প্রচ্ছদ নিবন্ধঃ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়
Posted in প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
শতবর্ষ পেরিয়ে.....
ফিরে দেখা : বিকাশ রায়
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়
এই প্রজন্মের কাছে বিস্মৃতপ্রায় এক অভিনেতা বিকাশ রায়। এবছর পূর্ণ করছেন তাঁর জন্মের একশ’বছর। শুধু অভিনেতাই বা বলি কেন, বিকাশ রায় ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্রাভিনেতা, সিনেমার প্রযোজক ও বহু সফল চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। বিকাশ রায়ের শিল্পীজীবনের শুরু রেডিওর ঘোষক রূপে, তারপর চলচ্চিত্রজীবন শুরু হল ১৯৪৬এ। অভিনয়জীবনেরশেষ পর্বে মঞ্চ নাটকে যোগ দিয়ে ছিলেন১৯৭২এ।
রেডিওর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা থেকে চলচ্চিত্রের নায়ক,খলনায়ক ও নানা দুরুহ চরিত্রে অভিনয়, চলচ্চিত্রের প্রযোজনা, চিত্রনাট্য রচনা, পরিচালনা ও মঞ্চের নাট্যাভিনয় – এই বিরাট পরিধি জুড়ে বিকাশ রায়ের শিল্পীজীবন। সিনেমার কাহিনীও লিখেছেন। ১৯৬০এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাজা সাজা’র কাহিনীকার ছিলেন তিনি।
জন্ম ১৬ই মে, ১৯১৬, কলকাতার ভবানীপুরে। পিতা যুগোলকিশোর রায়।কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে ১৯৩২এ ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ১৯৩৬এ। সিনেমা-থিয়েটারের প্রতি কোন ঝোঁক ছিল না, বরং ঝোঁক ছিল সাহিত্যে। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় কলেজ ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখতেন। ‘বেদুইন’নামে একটা সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন সেই সময়ে। আইন বিদ্যা বা এল এল বি পাশ করেন ১৯৪১এ, কিন্তু স্থায়ীভাবে ওকালতি পেশা গ্রহণ করেননি।আইন বিদ্যা পাশ করার পর তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় এক ব্যারিস্টারী ফার্মের জুনিয়র হিসাবে। আইন ব্যবসা তাঁর জন্য নয়মনেকরে ছেড়ে দিয়ে চাকরী নিলেন সরকারী সিভিল ডিফেন্স বিভাগে, হেড ক্লার্কের। সেখানেও থাকলেন না। অনেক কম বেতনে, আশিটাকার মাস মাইনেতে চাকুরী নিলেন রেডিওর ঘোষকের। রেডিওর অনিশ্চিত চাকুরী ছেড়ে আবার অন্যত্র। এবার এক বাল্যবন্ধুর সহায়তায় যোগ দিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি যে কিমার’এ। সত্যজিৎ রায় তখন সবে মাত্র ওখানে যোগ দিয়েছেন। সত্যজিৎ রায় অবশ্য পরবর্তী সময়ে বিকাশ রায়কে তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য আহ্বান জানান নি।‘ডি জে কীমার’এর তিনশো টাকা মাইনের চাকুরী ছেড়ে আবার ফিরে এসেছিলেন রেডিওতে।
বিকাশ রায়ের সম্পদ ছিল তাঁর কন্ঠস্বর আর বাচনভঙ্গি ও স্বর প্রক্ষেপন।খলনায়ক বা অ্যানটি-হিরোর চরিত্রে ইষৎ চিবিয়ে সংলাপ বলতেন কিন্তু নিখুঁত স্পষ্ট উচ্চারণ কেটে কেটে। উত্তমকুমার প্রমুখ তাঁর সহ-আভিনেতারা নানান লেখায় বিকাশ রায়ের স্পষ্ট উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গির কথা উল্লেখ করে গেছেন।নিশ্চিতভাবেই রেডিওতে কাজ করার সময় মাইক্রোফোনের সঠিক ব্যবহার করার কৌশল আর স্পষ্ট উচ্চারণের অনুশীলন করতে হয়েছিল তাঁকে।আর সেই শিক্ষাই তিনি প্রয়োগ করেছিলেন তাঁর অভিনয়ে।
১৯৪৪এ বিমল রায় পরিচালিত ‘উদয়ের পথে’চলচ্চিত্রটি বাংলা ছায়াছবির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ‘উদয়ের পথে’র কাহিনী ও চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন জ্যোতির্ময় রায়। জ্যোতির্ময় রায় ছিলেন রেডিওতে বিকাশ রায়ের সহকর্মী। জ্যোতির্ময় রায়ের হাত ধরেই বিকাশের চলচ্চিত্রে প্রবেশ। জ্যোতির্ময় বিকাশকে পরিচালক হেমেন গুপ্তর কাছে নিয়ে যান। হেমেন গুপ্তর ‘অভিযাত্রী’ ছবিতে বিকাশ রায়ের প্রথম অভিনয়। ১৯৪৭এর ৭ই ফেব্রুয়ারি ছবিটি মুক্তি পায়। এই ‘অভিযাত্রী’ ছবিতেই ছায়াছবির সুরকার রূপে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অভিষেক ঘটেছিল। অর্থাৎ বাংলা সিনেমা ও সিনেমা সঙ্গীতের দুই কিংবদন্তী শিল্পী – বিকাশ রায় ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অভিষেক ঘটলো একই সঙ্গে। উল্লেখ করা যায় যে বিকাশ রায় পরিচালিত বেশিরভাগ ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালিক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। দ্বিতীয় ছবি দেবকী কুমার বসু পরিচালিত ‘রত্নদীপ’এওপ্রভূত খ্যাতি পেলেন বিকাশ।হেমেন গুপ্ত পরিচালিত ‘ভুলিনাই’ বিকাশ রায়ের পরের ছায়াছবি।মনোজ বসুর কাহিনী নিয়ে হেমেন গুপ্ত পরিচালিত এই ছবিটি মুক্তি পাবার পর তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ‘ভুলিনাই’ হয়ে গেল স্বাধীনতা সংগ্রামের দলিল।বিকাশের চরিত্র ছল ‘মহানন্দ’ – যে প্রথম জীবনে বিপ্লবী পরে বিশ্বাসঘাতক। ‘ভুলিনাই’তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিল।তারপর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি। পরিচালক হেমেন গুপ্তর‘ভুলিনাই’ ছবিতেঅভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে বিকাশ চাইলেন তাঁকে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হোক। সিনেমার কাজ শেখার তাগিদেই তিনি হেমেন গুপ্তর প্রোডাকশন ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে যা তাঁর কাজে লেগেছিল স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনায়। হেমেন গুপ্ত রাজি হয়েছিলেন।
বিকাশ রায়ের স্মরনীয়তম কাজ হেমেন গুপ্তর ‘বিয়াল্লিশ’ (ছবির নামটি লেখা হয়েছিল ‘৪২’)। এ ছবির সহকারী পরিচালকও তিনি। স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি অধ্যায় নিয়ে নির্মিত বিয়াল্লিশ জনমানসে প্রবল আলোড়ন তুলেছিল। বিকাশের চরিত্র ছিল অত্যাচারি সামরিক অফিসার মেজর ত্রিবেদী’র, সাড়া জাগানো অভিনয় করেছিলেন বিকাশ রায়। অন্যান্য অভিনেতারা ছিলেন শম্ভু মিত্র, মঞ্জু দে, প্রমুখ।
আমরা যারা মধ্য পঞ্চাশ অর্থাৎ ১৯৫৩/৫৪ থেকে সিনেমা দেখা শুরু করেছি তাদের কাছে অভিনেতা বিকাশ রায়ের পরিচয় ছিল ভিলেন বা খলনায়কের। তারপর ১৯৬০এর দশক থেকে তাঁর চরিত্রাভিনয় সদ্য আঠেরো পেরনোআমার কিশোর মনকে দারুণ প্রভাবিত করেছিল ১৯৬১তে মুক্তি প্রাপ্ত ‘কেরি সাহেবের মুন্সী’ ছবিতে রামরাম বসুর চরিত্রটি। বিকাশ রায় তখন চিত্র পরিচালক। প্রমথনাথ বিশির বৃহৎ এই উপন্যাসটি নিয়ে যে ছায়াছবি করা যায়, এটাই অভাবনীয় ছিল।আসলে, বিকাশ রায় অভিনয়ের মধ্যে নিজেকে কোন ইমেজ বন্দী করে রাখেন নি। ‘ভুলিনাই’, ‘বিয়াল্লিশ’এ অভিনয়ে ক্রুরতার চরম প্রকাশ, ‘সন্ধ্যাদীপের শিখা’, ‘কাঁচকাটা হীরে’তে নায়ক, ‘কাঁচের স্বর্গ’ ‘শাপমোচন’এ অ্যান্টি হিরো, ‘উত্তর ফাল্গুনী’তে প্রেমিক ও স্নেহময় পিতা। আবার ‘ছেলে কার’, ‘ছদ্মবেশী’তেকমেডি।নানান ধরনের চরিত্রে দাপটে অভিনয় করেছেন।সাঁইত্রিশ বছরের চলচ্চিত্রজীবনে আড়াইশোরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আর শুধু অভিনয়ই তো নয়, বহু স্মরনীয় বাংলা ছায়াছবির পরিচালকও তো তিনি। এবং পরিচালক রূপে নানা চ্যালেঞ্জিং কাজ করেছিলেন। ‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ তে ইতিহাসকে ধরতে চেয়েছিলেন। আমার আজও মনে আছে, ছবির টাইটেল শট – গঙ্গার বুকে একটা বজরা চলেছে আর ভেসে আসছে শ্যামল মিত্রর নেপথ্যকন্ঠে একটা গান ‘কিহ’ল রে জানো, পলাশীর ময়দানে ওড়ে কোম্পানীর নিশানো’...। ছবির মেজাজ স্পষ্ট হয়ে যায় দর্শকের কাছে। ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ করেছিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কোন মেক-আপ ছাড়াই। আর ‘বসন্ত বাহার’ ছবিতে ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলিকে দিয়ে প্লেব্যাক করিয়েছিলেন। বড়ে গোলাম আলি সেই একমাত্র ছবিতে প্লেব্যাক করেছিলেন।বাংলা সিনেমার বহু স্মরণীয় ছবির পরিচালক ছিলেন, তবুও মনে হয় অভিনেতা বিকাশ রায় ছাপিয়ে গিয়েছিলেন পরিচালক বিকাশ রায়কে। সুচিত্রা সেনের বিপরীতে নায়ক হিসাবে উত্তমকুমার ভিন্ন অন্য কাউকে ভাবতে পারতেন না বাংলা ছায়াছবির দর্শকরা। তেমন ছবি বক্স অফিসের দাক্ষিন্য পেতো না। কিন্তু বিপরীতে উত্তমকুমার নায়ক নন, সুচিত্রার এমন সফলতম তিনটি ছবিরই – ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সন্ধ্যাদীপের শিখা’ ও ‘উত্তর ফাল্গুনী’তে নায়ক ছিলেন বিকাশ রায়। দীর্ঘ ৩৭ বছরের অভিনয় জীবনে বহু স্মণীয় চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তারাশঙ্করের ‘আরোগ্য নিকেতন’ চলচ্চিত্রে (১৯৬১) তাঁর ‘জীবন মশাই’ চরিত্রের অসামান্য অভিনয় আজ পঞ্চান্ন বছর পরেও কারো মন থেকে মুছে যাবার নয়। ‘জীবন মশাই’ চরিত্রের অভিনয় তাঁর নিজের কাছেও ছিল সবচেয়ে প্রিয়।সেই বিকাশ রায় ১৯৮৫তে রীতিমত সাংবাদিক সম্মেলন করে চলচ্চিত্রে অভিনয় করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। একঘেয়েমি এসে গিয়েছিল, এসেছিল ক্লান্তি।
ব্যক্তিজীবনে কেমন মানুষ ছিলেন বিকাশ রায়? সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে নানা গালগল্প, গসিপ, সিনেমা পত্র-পত্রিকার খুব মুখরোচক খাদ্য চিরকালই। কিন্তু বিকাশ রায়কে নিয়ে ‘গসিপ’ বা গাল-গল্প কেউ শোনেন নি।বিকাশ রায়ের কাছে যখন সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল, তখন তাঁর মা তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। স্ত্রীও শপথ করিয়ে নিয়েছিলেন।তাঁর পুত্র আমেরিকা প্রবাসী সুমিত রায়ের বয়ানে - “বিকাশবাবু সারাজীবন তাঁর এক এবং অনন্যার কছে কথা রাখার চেষ্টা করে গেছেন, বিফল হয়েছিলেন বলে খবর পাইনি।” পিতার সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন থেকে আরও একটু উদ্ধার করি। লিখেছেন “সাঁইত্রিশ বছরে বিকাশবাবু আন্দাজ প্রায় তিনশোর কাছাকাছি ছবি করেছেন। তার কিছু খুব ভালো, কিছু খুব খারাপ, বাকী হয়তো মাঝামাঝি -- এর মধ্যে আহামরির কিছু নেই। আমি জানি যে বিকাশবাবুর আগে এবং পরে বাংলা ছবির অভিনয়ে নতুন পথের দিশারী অনেকে এসেছেন। কিন্তু আমি এবিষয়েও নিঃসন্দেহ যে হেমেন গুপ্ত, জ্যোতির্ময় রায়, রাধামোহন ভট্টাচার্য আদি পথিকৃত্দের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে নিছক পৌরাণিক বা স্বাদহীন সামাজিক ছবির মামুলিত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া, নতুন পথ দেখানো, নতুন লোকদের আনার ব্যাপারে বিকাশবাবুর অংশ বেশ বড়ো।ছোটো নয় তাঁর অবদান। আমার এও বিশ্বাস, যে বাঙালী চট্ করে সে কথা ভুলে যায়নি, যাবেও না”।
ছেলে সুমিত ১৯৬৪ থেকে আমেরিকা প্রবাসী। ১৯৭২এ আমেরিকায় ছেলের কাছে গিয়েছিলেন, এবং জেনেছিলেন ছেলে আর দেশে ফিরবেন না। ১৯৭২এ যোগ দিলেন মঞ্চে।বিশ্বরূপা মঞ্চে চৌরঙ্গী নাটকে ‘স্যাটা বোস’এর চরিত্র তাঁর মঞ্চের সেরা অভিনয়। বিশ্বরূপা থিয়েটারে ৫০০ রাত্রি্রও বেশি চলেছিল ‘চৌরঙ্গী’।বিশ্বরূপায় তাঁর অভিনীত পরের নাটক ‘আসামী হাজির’ও দীর্ঘদিন চলেছিল। বিশ্বরূপা ছেড়ে যোগ দিলেন তপন থিয়েটারে ‘নহবত’ নাটকে।‘নহবত’ চলেছিল একহাজার রাত্রিরও বেশি। বিকাশ রায় আদতে থিয়েটারের লোক ছিলেন না। পেশাদারী থিয়েটারে এলেন প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে ৫৬বছর বয়সে। সিনেমা ও থিয়েটারের অভিনয়ের পার্থক্য সম্পর্কে ছিলেন সচেতন। সেই থিয়েটারের অভিনয়েও একঘেয়েমি এসে গেলো,থিয়েটারের অভিনয় ছেড়ে দিলেন। সিনেমাতেও একঘেয়েমি এসে গিয়েছিল। একই ধরনের চরিত্র। জুলাই ১৯৮০ তে উত্তমকুমার চলে যাওয়ায় বাংলা সিনেমায় তখন বিরাট শূন্যতা। একা অভিনয়ে টানার মত কেউ নেই। ক্লান্ত বিকাশ রায় ১৯৮৫তে সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর অভিনয়জীবনের সমাপ্তি ঘষণা করে দিলেন। কেন অন্তরালে চলে গেলেন? এরকম নজির তো আর নেই! এই প্রসঙ্গে ২৬শে জুলাই ২০১৪’র আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখা মাধবী মুখার্জীর বয়ান উদ্ধার করি।মাধবী লিখেছেন - “আমি চলে যাচ্ছি, আমায় মনে রাখবেন।
তাঁর বাঁ হাতে ধরা কালো ছড়িটি কেঁপে উঠল।
—এ ভাবেই অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন বিকাশদা।
অনেকেরই মনে হয়েছিল, বহু স্বপ্নভঙ্গের অভিমান এবং ব্যথা থেকে বিকাশ রায় রেডিয়ো, টিভি, মঞ্চ, মাস মিডিয়ার রাজপথ থেকে সরে দাঁড়ালেন।
কারও কারও ধারণা হয়েছিল, বিকাশ রায় বয়সের জন্য সরে গেলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন কাছ থেকে দেখার সুবাদে আমি জানতাম মুখে কোনও নালিশ না জানালেও টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়া আর তার লোকজনকে ঘিরে ওঁর দুঃখবোধ, অভিমান যথেষ্টই ছিল।
আমায় বারবার বলতেন, “আমি চাই না আমার কোনও সন্তান এই অভিনয় জগতে আসুক। আমাদের পরিবারে আমাকে দিয়ে যা শুরু তার শেষও যেন আমাকে দিয়েই হয়।”
এরপর বাংলা চলচ্চিত্র থেকে চরিত্রাভিনয়ের একটা স্টাইলই যেন হারিয়ে গেলো। এর দুবছর পর ১৬ই এপ্রিল ১৯৮৭ তে চিরদিনের মত চলে গেলেন বিকাশ রায় একাত্তর বছর বয়সে।
[ তথ্যসূত্র – (১) ‘সোনার দাগ’ / গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ (২) ‘বিকাশবাবু’- সুমিত রায়/ অবসর.নেট(৩) ‘ঘোষণা করে অভিনয় ছেড়ে দেন’/ সম্রাট মুখোপাধ্যায়, ‘আজকাল’ পত্রিকা ]
ভাল লাগল এই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ReplyDeleteএকটা তথ্য - প্রেস কনফারেন্সে অবসরের ঘোষণা করেছিলেন ১৯৮৪ সালে।
খুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteপড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো ... আমরা এই সব বরেণ্য শিল্পীদের মনে রাখিনি ....
ReplyDeleteসত্যই আমরা তাদের মনে রাখিনি..!
ReplyDelete