undefined
undefined
undefined
রম্যরচনাঃ পিনাকী চক্রবর্তী
Posted in রম্যরচনা
রম্যরচনা
হাঁড়িপ্রসাদ
পিনাকী চক্রবর্তী
সরস্বতী পুজো এলেই আমার মনে পড়ে পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরসিয়ার কথা। না, না, তিনি মা সরস্বতীর বরপুত্র বলেই ঠিক নয়, এর মধ্যে আরও একটা ব্যাপার আছে।
মুম্বাইয়ের গোকুলধামে সরস্বতী পুজোর বড় ধুমধাম, এখন তো সকাল বিকেল চলচিত্র জগতের শিল্পীদের আনাগোনা লেগে থাকে শুনেছি। কিন্তু বছর কুড়ি আগে ব্যাপারটা অনেকটা বড়সড় বাড়ীর পুজোর মতই হতো। সাথে থাকতো মণ্ডপের লাগোয়া মাঠে বাচ্চাদের গল্প বলা, ছবি আঁকা, আরও সব হরেকরমবা মনোরঞ্জনের বন্দোবস্ত। বড়দের জন্যে সন্ধ্যেবেলা গান, নাচ, নাটক, আবৃত্তি থাকতো অবশ্য, কিন্তু সেটা দরকার মতো ছাঁটাই করে দেওয়া হত যদি বাচ্চারা বেশী সংখ্যায় এসে পড়তো অংশগ্রহণ করতে। বাচ্চাদের সংখ্যাটা পঞ্জিকা এবং গোকুলধাম হাই স্কুলের পরীক্ষার সময়সূচীর ওপর নির্ভর করতো।
বড়রাও একদম বাদ পড়তো না সারাদিনের ধূমধাড়াক্কার থেকে। তেনাদের জন্যে উৎসাহী কর্মকর্তারা ভোগ খাওয়ার পরে একটা অনুষ্ঠান অবধারিত ভাবে রাখতেন, সেটা হল হাণ্ডিফোড়, বা হাঁড়িভাঙ্গা। সিঁড়িভাঙ্গা ভগ্নাংশের থেকে খুব বেশী সহজ নয় কিন্তু খেলাটা। চোখ বেঁধে হাতে একটা লাঠি ধরিয়ে দিয়ে দশ বারো বার পাক খাইয়ে ছেড়ে দেওয়া হত খেলুড়েদের এক এক করে। অনতিদূরে ওপর থেকে ঝুলিয়ে রাখা একটা মাটির হাঁড়ি, তার মধ্যে সারপ্রাইজ গিফট। আন্দাজমত ঠিক জায়গায় গিয়ে লাঠি দিয়ে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিলেই খেলা শেষ। কিন্তু এই ভাঙ্গাভাঙ্গি যা করার বা না করার, একটামাত্র অ্যাটেম্পটেই করে ফেলতে হবে। একবার না পারিলে দেখো শতবার, ওই আপ্তবাক্যটি এই খেলার নিয়মে অচল।
একবার আমার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লো, মানে হাঁড়ি ভাঙ্গলো আমার লাঠির ঘায়ে। ওপর থেকে হাঁড়ির টুকরো টুকরো ভগ্নাংশের সাথে সাথে বেশ খানিকটা পুষ্পবৃষ্টি হলো। সুদীপটা রসিক ছেলে, কুচো ফুল দিয়ে হাঁড়ি ভরে রেখেছিলো –ওর থিওরিটা এইরকম ছিলো যে, কেউই তো আর হাঁড়িটা ভাঙ্গতে পারে না, অন্তত পারে নি এতদিন, আর ভবিষ্যতে কেউ যে কোনওদিন পারবে সেই সম্ভাবনাও কম, তাই খামোকা একটা এক্সট্রা প্রাইজ ওর মধ্যে রেখে নষ্ট করে কি হবে ? পরে অডিটরকে নাকি ওরই জবাব দিতে হবে। কিন্তু কমিটির প্রেসিডেন্ট বাবলুদা বেশ বিরক্ত হলেন এই ফাঁকিবাজির কথা শুনে। বললেন, না না, নিয়ম ইজ নিয়ম। বলেছ যখন দেবে প্রাইজ, তখন প্রাইজ দিতেই হবে।
শেষমেশ রাত্তিরের অনুষ্ঠানের প্রাইজের ব্যাগ থেকে একটা ক্যাসেট তুলে এনে আমাকে দেওয়া হলো– পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরসিয়ার রাগ পাহাড়ী আর মিশ্র পিলু। আমি অবশ্য রাগ সঙ্গীত তেমন বুঝিটুঝি না, বাঁশী শুনতে ভালো লাগে, তাই মধ্যে মধ্যে ইচ্ছে হলে বসে বসে শুনি। একদিন সন্ধ্যেবেলা ঘর অন্ধকার করে সোফায় এলিয়ে বসে শুনছি – হঠাৎ ঘন্টা বাজলো টিং টং... দরজা খুলে দেখি, দেবু। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, বৌদি কি কলকাতায় গেছে নাকি, পিনাকীদা? কেন রে বাপু, তাতে তোর কি ? তা ছোকরা মোটেই লজ্জা পেলো না। বললো – না হলে সন্ধ্যেবেলা ঘর অন্ধকার করে বিরহী যক্ষের মত বসে বসে বাঁশী বাজাচ্ছো কেন? আমি জানতাম না যক্ষদের বিরহের পাসটাইমগুলো ঠিক কি কি রকমের হয়, কিন্তু দেবু্র কথা শুনে মনে হল ও বেশ যক্ষদের খবর টবর রাখে। তাই ওর কথায় উদ্বুদ্ধ হলাম। কালিদাস কালিদাস টাইপের ফিলিং হতে লাগলো। ভাবছি ছেলেটার জন্যে চায়ের অর্ডার দেবো ওর বৌদির কাছে, হঠাৎ ছোঁড়া বলে কিনা – পিনাকীদা, এটা তোমার সেই হাঁড়িপ্রসাদের ক্যাসেটটা না ? তোমার সেই হাঁড়ির প্রসাদে পাওয়া...
চায়ের অর্ডারটা আর দিই নি, রেগেমেগে...
তাই বলছিলাম, সরস্বতী পুজোর সাথে হরিপ্রসাদের একটা অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক আছে আমার কাছে।
0 comments: