ধারাবাহিকঃ সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়
Posted in ধারাবাহিক
ধারাবাহিক
বানরায়ণ – পর্ব দশ
সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়
অস্তমান সূর্যের রক্তরাগে রাঙানো এক আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে আমাদের সম্বোধন করলেন তারা। ‘‘কিষ্কিন্ধ্যার বীর যোদ্ধারা...’’
পুরো পরিস্থিতিটাই কেমন যেন অপার্থিব, অবাস্তব লাগছিলো। এই তো ক’দিন আগেও জঙ্গলে গিয়ে শিকার করতাম, বুড়ো সোমুককে ওষুধ বানাতে সাহায্য করতাম, বিন্ধ্যারণ্যের বাইরের জগৎ সম্বন্ধে কোনও খোঁজ রাখতাম না... আর আজ নাকি আমিও কিষ্কিন্ধ্যার যোদ্ধা! এখানে, এই রাজকীয় পর্বতাবাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি...
‘‘আমি, কিষ্কিন্ধ্যার মহারাণী তারা, তোমাদের স্বাগত আর অভিনন্দন জানাচ্ছি এই ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য।’’ তারার কন্ঠস্বরে আমার চমক ভাঙলো। একটু ভারি আর ভীষণ গভীর স্বর। কেমন যেন সম্মোহক... রক্তে কিসের নেশা ধরিয়ে দেয়...
‘‘তোমরা জানো, অযোধ্যার নির্বাসিত রাজপুত্র রামচন্দ্রের বিবাহিতা পত্নী জনকতনয়া মৈথিলি সীতাকে বলপূর্বক হরণ করে নিয়ে গেছেন লঙ্কার স্বেচ্ছাচারী রাজা রাবণ। রামচন্দ্র চলেছেন স্ত্রীকে পুনরুদ্ধার করতে। আমার বর্তমান স্বামী কিষ্কিন্ধ্যাপতি সুগ্রীব সসৈন্য তাঁকে সাহায্য করছেন। সমগ্র দাক্ষিণাত্য থেকে লক্ষ লক্ষ যোদ্ধা এসেছেন এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য। কুমারিকার উপকূলে সেতুবন্ধন আরম্ভ হয়েছে। অচিরেই কিষ্কিন্ধ্যার সেনাবাহিনী রামচন্দ্রের নেতৃত্বে সেই সেতু পেরিয়ে গিয়ে উপস্থিত হবে লঙ্কার সমুদ্রতটে। আমি নিশ্চিত, এই সব কিছু তোমরা জানো।’’
একটু বিরতি নিলেন তারা। সবাই সম্মোহিতের মতন চেয়ে আছে তাঁর দিকে। অস্তগামী সূর্যের রক্তরশ্মি পাহাড়ের মসৃণ গা বেয়ে যেন গড়িয়ে নেমে আসছে তাঁকে ছুঁয়ে।
‘‘আমি ততখনি নিশ্চিত নই তোমরা জানো কি না...’’ কন্ঠস্বর আরও এক পর্দা গভীরে নামিয়ে বললেন তারা... ‘‘আমার প্রাক্তন স্বামী, কিষ্কিন্ধ্যার পূর্ববর্তী রাজা বালী ছিলেন এই রাবণের ঘণিষ্ঠ বন্ধু।’’ আবার একটু থামলেন। কথাটা হৃদয়ঙ্গম হতে দিলেন সবার। আমার যদিও করন্দর দৌলতে এটা জানা ছিলো।
‘‘তবু যে আজ আমি তোমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি রাবণের বিরূদ্ধে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করার জন্য, অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছি নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধ করতে, তার কতগুলি কারণ আছে।’’ তারার কন্ঠস্বরে রহস্যের আভাস...
‘‘কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন, কিষ্কিন্ধ্যার পরিস্থিতি সম্বন্ধে তোমাদের সম্পূর্ণ অবগত হওয়া। তোমরা জানো, আমার পূর্বতন স্বামী কিষ্কিন্ধ্যারাজ বালী মহাপরাক্রান্ত ছিলেন। তাঁর ভয়ে সমগ্র দাক্ষিণাত্য কম্পমান ছিলো। স্বয়ং রাবণ তাঁর সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাধ্য হয়ে তাঁর বন্ধুত্ব স্বীকার করেন।’’
কয়েক মুহূর্তের বিরতি...
‘‘কিন্তু তোমরা সম্ভবত জানো না, বালী ছিলেন উদ্ধত, গর্বিতস্বভাব, চরম স্বেচ্ছাচারী। কিষ্কিন্ধ্যার জনসাধারণ থেকে আরম্ভ করে তাঁর মন্ত্রীরা... এমনকি আমি এবং তাঁর অন্যান্য স্ত্রীরাও তাঁর ভয়ে সারাক্ষণ কাঁটা হয়ে থাকতাম। তাঁর সহোদর, বর্তমান রাজা সুগ্রীবও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।
‘‘বালীর মতন ক্ষমতাশালী না হলেও, সুগ্রীবও কম বীর নন। কিন্তু তিনি দয়ালু, হৃদয়বান পুরুষ। চিরকাল তিনি অগ্রজ বালীর পরম বিশ্বস্ত ও অনুবর্তী ছিলেন। তোমরা হয়তো শুনেছো, ধুন্ধু নামক এক আরণ্যক তস্করের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে বালী প্রায় এক সপ্তাহ না ফেরাতে সুগ্রীব ধরে নেন, তিনি মারা গেছেন। মন্ত্রীদের উপরোধে বাধ্য হয়ে তিনি কিষ্কিন্ধ্যার শূন্য সিংহাসনে আরোহন করেন। কিন্তু তারপর বালী ফিরে আসেন, এবং সুগ্রীবের উপর পরিস্থিতির চাপ না বুঝে অকথ্য অত্যাচার আরম্ভ করেন। সুগ্রীবের বহু অনুনয়-বিনয়ে কর্ণপাত না করে শেষ পর্যন্ত বালী তাঁকে কিষ্কিন্ধ্যা থেকে বহিষ্কার করেন। স্ত্রী রুমাকে পর্যন্ত সঙ্গে নিয়ে যেতে দেন না, নিজে তাঁকে অধিকার করবেন বলে। সুগ্রীবের অনুগামী হন শুধু মৈন্দ, দ্বিবিদ, প্রভৃতি তাঁর কয়েকজন বিশ্বস্ত বন্ধু, যাঁরা তাঁকে সিংহাসনে আরোহন করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছিলেন। তাঁরা বুঝেছিলেন, কিষ্কিন্ধ্যায় থাকলে বালীর হাতে তাঁদের প্রাণ অচিরেই বিপন্ন হবে।
‘‘কিষ্কিন্ধ্যা ত্যাগ করে সুগ্রীব ও তাঁর সঙ্গীরা চলে যান ঋষ্যমূক পর্বতের নিরাপদ আশ্রয়ে। নিরাপদ, কারণ সেখানে মতঙ্গ মুনির আশ্রম। বালী একবার সেখানে উপদ্রব করতে গিয়ে মুনির অভিশাপ কুড়িয়ে ছিলেন... পুনর্বার সেখানে পদার্পণ করলে তাঁর মৃত্যু ঘটবে! নিজের ক্ষমতায় অতিরিক্ত বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও সে অভিশাপের সম্মুখীন হওয়ার সাহস তাঁর ছিলো না। তাই সুগ্রীব ও তাঁর সঙ্গীরা সেখানে নিরাপদ ছিলেন।
‘‘সেখানেই সুগ্রীবের দেখা হয় রামচন্দ্রের সঙ্গে। অযোধ্যার নির্বাসিত রাজপুত্র রামও তখন স্ত্রীকে হারিয়ে বনে বনে দিশাহারা অবস্থায় ভ্রাম্যমান। দুই হতভাগ্য রাজপুত্রের বন্ধুত্ব হয়। সেই বন্ধুত্বের মধ্যস্থতা করেন আরেক বিদেশী, দাক্ষিণাত্যে আগন্তুক। তাঁর নাম হনুমান। তাঁকে আমি খুব ভালো চিনি না। তাঁর সঙ্গে বার দুয়েকের বেশি সাক্ষাৎও হয়নি আমার। তিনি কোথাকার মানুষ, কেন ঠিক এই সময়েই এখানে এসেছেন, এবং কেন নিঃস্বার্থ ভাবে সুগ্রীব ও রামকে সাহায্য করছেন, সে সব কথা আমি বিশদে জানি না। শুধু জানি, সেই অসামান্য পুরুষ যাঁর সহায়, তাঁর জয় নিশ্চিত!’’
কথাটা শুনে আমার গায়ে কেন যেন হঠাৎ কাঁটা দিলো...
‘‘তার পরবর্তী ঘটনা হয়তো তোমাদের জানা।’’ তারা বলে চললেন... ‘‘রামের বন্ধুত্ব ও আশ্বাস লাভ করে সুগ্রীব এসে বালীকে যুদ্ধে আহ্বান জানান। প্রথম দিনের যুদ্ধে সুগ্রীব পরাজিত হলেও, তার পরের দিন রামচন্দ্রের সাহায্যে তিনি বালীকে পরাজিত ও হত্যা করতে সক্ষম হন। সুগ্রীব কিষ্কিন্ধ্যার সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হন, প্রজারা বালীর স্বেচ্ছাচার থেকে মুক্তি পান... এবং আমরা, বালীর পত্নীরা, পাই একজন হৃদয়বান, স্নেহশীল স্বামী।
‘‘রাজা হওয়ার পর সুগ্রীব নিজের প্রতিশ্রূতি অনুযায়ী সর্বশক্তি দিয়ে সীতার অনুসন্ধান আরম্ভ করেন। বহু প্রচেষ্টা, বহু অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর সংবাদ আনেন সেই আশ্চর্য পুরুষ, হনুমান। সীতা লঙ্কায় রাবণের অশোকবনে বন্দিনী। হনুমান স্বচক্ষে দেখে এসেছেন, কথা বলে এসেছেন তাঁর সঙ্গে। সাগর লঙ্ঘণ করে একাকী তিনি কিভাবে লঙ্কা গেলেন, সেই সুরক্ষিত পুরীতে প্রবেশ কিভাবে করলেন, কিভাবেই বা সেখানকার কঠোর প্রহরা এড়িয়ে ফিরেও এলেন, সে সব কথা আমি বিস্তারিত জানি না। শুধু জানি, এ একমাত্র হনুমানের পক্ষেই সম্ভব!
আবার কেন জানি না, আমার গা শিরশির করে উঠলো...
‘‘তারপর থেকে শুরু হয়েছে লঙ্কা অভিযানের প্রস্তুতি। প্রাথমিক ভাবে সমুদ্র লঙ্ঘণের জন্য জলযানের কথা ভাবা হয়েছিলো। কিন্তু গণনা করে দেখা গেছে, কিষ্কিন্ধ্যার বিপুল বাহিনীর সাগর পেরোতে প্রায় পাঁচ সহস্র বৃহৎ জলযান প্রয়োজন। অত জলযান নির্মাণ করতে যত অর্থ ও সময় ব্যয় হবে, তার অর্ধেক সময় ও তিন-চতুর্থাংশ অর্থব্যয়ে নির্মিত হবে সেতু।
‘‘বহু গণনা ও পর্যবেক্ষণের পর এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এক প্রসিদ্ধ স্থাপত্যশিল্পী। তাঁর নাম নল। আর্যাবর্তে তিনি দেবকারিগর বিশ্বকর্মার পুত্রের পরিচয়ে খ্যাত। সেতু নির্মাণের সম্পূর্ণ কাজটি তিনিই পরিচালনা করছেন। তিনিও কোথাকার মানুষ, আমার সঠিক জানা নেই। সম্ভবত হনুমান যেখানকার মানুষ, তিনিও সেখানকারই। তাঁর তত্ত্বাবধানে কুমারিকার উপকূলে আরম্ভ হয়েছে সেতুবন্ধনের কর্মকাণ্ড। তোমরা এখান থেকে দশ দিনের পথ অতিক্রম করে সেখানে যাবে, সেতুবন্ধনের কাজে যথাসাধ্য সাহায্য করবে, এবং তারপর সেই সেতু পেরিয়ে লঙ্কায় গিয়ে ধ্বংস করবে রাবণের পাপপুরী।’’
থামলেন তারা। সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। আমার মনের ভিতরটা তোলপাড় হচ্ছে...
‘‘রাবণ আমার পূর্বতন স্বামীর বন্ধু ছিলেন। মহারাণী মন্দোদরীর সঙ্গেও আমার যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিলো। তবু আমি চাই, লঙ্কা ছারখার হয়ে যাক! চূর্ণ হোক রাবণের দর্প! কারণ, মনুষ্যত্বের যে অপমান রাবণ করেছেন, আজও করছেন, তার কোনও ক্ষমা নেই! বালীও করেছিলেন মনুষ্যত্বের অপমান। তার চূড়ান্ত শাস্তিও তিনি পেয়েছেন প্রভু রামচন্দ্রের হাতে। রাবণও পাবেন, আমি নিশ্চিত।
‘‘রাবণ মহাবীর। পরমজ্ঞানী। ধূরন্ধর রাজনীতিজ্ঞ। কিন্তু তিনি চরম স্বেচ্ছাচারী, চূড়ান্ত অহংকারী এবং অত্যাচারী। বালীর থেকেও অনেকগুণ বেশি। বালীর স্বেচ্ছাচার, অত্যাচার মূলত তাঁর নিজের রাজ্যের গণ্ডীর ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু রাবণের সব অনাচার, সব অত্যাচারই তাঁর নিজের রাজত্বের সীমানার বাইরে। লঙ্কাকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রেখে নারীলোলুপ, লম্পট রাবণ দাক্ষিণাত্যের মূল ভূখণ্ডে, এবং আর্যাবর্তেও, কত যে নারীর অবমাননা করেছেন, কত যুবতীর সর্বনাশ করেছেন, তা গুণে শেষ করা যায় না। অসংখ্য রমনীকে তিনি তাঁদের স্বামী, পিতা, পরিবারের কাছ থেকে হরণ করে নিয়ে গিয়ে লঙ্কায় নিজের প্রমোদভবনে বন্দী করে রেখেছেন। বলপূর্বক নিজের অঙ্কশায়িনী করেছেন তাঁদের। কিষ্কিন্ধ্যার অতিথি হয়ে এসেছেন তিনি কয়েকবার, এবং প্রত্যেকবার আমি অনুভব করেছি, আমার উপরেও তাঁর লালসাসিক্ত দৃষ্টি পড়েছে। আমার সঙ্গে কোনও রকম অশালীন আচরণ করার দুঃসাহস যে তাঁর হয়নি... তা শুধুমাত্র বালীর ভয়ে।’’
কিছুক্ষণের নীরবতা। চারপাশ থেকে উত্তপ্ত শ্বাসের গভীর স্বর শোনা যাচ্ছে। কয়েকটা যেন অবরুদ্ধ গর্জনের শব্দও কানে এলো...
‘‘কিন্তু বালীর থেকেও বেশী ভয়ের কারণ এবার রাবণের জন্য ঘনিয়ে এসেছে। যেদিন, যে মুহূর্তে দণ্ডকারণ্যের কুটীর প্রাঙ্গনে সীতার শরীরে রাবণের কলুষ স্পর্শ লেগেছে, সেদিন সেই মুহূর্তে রাবণের ললাটলিপিতে ধ্বংস লেখা হয়ে গেছে। রামচন্দ্রকে তোমরা দেখোনি এখনও। খুব শিগগিরি দেখবে। দেখলে, এবং তাঁর পরিচয় পেলে বুঝবে কেন আমরা সবাই এ বিষয়ে নিশ্চিত। তাঁর মতন যোদ্ধা দেবলোকেও নেই। তাঁর মতন নেতাও নেই ত্রিভুবনে আর কোথাও। তাঁর নেতৃত্বে তোমরা, কিষ্কিন্ধ্যার যোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়বে লঙ্কার উপর, ধুলোয় মিশিয়ে দেবে রাবণের আকাশ-ছোঁয়া অহঙ্কার।
‘‘তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে লঙ্কার অতুল ঐশ্বর্য! সে ঐশ্বর্য নিশ্চিতভাবেই রামচন্দ্র তোমাদের যথাযথ ভাগ করে দেবেন লঙ্কাজয়ের পর। তোমাদের কাছে আমার শুধু একটাই অনুরোধ...’’
একটু নৈঃশব্দ। তারপর ভেসে এলো তারার অমোঘ স্বর... ‘‘কোনও নারীর অবমাননা কোরো না কখনও। আমি জানি, এ দীর্ঘ আর কষ্টসাধ্য যুদ্ধ জয় করার পর নিজেদের সংযত রাখা খুব কঠিন হবে তোমাদের জন্য। কিন্তু তবু, তোমাদের প্রত্যেকের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, যদি সত্যিকারের পুরুষ হও, কখনও কোনও নারীকে অপমান কোরো না। চরম শত্রুর স্ত্রী-কন্যা-ভগিনীকেও না। নারী শারীরিক ভাবে পুরুষের চাইতে দুর্বলতর। কিন্তু হৃদয়বৃত্তিতে কোনও অংশে কম নয়। বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেশি। অন্তত ভালোবাসার ক্ষেত্রে তাই-ই... এবং হৃদয়বৃত্তিই মানবিকতার পরিচয়। শারীরিক শক্তি নয়।
‘‘তাই বলছি, কখনও কোনও নারীর উপর বলপ্রয়োগ কোরো না। যদি করো, সঙ্গে সঙ্গে নেমে আসবে রাবণের স্তরে, অমানুষের পর্যায়ে, এবং সেই সঙ্গে পাওনা হবে চরম শাস্তি। সে শাস্তির পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে, তার নিদর্শন অদূর ভবিষ্যতে তোমরা দেখতে পাবে লঙ্কায়।’’
একটা দীর্ঘ, অর্থপূর্ণ বিরতি নিলেন তারা। যখন আবার কথা বলতে আরম্ভ করলেন, তাঁর কন্ঠস্বর কেমন অন্যরকম লাগলো... ‘‘তোমরা সাহসী, তোমরা বীর... তোমরা পুরুষের মতন পুরুষ। আমি জানি, তোমরা এমন কোনও কাজ করবে না, যা কিষ্কিন্ধ্যা বা প্রভু রামচন্দ্রের জন্য অসম্মানজনক হয়। আমি জানি, তোমরা রাবণের দর্পচূর্ণ করে, তাঁর পাপের রাজত্ব ধ্বংস করে সগৌরবে ফিরে আসবে।
‘‘যাও, দাক্ষিণাত্যের বীর পুত্ররা, অতুল কীর্তি স্থাপন করে ফিরে এসো। কিষ্কিন্ধ্যা তোমাদের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে প্রতীক্ষা করবে। তোমাদের জয় হোক!’’
তারা নীরব হলেন। কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতার পর উঠলো সমবেত সৈন্যদের গর্জন মেশানো প্রবল হর্ষধ্বনি। পাহাড়ের পিছনের পশ্চিম আকাশে তখন রাক্ষসী বেলার রক্তোৎসব...
0 comments: