0

অণুগল্পঃ জয়িতা সরকার

Posted in


অণুগল্প


অধরা
জয়িতা সরকার



আমার যখন তেরো বছর বয়স, বাবা তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্তে তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন আমায়। আঠাশের তুমি তখন টগবগে তরুন। আর তেরো-র আমি ভীরু বালিকা। পড়া না পারলে এমন কষিয়ে থাপ্পড় মারতে! ব্যথাটা আজও সময়ে-অসময়ে বেশ টের পাই।

দেওয়ালে টাঙানো তোমার ফোটোটা যখন ঝড়ের হাওয়ায় কেঁপে ওঠে, আমি তোমার সেই প্রথম স্পর্শের মতন শিহরণ অনুভব করি, বিশ্বাস করো! একবার একটা সামান্য ভুল করেছিলাম বলে তুমি এমন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলে আমার দিকে... বিশ্বাস করো, ব্যথা বা লজ্জায় নয়... এক অব্যক্ত ভাললাগায় আমি কুঁকড়ে গিয়েছিলাম।

বছর পনেরোর আমি; একদিন স্কুল থেকে কোনো অজানা প্রেরকের প্রেমপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম । সেদিন সারারাত তুমি পায়চারি করে একটার পর একটা সিগারেট পুড়িয়েছিলে। আমি ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়ে বারবার বলতে চেয়েছিলাম, বিশ্বাস করো!আমি কিচ্ছু জানতাম না!

সেই প্রথম...হ্যাঁ সেই প্রথম বার, তোমার উষ্ণ ঠোঁট আমার ঠোঁটে নেমে এসেছিল।

যখন আমি কলেজে পড়ছি,আমার একটা নতুন প্রেম হল।তুমি তখন বিদেশ-বিভূঁই কাজের নেশায় পাগল। খবরটা পেতেই এমন শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলে আমার দিকে...

আমি লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম দরজার গোড়ায়।

সেই প্রথম তুমি আমার পিঠে হাত রেখেছিলে। জানতে চেয়েছিলে, তুই ভালবাসিস ওকে? কিছুতেই বলতে পারি নি জানো, শুধু ঠোঁট কামড়ে, ছলছল চোখে চেয়ে ছিলাম তোমার দিকে। সেদিন রাতে আমাদের প্রথম অভিসার হল। যাওয়ার আগে শুধু একবার কাছে এসে মাথায় হাত রেখে বলেছিলে... মনে থাকে যেন।

কেন জানিনা, সেদিন প্রণাম করে বিদায় জানিয়েছিলাম তোমায়।

তারপর হঠাৎ একদিন কারা আমায় দেখতে এল। পাকা কথা দিয়েরাতারাতি লাল বেণারসীতে সাজিয়ে তাদের বাড়ি নিয়ে গেল। আমি কিছুতেই যেতে চাইনি, জানো? আর তুমিও সেবার আমায় আটকাতে ফিরে আসনি। আচ্ছা... কেন আসনি? আমার ওপর সত্যিই কি তোমার কোনো দাবী কখনো ছিলোনা?

তারপর একদিন সব হারিয়ে আবার ফিরে এলাম তোমার কাছে। তুমি দু’হাত বাড়িয়ে আবার আমায় বুকে টেনে নিলে। এসে জানলাম, কর্কট বাসা বেঁধেছে তোমার বুকে। বুঝেছিলাম কেন সেদিন নির্দ্বিধায় ত্যাগ করেছিলে নিজের সমস্ত দাবী।

ফুল চন্দনে সাজিয়ে ওরা যখন দরজা দিয়ে তোমার শবদেহটা বার করে নিয়ে গেল, আমি সমস্ত চোখের জল দিয়েও আটকাতে পারিনি। ভালোবাসার এমন পরিসমাপ্তী যে স্বয়ং ঈশ্বরও চাননি। সেদিন বোধহয় ঈশ্বর ও কেঁদেছিলেন আমার সাথে, তাইতো সমস্ত আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিলো তোমার বিদায় বেলায়। 

জুঁইফুল তোমার বড্ড প্রিয় ছিল...আর ভালোবাসতে পায়েস। কতবার আমার বিছানায় অজান্তে রেখে গেছ। আমি টের পাইনি কখনো। জুঁই এর গন্ধে ম' ম' করত গোটা ঘর। 

আজ তোমার জন্মদিন। চোখ মেলে দেখো আজ ঘরভর্তি জুঁইফুল, বাটিতে তোমার প্রিয় পায়েস। আর আমার পরনে সাদা শাড়ী।

আমি দরজা খুলে বসে আছি তোমার অনন্ত প্রতীক্ষায়.... তুমি ফিরে এসো।

0 comments: