1

ধারাবাহিক - সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

Posted in


ধারাবাহিক



এক কিশোরীর রোজনামচা - ৬
সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়



Diary Entry - 3/A

20th. June, 1942, Saturday.

প্রিয় কিটী,

ঠিক করলাম, তোমায় চিঠি লেখা সোজা এবং সরাসরি আজ থেকেই শুরু করব। এই মুহূর্তে মা আর বাবা বাড়িতে নেই। আর মারগটও গেছে বন্ধুদের সাথে পিং-পং খেলতে। বাড়িটা তাই শান্ত আর নিরিবিলি।


বাড়িতে অ্যানির ডাইরি লেখার ও পড়াশুনা করার টেবিল 

আজকাল আমি প্রায়ই পিং-পং খেলি। আমার মনে হয় আমরা যারা পিং-পং খেলি, ও খেলতে ভালবাসি, তারা আইসক্রিম খেতেও ভালবাসি। অর্থাৎ পিং-পং খেললে, বোধহয় আইসক্রিমের প্রতি একটা স্বাভাবিক আসক্তি জন্মে। এই আসক্তিটা বিশেষকরে গরমকালে বেশী বোঝা যায়। তখন খেলতে খেলতে গরমে ঘেমে গেলে, খেলা শেষ করেই কাছাকাছি কোন আইসক্রিমের দোকানের দিকে ছুট লাগায়। আমরা যারা ইহুদি তাদের অবশ্য ডেলপি (Delphi) বা ওয়েসিস (Oasis) নামের দোকান দুটিতেই যাওয়ার অনুমতি আছে। এইজন্যই বোধহয় ইদানিং আমাদের হাতখরচ বেশ কিছুটা কম লাগছে। তাই আমরাও বেশী করে হাতখরচ সংগ্রহের চেষ্টাও ত্যাগ করেছি। সাধারণতঃ ওয়েসিস দোকানটা প্রায় সব সময়ই ক্রেতায় ভর্তি থাকে। আমরাও সেই সুযোগে আমাদের বড়সড় বন্ধু গোষ্ঠীর মধ্যে কোন না কোন সহৃদয় ভদ্রলোক বা ছেলে বন্ধুর সহানুভূতি কৌশলে আদায় করার চেষ্টা করি। আর তাদের সহানুভূতি পূর্ণ সহায়তায় আমরা বেশ কিছুটা আইসক্রিম তাদের কাছ থেকে জোগাড় করে নি। সময় সময় আমরা এতটা জোগাড় করি, যে সবটা সারা সপ্তাহ ধরে খেয়েও শেষ করতে পারি না। 

তুমি হয়তঃ আমার কথা শুনে আবাক হয়ে যাচ্ছ। কারণ আমি এই বয়সেই ছেলে বন্ধুর কথা বলছি। আশ্চর্যজনক হলেও, আসল কথা হল, আমাদের স্কুলে প্রায় কেউই সম্ভবতঃ এই ছেলে বন্ধুর ব্যাপারটা এড়িয়ে চলতে পারে না। যখনই কোন ছেলে স্কুলের শেষে তার বাইসাইকেল নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে বাড়ী পৌঁছে দেবে কি’না তৎক্ষণাৎ এক পক্ষ অপর পক্ষের সাথে কথা বলতে শুরু করে। এ’রকম দশটা ঘটনার মধ্যে ন’টার ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলেটা ডিগবাজি খেয়ে মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায় । তারপর থেকে ছেলেটি আর কিছুতেই সেই মেয়েটিকে (তার সম্ভাব্য দয়িতাকে) তার চোখের আড়ালে যেতে দেবে না। প্রথমে এ’রকম প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তারপর আস্তে আস্তে প্রাথমিক উত্তেজনা থিতু হয়ে আসে বা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এরপর মেয়েটি একটি তীব্র আকুল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, হাসতে হাসতে ছেলেটির সাইকেলে চেপে বসে। 

এ’রকমই একদিন ছেলেটি রাস্তায় আস্তে আস্তে আমাদের বিষয়টা নিয়ে আমার বাবার সাথে কথা বলার প্রস্তাব করে। তখন আমি কায়দা করে সাইকেলের হ্যান্ডেলটা একপাশে এমনভাবে ঘুরিয়ে নিই, যাতে তার সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝোলান আমার স্কুল ব্যাগটা রাস্তায় পড়ে যায়। আমার ব্যাগটা পড়ে গেলে, ছেলেটি বাধ্য হয় সাইকেল থেকে নেমে, আমার ব্যাগটা রাস্তা থেকে তুলে দিতে। এরই মধ্যে সুযোগ বুঝে আমি আমাদের মধ্যেকার ওই কথাটা ঘুরিয়ে, অন্য প্রসঙ্গের কথা বলতে শুরু করি। এইভাবে অন্তত সাময়িক ভাবে বাবার কাছে যাওয়ার সম্ভাবনাটাকে রোধ করা যায়। 

তবে এইসব ঘটনাগুলোকে খুবই সাধারণ আর নিরামিশগোছের ঘটনা বলতে পার। এদের মধ্যে এমনও আনেক ছেলে আছে, যারা আরও একটু সাহসী হয়ে, পছন্দের মেয়েটির দিকে চুমু পর্যন্ত ছুঁড়ে দেয়, কিংবা হয়তঃ মেয়েটির হাত ধরার চেষ্টা করে । আমার ক্ষেত্রে এ’রকম হলে, আমি সরাসরি তাদের বুঝিয়ে দিই যে তারা ভুল দরজায় ধাক্কা মারছে। এ’সব ক্ষেত্রে আমি নিশ্চিত ভাবে তাদের সাইকেল থেকে নেমে পড়ি এবং তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করি। অনেকসময় আমি প্রচণ্ড অপমানিত হওয়ার ভান করে তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিই যে আমি তার সঙ্গ থেকে নিস্কৃতি চাইছি। 

এইভাবেই স্কুলে আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তিগুলো তৈরী হয়।, আজ এপর্যন্ত, আরও কথা কাল হবে।

- তোমার অ্যানি 







1 comment:

  1. মনের সরল কথা গুলোর অকপট প্রকাশ অ্যানি লেখাকে আরও গ্রহণযগ্য করে তুলেছে

    ReplyDelete