0

প্রবন্ধ - সোমব্রত সরকার

Posted in


স্বয়ং কাম নিত্যবস্তু রস-রতিময়

জলপূর্ণ সমুদ্রে যেমন নদ-নদীর জলরাশি এসে চারিদিক থেকে পড়ে মিশে যায়, কিন্তু সমুদ্র নিজ মহিমায় অচলরূপে বিরাজ করে, তেমনি যে সংযমী মানবের মধ্যে বিষয়সকল প্রবেশ করে বিলীন হয়ে যায়, কোনওরূপ বিকার উৎপন্ন করে না, তিনিই পরমশান্তি লাভ করেন। যিনি ভাগকামনা করেন, তিনি শান্তি পান না — আপূর্যমাণমচলপ্রতিষ্ঠং সমুদ্রাপঃ প্রবিশন্তি যদ্ব। / তদ্বত্কামা যং প্রবিশন্তি সর্বে স শান্তিমাপ্নোকিত না কামকামী॥

‘শ্রীমদ্ ভাগবত্গীতা’-য় ২/৭০ সংখ্যক শ্লোকে ইন্দ্রিয়সমূহকে অন্তর্মুখ করে তোলার জন্য কামকামীদের অশান্তি অবশ্যশ্মাবিতার পদধ্বনিকে তরঙ্গের সমুজ্জ্বল অন্তহীলনাতর মুখাপেক্ষী এক আধারে বর্ণিত করা হয়েছে। ৬৯-সংখ্যক শ্লোকে বলা হয়েছে, মনের মধ্যে অফুরন্ত রসের স্রোতধারা আবিষ্কার করতে পারলেই যোগীগুরু ব্রহ্মস্বরূপত্ব লাভ করেন।

কথা হচ্ছে, দুই শ্লোকেই তরঙ্গের কম্পমান কুয়াশার আস্তরটুকু কেন রেখে দেওয়া হল? তরঙ্গ এখানে পঞ্চেন্দ্রিয় পরায়ণতা। শারীরিক প্রকাশগুণ— যাকে জলের বা স্রোতধারার নাক্ষত্রিক প্রতীকটিই দেওয়া হয়েছে। এই জল বা স্রোতও সাংকেতিক শরীর পরায়ণতার সচেতন আত্মসম্বিতই। কীভাবে? শ্লোকে বর্ণিত জলপূর্ণ সমুদ্র আসলে হল সাধক শরীরের প্রতীক। নদ-নদী সাধন-সঙ্গিনীর স্বনিয়মী দুর্মর বার্তা— যা দেহবাদী সাধনার ভরকেন্দ্রীয় শাশ্বত ভাবধারা। মনের অফুরন্ত স্রোতধারার তরঙ্গ প্রতীকও হল তূরীয় আনন্দের সৃষ্টিমার্গ— আর এই মার্গই হল দেহসাধনার উদীয়মান রক্তরাগ। জল, স্রোত বা তরঙ্গকে আমরা শরীর পরায়ণতার আধারে বেষ্টিত করে নিয়েছি। এই প্রতীককল্প দেহসাধনার অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক নাক্ষত্রিক বিকাশ— সাধকের বীর্য আর সঙ্গিনীর রজ। যা শরীর পরায়ণতারই নামান্তর। আমাদের সমস্ত প্রধান ও অপ্রধান ধর্মীয় ভাবধারায় দেহকাঠামোকেই সাধনার আধার হিসেবে চিহ্নিত করে এক বহুকেন্দ্রিক পরমকে খোঁজা হয়েছে শরীরে কলকব্জায়। এই পরম কখনও বা সত্য, কখনও সহজানন্দ, আনন্দের স্পন্দিত অরূপ— এইসব নানবিধ বহুমাত্রিক বিশেষণে নক্ষত্র প্রতীকে রূপস্থ হয়েছে। আমাদের হিন্দুশাস্ত্রে যে অবতার চিন্তা তা যথেষ্টই বৈষ্ণব ভাবাপন্ন। তাঁদের ঈশ্বর বা ভগবান— শ্রীবিষ্ণুই যুগে যুগে, সমাজে যখন অন্যায় ব্যভিচার গ্রাস করে, ধর্ম বিপন্ন হয়, অসহায় মানুষ ত্রাহী মধুসূদন বলতে থাকেন তখনই তিনি আসেন তাঁদের উদ্ধার করতে। ঐতিহাসিকরা মত দিয়েছেন এই অবতারের চিন্তা গুপ্ত যুগেই মাথাতে এসেছিল। তবে প্রথম দিকে অবতারের সংখ্যা আজকের মতন দশ ছিল না। একুশজন অবতারের কথা চিন্তা করা হয়েছিল। পরে তা দশে এসে সুচিহ্নিত হয়। আগে শ্রীকৃষ্ণও অবতার হিসেবে চিহ্নিত হতেন। পরে তিনি আর অবতার থাকেন না। হয়ে ওঠেন অবতারী। এই যে বর্তমানে দশ অবতারের রূপস্থ অপার মহিমা, তা কিন্তু আসলে সমাজের, আরও সঠিক অর্থে বললে মানুষের ক্রমবিকাশের চিন্তাকেই শিরোধার্য করে রূপচেতনার অনুষঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। আর সেই রূপে সাধক শরীরকে সমুদ্র চিহ্নিত করার শরীরিকতা আছে। বলা ভাল, দশ অবতারও দেহসাধনার বিষয়ভূত দেহগত আকরই। যা যোগীদেহ-প্রতীক সমুদ্রের রূপান্তরকে সঙ্গে নিয়ে ইন্দ্রিয় পরায়ণতার নাক্ষত্রিক জ্যোতিকেই যথাসম্ভব প্রতিভাত করেছে। আর এক অর্থে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সাধনার শারীরিক আকুল এক আধার। শরীর শরীরকে কামনাশক করে, সম্ভোগের বা যৌনতার উন্মেষকে দূরে ঠেলে দিয়ে ভাবমণ্ডলের সমাসন্নতা প্রদান করছে। গীতার শ্লোকও সেই শারীরিক ভাবের পরাক্রমের পক্ষেই কথা বলছে যৌনতাকে নিরর্থক ক্ষণভঙ্গুরতার অনুষঙ্গ করে দিয়ে। তাই দেহসাধনার ভাবে যৌনতা তার সংকেতকে বার্তাসহ করছে রূপের দর্শন-স্থবির অহমকে নিজের অন্তর্গত করে।

অবতারদের যে বিভিন্ন রূপ তা কিন্তু মানুষের মানসিক অবস্থারই প্রতিরূপ। মানুষ একসময় নির্ভুল জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। এই জ্ঞান সাধক-শরীরের সেই সমুদ্র চিহ্নিত। জ্ঞান-সমুদ্র হল মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্তর। শরীরকে মন্থন করেই জ্ঞানকে, চেতনাকে, সত্যকে, পরমকে জাগ্রত করতে হয়। আর তাতে সামান্য বাধাবিঘ্ন এলেই মত্স্য অবতারের আবির্ভাব হয়ে। এই মত্স্যও শরীর সাধনার প্রাসঙ্গিক এক স্তর। সেখানে প্রসঙ্গক্রমে অবশ্যই আসব। কূর্ম আদতে এক উভচর প্রাণী। জলে ও ডাঙাতে সে বিচরণ করতে পারে। জল হল এখানে সাধকের অন্তর্গত সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ ও তার সামুদ্রিক প্রকাশ। আর ডাঙা ব্যক্তিসত্তার প্রতীক। সাধকের আবয়বিক শরীর রহস্যের উন্মোচিত যে জ্ঞান তা আহরণে সুদূর অভিব্যঞ্জনার শুকনে খটখটে শরীরকেই তো শৈল্পিক উপলব্ধি চেতনার মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে সঞ্চারিত করতে হয়। আর তখনই কূর্ম অবতারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বরাহও ডাঙায় থাকে আবার প্রয়োজনে জলেও সাঁতার কাটতে পারে। মানুষের জাগৃতির প্রয়োজনেই তাই বরাহ অবতারের জন্ম হয়। নৃসিংহ মানুষের দুই স্তর। পশুর দূরাগত গুঞ্জনের আদিম সত্তা তো তার ভেতরেই। তাই মননলোককে প্রারম্ভিক শারীরিকত্বের মধ্যে এনে অন্তহীন সমুদ্রগামী সংগ্রামের জন্যই নৃসিংহ অবতারের প্রয়োজন হয়। বামন হল মানুষের ক্ষুদ্র মানস সত্তা। যা নিয়েই সৃষ্টি হয় জীব। সাধক সেই ক্ষুদ্রত্বকেই জয় করবার জন্যই আবার বামন অবতারে বশীভূত হন। পরশুরাম হলেন দেহধারী পূর্ণ মানুষ। কিন্তু রামের আগে পশুর অতি জাগ্রত সত্তাকে জুড়ে দিয়ে যেটা বলা হয়েছে, প্রচ্ছন্ন আত্মজ্ঞানকে নিজের ভেতরে সঞ্চার করে দিতে। আর তা করতে পারলেই পরশুরাম অবতার মানব শরীরে অবতীর্ণ হতে পারেন অনায়াসে। রাম— মানুষের সিদ্ধ মানসিক স্তরের গঠনগত রূপ। সাধকের স্থিতধী দশা। যোগে, দেহসাধনায় শান্তির এই তামসিক নির্লিপ্তি এলেই সাধক রাম অবতারের ধারক এবং বাহক। আর এই প্রেক্ষকের উদ্দেশ্যেই আসছেন কৃষ্ণ অবতার। কিন্তু বৈষ্ণবরা তাঁকে অবতার হিসেবে না দেখে অবতারী করে নিয়েছে। তাঁর জায়গাতেই স্থানান্তর হয়েছে বলরামের। বলরাম হলেন হলধর। অর্থাৎ কিনি তিনি আবার সমুদ্র কর্ষক। রামের সম্বোধিত আবহাওয়া ও অনুভূতিকে তিনি কর্ষণ করে সাধক প্রয়াসের অন্তহীনত্বতে চালিয়ে যাবেন শরীরের প্রাণসমুদ্র। সর্বশেষে আসছেন বুদ্ধ অবতার। অর্থাৎ কিনা সাধক, যিনি— জন্ম, মৃত্যু, শোক, দুঃখ, জরাকে পেছনে ফেলে আন্তরিক এই কাহিনিকল্পের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে আসতে পেরেছেন। অবতারের এই যে রূপ ও রূপান্তরের সুচেতনা তা কিন্তু এসেছে শরীরের সব সাধ্যসাধন মীমাংসার জন্য। যেখানে গভীরতর অপেক্ষার কাম বা যৌনতা নিক্ষিপ্ত অহৈতুকত্বকেই চূড়ান্ত বলে মেনে নিচ্ছে।

মান্য প্রতিষ্ঠিত যেসব ধর্মাচরণের বাইরে লোকায়ত সাধনের যে সব নির্বেদগুলো আছে, সেখানেও ইন্দ্রিয়সকলকে বশীভূত করতেই বলা হয়েছে উল্টোস্রোতে। এই প্রক্রিয়াকে বলা যেতে পারে উল্টাসাধন বা উজানসাধন। বিভিন্ন উপনিষদে এই পদ্ধতি বিভিন্ন নামকরণে চিহ্নিত হয়েছে। ‘কঠোপনিষদ’ বলেছে এর নাম প্রত্যাগাত্মন্। ‘বৃহদারণ্যক উপনিষদ’-এ একে বলা হয়েছে উদযান। উল্টাসাধন মানে জৈবিক প্রবাহকে উল্টোদিকে নিয়ে গিয়ে ভ্রূণের আসন্ন যবনিকাকে টেনে দেওয়া। কীভাবে তা হচ্ছে, বা হয়, লোকায়ত গৌণধর্মের দেহাচরণে সেসবে যাবার আগে একটু দেখে নেওয়া যাক উপনিষদ এই প্রক্রিয়া সম্বন্ধে কী ব্যাখ্যা দিয়েছে।

‘কঠোপনিষদ’ বলছে: সমগ্র সংসারই আসলে একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষের ন্যায় উল্টো হয়ে নিরন্তর পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বিবর্তিত হচ্ছে— ঊর্ধ্বমূলোঽবাক্শাখ এষোহস্বতঅথঃ সনাতনঃ। গায়ত্রীমন্ত্রের মধ্যেও সমগ্র দেহ-মনকে অন্তর্মুখে আহরণ করিয়ে একটু একটু করে পরম সত্যস্বরূপের সঙ্গে মিলিত হবে ভাবনাই উদ্ভাসিত হয়েছে।

‘গীতা’-র ২।৬৯ সংখ্যক শ্লোকেই রয়েছে: তমোগুণসম্পন্ন অবিবেকী ব্যক্তি উলুকের (পেঁচার) মত দিনের বেলাতেও দেখতে পান না, অপর দিকে জ্ঞানী ব্যক্তি দিনের আলোতেই অবিদ্যারাত্রির (মায়া, অজ্ঞানতা) গভীর অন্ধকারকে অনায়াসেই চিহ্নিত করতে পারেন।

‘গীতা’-র এই দার্শনিক অধিগত রূপই লব্ধ ও উপলব্ধের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তির বিবিক্ত অন্তরে জেগে উঠছে ভারতীয় তন্ত্রে। ‘ব্রহ্মসূত্র’-র প্রথম সূত্রতেই বলা হয়েছে: অথ অতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা— এখন চূড়ান্ত সত্যকে জানার ইচ্ছে দেখা দিয়েছে। ‘ব্রহ্মসূত্র’ বেশ কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন। তন্ত্রে সেই ইচ্ছেই যেন প্রতিভাত হয়েছে। আর এই ইচ্ছে আবর্তিত ও বিবর্তিত

হচ্ছে দেহকে ঘিরেই। দেহই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিমূর্তি তন্ত্র সাধনায়। তাই তন্ত্র সাধককে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে ফিরে আসতে হয় দেহভাণ্ডে। অপর এক সহজিয়া মতেও বলা হয়েছে: দেহভাণ্ডে যা নেই তা ব্রহ্মাণ্ডেও খুঁজে পাওয়া ভার। সেই মতামতের প্রসঙ্গক্রমে যথাসময়েই প্রবেশ করব।

তন্ত্র বা তান্ত্রিকমতে দেহের ভেতরকার মেরুদণ্ডই মেরুপর্বতের মতন করে দেহব্রহ্মাণ্ডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। এর সর্বনিম্নে অবস্থিত মূলাধার চক্রই হল দক্ষিণ মেরু আর সর্বোচ্চ সহস্রার চক্র উত্তর মেরু হিসেবে কল্পিত। দেহের মধ্যে শক্তি চুপচাপ ঘুমিয়ে থাকেন এই মূলাধারেই। এর নাম কুণ্ডলিনীশক্তি। মূলাধারে সাপের মতো সাড়ে-তিন প্যাঁচে জড়িয়ে থাকে এই কুণ্ডলিনীশক্তি। এর মধ্যে তিনটি পূর্ণ প্যাঁচ হল, তিনটি গুণ (সত্ত্ব, রজ, তম)। কুণ্ডলিনীশক্তি মূলাধারে সাপের মতো কুণ্ডলায়িতা থাকে বলেই একে বলা হয় কুণ্ডলিনী। সাপের মুখের দিকে রয়েছে বাকি অর্ধের প্যাঁচ। এটিকে বলা হয় অহংকারের ক্ষেত্ররূপ। সত্ত্ব হল প্রকৃতি, স্বভাব বা মন। সাধকের অস্তিত্বের বিকাশরূপ হিসেবে তাকে ধরা যেতে পারে। তম হল সেই আমি বা অস্তিত্বেরই তমসাচ্ছন্নতা। রজ হল ধূলি বা পরাগ। বলা ভাল, শরীর সাধনের অভিজ্ঞাত আধিপত্যশীল দিগ্ দশা। তন্ত্রে এই তিন গুণ রপ্ত হয় মদ্য, মাংস, মত্স্য, মুদ্রা ও মৈথুনের বা এই পাঁচটি/পর্শ্বাচারের উপকরণে। স্থূল অর্থের জাগতিক রূপ এসব কখনওই নয়। এ হল পঞ্চ ‘ম’-কারের সাধনা। কুলকুণ্ডলিনীশক্তি যোগক্রিয়ায় যখন মস্তিষ্কে প্রবেশ করে তখন সেখানকার স্নায়ু থেকে যে রস নিঃসৃত হয় তাই হল মদ্য— সোমধারা ক্ষরেদ যাতু ব্রহ্মরন্ধ্রাদ্ বরাননে।/ পিত্বানন্দময় স্তাং যঃ স এব মদ্য সাধকঃ॥ মাংস হল জিহ্বা বা রসনা। বাক্য বা কথা সেই রসনা তুল্য। যে ব্যক্তি বাক্য ভক্ষণ করেন অর্থাৎ কিনা বাক্ সংযম করে মৌন হয়ে থাকেন তিনি মাংস সাধক— মাশব্দাসনা জ্ঞেয়া তদংশান রসনা প্রিয়ান।/ সদা যো ভক্ষয়েদ্দেবি স এব মাংস সাধকঃ॥ মত্স্য হল রজ ও তম নামের দুই মাছ। যা শরীরের দুই প্রধানা নাড়ি, ইড়া (যার রূপ কল্পনা করা হয়েছে গঙ্গা বলে) ও পিঙ্গলা (যমুনারূপী)-র মধ্যে দিয়ে চলাচল করে। মত্স্য সাধক শ্বাসে বা যোগক্রিয়ায় এই দুই গুণকে ভক্ষণ করে ফেলেন। হয়ে ওঠেন মত্স্য সাধক— গঙ্গাযমুনোর্যমধ্যে মত্স্য দ্বৌ চরতঃ সদা।/ তৌ মত্স্য ভক্ষয়েদ যস্তু স ভবেন্মাত্স্য সাধকঃ॥ মুদ্রা হল মস্তিষ্কের যেখানে সহস্রার পদ্মচক্র রয়েছে, তার কর্ণিকার মধ্যে পারদের মত ঢল-ঢল সুনির্মল শ্বেতশুভ্র জ্যোতি আছে— যা সাধক-রূপ-কল্পনায় চন্দ্রসূর্যের জ্যোতির থেকেও জ্যোতিষ্মান। এখানেই রয়েছেন কুণ্ডলিনী আকারে মহাশক্তি। দেহ-সাধক যোগ-বলে ঘনীভূত সেই বস্তুশক্তিকে পরমানন্দময় পরম সত্যের সঙ্গে যুক্ত করে মুদ্রা সাধক হয়ে ওঠেন— সহস্রারে মহাপদ্মে কর্ণিকা মুদিতা চরেৎ।/ আত্মা তত্রৈব দেবেশি কেবলং পারদোপমম।/ সূর্য কোটি প্রতীকাশং চন্দ্র কোটি সুশীতলম।/ অতীব কমনীয়ঞ্চ মহাকুণ্ডলিনী যুতম।/ যস্য জ্ঞানোদয় তত্র মুদ্রা সাধক উচ্যতে॥ মৈথুন হল মস্তিষ্কের ব্রহ্মরন্ধ্রে নাদ ও বিন্দু যুক্ত হয়ে এক পরমপুরুষ বিরাজ করছেন বলে দেহসাধক মনে করে থাকেন। তন্ত্র যেহেতু শিব ও শক্তির উপাসনা— এর বিশেষত্ব হল: প্রত্যেক দেবতার মধ্যেই একটি বামাশক্তি (নারীশক্তি) বিচরণ করছেন। দেবতার এই জাগ্রত প্রকৃতি (সত্ত্ব, রজ আর তম গুণ) তাঁর শক্তি বা স্ত্রী রূপে প্রতিভাত হয়েছেন। শিবের স্ত্রী বা দেবী একটি বিশেষ শক্তিরূপে প্রতিভাত হয়ে যৌনসম্বন্ধ বা মিলনক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সাধকমতে অলৌকিক ক্রিয়াকলাপের সাহায্যে তন্ত্রশাস্ত্রকে কার্যকারী করছে, সেহেতুই সাধক এখানে যোগক্রিয়ায় পরম শিবের সঙ্গে মৈথুন করে পারেন, বলা হয়ে থাকে। আর তা করেই তিনি হন সর্বশ্রেষ্ঠ সাধক বা মৈথুন সাধক। মৈথুন এখানে হল শক্তিরূপের সঙ্গেই পরমশক্তির মিলন। যার জন্যই তন্ত্রসাধনে নারী, সঙ্গিনী বা ভৈরবী অনিবার্য। তন্ত্রে মৈথুন সাধক সম্পর্কে বলে হয়েছে: মৈথুন পরমংতত্ত্বং সৃষ্টিস্থিত্যন্তকরণম।/ মৈথুনাজ্জায়তে সিদ্ধির্ব্রহ্মজ্ঞানম সুদুর্লভম।/ রেফস্তু কুঙ্কুমাভাসঃ কুণ্ডমধ্যে ব্যবস্থিতঃ।/ মকরাশ্চ বিন্দুরূপো মহাযোগৌস্থিতঃ প্রিয়ে।/ আকারহংসমারুহ্য একতা চ যদা ভবেৎ।/ তদা জাতং মহানন্দং ব্রহ্মজ্ঞানং সুদুর্লভম॥

কুণ্ডলিনীর অর্ধেক প্যাঁচকে তন্ত্রসাধক অহংকারের ক্ষেত্ররূপ হিসেবে দেখে থাকেন। যার জন্যই তন্ত্রসাধনায় আট পাশকে জয় করার কথা বলা হয়েছে। এই আট পাশ হল— ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘৃণা, ভয়, লজ্জা, মান, রাগ, দ্বেষ। মতান্তরে, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মাত্সর্য্য, ক্ষুধা, তৃষ্ণা। এই আট পাশেই অহংকারের ক্ষেত্ররূপটিও জড়িয়ে আছে। সাধককে তা জয় করতে হয় যোগের মাধ্যমে। যার জন্যই শরীরস্থ সহস্রার চক্রের নিচেই কল্পনা করা হয়েছে প্রসিদ্ধ ষট্ চক্রের (স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ, আজ্ঞা, বিশুদ্ধ)। মূলাধার থেকে নাভিদেশে অবস্থিত মণিপুর পর্যন্ত শক্তির রাজ্য। এখানেই প্রবৃত্তিগুলো ঘোরাফেরা করে। আট পাশের এলাকা এটি। এর ওপরেই নিবৃত্তির কুবেরকল্প। তার জন্যই সাধকের উচাটন আর হা-হুতাশ। কীভাবে পাওয়া যায় এই কুবেরকল্প। নিবৃত্তির পথে পরণ শূন্যতা… সত্য… ব্রহ্ম… বিবিধ সব কাল্পিক বিচিত্র পূর্ণতার আধার। তান্ত্রিক অভিপ্রায়? জাগ্রত শক্তিকে যৌগিক সাধনবলে মূলাধার থেকে ক্রমে-ক্রমান্বয়ে ওপরে তুলতে হয়। শক্তির এই ঊর্ধ্ব থেক ঊর্ধ্বতর চক্রে গমনের ফলে সাধকের সূক্ষ্ম থেকে আরও অতি সূক্ষ্ম তত্ত্বসমূহের উপলব্ধি হতে থাকে। এভাবেই নিম্নস্থ শক্তিকে বিপরীত দিকে ঊর্ধ্বগামিনী করে ঊর্ধ্বস্থ শিবের সঙ্গে মিলিত হয়ে পড়ার তান্ত্রিক দশার নামই উল্টোসাধন। অর্থাৎ কিনা মনের বৃত্তিসমূহকে উল্টোদিকে ফিরিয়ে নেওয়া। তান্ত্রিক পরিভাষআয় এক বলা হয় পরাবৃত্তি।

প্রত্যেক শক্তিরই দুটি প্রকৃতি আছে। এক, শ্বেত বা কৃষ্ণ আর দুই, নম্র বা উগ্র স্বভাব। উমা ও গৌরী শিবের নম্রশক্তির প্রতীক। আবার দুর্গা ও কালী হল রুদ্রশক্তির প্রতীক। শক্তির উপাসক বা শাক্তরা প্রধানত দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত। দক্ষিণাচারী ও বামাচারী। দক্ষিণাচারীরা উগ্র তন্ত্রপুজোর বিরোধী। তাঁরাই মূলত যোগক্রিয়ায় উল্টোসাধনের বাঙ্ময় অনুষঙ্গবাহী প্রতীককে ধরে রাখেন। দেহকে একাঙ্ক দেহাচারে সীমাবদ্ধ রাখেন। অপরদিকে বামাচারীরা উগ্রতা ও নানাবিধ যৌন ও উদ্ভট পদ্ধতিতে উল্টোসাধনের বর্ণাঢ্যত্বকে উজ্জ্বল করে তোলেন। সেখানে নারী-পুরুষের আত্যয়িক বৈপরীত্যে ক্ষণে ক্ষণে শরীরের বহ্নিময় নির্দেশ আধিপত্যশীল হয়ে ওঠে পদ্ধতির ব্যবহার্য পূর্ণতায়। যার জন্যই এখানে ভৈরবী মায়ের দেখা পাওয়া যায়। বাংলার তান্ত্রিক সাধনা মূলত বামাচারীদের সাধিত সৌন্দর্য। সৌন্দর্য এই কারণেই বললাম, এখানে এই সাধনায় যুগল শরীর পরস্পরায়ুক্ত বন্ধনে তান্ত্রিক মতের গূঢ় পরমকে দীক্ষিত করেন। তান্ত্রিক সাধক ভৈরবীর সঙ্গে রীতিমতো সহবাস করেন আবার তাঁকেই মা রূপে সম্বোধন করে থাকেন। তাঁরা বলেন মাতৃভাব আর কামিনীভাব এই দুই-ই হল নারীর আরোপিত ভাব। কামিনী তো প্রথমাবস্থাতেই প্রকৃতি স্বরূপা। সৃষ্টির সম্ভোগার্থেই কামিনী সন্তান ধারণ করে মা হন। আবার পুরুষকে তাঁর শরীরের সর্বাশ্লেষী ক্ষমতা দিয়ে কামাচারে মাতিয়ে রাখতে পারেন। তন্ত্রমতে নারীর শরীরে শক্তিতত্ত্ব ও পুরুষ শরীরে শিবতত্ত্বের প্রকাশাধিক্যের কথা বলা হয়। পুরুষ এখানে শিব বিগ্রহ আর নারী শক্তি বিগ্রহ। তান্ত্রিক সাধক তার সাধিকা বা ভৈরবীর সঙ্গে মিলনের সময় হঠযোগের মাধ্যমে ক্ষরণমুখী জৈবিক ধারাকে (বীর্যপাত) উল্টোদিকের অভিমুখে ঠেলে তুলে সঙ্গিনী বা ভৈরবীর যোনীদ্বারে পতনকে আটকে রাখতে পারেন। তন্ত্রসাধনে চক্রসাধনার কথা বর্তমানে বহুশ্রুত ব্যাপার। ঘোর অমাবস্যাতে শ্মশানে এই ভৈরবীচক্র বসে। ভৈরব-ভারবী একসঙ্গে সব জড়ো হয়। পঞ্চ ‘ম’-কারের স্থূল উপাচার নিয়ে তাঁরা বসেন। মদ্যপান করার সময় চক্রের মূল ভৈরব মূল ভৈরবী-মাকে দিয়ে তা শোধন করার পরে সকলে তা পান করেন। এরপর উলঙ্গ অবস্থাতে ভৈরবের কোলে ভৈরবী মা বসে পড়েন। অই অবস্থায় যুগল মূর্তি হবে আগে ভৈরব মায়ের স্তন ও যোনি সহ সমস্ত প্রত্যঙ্গের পুজো সারেন। একইভাবে মা-ও ভৈরবের লিঙ্গ সহ সমস্ত অঙ্গের পুজো সারেন। মূল ভৈরব-ভৈরবীদের দেখাদেখি চক্রস্থ বাকি যুগলেরাও একই করণক্রিয়া করেন। মাছ-মাংসাদিরও আহার চলে মদের সঙ্গে সঙ্গে। তারপরে শুরু হয় রতিক্রীড়ার মাধ্যমে অদ্ভুত সাধনা। তাঁরা হঠযোগে শ্বাসক্রিয়ায় অতিলৌকিক যুগল হর-গৌরীর মূর্তির মতো একাত্ম হয়ে যান। এই একাত্মতাই নাকি শক্তি সাধনার চূড়ান্ত সার্থকতা। এই সাধনক্রিয়া নিয়ে নানা কিংবদন্তিও প্রচলিত আছে। যেমন— কামাখ্যার পিশাচসিদ্ধ ও তাঁর ভৈরবীর মিথুন মূর্তি নাকি যথার্থই দৃষ্টির আড়ালে চলে যেত। দেখা যেত না তাঁদের আর চূড়ান্ত সম্ভোগক্রীড়ার সময়। মূল ভৈরব-ভৈরবীর সঙ্গের ফলে কোনও রেতঃ (বীর্য-রজ) বাইরে পড়লে চক্রের বৃত্তাকারে অবস্থানকারী বাকিরা সেই রেতঃ তুলে নিয়ে প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। আট মার্গের ঘেন্না জয়ের এ নাকি এক পন্থা। অঘোরীরা আবার শ্মশানে কোনও মড়া এলে সেই মড়ার মাথার খুলি দাহকার্যের ক্রিয়া তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করার সময় যখন তা ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেই খুলি নিঃসৃত রস নাকি ধরে রাখেন। পরে ভাতের সঙ্গে তা মেখে খান। তন্ত্র ঘেন্না জয়ের এইসব উপকরণে কাহিনি-কিংবদন্তির মাধ্যমে আমাদের সামনে এনেছে। এ ধরনের তন্ত্রক্রিয়ায় কতখানি ঈশ্বরলাভ হয় তা অন্য প্রশ্ন। আর বর্তমানে এই ভৈরবীচক্র আদৌ এখনও শ্মশান-মশানে বসে কিনা তাও সন্দেহ। সে যাই হোক, বহুশ্রুত এই ক্রিয়ায় ভগবান কতখানি বাঁধা পড়েন তা-ও সংশয়ের। তবে এ ক্রিয়া রীতিমত যৌনচর্চার নিজস্ব নির্জনতাকেই যেন তুলে ধরে। নারী-পুরুষ ধর্মের প্রকাশময় সমুজ্জ্বল প্রতীক-এ শরীরকে মুখর করে তোলেন। যদিও তাঁরা বলেন, কামের চঞ্চল অর্থবানতার হাত থেকে তাঁরা নিজেদের এই ক্রিয়াকল্পে শত-হাত দূরে রাখেন।

শরীরের ন’টা চক্রকে জাগ্রত করে বায়ুর খেলায় ইন্দ্রিয়কে সজাগ ও বশীভূত করে তাঁরা সম্ভোগের বা মিলন ক্রিয়ার সময় বীর্যপাত ঠেকাতে পারেন ঠিক, কিন্তু এভাবে কতখানি কামকে তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন; দুই শরীরে এভাবে কতখানি বৈরাগ্য তাঁর এনে দিতে পারেন— এসব যথেষ্ট-ই প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার। যুক্তিক্রম তাঁরা একটা দেন, ঠিকই। যোনিদেশকে মাতৃ-অঙ্গ হিসেবে পুজো করেন, ইন্দ্রিয়ের প্রলোভনকে জয় করেন পরমানন্দের সন্ধানের জন্যে। আর তা তাঁরা পান সম্ভোগ মিলনে বীর্যকে ঊর্ধ্বগতি দিয়ে কেবল। কী এই পরম তা তাঁরাই বলতে পারবেন। কিন্তু সেটা তো দেহস্থ শক্তিকে জাগানো কেবল। রিপু জয় করে কামরিপুকেই নানা শৈলীতে, ক্রিয়ায়, নিস্তব্ধতায় আরও যেন গভীর করে সাজানো। এটা হতে পারে যৌনতা এখানে বাঙ্ময় নীরবতায় ধর্মীয় আধারে কামসূত্রের শ্রাব্য ও দৃশ্যের অতিবাস্তবকে উপেক্ষা করছে। যৌনতা এখানে ধর্মের আবেগে, পন্থায়, আকর্ষণে অন্বিষ্ট পরমের অস্তিত্বে মোড়া কেবলই এক সমগ্রতা। যা যোগশাস্ত্রের কিছু ব্যাকরণকে রপ্ত করেছে মাত্র। তা করে যৌনতাকে লোকায়ত সাধনের শরীর সাধনার বাতাবরণে আনুভব্য নীরবতা দিয়েছে। যৌনতাকে হয়তো বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছেন দেহবাদী সাধকেরা। তখন যৌনতার সঙ্গে যেহেতু প্রাণকল্প জড়িত ছিল, নারী-পুরুষের সহবাসে তাকে আর কোনওভাবেই ঠেকানোর উপায় জানা ছিল না তাই তাঁরা যোগকল্পের ধ্বনিকণ্ঠকে যৌনতার অনুষঙ্গ করেছেন মাত্র। যার জন্য বর্তমানে এই শরীর সাধনে চরম ব্যভিচার-ই এখন সর্বাংশে আপাতত নেমে এসেছে। সাধনা হয়ে উঠেছে যৌনচর্চা আর ব্যবসার আধার। ভৈরবী পাশে নিয়ে শ্বাস আর দমের কাজ কিছুটা শিখে বীর্যবস্তুকে ঠেকিয়ে দেহসাধক আজ যোগাচারের ভেল্কি দেখাচ্ছেন মাত্র। তন্ত্রের সর্বমোট ১৯২টির মধ্যে ৬৪টি বাংলার তন্ত্র। এই হিন্দুতন্ত্রের অনুকরণে বৌদ্ধদের মধ্যে বৌদ্ধতন্ত্র রচিত হয়েছিল যে এক সময়ে, সেই তন্ত্রসার এখন তন্ত্রের সাহজিক ও গাঠনিক অস্তিত্বকে খর্ব করে দিয়ে, তন্ত্রের ইহ বা কল্যাণকে খঞ্জ ও বিসর্জন দিয়ে তাকে কেবল অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে আপাতিক কিছু যৌনাচার ও ব্যভিচারে। তন্ত্রের দেহগঠনের স্তব, সংযম, রসায়ন, যোগীসুলভ স্থিতাবস্থা সবই নষ্ট হতে বসেছে দেহাচারে আর ব্যভিচারে। তন্ত্র এখন কিছুটা হলেও আপাতত ভৈরবীসহ বিবাহ-বহির্ভূত যৌনচর্চার ছাড়পত্র। তবে সবক্ষেত্রে কথাটা কোনওভাবেই প্রাসঙ্গিক নয়। না হলে আমাদের দেশে তো এক সময় এমন সব তন্ত্রসাধক এসেছিলেন, যাঁরা মায়া-মোহ এসকল পাশ রূপ বস্ত্র টেনে খুলে অষ্টসিদ্ধিও রপ্ত করে নিয়েছিলেন। অণিমা = অণুর মতন ক্ষুদ্র হওয়ার ক্ষমতা, মহিমা = বৃহৎ হওয়ার ক্ষমতা, লঘিমা = ইচ্ছেমতো হাল্কা হওয়ার ক্ষমতা, গরিমা = ইচ্ছেমতো ভারি হওয়ার ক্ষমতা, প্রাপতি = ইচ্ছেমতো যা-ইচ্ছে তাই রপ্ত করার ক্ষমতা, প্রকাশ্য = ইচ্ছেমতো সব কিছুর ওপরে প্রাধান্য বিস্তারের ক্ষমতা, বশিত্ব = ইচ্ছেমতো যাকে-তাকে যখন-তখন বশ করার ক্ষমতা— এই অষ্টসিদ্ধি ভারতীয় সাধক-সাধিকাদের কাহিনী-কিংবদন্তির অন্তর্গত রয়েছে। যার সাক্ষ্য-প্রমাণ ছড়ানো আছে। সুতরাং তন্ত্রে যৌন অসঙ্গতির যে দৃশ্যরূপ, তাকে সরিয়ে-ও এক গভীরতার আত্মপ্রকাশ রয়েছে। যা হয়তো পুনরুদ্ধারের শ্রী হয়ে আপাতত আর ফুটে উঠছে না।

(ক্রমশ)

0 comments: