ছোটগল্প: সীমা ব্যানার্জী-রায়
Posted in ছোটগল্প
ছোটগল্প
দলছুট
সীমা ব্যানার্জী-রায়
পাগলা
দোনামোনা করে লাগালাম ফোনঃ অ্যাই তুই এখন কোন মুলুকে?
· আমি যথারীতি অফিসে-তবে আজ একটা বিরাট খবর আছে-হয়ত ছোটখাটো একটা মুভি হয়ে যেতে পারে।
· ধ্যুস! এদিকে তো আরেকটা স্টোরি হতে চলেছে রে। তমালকে দেখলাম একটা সাদা মেয়ের সাথে।
-তাই নাকি? এ বাব্বাঃ ও তো বিয়ে করে এসেছিল এ দেশে?
· তো কি হয়েছে, ছেড়ে দেবে।
· সাদা মেয়েটা বুঝি টিজান? সাদা রং হলে কি হবে-বিশ্রী দেখতে... আর বাকি বললাম না।
· আইব্বাস, কি করে বুঝলি?
· স্ট্রেঞ্জ কিছু না হলে কি তুই প্রশ্নটা করতিস? তবে কেন আবার টিজানকে নিয়ে ঘুরছে?
· কি যে করে পাগলাটা। ...যাক গে যাক, পুরনো প্রেমটা তাহলে রিভাইভ করল। তাহলে শুধুমুধু রিক্তাকে বিয়ে করল কেন?
· বিয়ের পর নাকি জানতে পারে রিক্তা ভিষণ শীতল মেয়ে।
· ব্যাটা ঢপ দিয়েছে, বাঙালি মেয়ের সাথে ঘর করবে না বলে স্রেফ একটা গ্যাঁজা মেরেছে।
· যাক গে! যার সঙ্গে মজে মন, “কি বা হাঁড়ি কি বা ডোম।”
জীবন
রিপা আর হর্ষ-এর মধ্যে কি যে হয় মাঝে মধ্যে, কে জানে। বিয়ের দু বছরের মাথায় ছোটখাট কথায় দুজনের তর্ক-টা আজকাল যেন একটা নিত্য-নৈমিত্যিক গদে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। শুরু করে প্রথমেই হর্ষ।
-এটাই তো তোমার মুশকিল। আমি ভাবতাম যারা বুদ্ধিমান, তারা বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের জীবনকে আরও সহজ করে নেয়। তোমার তো দেখছি সবই উলটো। এখনও মেয়েবেলাকে আঁকড়ে রয়েছ। হর্ষ শাসন শাসন মুখ নিয়ে রিপার দিকে তাকাল।
-মেয়েবেলা কোথায় আঁকড়ে রইলাম, আবার? মৃদু প্রতিবাদ করল রিপা। ওর মনে হল হর্ষর বোধহয় বোঝার ভুল হচ্ছে।
-খারাপ লেগেছিল, তাই বললাম।
-খারাপ লাগবে কেন? এসব তো খারাপ লাগার ব্যাপার নয়। কবেই গা সওয়া হয়ে যাওয়ার কথা। আমার গিয়েছে। অবশ্য তোমার মতো বিশাল প্রাসাদে আমি বড় হইনি।
রিপা খোঁচাটা হজম করল। হর্ষ এ রকম প্রায়ই করে। রিপার সমস্যার জন্য ও রিপাকেই দায়ী করে। রিপার মাঝে মাঝে মনে হয় হর্ষ ওকে ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। হর্ষ পারছে না, নাকি সে বোঝাতে পারছে না? তাই হবে হয়ত। রিপাও যে সব সময় হর্ষর কথা বোঝে, তাও নয়। অথচ বিয়ের আগে রিপা বলে নিয়েছিল সব হর্ষ-কে। ভালবেসে বিয়ে করছে তারা, তারা তাদের জীবনকে পুরানো কোন গল্পের ইঙ্গিতে রাখবে না।
-প্রাসাদে থাকতে থাকতে প্র্যাক্টিকাল সেন্স গ্রো করে নি, তোমার একটুও। তোমার মতো বাস্তব বর্জিত মহিলা আমি কোথাও দেখি নি।
প্রাসাদে থাকার সঙ্গে বাস্তববোধ বর্জিত হওয়ার সম্পর্ক ঠিক কোথায় রিপা বুঝতে পারল না।
নায়িকা
টিভি চলছে। পর্দায় দেখাচ্ছে একটা ঘন জঙ্গল। ও মাঃ এ কি? একটা লাল চেক চেক গেঞ্জি পরা একটা লোক একটা সুন্দরী মেয়ের হাত চেপে ধরেছে। হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে চলেছে । তার মাখনের মতো নরম শরীর রুক্ষ মাটির ঘষা খাচ্ছে। খারাপ লোকটার উদ্দেশ্য মেয়েটাকে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া। সুন্দরী মেয়েটা কাঁদছে। কাকুতি মিনতি করছে। কিন্তু চেক গেঞ্জি পরা লোকটার ভ্রুক্ষেপ নেই।
সোনালি দাঁত বাঁধানো মুখে হেসে উঠছে শুধু। পাজিরা যেভাবে হেসে ওঠে ঠিক সেইভাবে।
তিতলির মা বলে উঠলেন, “বন্ধ করে দে তো। এই এক জিনিস হয়েছে আজকাল। আর হিরোটা আসবে কখন? সব শেষ হয়ে যাবে তখন?”
-মা চুপ করবে? তিতলি বিরক্ত হয়ে উঠল। এইজন্য তোমার সাথে আমি টিভি দেখি না।
-ওই তো হিরো আসছে। দাঁড়া তোকে দেখাবে মজা এবার, বদমাইস কোথাকার!।
আগে মোটরসাইকেল, তারপর দৌড়ে, তারপর প্রায় লাফিয়ে এসে নায়িকাকে বাঁচালো সুন্দর মতন হিরো। কিন্তু এ কি? মেয়েটা গ্রামের লোকগুলো কে তো সুন্দর ছেলেটার সম্বন্ধেই বলছে? বাঁচালো কিনা...
বুঝলি তিতলি? টিভি-র ওপর চোখ রেখে আঙ্গুল দেখিয়ে বল্লেন, ভাল লোকের সংসারে জায়গা নেই। আজকাল কারুর উপকার করতে নেই। উপকার করেছো কি মরেছো। সাদা-সিধা, সরলের যুগ নেই। নাঃ একদম যুগ নেই।
টিভি বন্ধ করে তিতলি উঠে পড়ল।
দলছুট, বেশ ভাল লেগেছে। আজকাল ভাললোক স্বাভাবিক স্মাজ সংসার থেকে দলছুট হয়ে পড়ছে।
ReplyDelete