি।

- ইতি
অ্যানি।

0 comments: