undefined
undefined
undefined
স্মৃতির সরণী - সব্যসাচী ভট্টাচার্য
Posted in স্মৃতির সরণী
স্মৃতির সরণী
আমরা খেলব
তুমি খাবে
সব্যসাচী ভট্টাচার্য
তখন সত্তর দশকের শুরুর দিক। ৭২-৭৩ হবে বোধহয়। আমার জ্যেঠামশাইয়ের সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকা অফিসে গিয়েছি। নিজের কোনও উদ্দেশ্য ছিল না, বলাই বাহুল্য; এমনিই গিয়েছিলাম, যেমন যেতাম। সেই ছোটবেলা থেকে- উন্মুখ হয়ে থাকতাম কবে যাব! এখানে বলি আমার জ্যেঠামশাই (প্রয়াত ফণিভূষণ ভট্টাচার্য) ছিলেন নেশায় সাংবাদিক, পেশায় তৎকালীন বিহারের একটি মাইকা কম্পানির ম্যানেজার। সেই ১৯৩৩ সালে ওঁকে সাংবাদিকতার জগতে হাত ধরে নিয়ে আসেন আনন্দবাজারের প্রতিষ্ঠাতা প্রফুল্ল সরকার আর সুরেশচন্দ্র মজুমদার মশাই। আর সেই শুরু -শেষ ১৯৮৭ সালে। জীবনের শেষ তিন চার মাস ছাড়া উনি নিয়মিত লিখে গিয়েছেন আনন্দবাজার, হিন্দুস্থান স্ট্যাণ্ডার্ড (পরবর্তী কালে যেটি দ্য টেলিগ্রাফ হয়), ইণ্ডিয়ান নেশন ইত্যাদি আরও অনেক কাগজে ঝুমরীতিলাইয়া (কোডারমা) থেকে। যাই হোক, যে দিনটির কথা বলতে শুরু করেছিলাম ---
সে দিন দুপুরে আমাকে সঙ্গে নিয়ে জ্যেঠামশাই ঢুকলেন সন্তোষকুমার ঘোষের ঘরে। আগে ছবিতে দেখেছি এবার সামনাসামনি মুহ্যমান ব্যাঙ আমি! ততদিনে সন্তোষবাবুর দু'চারটি গল্প উপন্যাস (বুঝতে পারিনি মোটে) বয়সের তুলনায় ইঁচড়ে পাকা আমি পড়ে ফেলেছি ততোধিক পাকা স্কুলসহপাঠী বন্ধু সৌমিত্রের (ডঃ সৌমিত্র বসু) প্ররোচনায়।
ঘরে ঢুকতেই সন্তোষবাবুর সাদর সম্ভাষণ, 'আরে আসুন, আসুন ফণিদা। কবে এলেন? এটি কে সঙ্গে?'
-- 'আমার ভাইপো। আপনার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে তাই নিয়ে এসেছি।'
-- 'তা বেশ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে এই বাচ্চা ছেলেটির কী দরকার?' বলে হাসতে লাগলেন, 'পত্রিকা করে বুঝি? লেখা দরকার? একেবারেই দুগ্ধপোষ্য (তখন আমি ক্লাস নাইন বা টেন)। নাম কী?'
বললাম সব। স্কুল, ক্লাস ইত্যাদি...। অটোগ্রাফ লাগবে, সেটাও বললাম খাতা এগিয়ে দিয়ে।
-- 'আমার কোনও লেখা পড়েছ?'
-- 'হ্যাঁ, কিনু গোয়ালার গলি, শেষ নমস্কার, শ্রীচরণেষু মা কে' ( দু একটি ছোট গল্পের নামও বলেছিলাম, কবিতার নামও...এই মুহূর্তে মনে আসছে না)।
-- ' বাবা, এ তো বেশ পাকা ছেলে!'
খাতাটি নিলেন -- বললেন, 'কিন্তু কী লিখি বলতো? শুধু নাম?'
এরপর খাতায় লিখলেন,
এ যুগে নামৈব কেবলম্
তাই শুধু নামটাই সই
সন্তোষকুমার ঘোষ।
এরপর যা হলো সেটি আমার কাছে একইসঙ্গে মজার এবং বিস্ময়ের। সন্তোষবাবু ফোনে হিমানীশ গোস্বামী আর শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে আনলেন নিজের ঘরে। বললেন --
'ফণিদা এঁদের তো চেনেন? আসুন একহাত হয়ে যাক।' (অর্থাৎ দাবা)।
এতজন ছবির মানুষকে সামনাসামনি দেখে আমার গোল্লা। এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন --
'বাবা, আমরা খেলব, তুমি খাবে।' বলে আনন্দবাজারের ক্যান্টিন থেকে সোনালী টোস্ট (এখন কি আর পাওয়া যায়?), ওমলেট, বড় তালশাঁস সন্দেশ আর আমি ওঁর কাছে 'ছোটছেলে' বলে বড় এক গ্লাস দুধ!
-- 'এত খেতে পারব না' যেই বলেছি অমনি ধমক:
--- 'ঠিক পারবে, ছোট ছেলে, আর একটা কাজও করবে, এই নাও আলমারীর চাবি, ইচ্ছেমতো বই নিয়ে পড়তে পার। শেষ না হলে বাড়ী নিয়ে যেও, পড়ে ফেরৎ দিও, যখন হোক।'
আমি ভাবতেই পারছিলাম না। এমনটাও হয়? বই পড়তে দিচ্ছেন আবার বাড়ী নিয়ে যেতেও দেবেন! ওঁরা খেলা শুরু করলেন। আমি খাওয়াপড়ায় মেতে গেলাম।
ওহো! বলতে ভুলে গিয়েছি। সেদিন ঐ ঘরে আর একজনও উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক সুনীলকুমার চট্টোপাধ্যায় যাঁর ছেলে স্কুলে আমার এক বছরের সিনিয়র ছিল (এখনকার বিশিষ্ট সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়)। সেদিন অধ্যাপক চট্টোপাধ্যায় ছিলেন খেলার দর্শকমাত্র।
আরও কিছু কথা ভেসেছিল সেদিন চায়ের ধোঁয়ায়, সিগারেটের ধোঁয়ায় ---
সময়ের জলে এতদিনে ধুয়ে গিয়েছে ....
বড় আফশোষ হয়।
0 comments: