0

অনুগল্পঃ তন্ময় বসু

Posted in


অনুগল্প


চৈতন্য
তন্ময় বসু


লোকটা বদ্ধ পাগল। পাগল হলেও মানুষ তো। ঠিক আছে, মেনে নিলাম, আগে ছিলো; এখনশুধুই পাগল। খালি গা, হাড় ক’খানা চামড়া জড়ানো। রোদে পুড়ে কালি ময়লা মেখেনিজের প্রসাধন সেরে রেখেছে। চুলগুলো তামাটে হয়ে, পরবর্তী রূপান্তরেরপথ খুঁজছে। কোমরে একটা লেংটি কোনওরকমে টিকে আছে। প্রতিদিন ঠিক এইসময় আসাচাই, স্কুল ছুটি হবার সময়।

কাছাকাছি তিন তিনটে বড় স্কুল।সব ছেলেমেয়ে এই মোড় হয়েই যায়। মোড়ের মাথাতেই নামী ইংলিশ মিডিয়াম মেযেদেরস্কুল। গুচ্ছের গাড়িতে ছয়লাপ হয় এলাকাটা। লোকটা কখনও এমাথা থেকে ওমাথা যায়আসে, আবার কোনওদিন গাছতলায় বসেই কাটিয়ে দেয়। ছেলেমেয়েগুলো না খাওয়া টিফিনয়াওয়ার সময় এখানেই ফেলে। ওরা জানেও না, লোকটা ওদের টিফিনগুলো কুড়িয়ে কুড়িয়েখায়। খাবারের লোভেই এই সময় হাজিরা দেয়। হাজার হোক উপাদেয় খাবার স্নেহমাখা!

আজ হঠাৎ করে একটু যেন ওলটপালট হলো...লোকটা রাস্তার মাঝে নাচতে লাগলো, গানও গাইছে বেশ জোরে জোরে –

রাজামশাই ল্যাংটা
রাণীমা ডাইনি,
ভোমরা আছে থামে
লোহার কলাই খাইনি।

ঊর্দ্ধবাহু হয়ে হাত তালি দিয়ে নেচে নেচে গেয়েই চলছে, কোন ভ্রুক্ষেপনেই পিছনে লোকজনের কি হাল! নাচতে নাচতে লেংটী গেলো খুলে, বিকট পুরুষাঙ্গওতাল দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করলো না। মেয়েদের চোখে অসীম কৌতূহল, মায়েদের অগাধবিস্ময়, সবই আড়চোখে। বাসের ভিতরে হাসির রোল; সবার মন, চোখ ওই দিকেই।

বড় শিরীষগাছের নীচে ফুচকাওয়ালা রোজ ছুটির আগে আসে। যা বিক্রিবাটা হয়সারাদিনের কামাই, ওর জায়গা হল ঝা-জীর ঠিক পাশে। ঝা-জীকে সবাই মহারাজ বলেইডাকে। গণৎকার বলে বেশ নামডাক আছে। স্কুলে ছেলেমেয়েদের ছাড়তে এসে বাবামায়েরাঅনেকেই বসে যায়, মহারাজ বলে প্রণাম করে।

ফুচকাওয়ালা থাকতে না পেরে ভীড় এড়িয়ে বলে "মহারাজ! আজ ওর হলোটা কি? আরে সব সত্যনাশ হয়ে গেলো তো!"

ঝা-জী স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে বললেন "ওর চৈতন্য হয়েছে, আপনা কাম করো। এ্যায়সা হী হোতা হ্যায়। জাদা দিন আউর বাকী নেহি! টাইম হো গ্যায়া।"


0 comments: