10
undefined undefined undefined

ধারাবাহিক - প্রিয়াঙ্কা চ‍্যাটার্জী

Posted in




পর্ব ১

রাত্রি নিবিড়। গহন অরণ্য, বিশাল বৃক্ষগুলো নির্বাক চিত্তে দাঁড়িয়ে আছে। সেই সুউচ্চ বৃক্ষের মধ্য দিয়ে চন্দ্রের আলো এসে পৌঁছায় না। অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ। ঘন নিকষ অন্ধকারের বুক চিরে শেয়াল, কুকুর ও কিছু বন‍্য জন্তুর চিৎকার ভেসে আসে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। মেঘের ফাঁক হতে মাঝে মাঝে চন্দ্র উঁকি মারছে। স্বল্প জ্যোৎস্নালোক কখনো অরণ্যকে আলোকিত করলেও, চন্দ্র মেঘের আড়ালে গেলেই ঘন অন্ধকার।

পাশাপাশি অশ্বারুঢ় দুই যুবা ও পশ্চাতে কিছু সৈন্য সেই অন্ধকারের বক্ষভেদ করে এগিয়ে চলেছে। তাদের হাতে মশাল। তাদের চক্ষু সন্তর্পণে চারদিকে, নিঃশব্দে তাকায়। মাঝে মধ্যেই তাদের সাবধানী নজর চলে যায় ফেলে আসা পথটির দিকে। যাতে অজানা কোনো অনুসরণকারীর পশ্চাদ্ধাবিত রূপটি তাদের নজর সান্নিধ্যে এসে পড়ে। হয়তো তাদের এটা নিছকই এক সন্দেহ, কিন্তু তাতেও তাদের সাবধানী চিন্তাভাবনায় যেন কোনোরূপ ফাঁক না থাকে। এতটাই তাদের সাবধানী পদক্ষেপ...

দুই যুবক দীর্ঘকায়। প্রথম জন স্থূল। মস্তকে উষ্ণীষ। কটিতে অসি। চাপা স্বরে বলে--- সহদেব, তক্ষশীলা নগরের সন্নিকটে আমরা এসে পড়েছি।

দ্বিতীয় জন অপেক্ষাকৃত কৃশ। কোমরবন্ধনীতে অসি। মস্তস্কে উষ্ণীষ।

--- কুমার, দূরের ঐ আলোকবিন্দুসকল দেখে আমারো তাই মনে হচ্ছে।

অশ্ব ঘুরিয়ে নির্দেশ দেবার ভঙ্গীতেই বলেন কুমার--- সৈন্যগণ, তোমরা এখন ছদ্মবেশ ধারণ করে নিকটবর্তী গ্রামে থাক। যথাসময়ে আমি তোমাদের খবর পাঠাব।

এরপরেই ঐ দুই যুবা বিদ্যুৎবেগে নগরের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যায়। রাত্রির প্রথম প্রহরে নগরের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত রক্ষীদের বলে--- বাণিজ্য করতে এসেছি। দ্বার খোলো।

সন্তোষজনক উত্তর ও পাঞ্জা দেখে দ্বার খুলে গেল। দুই যুবা প্রবেশ করল তক্ষশীলায়।

নগরের পথে স্থানে স্থানে জ্বলন্ত মশাল বর্তমান। চন্দ্র এতক্ষণে মেঘের আড়াল থেকে বাইরে এসে মিটিমিটি চেয়ে আছে। সমগ্র নগরী জ্যোৎস্নাপ্লাবিত। যদিও সেই অনন্য রূপের শোভা দেখার মত অবস্থায় তারা নেই। একটি যুবা অষ্টাদশবর্ষীয়, অপরটি দ্বাবিংশতি অতিক্রম করেছে বলেই মনে হয়। উজ্জ্বল আলোকে দেখা যায় দুই যুবা সুপুরুষ। পরিচ্ছদ দেখে মনে হয় তারা উচ্চ বংশজাত এবং ক্ষত্রিয়।

ক্লান্ত যুবকদুটি পান্থশালার সন্ধানে এগিয়ে যায়। পান্থশালার নিকটে এসেই তারা দরজায় আঘাত করে--- রাত্রিযাপনের জন্য আশ্রয় প্রয়োজন।

পঞ্চদশী এক কন্যা প্রদীপ হাতে বাইরে আসে।

--- পিতা জরুরী কাজে বাইরে গেছেন। আসুন, তবে এত রাত্রে আশ্রয় দেওয়া নিয়মবিরুদ্ধ।

প্রদীপের আলোকে যুবক মেয়েটির মুখের দিকে চেয়ে দেখল, সে লাবণ্যময়ী। তার শান্ত মুখে এক অদ্ভূত ব্যক্তিত্ব তার শ্রীকে আরো বর্ধন করেছে। মেয়েটি ডাক দিল--- বিশাখা, বিশাখা! অতিথিদের আহার ও শয়নের প্রবন্ধ কর। ওঁরা ক্লান্ত, কক্ষেই আহার দিতে বল।

অল্প কিছু আহারের পরেই, ক্লান্তিতে যুবকদ্বয় গভীর নিদ্রামগ্ন হল।

ঘুমের ঘোরেই কুমার স্বপ্ন দেখেন... চারিদিকে নিকষ কালো আঁধার, যেন ঝড় উঠবে, তারি মাঝে এক অপরূপা যুবতী তাকে ডাকছে। যুবতীর অঙ্গে কোনো বস্ত্র নাই। স্বর্নালঙ্কারে ও বিবিধ আভূষণে সে ভূষিতা। নারীর বাম হস্তের কনিষ্ঠাঙ্গুলীতে একটি অঙ্গুরীয়, সেই অঙ্গুরীয়টির মধ্য হতে বিভিন্ন আলোক বিচ্ছুরিত হচ্ছে। এক দুর্দমনীয় আকর্ষণ সে অঙ্গুরীয়র। সেই যুবতীর সৌন্দর্য্য অতুলনীয়। তার অনাবৃত দেহবল্লরীর কি অমোঘ আকর্ষণ!

হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যায় সহদেবের এক বিশ্রী কর্কশ শব্দে। প্রদীপের আলোকে দেখে এক বিকট দর্শন পরভৃৎ বায়স, গবাক্ষে বসে যেন লক্ষ্য করছে কক্ষ, বিশেষত কুমারকে। কক্ষের মধ্যে বিশ্রী দুর্গন্ধ। এদিকে ঘুমন্ত কুমার ঘর্মাক্ত ও অস্থির। সহদেবের ঘুম ভাঙতেই সে ডানা ঝাপটে উড়ে চলে গেল। তখন সবে রাত্রি দ্বিপ্রহর। কুমারের ঘুম ভেঙে যায়, ঘুম ভেঙে তিনি বলেন--- সহদেব, কোথায় সে? সেই অপরূপা নারী!

--- কুমার, আপনি স্বপ্ন দেখেছেন। শান্ত হন। কাল অনেক গুরুতর কাজ আছে। আজ ঘুমিয়ে পড়ুন।

পরের দিন সহদেব গুপ্তসুত্রে খবর পাঠায় তার সৈন্যদের। ছদ্মবেশে সৈন্যরা উপস্থিত হয় তক্ষশীলায়।

--- কুমার, সৈন্যরা নগরে উপস্থিত।

--- সকলকে বলা আছে তো?

--- হ্যাঁ কুমার।

10 comments:

  1. Darun..waiting for next part.

    ReplyDelete
  2. দুর্দান্ত লেখা... টানটান উত্তেজনা নিয়ে এগোচ্ছে গল্পটা... বেশ ইন্টারেস্টিং গল্প... পরের পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম...

    ReplyDelete
  3. দারুন লিখেছ।

    ReplyDelete
  4. দারুন লেখা । টানটান উত্তেজনা নিয়ে এগোচ্ছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন‍্যবাদ, অনুরোধ ,বাকি পর্বগুলি পড়ুন

      Delete
  5. খুব সুন্দর ভাই। পরপর পড়ছি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি আপ্লুত, পরের পর্ব পড়ে বলবেন কেমন লাগল

      Delete