0

ছোটগল্পঃ সংযুক্তা মজুমদার

Posted in


ছোটগল্প




শূন্য স্থান পূরণ 
সংযুক্তা মজুমদার




‘‘দুই এক্কে দুই...
দুই দুগুনে চার,
তিন দুই ছয়, 
অঙ্কে আমার ভয়।’’

‘‘হায় কপাল আমার! আমি কি করব এই ছেলে কে নিয়ে? খালি ছড়া কাটে।বলি, পাশ করবিনা তো বরুণ! আর কত জ্বালাবি আমায়? এই একটা মোটে ছুটির দিন, আমারও তো কিছু নিজের সময় থাকবে?’’

বরুণ নির্বিকার।বললো,‘‘মা, বলো তো, কোথা থেকে আলো আসছে ঘরে?’’

বিরক্ত মা বললেন, ‘‘জালনা...’’

অমনি বরুণ নাচতে থাকে। ‘‘তুমি তো বললে- জাল না, আমি জ্বালাচ্ছি।’’ বলেই বরুণ হাওয়া!

বরুণ নামী ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। কিন্ত তার ভালোলাগে বাংলা পড়তে।মা কত বার বলেন,‘‘বরুণ, হোয়াট ইস ইওর নেম?’’ 

বরুণের উত্তর... ‘‘বরুণ কুমার সরকার, বাংলা বলা দরকার।’’

মা হাহাকার করেন। বাড়িতে আলমারি ভর্তি দাদুর বই। বেশির ভাগই বাংলা – সুকুমারসমগ্র, রাজকাহিনী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশুভোলানাথ থেকে শুরু করে আরও হরেক রকম বইয়ের স্বাদ পেয়ে গেছে বরুণ। যত দিন দাদু ছিলেন, বরুণের ভারী মজা ছিল। রোজ রাতে মহাভারতের গল্প শুনত। কিন্তু শেষটা তাকেই পড়তে হবে। দাদু মহাভারত শেষ না করেই চাঁদে পাড়ি দিয়েছেন। সেই থেকে বরুণও খানিকটা একা হয়ে গেছে।

বরুণ বাড়ি ফিরলে কাঁকন মাসি বরুণের সাথে থাকে। বাড়ি ফিরে ব্যাগ বোতল রেখেই বরুণ দাদুর ঘরে চলে যায়। একটা বই নিয়ে চিৎপটাং হয় দাদুর বিছানায়। অনেক সাধ্যসাধনা করলে তবে কিছু খায়। বই মুখেই ঘুমিয়ে পড়ে ছেলেটা রোজ। বিকেলবেলা বসে কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখে, আর মাঝে মাঝে মাসির সাথে লুডো খেলা। সপ্তাহে দু’দিন বরুণ স্কেটিং ক্লাসে যায়। আর দু’দিন যায় বাড়ির কাছেই ‘মিউসিম্যানিয়াতে’ গান শিখতে। এই সবই মাসির হাত ধরেই চলে। এসব কিছুর মধ্যে বরুণ কেবল গানের ক্লাসটা খুব ভালবাসে। বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই তারপর মিতালী ম্যাম, বরুণের ‘হোমটিউটর’।

মিতালী ম্যাম ভীষণ রাগী। বরুণ কত নতুন গল্প বলতে চায়, নতুন নতুন ছড়া শোনাতে চায়, ম্যাম কিছুই শোনেননা। এমনকি, কোনওদিন স্কুলে গুড পেলেও ম্যাম দেখে হাসেন না। তবে কাঁকন মাসি খুব ভালবাসে বরুণকে। কাঁকন মাসি বরুণের খাতায় একগাদা লালকালি দেখলেও বকেনা। বলে,‘‘সোনা আমার, তুমি একদিন অনেক বড় হবে, তোমার দাদুর মত।’’বরুণের দাদু খুব নাম করা ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। রাষ্ট্রপতির কাছে পুরস্কারও পেয়েছেন নিজের গবেষণার জন্য। বরুণও ইতিহাস ভালবাসে, বরুণ সাহিত্য ভালবাসে, কিন্তু অঙ্ক বরুণ বোঝেনা এক্কেবারে। সংখ্যা দেখলেই তার শঙ্কা হতে থাকে। এই গোপন কথাটা কাঁকনমাসি ছাড়া আর কেউ জানেনা।

বরুণের মা আত্রেয়ী নাম করা বিদেশী কম্পানিতে কাজ করেন। তাঁর বাড়ি ফিরতে প্রায় রাত আটটা বেজে যায়। মায়ের জন্য অধীর আগ্রহে বরুণ অপেক্ষা করে।মা এসেই বরুণকে একটা চকোলেট দেন রোজ। তারপর চা খেয়ে, স্নান করে, বাড়ির জামা পরে টিভি চালিয়ে বসেন। বরুণ মায়ের গা ঘেঁষে বসে। কখনো স্কুলে কারেকশনের খাতা, ডাইরি, আর কখনো ম্যামের লেখা নোট, “প্লীস কাম অ্যান্ড সী মি টুমরো।” বাড়ি ফিরে নিত্যদিন এইসব মোটেও ভাল লাগেনা আত্রেয়ীর। মাথা যায় গরম হয়ে, আর ব্যস! অমনি হাত চলে বরুণের ওপর। বাবাও ভীষণ ব্যস্ত মানুষ। মাসের অর্ধেক দিনই তিনি অফিসের কাজে বাইরে থাকেন, কখনও দেশে, কখনও বা বিদেশে। নানা জায়গার নানা দামি খেলনাতে বরুণের ঘর ভর্তি। এইবার বাবা আমেরিকা থেকে বরুণকে একটা অ্যাপেলের ট্যাবও এনে দিয়েছেন। তাতে বাবা নানা ধরনের অঙ্কের খেলাও লোড করে দিয়েছেন। কিন্তু কেউ জানেনা বরুণ ট্যাবে কি করে। বরুণ কবিতা লেখে, আর বরুণ নিত্যদিনের ভাললাগা আর খারাপলাগাগুলোও লেখে।

ক্লাস ফোর প্রায় শেষ। বরুণ আজকাল বাড়িতে কারও সাথে বিশেষ কথা বলেনা। নিজের ঘরেই চুপচাপ বই, কম্পিউটার বা ট্যাব নিয়ে বসে থাকে। পড়ার চাপ বাড়ছে বলে মা ক্লাসগুলোও বন্ধ করে দিয়েছেন। গানের ক্লাসটা ভালো লাগতো, কিন্তু বরুণ কিছু বলেনি যখন মা ছাড়িয়ে দিলেন। বাড়িতে মা, বাবা - কারও চোখে পড়েনি, হাসিখুশি বরুণের স্বভাবে এই বদল। শুধু মাত্র কাঁকন মাসি বুঝতে পেরেছিলো। বলেও ছিলো কয়েকবার দাদা বৌদিকে। কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি তাতে।

বরুণের এইবার ক্লাস ফাইভ। আগের তুলনায় বরুণ এখন অনেক বেশী গম্ভীর, মুখচোরা। বন্ধু বান্ধবও কম। মোটামুটি কোনওরকমে বরুণ পাস করে যায়। কিন্তু অঙ্ক বরুণ পারেনা। প্রতিবার রেমেডিয়াল ক্লাসে যেতে হয় আর নিজের অক্ষমতার জন্য লজ্জিতও হতে হয় সকলের সামনে।

নতুন ক্লাস, নতুন টীচার। বরুণ লাস্ট বেঞ্চে বসে যায়, কোণের দিকে। ক্লাসের বখাটে ছেলে গুলো আর জ্বালায়না। ওরা জানে যে এর দ্বারা কিছু হবেনা, কিছুই না, অঙ্ক ম্যাম সারাটা ক্লাস ফোর এই একই কথা রোজ বলেছেন। ঘণ্টা পড়ার সাথে সাথে সবাই সোজা হয়ে বসে পড়ল। বেশ মোটাসোটা মিষ্টি মত ছোটখাটো একজন ঢুকলেন ক্লাসে। এক গাল হেসে বললেন,

“গুড মর্নিং চিলড্রেন, আই অ্যাম ইওর ক্লাস টীচার। মাই নেম ইস অপরাজিতা মুখার্জি। আই উইল টীচ ম্যাথস, সাইন্স, হিস্ট্রি, জিওগ্রাফী অ্যান্ড ভ্যালু এডুকেশন।’’

তারপর কার কি নাম, কার কি ভাল লাগে, কে কে বই পড়ে এই সব চলছিলো।বরুণের পালা আসতেই সে আরও শিঁটিয়ে গেল। মুখ দিয়ে কোন কথাই বেরলনা।এমনকি নাম বলতেও কুণ্ঠা বোধ করছিল।ম্যাম কিন্তু অন্যদের মত জোর করলেননা। বললেন, “ইটস ওকে, টেক ইওর টাইম সন।’’ বরুণ বসে পড়ল, ঢুকে গেল আবার নিজের তৈরি বলয়ে।

বরুণ আজকাল কিছুই পারেনা ঠিক করে। ইংরেজি, বাংলা, অঙ্ক, কিচ্ছু না। ইংরেজি ম্যাম, রেনু ম্যাম চিৎকার করে বলেন, “হোপলেস।’’বরুণ আরও ছেড়ে দেয়ে সব। অঙ্ক ক্লাসে বরুণ কিচ্ছু পারেনা। কিন্তু ম্যাম বকেননা। আস্তে করে ডেকে বলেন “গো হোম অ্যান্ড ডু দ্য করেকশন।’’ একমাস প্রায় হতে চলল, বরুণ ক্লাস ফাইভে, খুব যে ভাললাগে স্কুল তা নয় যদিও, তবুও আজকাল বুঝি অতটা খারাপও লাগেনা।

একদিন টিফিন ব্রেক-এ বরুণ এক কোণায় বসে কিছু লিখছিল, অপরাজিতা ম্যাম কখন এসে দাঁড়িয়েছেন বরুণ বোঝেনি। ম্যাম পড়ে উঠলেন... 

“সব কেমন ক্ষয়ে যাওয়া ধূসর,

যেমন আমার সকল সময় 

কেবলই অনন্ত অবসর।

স্কুলের ঘণ্টা, মায়ের মনটা,

সব বুঝতেই নারাজ আমি জানি,

আমায় বোঝে কেউ?

আমার জন্য কেবলই শুধু,

আঁধারের হাতছানি।’’

ম্যামের চোখে কিছু পড়েছিল বোধহয়। উনি কিছু না বলেই, চলে গেলেন চোখে হাত দিয়ে তাড়াতাড়ি। বরুণের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছিল। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে বসেছিল বরুণ, এই বুঝি আবার মা বাবাকে ডাকা হবে। তা সে যাত্রায় বরুণ বেঁচে গেছিল। ম্যাম ভুলে গেছিলেন।

পরের দিন ম্যাম বরুণকে কাছে ডাকলেন। আদর করে বললেন,

“কি চমৎকার কবিতা লেখ তুমি। তুমি আর কি কর বরুণ? এলোকিউশন আসছে। তোমায় আমি সিলেক্ট করলাম। তুমি নিজের কবিতা নিজেই লিখবে, আর বলবে। আমি শিখিয়ে দেব, কেমন?” 

বরুণ বুঝতে পারলনা ঠিক, তবে মনে মনে খুব খুশি হল। সবার অলক্ষ্যে চোখও মুছে নিল চট করে। বিশ্বাস হচ্ছিলনা ঠিক, যে এমন হতে পারে। সে হল গিয়ে ক্লাসের সব চেয়ে অপাংক্তেয়, গরু গাধা বরুণ। সে কিনা অডিটোরিয়ামে গিয়ে কবিতা বলবে, তাও স্বরচিত? কি জানি!

তবে বরুণ যা ভয় পেয়েছিল, তাই হল। ম্যাম বাবা মা কে ডেকে পাঠালেন। বরুণের মনে হয়েছিল একটু অন্যরকম বোধহয় এই ম্যাম, কিন্তু একচিলতে আশা আবার ছলনা করে গেল। বাড়িতে ডাইরি দেখাতেই মা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন।

“এই শুরু হল, রোজ যাও আর দুটো কথা শুনে এসো। এর থেকে সন্তান না থাকা ভাল ছিল।”

বরুণের আজকাল আর কিছু এসে যায়না এই সব কথায়। বরুণ হারিয়ে যাচ্ছে। কবিতার খাতাটা দুমড়ে, মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল। মাসি দেখতে পেয়ে চুপিচুপি তুলে রেখে দিল।

মা গেলেন স্কুলে ম্যামের সাথে দেখা করতে। বরুণ নির্লিপ্ত। কি আর হবে, ওই এক... কিছুই পারেনা, কিছুই হবেনা, আপনারা দেখুন, ভাল টীচার রাখুন... এই সব শুনতে হবে।

“গুড আফটারনুন মিসেস সরকার, প্লিস সিট ডাউন। বরুণ, স্ট্যান্ড আউট সাইড প্লীস।’’

‘‘ম্যাম, আমি যা বলতে যাচ্ছি তা মন দিয়ে শুনুন। বরুণ একটি অসম্ভব গুনী ছেলে।’’ আত্রেয়ী হতবাক। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে।

ম্যাম বলে চললেন, “বরুণের কেবল একটাই অসুবিধা, ও অঙ্ক পারেনা। ওই একটি কারণের জন্য ওকে সবাই মিলে এতটাই তিরস্কার করেছেন যে ছেলেটা এখন আর কিছুই পারেনা। তবে সেটা বলাও ভুল। বরুণ এখনও কবিতা লেখে, নিজের বয়স আন্দাজে অনেক গম্ভীর, অনেক গভীর’’

“কবিতা? বরুণ কবিতা লেখে?” আত্রেয়ীর অবাক জিজ্ঞাসা।

‘‘হ্যাঁ, আমি বুঝেছিলাম আপনারা জানেননা। জানার চেষ্টাও করেননি কখনই। আমার তাইই মনে হয়েছিল। আজকাল মা বাবারা নিজেদের কর্ম ব্যস্ততায় ভুলে যাচ্ছেন যে তাঁদের বাগানে একটি বা দুটি ছোট ফুল ফুটে আছে। সেই চারা গাছের রোদ, বৃষ্টি, জল, আদর, আর একটু সময়ের খুব প্রয়োজন। বরুণের সেই যায়গাটা একদম খালি। আপনাদের দু’জনকেই যে ভাবে হোক ওকে সময় দিতে হবে। না হলে বড় দেরী হয়ে যাবে মিসেস সরকার।

‘‘এইবার আমি আপনাকে আরও কিছু বলব। একটু মন দিয়ে শুনুন। বাচ্চাদের নানা রকমের অসুবিধা হয় যেটা সকলে ঠিক বুঝতে পারেনা। এমন এক অসুবিধা বরুণের আছে। এর নাম হল ডিসক্যালকুলিয়া। এই সমস্যা থাকলে বাচ্চারা ক্যালকুলেট করতে পারেনা, বা অসুবিধা হয়। সাদা বাংলায় বললে বলতে হয়, ওদের অঙ্ক করতে অসুবিধা হয়। ওরা নম্বর গুলো ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। বরুণেরও এই সমস্যা আছে। তবে এই সমস্যা ধৈর্য আর ভালোবাসা দিয়ে অনেকটাই ঠিক করা যায়। বরুণ সাহিত্যে অসম্ভব ভাল। কি অপূর্ব হাতের লেখা আর কি চমৎকার শব্দের ব্যবহার!’’ মিসেস সরকারের চোখ দিয়ে অবিরাম জল পড়ছে। বরুণ যে ভাল কিছুও করে, তা তিনি দেখেও দেখেননি। কেবল কি করেনা, কি পারেনা তারই হিসেব কষেছেন।

ম্যাম আরও বলেন, “আমি যেমন বলছি, তেমন করে যদি ওকে ও যা ভালবাসে তাই করতে উৎসাহ দেন, আমি কথা দিতে পারি, বরুণের ভাল হবে, উন্নতি হবে।’’

ম্যাম এইবার বরুণকে ভেতরে ডাকলেন আর বললেন, “আমি মাকে বলে দিয়েছি বরুণ, এবার থেকে তুমি রোজ কিছুক্ষণ কবিতা লিখবে, ছবি আঁকবে, আর তার পরে একটু স্কুলের পড়া করবে, কেমন?” বরুণ খুব অবাক চোখে ম্যামকে দেখল। ভাবল ইনিই বার বার আমার টীচার হতে পারেননা?

সেই শুরু। সারা বছর লেগেছিল বরুণকে আলোয় ফেরাতে। কিন্তু বরুণ তার ম্যামের বিশ্বাস বাঁচিয়েছিল। বরুণের মা বাবার সক্রিয় সহযোগিতা ম্যাম পেয়েছিলেন অবশ্যই। বরুণ সব বিষয়ে ভাল ফল করেছিল। কেবল অঙ্কে খালি পাস করেছিল। ম্যাম বলেছিলেন, “সবাই যদি আইনস্টাইন হবে, তো কবিতা আর গল্প যে হারিয়ে যাবে। বরুণ, তুমি খুব বড় হবে, তুমি গল্প লিখবে, বাংলা, ইংরেজি পড়বে, তোমার লেখা বই বেরবে। আমি গর্ব করে বলব সকলকে, এ আমার ছাত্রের লেখা।’’

এর পরে ক্লাস টেন অবধি বরুণকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়েছে অঙ্কের সাথে। তবে তারপরে বরুণ হিউমানিটিস নিয়ে পড়েছে।

বছর কুড়ি পেরিয়ে গেছে। অপরাজিতার অবসর নেবার সময় এসেছে চাকরি থেকে। অপরাজিতা এখন ওই স্কুলেরই হেড মিস্ট্রেস। কত বাচ্চা আসে যায়, কিন্তু অপরাজিতা সবাইকেই মনে রাখেন, বিশেষ করে তাদের, যারা মনকে একটু দোলা দিয়ে যায়।

একদিন সকালে স্কুলে, ওঁর সেক্রেটারি বলল, ‘‘ম্যাম, এক ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলা দেখা করতে চান। আসার কারণ বললেন পার্সোনাল।’’ অপরাজিতা পাঠাতে বললেন ভেতরে।

“নমস্কার ম্যাম, আপনি আমাদের চিনতে পারবেননা। কিন্তু আমরা আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমরা মিস্টার আর মিসেস সরকার, বরুণ সরকার এর মা বাবা।’’ বরুণ নামটাই যথেষ্ট ছিল। অপরাজিতার ছবির মত সব মনে পড়ে গেল। অপরাজিতা জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন আছে বরুণ? কি করছে?” কোনও কথা না বলে মিস্টার আর মিসেস সরকার একটি বড় খাম বাড়িয়ে দিলেন ম্যামের দিকে। তাতে লেখা-

টু

মিস অপরাজিতা মুখার্জ্জি,

হেড মিস্ট্রেস,

মিত্তাল স্কুল

কলকাতা।



ফ্রম,

বরুণ সরকার,

ডীন, কমপ্যারেটিভ স্টাডিস,

কলম্বিয়া ইউনিভারসিটি।



একমাস পরের ঘটনা। অপরাজিতাকে নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টেই বরুণ প্রণাম করল। সসম্মানে নিয়ে গেল সাথে।অনেক আদর যত্ন সন্মান আর ভালবাসার সাথে অপরাজিতার প্রাপ্য ছিল, ‘বেস্ট টীচার ইন মাই লাইফ।’ বরুণ অনেক ভেবে চিন্তেই সেপ্টেম্বর-এ আনেনি ম্যামকে। ম্যাম স্কুল ছেড়ে আসতে পারতেন না বরুণ জানত। আর তাছাড়া সারা পৃথিবী ৫ই অক্টোবর ‘টীচার্স ডে’ পালন করে যে!

0 comments: