1

ব্যক্তিগত গদ্য: ইন্দ্রাণী ঘোষ

Posted in


ব্যক্তিগত গদ্য


বইমেলা
ইন্দ্রাণী ঘোষ



বিশ্বের কোথাও এমন মেলাটি খুঁজে পাবে না কো তুমি । ফ্রাঙ্কফ্রুট আর লন্ডনে এমন বইমেলা যদিও হয়ে থাকে, কলকাতার মত এমন প্রাণেরমেলা হয় কিনা জানা নেই । 

এই মেলায় মিশে আছে বই আর মানুষের আত্মা । বইমেলা কলকাতার মানুষের মনের আনাচে কানাচে । গানে বইমেলা, লিমেরিকে বইমেলা, হালফিলের ব্যানডের গানে বইমেলা । চন্দ্রবিন্দু বলে - "বইমেলা ধুলো কোন গার্গী, শ্রেয়সী, চেনা চেনা মুখগুলো পরিচিত হাসি ... বন্ধু তোমায় এ গান শোনাব বিকেল বেলায়" । আহা জীবনের এই পড়ন্ত বিকেলে বইমেলা নিয়ে লিখতে বসে যে ধুলোমাখা, পাতাঝরা বিকেলগুলো গুটি গুটি পায়ে ফিরে আসে। 


কি বিশাল মেলা এই বইমেলা । দেশ বিদেশের গল্পের মেলা, কবিতার হাতছানি, অধরা মাধুরীর অমোঘ টান । পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায় আটকে থাকে এক নতুন জগত । এই কলকাতা বইমেলা একমাত্র বইমেলা যা ব্যবসায়ী ছাড়া আমজনতার ও বটে । এই মেলার জন্ম ১৯৭৬ সালে । কলকাতার বইএর দোকানের অভাব পূরণ  করতে বইমেলার শুরু । তারপর তার শ্রী  বৃদ্ধি পেয়েছে । ক্রসওয়ার্ড, স্টারমার্ক, ইত্যাদি বই দোকানের সম্ভার আজ হাতের মুঠোয় তবু কমে নি বইমেলার আকর্ষণ । যদিও বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা ঢুকে পড়েছে বইমেলায় তবুও বইমেলার আকর্ষণ অদ্বিতীয় । বইমেলায় রয়েছে কাফে কফি ডে, কে এফ সির ঝকঝকে উপস্থিতি তবুও সেই ঝলকানি এড়িয়ে রসিক মানুষ ঠিক নিজের রস আস্বাদন করে নেন। বইমেলার ধুলোতে ওড়ে ফেলে আসা সময়ের মন কেমন করা গন্ধ। চেনা মুখগুলো, পরিচিত হাসি কেমন বেরিয়ে পড়ে ভিড় ঠেলে । 


আগের প্রজন্মের মানুষের কাছে বইমেলা এক “ফেসবুক” । কম্পিউটার স্ক্রীন এ ভেসে ওঠার বদলে জলজ্যান্ত বন্ধুটা পুরনো বন্ধুটা ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এসে যখন পিঠে হাত রাখে, ফেলে আসা সময়টা একছুটে চলে আসে ধরা ছোঁয়ার মধ্যে । বইমেলা মানেই মিলন মেলা । শীতের শুরুতেই মনে হয় বইমেলা কবে ? আচ্ছা অমুক বন্ধু তাঁর নিজের প্রকাশনার স্টল নিয়ে বসবেন, খুঁজে বার করলে হয় না তাঁকে । আচ্ছা ম্যাপটা দেখা যাক।

হয়ত বা সেই বন্ধু আর পৃথিবীতে নেই । স্টল আগলে বসে আছে তাঁর সদ্য যুবতী হওয়া মেয়েটি । দেখে বলবে “ভাল আছ মাসি ? মা হঠাৎ চলে গেল তোমার ফোন নম্বরটা ছিল না, তাই খবর দিতে পারি নি, জানতাম আমাদের স্টলে তুমি ঠিক আসবে”। এই হল কলকাতা বইমেলা। প্রাণের আদান প্রদান চলে যেখানে সহজিয়া চলনে । বন্ধুকন্যের মাথায় হাত রেখে ফিরে আসব । পিছনে সানাইয়ে বাজবে বিদায় ব্যাথার ভৈরবী । 


হাঁটতে হাঁটতে যাব লিটল ম্যাগাজিন প্যভিলিওনে । একশোর ওপর লিটল ম্যাগাজিনের পশরা সাজিয়ে বসবে এপার বাংলা ওপার বাংলার মানুষ । লিটল ম্যাগাজিনের লেখক, লেখিকা, কবির দল মিলে সে এক চাঁদের হাট । আজ কত যুগ ধরে সাহিত্যের জন্ম হয়েছে এই লিটল ম্যাগাজিনের আঁতুড়ঘরে । লিটল ম্যাগ এক একটি স্বপ্ন গাঁথা মালা । এই মালা গাঁথার পরই দিগন্তে উড়ানের পালা । এমনও দেখেছি, এক কবি তাঁর সামান্য পুঁজি তুলে দিচ্ছেন লিটল ম্যাগের সম্পাদকের হাতে। ‘আমার টিউসুনির পয়সা যতটুকু সম্ভব বাঁচিয়ে বইমেলায় লিটল ম্যাগের জন্য দিতে পারলে বছর ভর শান্তি পাই ” । এই প্রাণের পরশ পেতে হলে বইমেলা ছাড়া আর কোথায় যেতে পারি আমরা ।

1 comment:

  1. besh laglo. ekdom sotyi kotha likhechen. erokom praner porosh kothao r pawa jabe na..

    ReplyDelete