0

অণুগল্পঃ শাহেদ সেলিম

Posted in


অণুগল্প



জলজ নারী
শাহেদ সেলিম



দুপুরের পর। যখন সূর্যটা একটু পশ্চিমে হেলে যায়। তখন নদীর পানি বিষণ্ণ থাকে। 

ভাটার টানে নদীতে পানি কমে যায়। থম ধরে থাকে চারিদিকে। 

পাড়গুলো গলাছিলা মুরগির গলার মত দেখায়। কাদা কাদা।জলরেখার আঁকিবুঁকি চলে পাড়ে পাড়ে। 

সেরকম এক পাড়ে ডুবেথাকা গাছের বিশাল গুঁড়ি, যেটা ভাটার সময় জেগে উঠে, তাতে প্রতিদিন দুপুর বেলা এই গাঁয়ের এক নতুন বউ বসে। দূর থেকে অনেকেই দেখে, কাপড় ধুতে, গোসল করতে। কিন্তু কেউ দেখে না বউটি নদীর পানিতে দাগ কাটে। কথা বলে পানির সাথে। প্রতিদিন। 

বউটির ঘর নদীর পাড়েই। যেগাছের গুঁড়িতে বসে সে কাপড় ধোয়, সে গাছটা তার বরের বিদেশে যাবার টাকা জোগাড় করতে কাটা হয়েছিল। 

শ্বশুর, শাশুড়ি, বউ থাকে ঘরে। 

স্বামী বিদেশে কাজ করে। বউটি বাড়িতে রান্না করে। 

স্বামীটি বিদেশে উট চরায়। বউটি স্বামীর জন্য নিজেকে সাজায়। প্রতিদিন। 

আজও প্রতিদিনের মতো বউটি নদীরে পাড়ে সেই গাছের গুঁড়িতে। কথা বলে পানির সাথে। 

-ও পানিরে পানি তোর মতলব জানি...। বউয়ের মুখে হাসি। চোখ চকচক করে। 

-জানস, হাছাই?

-হ, তুই আমারে চাস।

-আয় তাইলে।

-কিন্তু তার আগে ক’, তরে কাইল রাইতে এতো ডাকলাম, আইলি না ক্যান?

-আইছিলাম, আমি তোর কাছে। জোয়ারে ভর কইরা পেরায় উঠানে পৌঁছাইয়া গেছিলাম।

-ঐ বুইড়া আমারে...

-দেখছি....তুই বুইড়াডারে একটা লাত্থি দিবার পারতি।

-পারতাম..... আবার পারি নাই? 

-কেন?

-জানি না.... জানি না

বউটি পানির উপর হাত দিয়ে ঝাপটাতে থাকে। বারেবারে।


পানির বুকে ভেসে ওঠা স্বামীর চেহারা সরিয়ে দিতে চায় সে। কিন্তু সরাতে পারে না।

0 comments: