1

ধারাবাহিক - অনিন্দিতা মণ্ডল

Posted in


To make things simpler, let me begin by saying I had plague already, long before I came to this town and encountered it here. Which is tantamount to saying I'm like everybody else. Only there are some people who don't know it, or feel at ease in that condition; others know and want to get out of it. 

Personally, I've always wanted to get out of it. 

Albert Camus 
The Plague 
 

১ 

চলতে চলতে কস্তুরী সমানে ওর প্লাস্টিক ওভারঅলটা হাত দিয়ে গা থেকে আলগা করছিল। নিরুপায় অবস্থা একেবারে। এই গরমে ওর চামড়া থেকে ঝরঝর করে ঘাম ঝরছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাস পেতে আধঘণ্টা লাগল। যদিও অ্যাপে দেখে নিয়েছিল বাস আসার সময়টা। এখন প্রতি আধঘণ্টা অন্তর বাস আসে। এক একটা রুটে বাস প্রতি কুড়ি জন যাত্রী। ভাড়াও অসম্ভব বেড়ে গেছে। গৌতম বলেছিল -এই যে বাড়ল এ আর কমবে না। সরকার বলেছিল, এখন টিকিট প্রতি সেস নেওয়া চলবে। বাসমালিকেরাও এই রকম মাপা যাত্রী দিয়ে বাস চালাবে কি করে? অগত্যা দু তরফেই ভাড়া বেড়েছে। কিন্তু গৌতমের দোকানে খদ্দের কমেছে। আর কস্তুরীর তো চাকরিটাই ছিল না। কটা মাস বাড়িতে বসে কোনোভাবে কাটিয়েছে। এই সবে আবার কাগজ থেকে ডেকেছে। অনলাইন নিউজে কস্তুরী বেশ নাম করেছিল। বিশেষত ইন্টারভিউ নিতো খুব ভালো। বুদ্ধিদীপ্ত সুন্দর হতো। তাই কাজটা ফিরে পেয়েছে। তবে অর্ধেক মাইনেতে। কিছু করার নেই। কাগজ এখন প্রিন্টে আসছে না। অনলাইন চলবে বলেই ও চান্স পেলো। তাও আগের কলিগদের মধ্যে অনেকেই ভালোভাবে নিচ্ছেনা। গতকাল ওদের গ্রুপচ্যাট চলছিল। মেধা আর দীপ্তজিত তো বলেই ফেলল -তুই কাজটা ভালো করতিস ঠিক আছে, কিন্তু তোর চেয়ে সিনিয়র অনেক আছে। ভালো কাজ করে। হয়তো প্রিন্টে তাদের কাজটা ভালো ছিল। অনলাইন তো আর বনেদি ব্যাপার নয়। কস্তুরী বোঝে। আয় না থাকলে দাঁত নখ বেরিয়ে আসে। আসবেই। কিন্তু সেও একপ্রকার হাত পা বাঁধা। নয়তো নিজেদের খরচ খরচা ওরা যেভাবে বেসিক লেভেলে নামিয়েছে, কোনোরকমে দিন গুজরান হয়। 

বাসে বসে কস্তুরী বাইরেটা দেখছিল। গরমের সকালে লোক এমনিই কম। খানিক পরে স্টপেজ আসতে ও নেমে পড়ল। বড় রাস্তা থেকে গন্তব্যে পৌঁছতে পনেরো মিনিটের হাঁটা। উপায় নেই। অটো বা রিকশায় ওঠা পড়তায় পোষাবে না। ক্লান্ত কস্তুরী সোনার তরী আবাসনের গেটে এসে যখন দাঁড়ালো তখন ওর সানগ্লাস মাস্ক আর রেন কোটে ঢাকা শরীর দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না, আর খানিকটা এমন চললে ওর ডিহাইড্রেশান বাঁধা। গেটের পাশের খুপরি ঘরে ওর মতোই শরীর ঢেকে বসে সিকিউরিটির লোক। কস্তুরীর হাসি পেয়ে যায়। যাক গে বাবা। কোনো স্লাট শেমিং হবে না এখন। ও নিজের আই কার্ড আর পাস বের করে সামনে রাখল। কাঁচের ওপার থেকে লোকটা স্ক্যান করে নিলো। সুইচ টিপতে গেট খুলে গেল। খোলা গেট দিয়ে ঢুকে ও লম্বা শেডের প্যাসেজে ঢুকে এলো। সেন্সর কাজ করতে চারপাশ দিয়ে স্যানিটাইজার স্প্রে হয়ে গেলো। এসব কমপ্লেক্সের ব্যাপারই আলাদা। কস্তুরী স্টেয়ার ওয়ের কাছে এসে আর একটা হলে ঢুকল। এভাবে ওকে বলাই ছিল। গা থেকে ওভারঅলটা খুলে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে মাস্ক আর সানগ্লাস স্যানিটাইজ করে আবার পড়ে নিলো। ব্যাগ থেকে ফ্রেশ গ্লাভস পরে ও লিফটে উঠল। লিফটের কাঁচ ভেদ করে বাইরেটা দেখা যাচ্ছে। বেশ সাজানো সবুজ চারিদিকটা। ঘাড় ঘুরিয়ে কস্তুরী দেখতে চাইল, এই লিফটের পেছনে ওই ফাঁকা জায়গাটাই তো অকুস্থল! 

নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটের সামনে এসে ও রিমোট সেন্সিং কলিং বেল বাজালো। সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেলো দরজাটা। বোঝাই যাচ্ছে, ভেতরের মানুষ ওকে খুব পরিচিত ও আপন ভেবেই দরজা খুলেছেন। কস্তুরী একটু ঘন করে নিঃশ্বাস নিয়ে নিলো। নাহ, আপন বা পরিচিত কোনোটাই নয়। কাজের খাতিরেই আসা। এমন নিখুঁত করে ওকে জানতে হয়েছে রীতিমত কড়ি ফেলে। 

ভেতরে ঢুকে এসে ওর দমবন্ধ লাগল। ঘন রঙের পর্দা ফেলা বড় হল। অন্ধকার ভেদ করে এখনই কিছু দেখা যাবে না। কিন্তু এত গরমেও বেশ ঠাণ্ডা লাগছে তো? ওঃ! এসি চলছে? এখন তো কোথাও কোনো এসি চলে না? সরকারি নির্দেশ অমান্য করা বেআইনিও তো! নিতান্ত কাজ ছাড়া এখনও মানুষ বাইরে বের হয়না। ঘরবন্দী। তবু। ও নিজের মনে আওড়াচ্ছিল। 

we realized that the separation was destined to continue, we had no choice but to come to terms with the days ahead. In short, we returned to our prison-house… 

এখনও কস্তুরীকে কেউ অভ্যর্থনা জানায়নি। গত কয়েকমাসে ঘরবন্দী অবস্থায় ও এই কথাগুলো এতবার পড়েছে যে সারাক্ষণ এগুলো মনে পড়তে থাকে। সারাটা দিন কোনো না কোনো অবস্থায় ঠিক এক একটা দৃশ্য ভেসে ওঠে। লাইনগুলো মনে পড়ে যায়। এখনও ও তাই অবাক হলো না। বরং কিছুটা হোস্টাইলিটি আশঙ্কা করেছে। কিন্তু ওরকম অবস্থায় ট্যাকল করা অসুবিধে নয় কিছুই। এর চেয়েও জাঁদরেল লোকজনের ও ইন্টারভিউ নিয়েছে। যাই হোক, ঘরের শীতলতা আর অন্ধকারে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। ব্যাগ থেকে জল বের করে খেলো। কেউ না বললে তো বসাও যায়না! এটাই এখন নিয়ম। 

“কে বলুন তো?” 

কস্তুরী গলার স্বরে চোখ তুলে দেখল। কেউ একজন রুক্ষ হাতে পর্দাটা সরিয়ে দিলো। এক ঝলক আলো ঢুকে এলো। সেই আলোয় কস্তুরী দেখল অতসী চক্রবর্তীর মুখ। অতি পরিচিত মুখ। শহরের এলিট বৃত্তে রাতদিন ঘোরাফেরা করা মুখ। নামী মিডিয়ার নামী এডিটরের মুখ। কস্তুরী ভুলবে কি করে? অতসী অবশ্য ওকে মোটেই চেনেন না। আবার বললেন তাই। 
কে আপনি? কেন এসেছেন? 

কস্তুরী বুঝতে পেরেছে। দরজা খুলে দিয়ে বিপাকে পড়েছেন মহিলা। বলল, আপনি আমায় চিনবেন না। আমায় রণজয়দা পাঠিয়েছেন ম্যাডাম। কস্তুরী একটা কার্ড রাখে টেবিলে। রণজয় বসুর চিঠি। “গেট ওয়েল সুন ম্যাম”। অতসী একবার চেয়ে দেখলেন। কস্তুরী বলে উঠল -স্যানিটাইজ করে রেখেছি ম্যাডাম। 

অতসী চক্রবর্তী ঠিকই বুঝেছেন। এত সহজে মুক্তি মিলবে না। সুনন্দর কথাও মনে হয় জিজ্ঞেস করবে মেয়েটা। মুখটা শক্ত হয়ে আসছে। পর্দার দুলুনিতে মাঝে মাঝে কর্নার টেবিলে রাখা ফ্লাওয়ার ভাসটা কাঁপছে। ভাসটার পেছনে হাসিমুখের এক কিশোরের ছবি। একটা সেন্টেড মোমবাতি জ্বলছে। কস্তুরীর মনে হল, বেশ বিপজ্জনক কিন্তু। মোম থেকে পর্দায় আগুন লাগতে পারে। সেখান থেকে ফ্ল্যাট। তারপর বাড়ি। তারপর শহর। এভাবেই তো এপিডেমিক ছড়ায়! যেমন করে আগুন ছড়ায়! কেন সাবধান হবেনা মানুষ? 

কস্তুরী গলাটা পরিষ্কার করে নেয়। অতসী চক্রবর্তীর লেয়ারড হেয়ার কাট দেখে মনেই হচ্ছেনা যে এই লকডাউন পিরিয়ডে উনি কোনো পরিষেবা পাননি। তার মানে? মানে পরিষ্কার। মাত্র পনেরো দিন আগে পর্যন্ত উনি সবই সময়মত করে নিতে পেরেছেন। বাইরের পৃথিবীর উথাল পাতাল অসুখজোয়ার ওনার নিজস্ব ছন্দে কোনো ব্যাঘাত ঘটায়নি। 

“চিরজিতের ফ্যামিলির জন্য রণজয়রা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে?” 

কস্তুরী চমকেছে ভেতরে ভেতরে। উনি তাহলে চিরজিতদার চলে যাওয়ার খবর রাখেন? শেষ মুহূর্তে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে তখন চিরজিতদা চলে গেল। বাতাসে ল্যাজের ঝাপটা মেরে অসুখজোয়ার জানান দিলো, যাইনি। আছি। তোমাদের মধ্যেই আছি। 

-আমরা যথাসাধ্য করছি ম্যাডাম। বউদি এখনও শক স্টেটে। 

-স্বাভাবিক। ওরকম প্রাণবন্ত ছেলে! একটু বোঝা গেল না! কোনো সিম্পটম ছিল না! 

কস্তুরীর আবার মনে পড়ে। সিম্পটম কি সবসময় বোঝা যায়? বিশেষ করে যখন আমরা একই শহরে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো বাস করছি? 

“in this extremity of solitude none could count on any help from his neighbor; each had to bear the load of his troubles alone”। 

-রণজয়কে বোলো আমি কৃতজ্ঞ। এই সময়ে ও তোমাকে পাঠিয়ে খোঁজ নিয়েছে। তুমিই বললাম, কিছু মনে কোরো না। 

- না না মনে করব কেন? ইন ফ্যাক্ট রণজয়দা মিস্টার চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আপনাদের এই দুঃসময়ে এভাবে আসাটা ভালো নয়। তার ওপরে এখনও সেফটি রুলগুলো মেনে চলতে হয়। 

কস্তুরীর কথার মাঝে অতসী বলে উঠলেন -চিরজিতের ফিউনেরাল কোথায় হল? কস্তুরী বুকের মধ্যে রক্ত ছলাত করে ওঠা টের পেল। এরা এত ইনসেনসিটিভ? এতটা? হাহ! কিন্তু উত্তর তো দিতেই হবে! 

-ম্যাডাম, চিরজিতদা তো আমাদের স্পোর্টস সেকশান দেখতেন। ওনার ওদিকটা এসময়ে একেবারেই ফাঁকা ছিল। একদিন হঠাৎই কাজের সময়ে বড্ড ঘামতে শুরু করেন। আসলে সিওপিডির পেসেন্ট ছিলেন তো। তার ওপরে সিগারেটটা ছাড়তে পারেননি। তখনও কিন্তু মাস্ক ওভারঅল সব পরেই ছিলেন। ফলে কেউ বুঝতে পারেনি আসল সমস্যাটা। তারপর যখন গড়িয়ে পড়ে গেলেন তখন গ্লাস ডিভাইডারের ওপাশ থেকে দেখা গিয়েছে। কিন্তু প্রোটোকল অনুযায়ী কেউই চিরজিতদাকে ধরতে পারেনি বা কাছে গিয়ে ছুঁতে পারেনি। তারপর তো সেই এম্বুলেন্স হসপিটাল। নতুন কিছু নয়। তবে অ্যাটাকটা মাইল্ড ছিল। বেঁচে যেতে পারত চিরজিতদা। 

-তাহলে? 

-আসলে ওখানে ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি থাকলে কাউকে ভর্তিই নেয় না। চিরজিতদা বলেই ফেরায়নি। এন্ড হি মাস্ট হ্যাভ সাফারড ফ্রম দ্য ভেরি ডিজিজ উই এসিউমড। আউটকাম অবশ্য নিশ্চিত ছিল না। 

শেষের দিকে কস্তুরীর গলাটা কেঁপে গেল। 

অতসীর গলায় উৎকণ্ঠা -তাহলে? 

-ম্যাডাম, চিরজিতদার ট্রিটমেন্ট এর সময় ও সুযোগ কোনটাই ছিল না। ওখানে কুড়িজন ডক্টর এখনও কোয়ারানটাইনে। 

-তুমি বলতে চাইছ চিরজিত ওখানে গিয়ে সিম্পটম ডেভলাপ করে, মানে ইনফেক্টেড হয় এবং বিনা চিকিৎসায় মারা যায়? 

না না কস্তুরী নিজের চাল সামলাও। কস্তুরী সতর্ক হল। 

-ঠিক এরকমই কিছু হয়েছে কিনা নো বডি ইজ সিওর দো। কারণ ডেথ সার্টিফিকেটে কার্ডিয়াক ফেলিওর লেখা ছিল। 

-চিরজিতের ফ্যামিলির ওরা খবর পেয়েছিল? 

-সকালে পেয়েছিল ম্যাম। 

-ওঃ। কোথায় নিয়ে যাওয়া হল? 

কস্তুরী হতবাক হয়ে যাচ্ছিল। এই এত কৌতূহল? তবু বলতেই হয়। 

-চিরজিতদার বডিটা প্রোটোকল মেনেই হাইওয়ের ওপাশের আস্তাকুঁড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে শুনেছি। শুনেছি সেখানে বডিটা জাস্ট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেল কস্তুরী। খুব রূঢ় শোনালো ওর গলা। কী অদ্ভুত মহিলা! এতক্ষণ ও যে কত কী ভেবেছে! কি করে ওনার ইন্টারভিউ নেবে! ধ্যুত! কস্তুরী সরাসরি কাজের কথায় এলো। 

-ম্যাম, আমাকে একটা সময় দিন। আমি আবার আসব। উই উইল ট্রাই টু ফাইন্ড আউট দ্য রিয়েল রিজন বিহাইন্ড ইয়োর সন্স আনটাইমলি ডিমাইস। 

-মাই সন্স ডিমাইস? আর ইউ ক্রেজি অর হোয়াট! ইট ইজ নাও আণ্ডার ট্রায়াল! 

-আপনি চিন্তা করবেন না। আমি এমন কিছু প্রসঙ্গ তুলব না যাতে আপনি কষ্ট পান বা অস্বস্তিতে পড়েন।  

কস্তুরীর শেষ কথাটা শ্লেষ কি? অতসী চক্রবর্তী ঘুরে দাঁড়ালেন। এবার তাঁর মুখে পর্যাপ্ত আলো পড়েছে। তাঁর গলায় ধাতব শীতলতা -গেট আউট। আই সে গেট আউট। 

কস্তুরী একবার ছবিটার দিকে তাকালো। কত বয়স ছিল ছেলেটির? পনেরো না চোদ্দ? যেন সে অতসীর কথা শুনতেই পায়নি এভাবেই স্বগত বলে উঠল -আঃ! হোয়াট আ ওয়েস্টেজ! কোন স্কুলের ছাত্র ছিল যেন ম্যাডাম? 

অতসী সোফাটা ধরে বসে পড়লেন। ছবিটা থেকে দুহাত দুরত্ব হবে বড় জোর। কস্তুরী মনে মনে ভাবল, ছবির সঙ্গে নিশ্চয় সেফ ডিসট্যান্স রাখার প্রয়োজন নেই? রোগটা কি ছোঁয়াচে ছিল? 

অতসী ফিরে তাকালো। 

“আই উইল কল ইউ আফটার সাম টাইম। আই উইল লেট ইউ নো। থ্যাঙ্ক ইউ ফর কামিং”। 

ওঃ। যেতেই হবে। কস্তুরী মাথা নাড়ল -ওকে ম্যাম। থ্যাঙ্ক ইউ ফর লেটিং মি ইন। বাই দ্য ওয়ে প্রফেসর চক্রবর্তীকে কোথায় পাবো বলতে পারেন? 

অতসী মাথা নাড়লেন -নাহ, বলতে পারব না। আপনার ফোন নাম্বারটা রেখে যান। 

কস্তুরীর হাসি পেলো। তুমি থেকে আপনি? বলল, আপনি আমার নামটাও শোনেননি তো। আমি কস্তুরী দাস। নাম্বারটা আপনাকে শেয়ার করে দিচ্ছি। থ্যাঙ্ক ইউ ওয়ান্স এগেইন। ডেটটা একটু তাড়াতাড়ি ফিক্স করবেন ম্যাডাম। উই আর ইন আর্জেন্সি। 



যাক, প্রথম হার্ডলটা পেরোনো গেছে। অফিসে মেসেজ পাঠিয়ে দিলো কস্তুরী। ওপার থেকে রণজয়ের মেসেজ এলো। ওকে, আমি খুব তাড়াতাড়ি এপয়েন্টমেন্ট ফিক্স করে দিচ্ছি। এটা ছেড়ে দিওনা। আমাদের এইটুকু অস্তিত্বের জন্য খুব জরুরি। সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট আর কি। কস্তুরী হাসিমুখ পাঠালো। 

আপাতত বাস নেই। স্ট্যান্ডে সেফ ডিসট্যান্স এর প্রশ্ন নেই। এই গরমে একটা কুকুরও শুয়ে নেই। সমানে জল খেতে খেতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল কস্তুরী। কতক্ষণ কে জানে? হঠাৎই সাহিলের স্কুটারটা সামনে এসে দাঁড়ালো। 

-তুই এখানে? 

-আমি তো দিদি সাউথ গলিতে খাবারের প্যাকেট দিতে গেছিলাম। ছেলেটা ক্লান্ত হাসে। 

-তুই আমাকে চিনলি কি করে? আর তোর ওভারঅল কই? 

সাহিল হাসল। তোমার মোবাইল নাড়া দেখেই বুঝেছি। উঠে এসো। আমার ওভারঅল লাগবে না দিদি। কিস্যু হবেনা। ওসব বড়লোকেদের হয়। একটু ছোঁয়া লাগলেই অসুখ। নাও উঠে বোসো দেখি। 

কস্তুরী ওভারঅলটা খুলে হাতে নেয়। সর্বাঙ্গ ঘামে জবজব করছে। তারপর সাহিলের স্কুটারের পেছনে চড়ে বসে। 

বাড়ির কাছে গলির মুখে নেমে যায় কস্তুরী। সাহিলের দিকে ফিরে বলে -সাবধানে থাকিস। সাহিল হাসে -ঠিক আছি গো দিদি। আচ্ছা, তুমি এইগুলো রাখো। কাজে দেবে তোমার। স্টোরি বানাতে পারবে। কস্তুরী চোখ পাকায় -কি? আমি স্টোরি বানাই? -আরে না! সাহিল হেসে ফ্যালে -রিয়েল স্টোরি। 

একতলায় গৌতমের দোকান এখন অর্ধেক সাটার নামানো। ভেতরে একটা ট্রানজিস্টারে খবর গান আর ভাঁড়ামির জগাখিচুড়ি চলছে। কস্তুরী উঁকি দেয়। গৌতম পেছনে অপরিসর বেঞ্চে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর পায়ের কাছে লালু আর কালু। সারাদিন রাস্তায় টইটই করে। কিন্তু এত চালাক, দুপুর হলেই চলে আসে আর ভাত খেয়ে গৌতমের পায়ের কাছে গুটিয়ে ঘুমোয়। 

কস্তুরী একটু ফ্রেশ হয়ে ঘরে পা গুটিয়ে বসে সাহিলের দেওয়া প্লাস্টিকটা খোলে। একটা লাল রঙের খাতা আর কিছু প্রিন্ট আউট। 

খাতাটার প্রথম পাতায় আঁকাবাঁকা হাতে লেখা 

প্রিয় বোন ঝুম্পাকে 

মিনতিদি। 

তারিখটা দু মাস আগেকার। কস্তুরী খাতাটা উলটে দেখল। শেষ পর্যন্ত লেখা হয়নি। আচমকা থেমে গিয়েছে লেখা। সেও একমাস হলো। আর প্রিন্ট আউটগুলো দেখে বোকা বনে গেল কস্তুরী। এগুলো কোনো গ্রুপ চ্যাটের প্রিন্ট আউট। মর্মান্তিক ঘটনা। তবে এই পৃথিবীতে এখন বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে মর্মান্তিক।

[চলবে]

1 comment:

  1. পড়ছি। পাকা হাতের লেখা।

    ReplyDelete