0

বইঘর - পল্লববরন পাল

Posted in

আবর্ত - সম্মতি দাও অবাধ্যতার
পল্লববরন পাল


বইয়ের নাম “আবর্ত”। কবি - শুভংকর ঘোষ রায় চৌধুরী।  প্রথম প্রকাশ ডিসেম্বর ২০১৯। প্রকাশক ‘ধানসিড়ি’। ‘দু’জন মানুষ। শহর একটা। জীবনও, একটাই।’ এই শিরোনামে প্রথম ভূমিকার অংশ –

... তবে কাহিনিরা মানুষের চেয়ে বেশি ধুরন্ধর। কাউকে কিচ্ছুটি না জানিয়ে তারা নিজেদের মতো একটা শেষের পথে এগোতে থাকে, যে পথের নাম আমরা দিই অভ্যাস। নিজেদের গল্পের রথ নিজেরা ছোটাতে ছোটাতে কখন যে লাগাম হাতবদল হয়ে যায়, বুঝি না। আচম্বিতে আমরা দেখি, আমাদের ছোটাচ্ছে আমাদের কাহিনির ভার... নিজেদেরই তৈরি করা গল্পের জাল ভেঙে বেরোনোর পথে সৃষ্ট হয় আবর্ত।

এই আবর্ত-স্রষ্টার নাম শুভংকর ঘোষ রায় চৌধুরী। অভিনবত্ব ত্রিমাত্রিক পদবিতেও। আমার অভিজ্ঞতায় ইতিমধ্যে ঘোষরায় বা রায়চৌধুরী একাধিক পেয়েছি – লক্ষ্য করুন পাঠক – ইনি ঘোষ রায় চৌধুরী – তিনটিই মৌলিক পদবি এবং স্বাধীন – মাঝখানে সুনির্দিষ্ট নোম্যান্স্‌ল্যান্ড সহ সীমান্ত মজুত। ত্রিমাত্রা শুভংকরের সৃষ্টিমাধ্যমেও – নাট্যকার, গদ্যকার এবং কবি। রবীন্দ্র জাদেজার মতো – ব্যাট বল ফিল্ডিং – এ এবং ও দুজনে নয়, এ ও এবং সে তিনজনেই বলে আমায় দ্যাখ্‌। বিরল প্রজাতি। নইলে দ্বিতীয় ভূমিকার পাতায় শেষ সংলাপে লেখেন – 

এই পার থেকে আমি কলকাতা পাঠাব আজীবন –
সন্ধ্যায়, সেতারে ইমন।

এর পরেও কোনো সচ্চরিত্র কবিতা পাঠক আবর্তের মধ্যে মাথা না ঢুকিয়ে পারেন?


বইয়ে দু’জন মানুষ – সূচিপত্রে নির্দিষ্ট – ‘একলব্য – হৃদয়ের ক্ষয়’ (কুড়িটি কবিতা) এবং ‘ফেরা’ (আঠাশটি কবিতা) – প্রথমজন শুরুই করছেন দ্বৈত উচ্চারণে –

সম্মতি দাও, সম্মতি দাও, আবার তোমায় আগলে রাখি
ঝড়ের গতি, উপড়ে আসা ঘর, প্রভৃতি ঠেকায় যদি
শক্ত করে আবার ধরো এই কথাদের, আর ছাড়া নয়।
হাতের মুঠো বন্ধ। এবার সম্মতি দাও, সম্মতি দাও। 

[যেমন করে গাইছে আকাশ]

কবি-নাট্যকারের মুন্সিয়ানাটা লক্ষ্য করুন পাঠক - আগলে রাখার অনুরোধ করে সম্মতির তোয়াক্কা না করেই ঝড়ের গতিতে ঘর উপড়ে পাঠককে নাছোড় হাতের মুঠোয় বন্ধ করতে শুভংকরের লাগলো মাত্রাবৃত্তের সহজ সাবলীলতায় মাত্র চারটি পংক্তি। এবং চতুর্থ পংক্তির মাঝখানে কী সাঙ্ঘাতিক ধারালো, কী নাটকীয় ঐ পূর্ণচ্ছেদ! মুঠো বন্ধ – ব্যাস! শেষ। স্তব্ধতা। শেষ মানেই তো ফের শুরু – ফের ‘সম্মতি দাও, সম্মতি দাও’

পরের স্তবকেই যে কলকাতাকে উনি আজীবন সেতারের ইমনে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন একটু আগে উৎসর্গের পাতায়, তার সম্পর্কেই বলছেন –

তছনছিয়ে চূর্ণ করি মগজজোড়া কলকাতাদের
অহং যত, ঘূর্ণিপাকে লোপাট করি গঙ্গাকিনার
সম্মতি দাও, বক্ষে তোমার রুদ্রপ্রয়াগ, মন্দাকিনী
লিখতে থাকি, এবং অমন চোখেই ধরি আষাঢ়বাড়ি

কবির নিজের আবর্তে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কলকাতা থেকে রুদ্রপ্রয়াগ এবং মন্দাকিনী লিখতে লিখতে আমাদের সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁর ‘আষাঢ়বাড়ি’তে। এখানে আষাঢ় আর বাড়ির মধ্যে কিন্তু কাঁটাতার সীমানা ব্যবধান নেই – সম্পৃক্ত - পাঠকও কবির সঙ্গে – কী সুন্দর যুগলবন্দী – মেঘমল্লারের মতো – দুটি শব্দ পরস্পর জাপটে লীন হয়ে একটা পৃথক নতুন শব্দে যেন উত্তীর্ণ হলো এইমাত্র!

শব্দ নিয়ে যেন যা খুশি তাই আবর্তে ‘তছনছিয়া’ ঘুরপাক খেয়েছেন শুভংকর। দ্বিতীয় কবিতা ‘কালবৈশাখী’র শেষ পংক্তিতে খেলতে খেলতেই একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে বিপরীত মেরুতে গিয়ে নিজেও দাঁড়ালেন, পাঠককেও সেই মজায় মজিয়ে ছাড়লেন –

- কিন্তু এক ঝড় এসে রোজ ডেকে যায়,
সময়ের খবর পাঠায়
- সেইসবই শুনে, ভুলে থাকি।
- গতকাল শীত ছিল।
বসন্তের কবিতারা জেগে ওঠে আজ।


--কাল? বৈশাখী?

আগের কবিতার আষাঢ়বাড়িতে জুড়েছিলেন। এবার ভাঙলেন। কাল আর বৈশাখী – অনায়াস অবলীলায়। ‘দাড়িমের দানা ফাটিয়ে দশ আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে যেমন তার রস বের করে’ ঠিক তেমনি রক্তকরবীর রাজার মতো যেন বলে উঠলেন ‘সৃষ্টিকর্তার চাতুরী আমি ভাঙি’।

শুভংকরের কবিতার একটা নিজস্ব স্টাইল আছে – শব্দ গাঁথতে গাঁথতে সহসা একটি শব্দের প্রতিধ্বনি বেজে ওঠে – আচমকা দ্বিমাত্রিক কবিতা ঐ একটা শব্দে ত্রিমাত্রিক হয়ে ওঠে –

আসছে ফিরে একটানা সুর – হারমোনিয়াম...
প্রেম কি তোমার এমনি জানা?
(সবার কি সব শুনতে মানা?)

আদর বলতে, মধ্যগগন! কলোসিয়াম! [দেবব্রতর হারমোনিয়াম] 

এই আলটপকা হঠাৎ বৃষ্টির মতো ‘কলোসিয়াম’ শব্দটা কবিতার শেষে উচ্চারণের সাথে সাথেই পাঠককে চমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে, শুরু থেকে একাধিকবার ফের পড়তে হবে, হবেই – অনুষঙ্গের ঠিকানা খুঁজে বের করতে – একইভাবে ‘ঋণ’ কবিতার শেষে ‘শহরের যতেক কেবিন’ পড়েও ঝটকা লাগবে এবং এই শব্দের অনুরণনের মজা অনুধাবনের নেশা পেয়ে বসবে পাঠককে। কবি শুভংকরের স্বভাবের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা কথারা এমনিভাবেই শুধু কথার মত থাকে না – আচমকাই তারা কেউ কলকাতা, কেউ আবার পাহাড়, নয়তো হেমন্তকাল হয়ে পাঠকের সঙ্গে হেমন্ত মুখার্জীর গানের মতো এক সহজ বৌদ্ধিক সম্পর্কস্থাপন করে, যা মাথার মধ্যে অনেকক্ষণ রিনরিন ছন্দে বেজে চলে।

ছন্দে ছন্দে দুলতে দুলতে অভ্যস্ত পাঠক হঠাৎ এই কাব্যগ্রন্থে পেয়ে যাবেন পরপর দুটি গদ্যছন্দের জানলা। খুললেই শ্রাবণের নক্ষত্র নিঃসঙ্গ দহনে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ঠোঁটের এক কোণে আলতো আলস্যের মতো, ঘুমের মতো, মায়ার মতো ঝুলবে নীলকন্ঠী হাসি। নদী বা সমুদ্রের অতীত এক মাধুর্য হয়ে ‘আশ্বিনের গাঢ় সন্ধ্যা বুকে ভর করে সবার’, ‘নৈঋতে মেঘের সাম্রাজ্য সুঠাম হয়’ – কবির আড়ালে বসে আমরাও দেখি ‘কীভাবে একটা সমগ্র দেশ প্রতিপলে ভেসে যাচ্ছে শস্যের স্বপ্নে’, উত্তাল অভিমানী নদী উঠে আসছে নারীর চোখে, যার শরীরে ছায়া দেখলে লাবণ্যের অনধিকারের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেন কবি।

‘আমায় যদি পোড়াও, তবে আগুন আনো এই মুহূর্তে
সহ্য হয় না এখন দেরি, নইলে কী আর তোমার রক্তে
ডুব দিতে চাই জ্বলার আগে? জন্ম এখন প্রেমের মতোই
মিথ্যে লাগে।...’ [দ্বিধা]

পাঠককে মনে করিয়ে দেবে সত্তর দশকের সেই আগুন-কবির পংক্তি – ‘একটি হৃদয় পোড়ে শুধুই পোড়ে/ তার যেন আর কাজ ছিলো না কোনো’ – মাত্রাবৃত্ত শক্তিরও বড়ো প্রিয় ছন্দ ছিলো। এ ছন্দের ঝোঁকে শক্তির মতোই অনায়াসে উদাস বিষণ্ণতা বুনতে বুনতে শুভংকর হঠাৎ সুনীলের মতো উচ্চারণ করেন – ‘সমস্ত সাড়ে-সাততলা বাড়ির ছাদ থেকে/ নিশ্চিত জানি,/ দেখা যাবে কলকাতার স্কাইলাইন -/ দিগন্তে হাইরাইজ, তার উপর/ সিগারেটের ধোঁয়ার মতো মেঘ/ খুব বৃষ্টির আগে আকাশটাকে/ নেভানো উনুনও মনে হতে পারে। ...’ এই কবিতার মধ্যেই কবি শুভংকর আশ্চর্য নির্মাণ করেছেন –

...মাটি আর চলাচল, চলাচল আর
নীচু বাড়ির দরজা, দরজা আর
পরিচয়ের মধ্যেকার যেটুকু অপেক্ষা
এবং আমাদের এই ফিরে আসা –
সব মুছে যায়।

শুধু শোনা যায়,
এক পরাজিত গায়ক
মল্লারের রেকাব ধরছেন বারবার। 
[হাইরাইজ]

পাঠক, লক্ষ্য করুন, কবিতার পংক্তি ভাগ ও বাঁদিকের মার্জিনের বিভিন্নতা – যা এই কবিতাটির শরীরে দিয়েছে গোপন এক গতির দোলা। আমার কাছে এটা এই গ্রন্থের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা।

পাতায় পাতায় কালিকুন্তল ভার
লুটায় সমীপে, ভাঙাবসতের ছায়ে,
তোমার সান্ধ্য, বিনীত অন্ধকারে
ভালোবাসা আজও এরকমই নিরুপায়। ... 
[মধুমাস]

দ্বিতীয় মানুষ – ফেরা – এক অনন্ত খোঁজ আর তার পরতে পরতে কিছু উথাল-পাতাল দীর্ঘশ্বাস ও অহংকারী অভিমানের বিলাস। কিসের খোঁজ? কার খোঁজ? এই কল্পনাতীত প্রশ্নপত্রের উত্তর সম্ভবত কবি নিজেও খুঁজেই চলেছেন তাঁর আঠাশটি কবিতার প্রতিটি সযত্ন শব্দ, শব্দের মাঝখানের চিলতে রোদ্দুর, দুই স্তবকের ফাঁকে আটকে থাকা বিচিত্র ঋতুসম্ভার জুড়ে। এই দ্বিতীয় মানুষটি কিন্তু আদ্যোপান্ত আচ্ছন্ন দোলাচলে। ঐ যে, আগেই বলেছি – কিসের খোঁজ, কার খোঁজ? ‘আপনারে খুঁজি আর খুঁজি তারে সঞ্চারে আমার’ – এ শ্লোগান কবিরই উচ্চারিত অধ্যায় সূচনায়। এই আচ্ছন্নতার মধ্য থেকেই আলোকিত হচ্ছে কবির খোঁজযাত্রা পথ – তাঁর যাপনভাবনা।

এ’ যেন কলকাতার এক আশ্চর্য ম্যাজিক –
গাঢ় হয়ে আসা বিকেলে
তুমি যখন বলো, এ-দেশে থাকবে না
বিরহ আমাতে ভর করার আগেই
তুমি আমার হয়ে দুঃখ পাও, আবার পরক্ষণেই
চোখ ফিরিয়ে বলে ওঠো, ফিরে আসব আবার।

এই ক্ষমতা, দুঃসাহস ও অহংকার
তোমাকে এই শুর দিয়েছে, জানি। [অহংকার] 

এ কবির বোধের নিভৃত সিন্দুকে বিরাজ করছে কলকাতা, কবির নিজস্ব সেতারের ইমনে বেহাগে। এ শহর কখনও তাঁর একান্ত মগ্ন আদর, কখনও এক পশলা কবিতাবিলাস, আবার কখনও কবি নিরুত্তর হাহাকারে চিৎকার করে ওঠেন - ‘কলকাতা আমাদের অনন্ত এক পরাজয়’।

ঝড়ে-জলে উড়ে যাওয়া
চিঠিদের কথা, ভাঙা মন
আজকাল এ শহরে কে আর শোনায়?
শব্দও বন্ধক তার কাছে। ...
...
এ সব কাল্পনিক।
আমাদের সঙ্গী বলতে শুধু এক মুঠোফোন।
কেঁপে ওঠে মাঝেমাঝে –
‘ফাঁকা নাকি? দেখা করা যায়?’ 

[মুঠোফোন] 

‘আদ্যক্ষর’ কবিতাটির কথা আলাদা করে বলতেই হয়। কারণ, এটি কবি-নাট্যকার শুভংকর রচিত। দু’জনের সংলাপ – চুম্বন দূরত্ব থেকে নয়, বরং রেস্টুরেন্ট কেবিন-টেবিলের দু’পাশে মুখোমুখি – সটান দৃষ্টির কঙ্ক্রিট সেতু নয়, এক চামচ চিনি ঢেলে চামচের চা-ডুব সাঁতারে কাপের দেয়ালে খুব সংযত ঠুং শব্দে গাঢ়তর নিস্তব্ধতায় শ্বাস নিতে সহসা এ ওর চোখ ছুঁয়ে যাওয়া – সংলাপের ভঙ্গি দেখে আমার অন্তত সেরকমই একটা দৃশ্যকল্প মাথায় এসেছে –
- অনেক তো হল এই প্রেম-অপ্রেম-নিবেদন-গ্রহণ-অভিমান।
একমুঠো শান্তি পাওয়া যায়?
- লক্ষণ ভালো নয়! সখ্যেও পাক ধরল তবে?
- সে তো ইনেভিটেবল্‌!
সারাক্ষণ চরকিপাক, অপেক্ষায় ম্লান হয়ে যাওয়া
অভ্যাসের সংলাপ – ভালো লাগে নাকি?
- তার চেয়ে দূরে থাকা, কথায় না-থাকা,
জেনে নেওয়া, আজও ভালোবাসো,
মাঝে মাঝে সাক্ষাৎ, একসিডেন্টালি ...

হে পাঠক, এ সংলাপের কোনো চরিত্রের মধ্যে কবিকে খুঁজবেন না, কারণ, কবি নিজেও সন্তর্পণে নিজেকে এড়িয়ে গেছেন এই কবিতায় – বরং তাঁর প্রিয় চরিত্র, আজকের কলকাতাকে ধরেছেন যে সংলাপে ইনেভিটেব্লি ‘অনিবার্য’ শব্দটাকে অনাত্মীয় মনে করেন, অথবা বলার মুহূর্তে এক্‌সিডেন্টালি বাঙলাটা মনে পড়ে না, ‘দৈবাৎ’ বা ‘হঠাৎহঠাৎ’ মাতৃভাষা বিস্মৃতির মধ্যে কখনো কখনো ডান বা বাম হাতে মাফলারের মতো ঘাড় টপকিয়ে নিজের পিঠ চাপড়ানিও উপভোগ করেন। এই কবিতায় একটা ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত ‘ভালো-না-লাগা’ সম্পর্কে বলতে চাই – এই ‘হাইফেন’এর অত্যধিক ব্যবহার – প্রথম পংক্তিতে ‘প্রেম-অপ্রেম-নিবেদন-গ্রহণ-অভিমান’ যদি ‘প্রেম অপ্রেম নিবেদন গ্রহণ অভিমান’ হতো, ইলিশ মাছের কাঁটার মতো প্রতি শব্দের মাঝে খোঁচা ও রক্তক্ষরণটুকু না থাকলে কি ঐ পাঁচটি শব্দের পাশাপাশি অবস্থানগত পারস্পরিক সম্পর্কের রাশ আলগা হয়ে যেতো? পাঠক বোধহয় খোঁচাটা না খেতেই বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করবেন, মানে কবিতার পাঠে হোঁচট খাবেন না। এই হাইফেন-প্রেম শুভংকরের এ বই জুড়ে অসংখ্য স্বাক্ষর রেখেছে – সচেতনভাবে নাকি অভ্যাসে, তা জানি না। শুধু হাইফেনই বা বলি কেন, ‘কমা’ও কম যায় না। দুটি উদাহরণ দিই –

এক।। মুখ ফুটে আর কেউ বলে না,
‘ভ্রান্ত হব, ভ্রান্ত হব,
নদীর কাছে চলো।’ 

দুই।। - দু-হাতেই ছেড়ে রাখো যাকে
তাকে কি কখনও বলো, ‘সাড়া দাও’?

প্রথম ক্ষেত্রে সংলাপ ভিন্ন পংক্তিতে – বেশ, তাহলে প্রথম পংক্তির শেষে ‘কমা’টির দরকার কি? আবার দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সংলাপের আগে ‘কমা’র বিরতি একই পংক্তিতে, অথচ ‘সাড়া দাও’-এ পংক্তি ভাঙলে সংলাপের গুরুত্ব কি কিছুটা বাড়তো না?

‘দু-হাতেই’ লিখছেন অথচ অন্যত্র দু’জন মানুষ (প্রথম ভূমিকায়), সে’ শহরে (দ্বিতীয় ভূমিকায়), দু’ হাতে ভুলের স্মৃতি (বাস্তুভিটে) ...

আস্ত বইটা জুড়ে শব্দ চয়নে, বোধে ও যাপনে, চিত্রকল্প নির্মাণে এতো যত্নবান নিজস্বতায় আপ্লুত কবি যতিচিহ্ন ব্যবহারেও সচেতন হয়ে উঠুন শিগগির, কারণ –

জোনাকির দেহে তুমি হয়ে ওঠো রক্তের ডানা
কাজল দিয়েই রোজ এঁকে দাও নদীর সীমানা। 

[জরাকাল]

চিরায়ত বাঙলা কবিতার নিবিষ্ট পাঠকেরা আপনার থেকে আরো অনেক অনেক এরকম মৌলিকত্বের আশায় আকুল অপেক্ষা করছে, শুভংকর। আপনার কথার সূত্র ধরেই বলি -

সম্মতি দাও, সম্মতি দাও, আমরা তোমায় আগলে রাখি

0 comments: