অণুগল্প: শাহেদ সেলিম
Posted in অণুগল্প
অণুগল্প
পুস্তক
শাহেদ সেলিম
মিথের পেছনে ছুটে ছুটে অবশেষে পৌঁছে গেলাম, রামুর এক জীর্ণ ত্রিতল কেয়াঙ্গে।
বয়বৃদ্ধ ভান্তে এসে দাঁড়ালেন আমার সামনে। সস্নেহে হাত ধরে জিজ্ঞেস করলেন,
-কি চাও তুমি?
আমি প্রশ্ন শুনে বিদগ্ধ শ্রোতার মত চেয়ে রইলাম তার দিকে।
হায়! এই প্রশ্নটি অনাদিকাল ধরে আমার পিছু নিয়েছে! কখনো উত্তর খুঁজে পাই নি।
-কি চাও তুমি? কি চাও তুমি?- আমায় অনুসরণ করছে।
সম্বিত ফিরে পেয়ে বললাম পুস্তকটির কথা,-- আমি এসেছি পুস্তকটির কিছু ছবি নিতে।
এর আগেও সন্ধান করেছি একটি বৃক্ষের। যার সফেদ ক্ষীণ তন্তু থেকে তৈরি হত মসলিন।
যা অঙ্গে ধারন করেছিল সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা, ফারউরা মুড়ি দিয়ে উঠে পড়তেন শেষ নৌকাবিহারে।
খুঁজেছি তাকে ময়মনসিংহ থেকে নরসিংদী, খুঁজেছি সোনারগাঁয়ে।
পাইনি সে অমূল্য বৃক্ষ!
বৃদ্ধ ভান্তে, আমাকে নিয়ে গেলেন তার পুস্তকখানায়।
একটা লালশালু মোড়ানো পুস্তক আমার হাতে তুলে দিলেন। বললেন-- এটা পালিতে লেখা।
তালপাতার পুস্তক ধীরে ধীরে উন্মোচিত করল নিজেকে, আমার সামনে। এর এক বর্ণও আমি পড়তে পারি নি।
আমি ভাষাবিদ নই। আমি সাধারণ এক ফটোগ্রাফার।
কিন্তু তার পাতায় পাতায় ধুসর বর্ণগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো আমার পূর্বপুরুষগণ।
পরতে পরতে ভেসে উঠল তাদের সহজিয়া জীবন।
আমি আমার শেকড় খুঁজে পেলাম! আমি মৌন হয়ে গেলাম!
ভান্তে দূর পাহাড়ের জাদি দেখিয়ে বললেন-
‘তারও উপারে আমাদের আলোকিত মানুষেরা প্রকৃতির জ্ঞান লাভ করতেন।
নিয়ে আসতেন জীবনের মানে।’
তখন--
আমার ভেতর শুধু অনুরণিত হতে লাগল,
আমদের সব কিছু নিয়ে গেছে বেদুইনের দল!!!
---------------------------------------------------------------
পাদটীকাঃ
রামুঃ কক্সবাজারের একটি উপজেলা।
কেয়াঙ্গঃ বৌদ্ধ উপাসনালয়।
ভান্তেঃ বৌদ্ধ ধর্মগুরু।
জাদিঃ পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত বৌদ্ধদের বিশেষ সৌধ।
সুন্দর। সেরা একটি অণুগল্প।
ReplyDeleteশুভেচ্ছা দাদ
Delete