0
undefined undefined undefined

ধারাবাহিক - রাজর্ষি পি দাস

Posted in




ধারাবাহিক


ফেরা - ১০
রাজর্ষি পি দাস


সপ্তমী 

ট্রেন স্লো হচ্ছে। 

একটা অস্পষ্ট স্টেশনফলক ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে! বেলগাম! কটা হলুদের উপর তীব্র কালোতে লেখা! কামরার ভিতরে সবাই উল্লাসিত শ্লোগানে – আ গিয়া আ গিয়া! 

সবাই হঠাৎ একসাথে অন্তত ৭টি মাতৃভাষা ভুলে হিন্দিতে কোরাস! গত ৪ দিন ঘরে দেখা অন্তত ১০০-১৫০ টা ষ্টেশনের তুলনায় এটি বেশ গম্ভীর। হল্লা-চিৎকার কম। হকার তো প্রায় নেই। একটু পরে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা। ট্রেন যেই দাঁড়াল অমনি আর্মি আর এয়ার ফোর্সের ইউনিফর্ম পরা লোকজন মাটি ফুঁড়ে ভরিয়ে দিল বেলগাম স্টেশন। উর্দি শব্দটা সত্যি আর্মি, এয়ার ফোর্সের লোকজনের সাথে যায় না। ৬ বছর পরে নেভীর লোকজন দেখার পর তো উর্দি শব্দটা আমার শব্দকোষে শুধুমাত্র পুলিশের জন্য পাকাপোক্ত করে দিয়েছি! নেভীর মতো অত ধবধবে সাদা আর স্মার্ট ড্রেস-ডিসিপ্লিন নেভীর ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কারও নেই ! 

কটা বাজে? ৬ এ এম! মজুমদার বলল। আমরা অবাক, দেশের পূর্বতম অঞ্চল থেকে আসা, যেখানে ৬ টা মানে সকাল ভোর নয়, আমরা হতবাক, মাথার উপর চাঁদ দেখছি। কাঁচা ভোরের আলো চারদিকে। নূপুরও দেখছিল, আমাদের টীম লিডার, লিডারশীপের ইজ্জত খুইয়ে মিলে গেছে। চাঁদ থেকে চোখ নামিয়ে নূপুরের উদাসীন গলায় পূর্বাঞ্চলের উচ্চারণে হিন্দি – সব নাম বোলো।

নাম বলা শেষ হলে জানা গেল আরও একজন কম! এবার নূপুরের প্রায় কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা। ইতিমধ্যে মধ্যপ্রদেশের এক ধুধু স্টেশনে আমদের এক মনিপুরি সাথী অদৃশ্য হয়ে গেছিল, যে বলেছিল ফিলিং হাংরি। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি সে যাত্রায়। ২৬ জনের জায়গায় ২৫ জন এসেছি, এখন আবার একজন কম। কে কম, কে কম?! ইকবাল কম। ইকবাল ইকবাল ইকবাল করে শ্লোগান দেওয়ার মতো করে ২৫ জন ছেলে একসাথে ট্রেনের ভিতরে ঢুকে গেল। না ২৫ জন নয় ২৩ জন, আমাদের টিম লিডার নূপুর ততক্ষণে মাথায় হাত দিয়ে প্ল্যাটফর্মে বসে পড়েছে! ২৩ জনের সম্মিলিত খোঁজে ইকবালকে পাওয়া গেল ফার্স্ট ক্লাশ ডিব্বায় জানলার পাশের সীটে ঘুমন্ত অবস্থায়। 

আমাকে দেখে ইকবাল হেসে – দুস্ত গাঁজাটা কড়া আছিল! নূপুর তো ইকবালকে প্রায় খুন করে রক্তপান করে ফেলে আর কি। ইকবালের একই কথা – দুস্ত গাঁজাটা কড়া আছিল! ও নাকি ভোর ৪ টে অব্দি আমাদেরকে খুঁজেছে, কারণ চা খাওয়ার জন্য রাত ২ টর সময় কোন একটা স্টেশনে নেমেছিল। তারপর থেকে ট্রেনের প্রায় প্রতিটা ‘ডিব্বা ঘুইরা ঘুইরা...সব্বাইর ঘুম ভাঙ্গাইয়া ...গালাগালি খাইতে খাইতে...। শুধু আর্মি ডিব্বাটাই নাকি হাওয়ায় উইড়া গেছিল’। 

ভূতের চেয়েও খাতরনাক দেখতে ২৪ টি ছেলে, ৫-৬ দিন থেকে স্নান করেনি, মিঠুন-আমিতাভের মতো চুল চরম অযত্নে রাহুর বংশধরের মতো- আমরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সরল জীব মাথা নীচু করে ইয়েস স্যার করছি। নাম ডাকছেন ঝকঝকে তকতকে একজন যুবক, সাথে মাথা নাড়ছেন একজন সমচকচকে প্রবীণ। নূপুর আর টীম লিডার নয়, সে এখন আমাদের মতন AC U/T . আমাদের গায়ের, জামাকাপড়ের আসল রঙ নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে সন্দিহান, সামনে পোশাকের ঐ AF উজ্জ্বলতা দেখে আমরা ভাবছি ন্যাংটো দাঁড়ানো ভাল ছিল। কথাটা আমার নয় আবার ইকবালের। ও বাল কি করে যে আমার আশেপাশে চলে আসে? ওকে গত ২-৩ দিন থেকে দেখলেই ভয় লাগে। ওর মধ্যে আমি তিনসুকীয়ার রাজা দাস দেখি! আমি যে কোনও মূল্যেই তিনসুকীয়াকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করব, কোনও চিহ্ন রাখবো না! 

এক বিশাল লম্বা ১৬ চাকার বিদেশী গাড়ির সামনে এনে আমাদের দাঁড় করানো হয়। নূপুর যা ভয় পাচ্ছিল সেরকম কিছু ঘটেনি। আমরা বেলগাম পৌঁছোবার ২৪ ঘন্টা আগেই আমাদের টীম লিডারের নির্দোষপনা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আমরা, নূপুরসহ ভয় উতরে, ১৬ চাকার বিস্ময়, এক লম্বা লেজওলা ট্রাকের লেজে আবার ২৫ টা ছেলে মালপত্রসহ বেশ ধরে গেলাম। গাড়িটা বিদেশী বলার কারণ- ইংরেজি অক্ষরের ঐ শীর্ষাসন আগে কক্ষনো দেখিনি! ওটা রাশিয়ান ছিল।

0 comments: