1

মুক্তগদ্য - শর্মিষ্ঠা ঘোষ

Posted in


মুক্তগদ্য



ছাড়ছি না 
শর্মিষ্ঠা ঘোষ


এত স্মরণ থাকে মানুষের! মাইল মাইল পেছাতে পেছাতে মাপছি কি মারাত্মক এগিয়ে গেছি আমরা। আগে পিছে উপর নীচে ছাড়াতে ছাড়াতে ছড়াতে ছড়াতে হাতে তাও লেগে থাকছে চেনা চেনা গন্ধ, সে আমি রেগে গেলে কস্তুরি না বলে কাচড়াও বলতে পারি, কিন্তু সারসংক্ষেপ তো এটাই যে আমি ব্যর্থ প্রতিপন্ন হচ্ছি সানন্দে কলার তুলে। উরুম দুরুম বাকবিতণ্ডার পর ঘরটা থম মেরে গেলে সিগারেটের ধোঁয়া পায়ে পড়তে বাকি রাখে ‘আমায় নাও’ বলতে গিয়ে।

কে কি ভাবে দেখবে কোনও ঘটনা বা প্রতিক্রিয়া দেখাবে কোনও অভিঘাতে, নাকি আদৌ কিছু দেখবে না, শুনবে না, তা একান্তই তার ব্যক্তিস্বাধীনতা। কেউ যেমন এটা আশা করতে পারে না সব মানুষই একই রকমভাবে ‘উফ্’ বলবে চিমটি কাটলে, তেমনি এটাও নিশ্চয় করে বলা যায় না চিমটি খেয়ে সে মনে মনেই গজরাবে শুধু না উলটে আরেকটা চিমটি কাটার সাহস রাখবে। এটার কারণ একটা যদি হয় মানুষটির মানসিক গঠন, তবে আরেকটা কারণ অবশ্যই তার নিজস্ব লাভ লোকসানের হিসেব, আত্মমর্যাদা বোধের তীব্রতার তারতম্য এবং আত্মবিশ্বাস। ছোট ভাইবোন চিমটি কাটলে দাদা দিদি উলটে চিমটি না কাটলেও শাসন করে, শেখায় ছোটজনকে যে অকারণে কাউকে উত্যক্ত করতে নেই। এতে তার ভাই বোনের প্রতি ভালোবাসায় ঘাটতি পড়ে না। আমাদের তো রক্তসম্বন্ধ নয় যে, সব স্নেহ ক্ষমা বাৎসল্য দিয়ে নাড়ি টেনে রাখবে, মুক্ত হবার আনন্দে বগল বাজাতে গিয়ে কাঠি পড়ছে নিজের ভুয়োদর্শনের অহম সর্বস্ব ঢাকে, তার ঢ্যাম কুড়াকুড়ে লাজুকটি সেজে স্বীকার যাচ্ছি, ঝগড়া করার মানুষটিও কত দরকারী, এবেলা ওবেলা দেয়াল দরজা গাছ ফুল সক্কলে সম্মিলিত মনে করিয়ে দিচ্ছে, আমি কতটা আহাম্মক, বিবাদ বাদ দিতে গিয়ে বেঁচে থাকা বয়কট করতে বসেছি।

ভুল করে কিছু ফেলে যাচ্ছ কি? নাকি এ আবার ফিরে আসবার অছিলা? খুব যন্ত্রণামুখর কাটাকুটিতে তুমি বলে কেউ নেই। প্রতিটা খুন বা খুনের মত কিছু আমাকে একলা পেয়ে দাঁত বের করে হাসছে। তুমি এমনকি সেই অট্টহাস্যও শুনতে পাচ্ছনা। আমাকে বোঝাতে চাইছ আমার স্বভাবদোষে হ্যালুসিনেশান দেখছি। আসলে কোথাও কিস্যু ঘটছে না। কতকিছু নিষিদ্ধ চুপিসাড়ে করে ফেলি কেউ দেখছে না ভেবে। কত টুপি সুন্দর পরিয়ে দি নিজেরই হেরে যাওয়া মাথায়। তুমিও দিব্যি বিশ্বাস করে ফেল আমি সব সত্যি বলছি। আমি নই, ওরাই দূর্বৃত্ত। আমি হরিনাম ভজছিলাম যখন ওদের অনভ্যস্ত কান সেগুলোকে গালাগাল ভেবে চপার তুলে তেড়ে এসেছিল। তুমি শান্তিজল ছেটাচ্ছিলে যখন আমি ঝটিতি মাথা সরিয়ে নিয়েছিলাম। এই আগুন নিভাবো না, সন্তানের চিতার থেকে তুলে আনা অঙ্গার আঁচলে গিঁট দিয়ে রাখছি। তুমি ভেবেছ হরিলুটের বাতাসা? তা ভালোই, যে যেমন দেখতে চায়। হরি, হরি। আমাকে ক্রোধ দাও, বল দাও, শিড়দাঁড়া দাও, কথা দাও, চিৎকার দাও। এই আমি তোমার বরাভয়ের হাতখানা পাকড়াও করলাম, একটি অবিশ্বাস্য চড় মেরে আমাকে না কাঁদালে আরতো ছাড়ছি না। 





1 comment:

  1. শ্বাস্রোধকারী লেখা। অনবয়

    ReplyDelete