0

ধারাবাহিক - নন্দিনী সেনগুপ্ত

Posted in

২০ 

প্রতিটি ক্রুদ্ধ শব্দের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সেস্কো নিজের দৌর্বল্য এবং অসহায়তা বুঝতে পারছিলো। সে নিজেই বুঝতে পারছিলো যে আর কোনো উপায় না পেয়েই সে আগাথার উপরে রাগ বর্ষণ করে চলেছে; আগাথাকে যতই অপমান করছিল, ততই যেন এক অদ্ভুত তৃপ্তিতে ভরে উঠছিলো তার মন। ঐজায়গায় যদি মেষপালক যুবক না থাকতো, একমাত্র ঈশ্বর জানেন যে ফ্রান্সেস্কো কী করে বসতো সেই মুহূর্তে! আত্মসংবরণ করতে না পেরে হয়তো রাগে কাঁপতে কাঁপতেই দুর্বলভাবে লুটিয়ে পড়ত আগাথার পদতলে। 

আগাথা যদিও অত্যন্ত হতদরিদ্র অপরিশীলিত পরিবেশে বেড়ে উঠেছিল, তবুও অদ্ভুতভাবে তার অন্তর ফুলের মত পবিত্র ছিল। জেনটিয়ান ফুলের নীল পাপড়িগুলির মত নির্মল ছিল সে। পাহাড়ি ফুলগুলি যেমন আকাশের তারা, পাহাড়ের ঢাল আর পাহাড়ের নিচের হ্রদ ছাড়া কিছুই জানে না, আগাথাও ঠিক তেমনিভাবেই অনাঘ্রাত ফুলের মত বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, অনভিজ্ঞ এক জগতের মধ্যে বেড়ে উঠেছিল। কাজেই ফ্রান্সেস্কোর ক্রোধের কারণ আগাথা বুঝে উঠতে পারছিল না। তরুণ যাজক ফ্রান্সেস্কোও অবশ্য আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মত ছিল না। আদৌ মানুষ ছিল কিনা সেটাও সন্দেহের বিষয়। ঈশ্বর এবং মানুষের মাঝামাঝি যদি কিছু থেকে থাকে, সে হয়তো সেরকম কিছু একটা ছিল। তা সত্ত্বেও ফ্রান্সেস্কোর অন্তরের ভাব সম্পূর্ণভাবে গোপন রইলো না আগাথার কাছে। তরুণ যাজকের ক্রোধের মধ্য দিয়ে যে অদ্ভুত ব্যাকুলতা প্রকাশ পেয়েছিল, তা উপলব্ধি করতে পারছিলো আগাথা। অবাক দৃষ্টিতে চেয়েছিল সে। 

বাচ্চাগুলো রামছাগলটাকে নিয়ে পাহাড়ের চড়াইয়ের দিকে উঠে যাচ্ছিল। মেষপালক কাঠুরে যুবক এক অদ্ভুত অস্বস্তি বোধ করছিল ফ্রান্সেস্কোর উপস্থিতিতে। সে রান্নার পাত্রটা আগুনের আঁচের থেকে নামিয়ে রেখে অন্য আরেক কাঠুরেকে পাহাড়ি ঢালু রাস্তায় কাঠের বোঝা বইবার জন্য সাহায্য করতে এগিয়ে সরে গিয়েছিল এই দৃশ্যের বাইরে। কাঠের বোঝাটা দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল পাহাড়ের এক ঢাল থেকে অন্য ঢালে। দূর থেকে দড়িটা দেখা যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল একটা ভাল্লুক কিম্বা অতিকায় পাখির ছায়া উড়ে যাচ্ছে পাহাড়ের গা দিয়ে। আদিম এক সাঙ্কেতিক শব্দে এবং শিষ দিয়ে দূর থেকে সেই যুবক কথা বলছিল আরেক কাঠুরের সঙ্গে। সেই শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল পাহাড়ের উপত্যকায়। যুবক চোখের আড়াল হওয়ার পরে আগাথা নতশিরে অপরাধী মুখ করে নিচু হয়ে তরুণ যাজকের পোশাকের প্রান্ত এবং তার হস্ত চুম্বন করলো খ্রিস্টীয় আচার অনুযায়ী। 

ফ্রান্সেস্কো যান্ত্রিকভাবে তার মস্তকের উপরে ক্রুশ চিহ্ন এঁকে দিয়ে স্পর্শ করলো তার কেশ। তৎক্ষণাৎ, এক অদ্ভুত তরঙ্গ তার হাতের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়লো তার শরীরে। যেন প্রবল এক শক্তি প্রবেশ করলো তার শরীরে, যা আভ্যন্তরীণ সমস্ত শক্তির সঙ্গে সাঙ্ঘাতিক সংগ্রামে লিপ্ত হতে উদ্যত। এই অদ্ভুত অনুভূতি তাকে তার কর্তব্য থেকে বিরত করতে পারলো না। আশীর্বাদরত আঙুলগুলি নত হলো আগাথার মস্তকের উপরিভাগে এবং কিছুক্ষণ স্থিত থাকলো। 

-‘তুমি নিচে সোয়ানায় আমার স্কুলে আসবে, আগাথা!’ বলে উঠলো যাজক, ‘লিখতে পড়তে শিখবে। আমি তোমাকে সকালের এবং সন্ধ্যার প্রার্থনা শেখাবো। ঈশ্বরের বাণী এবং নির্দেশ সম্পর্কে জানবে। পাপপুণ্য সম্বন্ধে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। প্রধান সাতটি পাপ কী কী, সে বিষয়ে জানবে। যদি কোনো বিচ্যুতি ঘটে, আমার কাছে প্রতি সপ্তাহে স্বীকারোক্তি করবে।’ 

সোয়ানার গির্জার স্কুলে আসবার প্রয়োজনীয় নির্দেশগুলি তাকে একটু বুঝিয়ে দিয়ে ফ্রান্সেস্কো আর একবারও পিছনে ফিরে তাকায় না। উতরাই ঢাল ধরে সটান নেমে যায় সোয়ানার দিকে। কিন্তু পরদিন সকালে তাকে আবার বেরোতে হয়। নানারকমের দুঃস্বপ্নের বিশ্রী একটা রাত কাটিয়ে ভোরবেলা নিজেরই স্বীকারোক্তির জন্য বেরিয়ে পড়ে সে। কাছেই আরেক পার্বত্য শহর আরোগ্‌নোর গির্জায় চলে যায়। সেখানকার নস্যি-নেওয়া যাজকের কাছে স্বীকারোক্তির কামরায় বসে বিশেষ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলে না; সরাসরি প্রসঙ্গের অবতারণা করে। অবশ্যই এটা শয়তানের কারসাজি, পীড়িত আত্মাকে গির্জায় ঈশ্বরের শরণে নিয়ে আসবার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করা, সেটা ফ্রান্সেস্কো বিশ্বাস করে। আসলে নারীর সান্নিধ্য যে সর্বদা পুরুষের পাপের সুযোগ সৃষ্টি করে বলে ভাবা হয়, এও তো শয়তানের খেল ছাড়া কিছুই নয়। স্বীকারোক্তির পরে বিশপের সঙ্গে তার ঘরে খোলা জানালার পাশে বসে খাওয়াদাওয়ার সময়ে সাধারণ সংসারী মানুষ এবং চার্চের কাজের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতের জায়গাটা ঠিক কোথায় এই বিষয়ে নানা আলোচনা করতে লাগলো ফ্রান্সেস্কো। খোলা জানালার মধ্য দিয়ে মুক্ত বাতাস, সূর্যালোক, পাখিদের গান- এই সবকিছু উপভোগ করতে করতে এবং কথাবার্তা বলতে বলতে তার মনের ভার হাল্কা হয়ে গেলো অনেকখানি। 

অবশ্য মনের ভার হাল্কা হয়ে যাওয়ার পিছনে দ্রব্যগুণের অবদানও অস্বীকার করা যায় না। আরোগ্‌নোর আঙুরচাষিরা কালচে বেগুনি রঙের বিশেষ প্রজাতির আঙুর থেকে ভারি সুস্বাদু গাঢ় ধরণের ওয়াইন বানায়। বিশপের আস্তানার মাটির নিচের ভাঁড়ার ঘরে এই ওয়াইন বেশ কয়েক পিপা রাখা ছিল। ভোজনের পরে চেস্টনাট সজ্জিত বনবীথির মধ্য দিয়ে ফ্রান্সেস্কোকে সঙ্গে নিয়ে বিশপ গিয়েছিলেন মাটির নিচের সেই ভাঁড়ারে, যেখানে সযত্নে রক্ষিত আছে মদিরার পিপা। সেখান থেকে কিছুটা নিয়ে এসে কয়েক গ্লাস পান করেছিলেন তারা। 

যাই হোক, আরোগ্‌নোর যাজককে বিদায় জানিয়ে পিছন ফেরা মাত্রই ফ্রান্সেস্কো অনুভব করলো যে স্বীকারোক্তির পরে যে সান্ত্বনা তাকে দেওয়া হল, সেই কথায় বা উপদেশে তার বিশেষ কোনো লাভ হল না। তার পিছনে বন্ধ হয়ে গেলো পাহাড়ের পাথুরে প্রাচীরের মাঝে আরোগ্‌নোর গির্জার সেই বিশাল লোহার দরজা। বাতাসে ভেসে যাওয়া ফুলে ঢাকা উপত্যকা, ঢেউ খেলানো জমি, গাছ পালা- এসবের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে আসতে আসতে তার মনে হল আজকের উপদেশের বিশেষ কোনো প্রভাব তার উপরে পড়েনি। 

অপরিচ্ছন্ন নস্যি-নেওয়া চাষাড়ে কুৎসিতদর্শন শীর্ণকায় লোকটিকে ফ্রান্সেস্কো মন থেকে যাজক হিসেবে মেনে নিতে পারেনা। লোকটি কৃষক হতে পারে, কিন্তু যাজক নয়, ভাবতে থাকে সে। নোংরা ছেঁড়া যাজকের আলখাল্লার মধ্য দিয়ে লোকটার ঘেমো অন্তর্বাসের দুর্গন্ধ নাকে এসেছিল তার। সাবান বস্তুটাই হয়তো লোকটির কাছে সম্পূর্ণ অচেনা। নাহ, লোকটা চাষা, কাঠুরে, কিম্বা একটা কাঠের টুকরো, যা খুশি হতে পারে, কিন্তু যাজক নয়- ভাবতে থাকে সে। যাজক হবেন পূতপবিত্র এক ব্যক্তিত্ব; এতদিনের অর্জিত শিক্ষা থেকে তার মনে সেরকমই এক ধারণা গড়ে উঠেছে। যাজকের এক অদ্ভুত অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা থাকবে, তাকে ঘিরে থাকবে মর্যাদার এক জ্যোতির্বলয়। দেবদূতেরা এসে মাথা নোয়াবে তার সামনে। এত কিছু না হলে কিসের যাজক? নাহ, এখানে যেন সবকিছুই ছেলেখেলা হয়ে গেছে। কী লজ্জার কথা যে ঈশ্বরের প্রচারভার অদ্ভুতভাবে যার হাতে খুশি দিয়ে দেওয়া হয় এখানে। হ্যাঁ, ঈশ্বর সর্বত্রগামী, সে ব্যাপারে তার সন্দেহ নেই। সব জায়গায় ঈশ্বর আছেন, শুধুমাত্র উঁচু আসনে নয়। ঈশ্বরের বাণী হচ্ছে ‘যা কিছু আছে জগতে, সবকিছুই আমি, সবই আমার দেহ’ (hoc est enim meum corpus১)। কিন্তু তাই বলে এমন যা খুশি তাই কাণ্ড! ফ্রান্সেস্কোর মনের মধ্যে উষ্মার পাহাড় জমে উঠতে থাকে। 

ফ্রান্সেস্কোর গা গুলিয়ে উঠতে লাগলো, ঘৃণা করতে শুরু করলো আরোগ্‌নোর সেই যাজককে। শুধু শুধু সময়টা নষ্ট হোলো, এরকম চিন্তা করে নিজের উপরে রাগ হতে লাগলো। অবশেষে তার মনে হল যে হয়তো বা দুর্গন্ধযুক্ত বদমাশ নোংরা কুৎসিত শয়তান স্বয়ং যাজকের বেশ পরে তার কাছে বসেছিল এতক্ষণ। ইনকিউবাস২ অথবা সাক্কাবাস৩ রাক্ষসের সঙ্গে সহবাসের ফলে জন্ম নেওয়া মানুষ হয়তো এরকম প্রজাতির হওয়া সম্ভব- এরকমটাই ভাবতে লাগলো ফ্রান্সেস্কো। 

তার মনের এরকম বিচিত্র আবেগ এবং অদ্ভুত চিন্তার মিছিল দেখে ফ্রান্সেস্কো নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেলো। বাইরের চেহারাটা ছাড়া, সেই যাজকের সবকিছুকেই এত ঘৃণ্য ভাবার কী কারণ আছে, বিশ্লেষণ করতে বসে সে হয়রাণ বোধ করতে লাগলো। কারণ সেই যাজকের কথাবার্তা, অতিথিপরায়ণ মনোভাব সবকিছুই ভারি ভালো। কিন্তু ইতিমধ্যেই তার মনে এক বিরূপ মনোভাবের বাতাবরণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পবিত্র জিনিসের সঙ্গে, সুন্দর পরিচ্ছন্ন মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের সংযোগের ব্যাপারটা তার মনে শিকড় গেড়ে বসেছিল। ফলে আজকের স্বীকারোক্তির পর্বটা তার কাছে সম্পূর্ণ নিষ্ফলা বলে বোধ হতে লাগলো। 

--------------------------------- 

অবশেষে সেই দিন উপস্থিত হোলো, যেদিন আগাথার প্রথম আসবার কথা সোয়ানার গির্জার স্কুলে। তাকে বলা ছিল যাতে এখানে এসে প্রথমে সে যেন স্বীকারোক্তি করবার যে ঘর, সেই ঘরের সঙ্গে লাগোয়া ঘণ্টা বাজায়। গির্জার প্রধান দরজা থেকে সেই ঘণ্টা দূরে নয়। যাদের গির্জায় এসে স্বীকারোক্তি করবার প্রয়োজন পড়ে, তারা এই ঘণ্টা বাজায়। ফ্রান্সেস্কো সকাল থেকেই অপেক্ষায় ছিল। অথচ প্রায় মধ্যাহ্নভোজনের সময় হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কোনো ঘণ্টার শব্দ পাওয়া গেলো না। তরুণ যাজকের মন একটু চঞ্চল হল, তবে সে তার থেকেও অনেক বেশি চঞ্চলমতি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানের কাজে ব্যস্ত ছিল। খোলা জানালা দিয়ে জলপ্রপাতের মুখর ধ্বনি শোনা যেতে লাগলো এবং তার মনের উদ্বেগ সেই শব্দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো। তার একমুহূর্তের জন্য মনে হল যে এরকম কিছু হয়নি তো যে ঘণ্টার আওয়াজ সে শুনতে পায়নি, বাকি নানা আওয়াজে সে শব্দ চাপা পড়ে গেছে। তার অন্যমনস্ক ভাব তার ছাত্রছাত্রীরাও টের পেয়ে গিয়েছিল, বিশেষ করে, ছাত্রীরা। কারণ, মেয়েরা প্রকৃতিগত কারণেই মানুষের মনের ভাব চট করে টের পায়। মোট কথা, ফ্রান্সেস্কো মনের আকুলতা লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়নি। 

বারোটা বাজবার কিছু আগে, সোয়ানা গ্রামের চারমাথার মোড়ের দিক থেকে সম্মিলিত অনেক কণ্ঠস্বরের একটা গুঞ্জনধ্বনি টের পাওয়া গেলো। সকাল থেকে এতক্ষণ অবধি গ্রামটা চুপচাপ ছিল। চেস্টনাট গাছের পাতার শব্দ ছাড়া সেই মোড়ে বিশেষ কোনো সাড়াশব্দ ছিল না। দেখা গেলো একদল জনতা এগিয়ে আসছে। পুরুষকণ্ঠগুলি অপেক্ষাকৃত শান্ত হলেও অসন্তোষের ধ্বনি বোঝা যাচ্ছে। সবচেয়ে উচ্চকিত কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে নারীদের। কারা যেন চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, শাপশাপান্ত করছে। অজস্র কণ্ঠের চিৎকার, কাজেই তাদের বক্তব্য সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছেনা। থামছে না, তাদের চিৎকার বেড়েই চলেছে। মনে হচ্ছে এদিকেই আসছে। হঠাৎ সব চুপ হয়ে গেলো। একটা অপ্রত্যাশিত নৈঃশব্দ চারপাশে কয়েক মুহূর্তের জন্য। তারপরে আবার এমন প্রচণ্ড আওয়াজ শুরু হল, যেন মনে হচ্ছে একটা বিশাল ফলন্ত চেস্টনাট গাছ প্রবল ঝড়ের বেগে উপড়ে গিয়েছে এবং তার শরীর থেকে খসে খসে পড়ছে ফল, ঝরে পড়ছে অজস্র পাতা, ভেঙে পড়ছে তার ডালপালা। 

ফ্রান্সেস্কো জানালার কাছে এসে বাইরে ঝুঁকে দেখতে গেলো কীসের এত হট্টগোল। 

ঝুঁকে মুখ বাড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে তার হৃদপিণ্ডের গতি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল। সে একইসঙ্গে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল এবং ভীষণ ভয় পেয়েছিলো। স্বীকারোক্তির ঘরের ঘণ্টাটা সেই মুহূর্তে প্রচণ্ড তীব্রতায় বেজে উঠল; এতটাই তীব্র সে আওয়াজ, মনে হচ্ছিল যেন ঘণ্টার দড়িটা ছিঁড়ে পড়ে যাবে ঘণ্টাটা এখনই। রাস্তার দৃশ্য দেখে সে তৎক্ষণাৎ গির্জার প্রধান দরজার দিকে ধেয়ে গিয়েছিল। দূর থেকেই ফ্রান্সেস্কো দেখতে পেলো যে বিধ্বস্ত আগাথা দড়িটা ছিঁড়ে ঘণ্টাটা নিয়ে আছড়ে পড়লো দরজার সামনে। 

------------------------------------------ 

(চলবে) 

গেরহার্ট হাউপ্টমান রচিত ‘ড্যের কেৎজার ফন সোয়ানা’ অবলম্বনে লেখা 

১. hoc est enim meum corpus ল্যাটিন ভাষায় লেখা মন্ত্র। অর্থ হল ‘এই আমার দেহ’ 

২. ইনকিউবাস- প্রাচীন সুমেরীয় এবং ইউরোপীয় লোককথায় এই বিশেষ ধরণের দৈত্যের কথা পাওয়া যায়। এরা ঘুমন্ত সুন্দরী নারীকে সাধারণত আক্রমণ করে এবং যৌনমিলনে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। কথিত আছে, এই দৈত্যের কবলে পড়লে মানুষের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে, এমনকি মৃত্যু অবধি ঘটতে পারে। 

৩. সাক্কাবাস- উপরে বর্ণিত ইনকিউবাসের মতই এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন লোককথায় এর অস্তিত্ব আছে। তবে সাক্কাবাস দৈত্য কিম্বা রাক্ষস নয়। নগ্নিকা এক প্রেতিণী কিম্বা রাক্ষসী। সে ঘুমন্ত পুরুষদের আক্রমণ করে এবং যৌনমিলনে লিপ্ত হয়। একইভাবে এর কবলে পড়লেও মানুষের শুধু শারীরিক ও মানসিক অবনতি হবে কিম্বা মৃত্যু হবে, এমন কথা বলা হয়।

0 comments: