0

মুক্তগদ্য - শালিনী ঘোষ

Posted in

মুক্তগদ্য


পুরুলিয়া
শীত'২০১৭
শালিনী ঘোষ


এখন গাঢ় চন্দ্রালোকে গা গুলিয়ে আসে। ধুলোওঠা রাস্তা আর মাইলের পর মাইল বিছিয়ে থাকা গাছহীন জমিতে বাহুল্য মনে হয়। বিলাসিতা। বেলা বাড়লে খাবার জলটুকু উঠে আনাও বড় শ্রম। অথচ ঘরে মানুষজন নেই। লোহার গেটের ওধারে যারা মাঝেমধ্যে হানা দিয়ে যায়- ছোটো মাপের বাচ্চা, ইতিউতি গাড়ি, একেকদিন মনে হয় তাদের কাছে গিয়ে দুদণ্ড বসি, জিরোই, বাতচিত এগোক খানিক হাওয়ায় হাওয়ায়। হয়ে ওঠেনা।

পূর্ণিমার অপচয় আর তেষ্টার জল আর আলাপীর অভাব ক্রমশ বয়ে যায় আরো আরো উত্তরের দিকে।




যেমন আজ মনখারাপ। সকাল থেকে অদ্ভুত স্তব্ধতা জমাট বেঁধে আছে চারদিকে। এতটাই শুনশান, বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে কবি ডুবে গেলে একলা স্টেশন দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে, পুকুরপাড়ের আড্ডা হয় কোমলে মাপা। বালিশে প্রাণপণ মাথা চেপে ধরে পাতাদের মৃত্যু টের পাওয়া অভ্যেস করতে চাইছি। অথচ বারবার ফিরে আসে যা, আমারই সর্দি বসা বিক্ষিপ্ত শ্বাস। ছড়িয়েছিটিয়ে কাচ বাষ্পে ভরে তোলে। যত অনায়াস শরীর ইত্যাদি, নাম-মুখ কুয়াশার ভিড়ে চোখে পড়েনা। নিরাসক্তি আঁকড়ে শীতঘুমে যাওয়া প্রিয়, মৃত্যুর মতো প্রিয় মনে হয়।




অনেকক্ষণ শান্ত চোখ মেলে রাখা। ভিড় হয়ে যেতে মন করে। আলপথ বেয়ে অবিরাম চাকা ঘোরাতে ঘোরাতে শেষতম বাঁকে মিলিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা। ওই জোটে হারিয়ে যাওয়ার দায় যতখানি, ততটুকু মাপেই স্থবিরতার বিপরীত মেরু টান। ঘূর্ণিতে আবর্তিত হয় আমারই যৌবন, আবেশ, কলমের ডগায় ঝরে না পড়া অলৌকিক শব্দগুচ্ছ। অনন্ত জুড়ে থাকে ধুধু প্রান্তর। আমের পল্লবে পুরু হয়ে বাস করে অস্থিপোড়া বেনামি ছাই।

0 comments: