অণুগল্পঃ রিয়া চক্রবর্তী
Posted in অণুগল্প
অণুগল্প
আমার মন
রিয়া চক্রবর্তী
এখন দিনগুলো বড় বেশি সুন্দর মনে হয়, সকালে ঘুম থেকে উঠেই মন কেমন করা নেই। মাঝে মাঝে সেই সূয্যি ওঠার আগে থেকে অবশ্য উঠে বসে থাকতাম- আকাশের পাড় ঘেঁষা গোলপানা কমলার রসের নেশায় বুঁদ হয়ে যেতাম। আবার কখনো কখনো উঠতে দেরি হয়ে যেত, পড়িমরি করে কাজ করা।তারপর অতি ধীরে চা বানাই, চিনি মেশাই, চামচ দিয়ে নাড়তে নাড়তে জানলার ধারে ঠেস দিয়ে হাঁ করে রাস্তার দিকে কি যে দেখি, জানা নেই। এরপর শুধু বই খুলে আনমনে বসে থাকা। সময় হাতড়ানো, কখন যে ফোনটা আসবে? অধৈর্য্য হই কি? হঠাৎ চেনা রিং টোন, একলাফে ফোন ধরে, “goooooood morning”।ফোনের অন্যদিকের ভালবাসার গলাটা যেই বলে, এতক্ষন কি করছিলে? বড়বেশি কাছাকাছি এসে যায় সব ছবি।ছবিগুলো বদলায় বারবার। কখনো দুপুর, কখনো বিকেল, আবার কখনো সন্ধ্যায় কিম্বা রাতে।কিন্তু তার গন্ধ? গন্ধগোকুলের মতন ঘুরঘুর করে পায়ে পায়ে, গায়ে গা ঘষে নরম-গরম। ফোনে কথা শেষ। তবু মুঠো করে নিয়ে বসে থাকি, কথা-শেষের ফোনের হালকা গরম টুকুতে হাত সেঁকি।আজকাল আমি বুঝি বড় বেশি অস্থির, যদিও একথাটা আমার মনে হয়। বাকিরা বলছে, আমি যেন আরো বেশি চুপচাপ ধীরস্থির হয়ে গেছি। তবে কি মনের ভুল? নিজেকে চিনতে এতটা ভুল? অবশ্য আজকাল সবকিছুই অচেনা লাগে। আজ কাল আমার এই ঘরটার প্রতিটা কোণের সাথে কথা বলি, দূরের ওই মেঘেদের আমার গল্প বলি, এক ঝাঁক পায়রাকে বলি তার কথা, তবুও মাঝে মাঝে সবকিছু এলোমেলো লাগে। এই ভালো আছি আবার এই ভালো নেই! কি জানি এটাকেই split personality syndrome বলে কিনা। তবে হ্যাঁ সবটাই মনের রোগ, মনের দোষ। কবে যে পড়েছিলাম, ‘মন থাকলেই মন কেমন’,আজকাল সময় আমাকে ছুঁইয়ে বেঁধে রেখেছে গন্ডিতে, তাই বোধ করি কাল-আজ-কাল নিয়ে বড় বেশি তল-খোঁজ ডুবুরির ঝাঁপ।ঠিক কি চেয়েছি-কি কি করেছি- কি যেন চাইনি-তবু কি করছি-কোন পথে মাঝপথ হাঁটা শেষ দিনের শেষে সব বলি তাকে। তবুও কেন জানি মনে হয় ফেলে আসা কিছু গলির একটুকু বাঁক নিলে, মেঠো সেই আলপথ পথ চেয়ে বসে আছে, যে পথের হাওয়া ধরে মেঠো বাঁশি আনে ঘুম। চাঁদ আর পরী সেইপথে নুড়ি ফেলে বসে আছে আমায় নিয়ে খেলবে বলে। তবুও আমার আর ফিরে যাওয়া হয় না, আলোটা যে নিভে গেছে সেই বাঁকে, কোনফাঁকে। তাই সে দিকভুল পথ ধরে এঁকেবেঁকে চলে-ফেরে, ঠোক্করে হাত কাটে-পা কাটে- আর মন! সে তাকেই দিয়ে দিয়েছি।
0 comments: