undefined
undefined
undefined
অণুগল্প - অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
Posted in অণুগল্প
অণুগল্প
স্বপ্নের আবির্ভাব
অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
"ডাউনে হাওড়া যাবার গাড়ী ৫ নম্বর প্লাটফর্মে আসছে।"
অ্যানাউন্স শুনে একটা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে আবির্ভাব। এমনিও দেরী হয়ে গেছে, তার ওপর ট্রেনটাও লেট...
অপেক্ষমাণ যাত্রীরা নড়াচড়া শুরু করেছে, হকাররা যে যার পজিশান নিচ্ছে এমন সময় হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল লোকাল ট্রেন। ভীড় তেমন নেই যাই হোক...উঠে পড়ল আবির্ভাব। সিটও পেয়ে গেল। বসেই কানে হেডফোন...দুপুর দেড়টায় বাজছে..."এখন অনেক রাত"...হঠাৎ চোখ পড়ল দুটো রো পেরিয়ে তিননম্বর রো'র জানলার ধারে, ট্রেনের হাওয়ায় বেসামাল চুল সামলাচ্ছে মেয়েটা, থুতনীর ওপরে একটা তিল। অনন্যতমা...আবির্ভাব নাম দিয়ে ফেলল মেয়েটার। এই স্বভাবটা ছোটো থেকেই আছে ওর, পাড়ার এক কাকুকে নাম দিয়েছিল দুধের ক্যান, মোটা গলার সহপাঠিনীর নাম দিয়েছিল গরু, এমন কত কি!!
"আমার বৃদ্ধবুকে তোমার মাথা, চেপে ধরে টলছি কেমন নেশায়", নেশাই বটে এত দূর থেকে অনন্যতমার চোখ দেখার চেষ্টা করছিল আবির্ভাব। দেখতে পেল কি না জানা নেই, তবে মেয়েটা বোধহয় বুঝল দূর থেকে কেউ মাপছে ওকে, মুখ তুলল সোজা আবির্ভাবের দিকে আবির্ভাবের ঠোঁটের কোণায় তখন হাসির আবির্ভাব।
এবার যা হল সেটা হল "এ বাদাম-চাল-ছোলা বাদাম!", "সবেই...দা সব...দা", "ভালো ভালো পেন গুলো লাগ্লে বলবেন", ইত্যাদি হকারের ভীড় এড়িয়ে ওরা দুজনেই একে ওপরকে দেখতে থাকল।
একের পর স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছে...হাওড়া আর খুব দূরে নেই... আবির্ভাব ভুলে গেল ওর তাড়া আছে। মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগল ট্রেনটা যেন লেট হয়, কিন্তু ঈশ্বর তো আর ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর নন যে, মানুষের জন্য প্রাণ কাঁদবে! অতএব যথাসময়ে আবির্ভাব, অনন্যতমা, আরও বাকি যাত্রীদের নিয়ে ট্রেন আবির্ভূত হল হাওড়া স্টেশনে।
একে একে সবাই নেমে যাচ্ছে, মেয়েটা কিন্তু এখনও দাঁড়িয়ে, আবির্ভাবের প্রত্যাশায় কী? জানা নেই... অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছে ওরা নিজেদের যায়গায়... মেয়েটা এবার দরজার দিকে এগিয়ে গেল, ঘাড় ঘুরিয়ে একবার আবির্ভাবের দিকে দেখেই নেমে গেল, আস্তে আস্তে মিশে গেল জনতার স্রোতে...
শুধু মাত্র লেট করে বলেই আবির্ভাবদের জীবনে আবহমানকাল থেকেই অনন্যতমারা এসেও চলে যায়... আবির্ভাব হেঁটে যাচ্ছে জনতার ভীড়ের শেষ সারিতে... অনন্যতমা এগিয়ে গেছে... অনন্যতমারা এগিয়ে যায়, এভাবেই।
0 comments: