0

বিশেষ প্রবন্ধ: ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়

Posted in



বিশেষ প্রবন্ধ

বই কথা-মেলার কথা
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়



বাঙালীর এখন বারো মাসে তেরো নয় চোদ্দ পার্বন । আর বাংলার এই চতুর্দশ পার্বন হ’ল ‘কলকাতা বইমেলা’ । দেখতে দেখতে কলকাতা বইমেলা আটত্রিশ বছর পার করে উনচল্লিশে পা দিল । পোষাকি নাম ‘কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলা’- বিশ্বের বৃহত্তম অ-বানিজ্যিক বইমেলা । অ-বানিজ্যিক – কারণ, বিশ্বখ্যাত ফ্রাঙ্কফুর্ট কিংবা লন্ডন বইমেলায় পাঠকের কাছে বই বিক্রি হয়না, বইএর স্বত্ত বিক্রি হয় প্রকাশকদের কাছে, ওগুলো পুস্তক প্রকাশকদের মেলা । কলকাতা বইমেলার আকর্ষণ অন্যরকম । বইএর সঙ্গে পাঠকের মিলন মেলা । আর সেই কারণেই কলকাতা বইমেলা এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ তো বটেই, বইপ্রেমীদের উপস্থিতির বিচারেও কলকাতা বইমেলা বিশ্বের সর্ববৃহৎ । বই বিক্রির হিসাব কোটি ছাড়িয়েছে বইমেলার দ্বিতীয় বছরেই ।

শুধু কলকাতা বইমেলাকেই বা বাঙালীর চতুর্দশ পার্বন বলি কেন ? আজ বাংলার এমন কোন জেলা নেই যেখানে বইমেলার আয়োজন হয়না । প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বইমেলার আয়োজন বাঙালির বড় আদরের বিষয় হয়ে উঠেছে । আমাদের এই ‘বইএর সমুদ্র’ অবগাহন, পাঠকের কাছে বইএর পৌঁছে যাওয়া – এসবের সূত্রপাত নিঃসংশয়ে কলকাতা বইমেলার সাফল্যের পথ বেয়েই এসেছে ।

বইকে ঘিরে এই যে উৎসব, যে উৎসবে মাতেন লক্ষ লক্ষ মানুষ, সেই বই প্রকাশের উৎসমুখে ফিরে তাকাতে ইচ্ছা হয় । তখনকি জানা ছিল বইএর কি অমোঘ শক্তি ! পুরাণের গল্প – সমুদ্র মন্থন করে নাকি অমৃত উঠেছিল, আর সেই অমৃত পান করে দেবলোক অমরত্ব লাভ করেছে । মানুষ দেবতা নয়, কিন্তু তার সভ্যতার ইতিহাস, তার পথচলাটাও তার সমাজ ও সভ্যতার পাঁচ হাজার বছরের মহা মন্থনের ফল । সেই মহা মন্থনের কোন এক আদীমতম কালখন্ডে মানুষ তার মেধা ও সৃজন ভাবনায় নিজেই রচনা করেছিল অমৃতের ভান্ডার – বই, পেয়েছিল অমরত্বের অধিকার । সে অন্য প্রসঙ্গ, আমি যেতে চাই ছাপা বইএর উৎসমুখে ।

সেই কবে আঠেরো শতকের শেষ ভাগে, নগর কলকাতার তারুণ্যে, কলকাতার ‘গ্রন্থনগরী’ হয়ে ওঠার সূত্রপাত । ছাপাখানার আবির্ভাব কলকাতার নবীন প্রজন্মের মানসিক বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিল । ইংরেজরা তাদের শাসনের কাজের জন্য কলকাতায় ছাপাখানা এনেছিল, এটা একটা ঘটনা মাত্র কিন্তু ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও ব্যবহারে এদেশীয়রা অনেক বেশি আগ্রহী ও তৎপর ছিল । উনিশ শতকে বাংলায় বুদ্ধির জাগরণে মুদ্রণ যন্ত্রের ভূমিকা অবিস্মরণীয় । সে পথে রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুররা অগ্রপথিক, কিন্তু এদের সঙ্গে দুটি নাম নিশ্চিত ভাবেই সমান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় তাঁরা হলেন ত্রিবেণীর এক কর্মকার পঞ্চানন এবং শ্রীরামপুরের বহরা গ্রামের এক বাঙালি ব্রাহ্মণ গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্য । পঞ্চানন কর্মকার প্রথম বাংলা হরফ তৈরি করেন ১৭৮৪ সনে । আর গঙ্গা-কিশোর ভট্টাচার্য প্রথম বাংলা বই ছাপা শুরু করেন । গঙ্গাকিশোর শ্রীরামপুরের ব্যাপ্টিস্ট মিশনের ছাপাখানায় কম্পোজিটর ছিলেন, তারপর কলকাতায় । গঙ্গা কিশোরই কলকাতায় প্রথম বাংলা বই ছাপা শুরু করেন । ১৮১৬তে প্রকাশিত ভরত চন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ ছিল কলকাতায় ছাপা প্রথম সচিত্র বাংলা বই । বইটির কাটতি বাড়ানোর জন্য গঙ্গা কিশোর একটি দোকান খোলেন । সুতরাং গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্যই নগর কলকাতায় প্রথম বইয়ের দোকান খোলার পথ দেখিয়েছিলেন । কলকাতা যে একদিন ‘গ্রন্থ নগরী’তে পরিণত হল, তার আদি কারিগর গ্রামীণ বাংলা থেকে উঠে আসা এই দুজন – পঞ্চানন কর্মকার ও গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ও আরো কয়েকজন । তখন রেলগাড়ি আসেনি, ডাক ব্যবস্থা শুরু হয়নি, কারখানার ভোঁ বাজতো না । তখন এঁরাই হয়েছিলেন কলকাতার সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রথম নেপথ্য পুরোহিত । ১৮৩০এ কলকাতা তখনও প্রাসাদ নগরী হয়ে ওঠেনি । কিন্তু ‘গ্রন্থনগরী’ হয়ে ওঠার সূত্রপাত হয়ে গিয়েছিল । ‘বটতলার সাহিত্য’ বলে একটা বিদ্রুপবাক্য আমাদের সাংস্কৃতিক মহলে খুব প্রচলিত । এই ‘বটতলা’র কোন ভৌগলিক সীমানা নেই । চিৎপুরের অলিগলি, গরাণহাটা, আহিরিটোলা, শোভাবাজারে ছাপাখানায় বাংলা বইএর মুদ্রণ ও বিপনন ব্যবস্থা প্রথম শুরু হয়েছিল বাংলা বই ছাপার সেই আদিপর্বে ।

অথচ আমাদের পরম বিস্ময়, সেই ‘গ্রন্থনগরী’ কলকাতার নাম বিবেচিত হয় নি, ভারতে যখন ‘জাতীয় বইমেলা’ সংগঠিত করার ভাবনাচিন্তা শুরু করে ন্যাশানাল বুক ট্রাস্ট ।

ভারতে বইমেলা সংগঠন করার সূত্রপাত ১৯৬০এর দশকে, যখন ন্যাশানাল বুক ট্রাস্ট বা এন বি টি মুম্বাইএর চার্চ গেট ময়দানে প্রথম জাতীয় বইমেলার আয়োজন করেছিল । এর পর তারা দিল্লী, মুম্বাই ও চেন্নাইতে জাতীয় বইমেলার আয়োজন করেছিল । কিন্তু কলকাতার কথা তারা ভাবেনি । কলকাতাকে তারা জাতীয় বইমেলা করার জন্য উপযুক্ত মনে করে নি । আয়োজকদের মুর্খতাকে ধন্যি ধন্যি করতে হয় ! ১৯৭২এ নতুন দিল্লিতে বিশ্ব বইমেলা আয়োজিত হয় । কলকাতা তখনও বইমেলা সংগঠনের জন্য ব্রাত্য বিবেচিত ছিল । এর পর কলকাতার কয়েকজন উৎসাহী প্রকাশক, কলকাতা যে বইমেলা করার যোগ্য স্থান তা বোঝানোর উদ্যোগ নেয় । তাদের চেষ্টায় অবশেষে সেই চাঁদ সদাগরের বাঁ হাতে মনসাকে ফুল দেবার মত অনিচ্ছুক ন্যাশানাল বুক ট্রাস্ট ১৯৭৪এর জানুয়ারি মাসে কলকাতার একাডেমি প্রাঙ্গণে নিতান্ত ছোট আকারে একটি বইমেলার আয়োজন করেছিল । এর পরই কলকাতায় বার্ষিক বইমেলা করার চিন্তা ভাবনা শুরু হয় ।

পরের বছর ১৯৭৫এ, কলকাতার ১৪টি প্রকাশক মিলে গঠিত হয় ‘পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ড’ । এদের উদ্যোগেই শুরু হয়ে গেলো ‘কলকাতাপুস্তক মেলা’ ১৯৭৬এর ৫ই মার্চ । চলেছিল ১৪ই মার্চ পর্যন্ত । এখন যেখানে ‘মোহর কুঞ্জ’, বিড়লা তারামন্ডলের ঠিক উলটো দিকের মাঠে আয়োজিত হয়েছিল কলকাতার প্রথম বইমেলা । মজার কথা, সেই প্রথম বইমেলায় কলকাতার সমস্ত প্রকাশক বইএর পসরা নিয়ে আসেন নি । তারা এর সাফল্য নিয়ে সন্দিহান ছিলেন । ফলে মেলার মাঠ অনেক ফাঁকাই ছিল । কিন্তু বইপ্রেমী মানুষের কাছে বইমেলা তার জন্মলগ্নেই প্রবল আকর্ষণ সৃষ্টি করে, মেলার দিলগুলিতে যথেষ্ঠ জনসমাগম হয় । ফলে পরের বছর থেকে মেলায় পুস্তক বিপণির সংখ্যা ও জন সমাগম বাড়তে থাকে । ১৯৭৭এর দ্বিতীয় বইমেলায় বই বিক্রি হয়েছিল এক কোটি টাকারও বেশি আর মেলায় আসা বইপ্রেমীদের সংখ্যাটি ছিল প্রায় দু লক্ষ ।

কলকাতা বইমেলার উত্তরোত্তর যে বিপুল জনপ্রিয়তা, তার প্রকৃত সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৭৮এ আয়োজিত তৃতীয় বইমেলা থেকে । প্রসঙ্গত, একটি বিষয় মনে রাখতে হবে । ১৯৭৬এর মার্চে প্রথম বইমেলার সময় ছিল জরুরি অবস্থার সামাজিক ও রাজনৈতিক কালো দিন । তামাম সত্তর দশকটা ছিল ‘মৃত্যুর দশক’। রাস্তায় ছড়ানো তরতাজা তরুণদের লাশ, কারান্তরালে হত্যা, সন্ত্রাস, গুপ্ত হত্যা, গণতান্ত্রিক শাসনের অন্তর্জলি যাত্রা, ১৯৭৫এ জরুরি অবস্থার কৃষ্ণপ্রহরে সঙ্কুচিত ব্যক্তি স্বাধীনতা আর মানুষের কন্ঠনালি তাক করা বন্দুকের নল - বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সে এক দুঃসহ কালো সময় । ১৯৭৬এর মার্চে প্রথম বইমেলা হয়েছিল এই আবহে । ১৯৭৭এর মার্চে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন, কেন্দ্রে কংগ্রেসের একচেটিয়া শাসনের অবসান, জুনে বাংলায় বামপন্থী সরকারের পত্তন । এই মুক্তির আবহেই আয়োজিত হয়েছিল তৃতীয় কলকাতা বইমেলা ১৯৭৮এ । উদ্বোধন করেছিলেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় । তৃতীয় বইমেলা হয়েছিল আরো প্রসস্ত ময়দানে, অনেক বড় আকারে । ১১২টি প্রকাশক এই মেলায় অংশ নিয়েছিল ।

তারপর কলকাতা বইমেলা শুধু বেড়েছে – আকারে, পাঠক আকর্ষণে, মর্যাদায়; যায়গা করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক বইমেলার ক্যালেন্ডারে । বইমেলা বেড়েছে তার পথচলায় নানান ঘটনা-দুর্ঘটনা, বাধা-বিপত্তি, অবিশ্বাস, কোন কোন মহলের বিরোধীতা ও জটিলতাকে সাক্ষ্য রেখে । ১৯৯৭এর ২২তম বইমেলায় মেলা চলাকালীন ঘটে গিয়েছিল ভয়াবহ অগ্নিকান্ড । লক্ষাধিক টাকার বই ভস্মিভূত হয়, হয়েছিল প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি । ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় মেলায় আসা এক দর্শনার্থীর । আবার তিনদিন পরে, গ্রিক পুরাণের ফিনিক্স পাখির মত ভস্মস্তুপ থেকে জেগে উঠেছিল বইমেলা তার পূর্ণ দীপ্তিতে । ঐ বছর বইমেলার থিম ছিল ফ্রান্স আর উদ্বোধক ছিলেন নোবেল জয়ী ফরাসি সাহিত্যিক জাক দারিদা । ১৯৮৩তে ৮ম বইমেলায় একটি গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে অকস্মাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মেলাপ্রাঙ্গণেই প্রয়াত হন আনন্দবাজার-দেশ পত্রিকার স্বত্বাধিকারী অশোককুমার সরকার । পরের বছর থেকে কলকাতা বইমেলায় চালু হয় সম্মানজনক ‘অশোককুমার স্মৃতি বক্তৃতা’ । ১৯৮৩তে বইমেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ২৮৫টি প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সংস্থা । ১৯৮৪তে কলকাতা বইমেলা জেনেভার ইন্টারন্যাশানাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়ে আন্তর্জাতিক বইমেলার ক্যালেন্ডারে যায়গা করে নেয় । ঐ বছর বইমেলায় ৩৬৩টি প্রকাশন সংস্থা অংশগ্রহণ করেছিল ।

১৮৮৪ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা বিভাগ অপেক্ষাকৃত ছোট আকারে ‘পশ্চিমবঙ্গ গ্রন্থমেলা’ নামে আর একটি বইমেলার আয়োজন করে । এই বইমেলার একটি মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলার গ্রন্থাগারগুলির বই কেনায় বিশেষ সুবিধা দান। ১৯৯৪এ এই সরকারী বইমেলা বন্ধ করে দিয়ে সরকারী উদ্যোগে শুরু হয় ‘জেলা বইমেলা’ । উদ্দেশ্য কলকাতার বাইরে প্রত্যন্ত জেলা শহরে বইমেলাকে ছড়িয়ে দেওয়া, মানুষকে আরো বেশি বইএর কাছে নিয়ে আসা । বস্তুত এর পর থেকেই বাংলার জেলাশহরগুলিতে বার্ষিক উৎসবের মত অসংখ্য বইমেলার আয়োজন হতে থাকে ।

১৯৭৬ থেকে ২০০৭ টানা ৩১বছর কলকাতা ময়দানে বইমেলা চলার পর সাময়িক বিপর্যয়েরও মুখোমুখি হয়েছিল বইমেলা । বলা যায় ২০০৭ এবং ২০০৮ - এই দুটো বছর কলকাতা বইমেলার ইতিহাসে সুর-তাল কেটে যাওয়া দুটি বছর । ময়দানে বইমেলা আয়োজনের বিরোধিতায় সক্রিয় হয়ে হয়ে ওঠে ‘ময়দান বাঁচাও কমিটি’ নামে একটি সংগঠন । তাদের দায়ের করা মামলায় মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট কলকাতা ময়দানে বইমেলার আয়োজন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে । অগত্যা সে’বছর যুবভারতী ক্রিড়াঙ্গণ সংলগ্ন মাঠে নিতান্ত ছোট পরিসরে কোন রকমে আয়োজিত হয়েছিল মেলা । পরের বছর মেলা আয়োজিত হবার কথা ছিল পার্কসার্কাস মাঠে । কিন্তু নির্ধারিত মেলা উদবোধনের আগের দিন কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে সেই আয়োজনও নিষিদ্ধ হয়ে যায় । সেবার অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ‘কলকাতা পুস্তকমেলা আয়োজিত হয় নি । হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুবকল্যাণ বিভাগের উদ্যোগে ‘বইমেলা ২০০৮’ এই ব্যানারে মার্চ মাসে । একত্রিশ বছর চলার পর আদালতের নির্দেশে বইমেলার ঠিকানা বদল মেনে নিতে পারেননি বাংলার বুদ্ধিজীবিদের একটা বড় অংশ । উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তারা কলকাতা ময়দানে এক প্রতীকি বইমেলার আয়োজন করেছিলেন ২০০৭এর ৩১শে জানুয়ারি । পরের বছর অর্থাৎ ২০০৯এ কলকাতা পুস্তকমেলা চলে যায় বিধান নগরের মিলনমেলা প্রাঙ্গণে । সে’বছর থেকেই কলকাতা বইমেলার নাম বদল হয়ে হয় ‘আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলা’ । মিলনমেলা প্রাঙ্গণই এখন বইমেলার স্থায়ী ঠিকানা ।

‘বইমেলা’ মানে তো শুধু বইএর মেলা নয় যেন সংস্কৃতির মহোৎসব । লিটল ম্যাগাজিন বিপণিতে তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যপ্রয়াসের সাক্ষর, তাদের নবতম গ্রন্থের প্রকাশ, দেশ-বিদেশের সাহিত্যবিষয়ক আলোচনা । চোখে স্বপ্নমাখা কোন তরুণের উদাস ছবি আঁকা, কিংবা কোন প্রবীণ কবি কাঁধে ব্যাগ ভর্তি বই নিয়ে নিজেই পৌঁছে যাচ্ছেন পাঠকের কাছে – এ যেন বই আর পাঠকের এক মহামিলনমেলা ।

আশ্চর্য হতে হয়, ১৯৭৬এ ১৪জন পুস্তক প্রকাশকের উদ্যোগে মাত্র ৫৬টি বইএর স্টল নিয়ে যে বইমেলার শুরু, সেই ‘কলকাতা বইমেলা’ গতবছর তার ৩৮তম বর্ষে আয়োজিত হয় আট লক্ষ বর্গফুট এলাকা জুড়ে দেশ-বিদেশের ৭৭০টি স্টল নিয়ে, বইএর প্রতি মানুষের ভালোবাসার অনন্য শক্তি !

সেই কবে – ঔপনিবেশিক ভারতে ১৭৮৪ সনে হুগলী জেলার ত্রিবেণীর এক কর্মকার, পঞ্চানন প্রথম বই ছাপার জন্য বাংলা হরফ নির্মাণ করেছিলেন আর তার ত্রিশ বছর পরে শ্রীরামপুরের বহড়া গ্রামের এক ব্রাহ্মণ গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য প্রথম বাংলা বই ছাপা শুরু করেছিলেন, তখন কে জানতো বইএর কি অমোঘ শক্তি !

0 comments: