প্রবন্ধঃ সুপ্রভাত লাহিড়ী
Posted in প্রবন্ধ
প্রবন্ধ
শঙ্খ ঘোষ
সুপ্রভাত লাহিড়ী
কবি শঙ্খ ঘোষ এক প্রচারবিমুখ, সহজাত বিনয়ী, কিছুটা আত্মমুখী সাহিত্যপিপাসু ব্যক্তিত্ব। যে কোনো রচনাকর্মে তাঁর নিষ্ঠা বিস্ময় জাগায়। ব্যবহারিক জীবন বা তাঁর সাহিত্যকর্ম দুই-ই বাঙ্ময়তা-বর্জিত। ধীর লয়ে তার বিস্তার ও প্রক্ষেপণ সহজেই পাঠককে আকর্ষণ করে। একদিকে বৃত্তিজীবন, অন্যদিকে সাহিত্যকর্ম, দুটি ক্ষেত্রেই তাঁর দায়বদ্ধতা তিনি পুরোপুরি স্বীকার করে নিয়েছেন। সন্মানিত হয়েছেন কবি এবং অধ্যাপক, এই দুই ভিন্ন সত্তায়।
শব্দচয়নে যত্নশীল। প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় ব্যবহৃত অতি সাধারণ কথাকেও তিনি কবিতায় দক্ষতার সংগে জুড়ে দিতে তিনি জানেন এইভাবে:
‘ছোটো হয়ে নেমে পড়ুন মশাই / সরু হয়ে নেমে পড়ুন মশাই / চোখ নেই? / চোখে দেখতে পান না? / সরু হয়ে যান, ছোটো হয়ে যান।’
‘আরো কত ছোটো ঈশ্বর / ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ালে / আমি কি নিত্য আমারও সমান / সদরে, বাজারে, আড়ালে?’
সহজাত প্রকাশভঙ্গিতে ভিড় বাসের কন্ডাকটরের এই কথন কবিতারূপে কী জীবনদর্শনই-না আমাদের উপহার দিলো! সদরে, বাজারে, সর্বত্র আমি তো নিজের চেয়েও ছোটো। নিজের মাপটুকু বজায় রাখতে পারছি কই!
কবি শখ ঘোষ মনে করেন কবিতায়(বিশেষ) মুহূর্ত বলে কোনো সুনির্দিষ্ট মুহূর্ত নেই। ব্যাপারটা পুরোপুরি আপেক্ষিক। কোনও অভিজ্ঞতা, অনুভব, ঘটনা একজন কবিকে যখন উজ্জীবিত করতে অক্ষম, তখন অন্য একজন লেখক সময়োচিত রচনাসৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ। তাই যে কোনো মুহূর্তই হতে পারে কবিতার মুহূর্ত। প্রসঙ্গক্রমে এটাই প্রযোজ্য যে, কবি সেই মূহুর্তে আর লিখতে পারছেন না, অথবা বা যা লিখছেন তা তাঁর মনঃপূত নয়। তবে অবচেতনের একটা ঢেউ কবির রচনার সহায়কের সঙ্গে চেতনা একটা মুহূর্ত - তখন তাঁর সমস্ত শরীর যেন দ্রব হয়ে আসছে, শরীরের মধ্যে জেগে উঠছে ঊর্মিমালার মতন একটা ছন্দ স্পন্দন, অদৃষ্ট-অলক্ষ ছন্দ-বিদ্যুৎ অথচ কোনও ভাবনা বা শব্দ দেহ নিয়ে আসেনি তখনও তাঁর চেতনায়। নিশ্চয়ই এই ‘rhythm, a dance a funny’ তাঁকে পাগল করে দেয় মুহূর্তের জন্য। কিন্তু সেই মুহূর্তের প্রতীক্ষায় বসে থাকে আজ দীর্ঘ প্রস্তুতিতে হৃদয় আর মেধায় সমন্বিত কোনো নির্যাস, ‘কেবলই মেধা নয়, কেবলই হৃদয় নয়’(শব্দ আর সত্য)
প্রচলিত আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় সাহিত্যের পণ্যে পরিণত হওয়া আজ সর্বজন অভিজ্ঞতা। কবি-সাহিত্যিকের কাছে পাঠকের যতই প্রত্যাশা থাকুক না কেন, এর থেকে মুক্তি পাওয়ার মতন অতিরিক্ত শক্তির ঘাটতিই এর মূল কারণ। এ ব্যাপারে শঙ্খ ঘোষ মনে করেন, ‘প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়া খারাপ নয়, কিন্তু কেউ যেন নিজে প্রতিষ্ঠান না হন।’
কবিতায় ‘আধুনিকতা’ নিয়ে শঙ্খ ঘোষের বক্তব্য পরিষ্কার এবং যথার্থই চিন্তার খোরাক যোগায়, ‘আধুনিক কবিতায় সময় পড়ে থাকে বাইরে, তার আধুনিকতা তাকে আত্মস্থ করে নেয়। সময়কে বাইরে থেকে ছুঁতে চান বলেই বিবৃতি ধর্ম বেড়ে যায় আধুনিকের রচনায়। আর সময়কে ভিতরে নিয়ে লেখা হয় বলে আধুনিকতার সংহতি থাকে টান-টান(‘কবিতা বিষয়ে আলোচনা’, সাক্ষাৎকার, ‘গাঙ্গেয় পত্র’)। আধুনিক কবিতার এই টান-টান সংহতি এবং প্রজ্ঞার প্রকাশের এক উদাহরণ:
‘শ্মশান থেকে শ্মশানে দেয় ছুঁড়ে তোমারই এক টুকরো-করা শরীর/দুঃসময়ে তখন তুমি জানো/হালকা নয়, জীবন বোনে জমির/তোমার কোনো ধর্ম নেই তখন/প্রহরজোড়া ত্রিতাল শুধু গাঁথা-/মদ খেয়ে তো মাতাল হতো সবাই।/কবিই শুধু নিজের জোরে মাতাল।’
তাঁর নিজস্ব কবিতা ভাবনা নিয়ে লেখা ‘ছন্দের বারান্দা’, ‘নিঃশব্দের তর্জনী’, ‘শব্দ আর সত্য’ গ্রন্থগুলিতে তিনি এমনভাবে প্রথাকে ভেঙেছেন, যা পাঠককে আকৃষ্ট করেছে তাঁর পরিমিত মাত্রাবোধ এবং ভুবনজোড়া দৃষ্টিভঙ্গির যথার্থতার কারণে। ‘কবি সবার মধ্যে লুকিয়ে থাকবে ভিড়ে ‘সকল’ সাজার মুখোশ নিয়ে... তাই মনে হয় লিখতে হবে নিঃশব্দে কবিতা এবং নিঃশব্দ কবিতা। শব্দই জানে সে কেমন করে নিঃশব্দ পায়। ঐশ সূত্র না ছিঁড়েও। তার জন্য বিষম ঝাঁপ দেবার চেয়ে কঠিন (‘নিঃশব্দের তর্জনী’)।’
একালের কবিতায় ছন্দ নিষ্প্রয়োজন - এই ধারণা অনেকেই পোষণ করেন। অথচ কবি শঙ্খ ঘোষের ছান্দিক সৃষ্টিও কম নয়। তাঁর রচিত দুটি প্রবন্ধ ‘মুক্তি ও ছন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ’ ও ‘স্বাভাবিক ছন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ’ শ্রী প্রবোধচন্দ্র সেন মহাশয়ের কাছে অভিনন্দিত হয়। কবি শঙ্খ ঘোষের সাহিত্যনিষ্ঠা এবং সৃজনধর্মের মিলনে রচিত হয়েছে ‘এ আমির আবরণ’, ‘কালের মাত্রা ও রবীন্দ্রনাটক’, ‘ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ।’
‘মূর্খ বড়ো সামাজিক নয়’ কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশকাল ১৯৭৪। নাম-কবিতা সহ প্রত্যেকটি কবিতাই সবিশেষ তাত্পর্যবহ। প্রত্যেকটি রচনাই পরস্পরের দিকে আঙুল তুলে তার গুণমান, মেধাস্পষ্টতার মূল্যায়নাকাঙ্খী নাম-কবিতার প্রতিটি লাইন যে কী পরিমাণ অর্থবহ তার প্রমাণ:
‘ঘরে ফিরে মনে হয় বড়ো বেশী কথা বলা হলো?/ চতুরতা, ক্লান্তি লাগে খুব?/ মনে হয় ফিরে এসে স্নান করে ধুপ জ্বেলে চুপ করে নীল কুঠিতে/ বসে থাকি?/ মনে হয় পিশাচ পোশাক খুলে পরে নিই/ মানবশরীর একবার?/ দ্রাবিত সময় ঘরে বয়ে আনে জলীয়তা তার/ ভেসে-ওঠা ভেলা জুড়ে অনন্ত শয়ান লাগে ভালো?/ যদি তাই লাগে তবে ফিরে এসো। চতুরতা যাও/ কী-বা আসে যায়।/ লোকে বলবে মূর্খ বড়ো; লোকে বলবে সামাজিক নয়।’
আবার অপর একটি কবিতায় সমকালীন ঘটনাকে কী ভাবে দায়িত্ব নিয়ে তুলে ধরেছেন দেখুন:
‘হে ধর্মাধিপতি তুমি যদি একবার এসে/ বলে দিয়ে যাও শুধু কত ধানে কত চাল হয়/ তাহলে হয়তো আরো কিছুদিন টিকে যেতে পারি/ ভারিক্কি গম্ভীর চালে হতে পারি বয়স্ক বাঁদর/এ কে ওকে ঝাপটা দিয়ে চলে যেতে পারি, ভেবে দেখো/ এ জীবন কেটে গেল কতখানি বোকাসোকা হয়ে/ চালাকবাবুরা তাই ফিরেও দেখে না জানে না যে/ কত লোক আছে যারা ঘুঘুও দেখে নি ফাঁদও না।’ (গ্রাম থেকে একজন)
বা...
‘নিচু গলায় কথা বলার অপরাধে তার/ যাবজ্জীবন/ কারাদন্ড হলো/ হামলে পড়ল তার ওপর তিনটে ভালুক/ ঠিক ভালুক নয় প্রহরী/ ঠিক প্রহরীও নয়, সত্যি বলতে, দণ্ডমুণ্ডের কর্তা।’ (দিনগুলি রাতগুলি)
‘হাতের কাছে ছিল হাতেম তাই/ চুড়োয় বসিয়েছি তাকে/ দু-হাত জোড় করে বলেছি ‘প্রভু’/ দিয়েছি খত দেখো নাকে/ এবার যদি চাও গলাও দেব/ দেখি না বরাতে যা থাকে-/ আমার বাঁচা মরা তোমারই হাতে/ স্মরণ রেখো বান্দাকে।’ (রাধাচূড়া)
যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজের এটাই প্রকৃত ছবি। বাহ্যিক পরিবর্তন যাই ঘটুক-না কেন।
‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’ কাব্যগ্রন্থটির রচনাকাল ১৯৮২-৮৩। আত্মপ্রচারধর্মী নাগরিক জীবনের ওষ্ঠাগত প্রাণের সময়োপযোগ পটভূমিকাই এই কাব্যগ্রন্থটির প্রতিটি কবিতার উপজীব্য বিষয়:
‘একটা দুটো সহজ কথা/ বলব ভাবি চোখের আড়ে/ জৌলশে তা ঝলসে ওঠে/ বিজ্ঞাপনে, রংবাহারে/.... বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া/ তোমার সংগে ওতপ্রোত/ নিওন আলোয় পণ্য হলো/ যা কিছু আজ ব্যক্তিগত।’ (মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে)
‘মন্ত্রীমশাই আসবেন আজ বিকেলবেলায়/ সকাল থেকে অনেক রকম বাদ্যি বাদন, পুলিশ বাহার/ আমরাও সব যে-যার মতো/ ঘাপটে আছি/ ঘর খোয়ানো পথের কোনা।/ মন্ত্রীমশাই আসবেন আজ। তাঁকে/ একটি কথা বলব আমি/ বলব যে এই যুক্তিটা খুব বুঝতে পারি/ সবাইকে পথ দেবার জন্যে কয়েকজনকে সরতে হবে/ তেমন-তেমন সময় এলে হয়তো আমায় মরতে হবে/ বুঝতে পারে।’ (মন্ত্রীমশাই)
এই কবিতায় সমকালীন রাষ্ট্র ও সমাজজীবনের প্রসঙ্গ এসেছে। রয়েছে সমস্যাজর্জরিত সমাজ, স্বার্থান্বেষী রাজনীতিকদের ব্যবহারিক জীবনের প্রতিফলন।
‘শবের উপর শামিয়ানা’-র প্রকাশকাল ১৯৯৬। পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে তাঁর দেশের বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়া গ্রাম ঘুরে আসার সেই নৈসর্গিক উপলব্ধি, যার সংগে মিশ্রিত হয়েছে পনেরো ও পঁয়ষট্টি বয়সের অভিজ্ঞতা - এই মেলবন্ধনই যেন কাব্যগ্রন্থটির অন্য মাত্রা এনে দেয়। ছবির মতন ভেসে ওঠে পূর্ববঙ্গের গ্রাম-নদী-আকাশ-গাছপালা আর গ্রামীণ জীবন:
‘এর কোনও শেষ নেই, এ আবাদে, এই জলাভূমি/ এই রাত দু-প্রহরের ঢল, এই বানভাসি ভোর/ উদোম কিশোর আর কিশোরীর মাথা গোঁজা পাঁকে/ এই গেঁথে থাকা, এই করুণায় দুহাত বাড়ানো/...... ঠোঁটে লেগে থাকে রস, বুকের উপরে চলা চাকা/ চাকার উপরে শব, শবের উপরে শামিয়ানা-/ এর কোনও শেষ নেই মাথায় কুয়াশা মাখা ভোরে/ দেশের ভিতরে বন্দী দেশও ঘুমায় অকাতরে।’
শহুরে জীবনের সচ্ছল জীবনযাপন থেকে ফিরে গিয়ে সরল স্বচ্ছ গ্রাম্যজীবনে নিজেকে মিলিয়ে দিয়ে ফিরে দেখা, মিলিয়ে লেখা এবং তার বর্ণময় প্রকাশ - এ কবির একান্তই নিজস্ব ঘরানা।
বাংলা ভাষায় বিশ্বকবিতা সংকলন ‘সপ্তসিন্ধু দশ দিগন্ত’। অনেকের সংগে তাঁরও অনূদিত এগারোটি কবিতা এই সংকলনকে সমৃদ্ধ করেছে।
কবি শঙ্খ ঘোষ কিছু মানুষজনকে নিয়ে এক সংকলনের(সামান্য অসামান্য) মুখবন্ধে লিখছেন:
‘এঁরা সকলেই কোনও না কোনও লেখার কাজের সংগে জড়িত ছিলেন বা আছেন, কেউ প্রত্যক্ষে কেউ-বা পরোক্ষে, কেউ সামান্য বা অসামান্য। এখানে আছে তাঁদের নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা, তাঁদের কাছাকাছি থাকবার কিছু স্মৃতি। তাই, এক হিসাবে এই বই হয়তো এক রকমের আত্মকথাই। বা, আত্মসুত্রে অন্যের কথা।’
উপরোক্ত মুখবন্ধের উল্লেখ নির্দ্বিধায় যে মাত্রায় কবির পরিচিতি বহন করে, তা হলো সর্বজনে একাত্ম হবার সুচারু প্রবণতা। জীবনের চলার পথে, কি সংসারে, কি বাইরে, সর্বস্তরের মানুষকে আপন করে চিনে নেবার মতন অনুভূতির প্রকাশ, এই বইয়ের বিভিন্ন লেখায় ভিন্ন আঙ্গিকে বিদ্যমান। কিছু উদাহরণ:
‘আশি বছর বয়সের এক দেবর এসে বসেছেন সাতাশি বছরের শয্যাগত বৌদির শিয়রে কিংবা পায়ের কাছে, অনেকক্ষণ ধরে সযত্নে টিপে দিছেন মাথা কিংবা পা, অনেক অনেক দূর থেকে এসে মাঝে মাঝে গুনগুনিয়ে বলছেন একটা-দুটো পুরোনো দিনের কথা, রোগজীর্ন বৌদির ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠছে অল্প একটু হাসি। উঠে যাবেন তারপর।.....বয়স বেড়ে যায়, পায়ে হেঁটে ঘুরবার শক্তি যায় কমে। বৌদি বা দাদারা একে একে চলে যান সবাই। চিরকুমার মানুষটির চেনা জগত্টা শূন্য হতে থাকে।’ (একজন যত্সামান্য মানুষ)
‘দাদার মতো দাদা’ রচনায়... ‘হাসির চোখে কথা। হাসি দিয়ে দেখবার কথা। সহ্যের অতীত জীবনটাকে একটা কৌতুকের কোণ থেকে দেখতেও বেশ মজাই পেত দাদা।...হাসি দিয়েই ফুলশয্যার রাত্রে দাদা ভয় পাইয়ে দিয়েছিল বৌদিকে। বলেছিল; ‘‘আমাদের বাড়ির নিয়ম হলো বিয়ের পর পরই যেতেই হবে কাশ্মীরে’। একেবারে কাশ্মীরে? স্কুলে অতদিনের ছুটি পাওয়া যাবে না ভেবে বৌদি বেশ বিপন্ন।....সেই হাসি দিয়ে যার শুরু হয়েছিল, ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে বৌদির মৃত্যুর সাতদিন আগে স্ট্রেচারে শুইয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাবার রাত্রে হাহকারে ভেঙে পড়া এক কান্নায় শেষ হলো সেই বৃত্ত।’ এ যেন আমার-আপনার দৈনন্দিন জীবনের কথকথা। যা অহরহ ঘটে চলেছে। আর এই ঘটনার ঘনঘটা কার মনে কতখানি ক্ষত সৃষ্টি করে, তা শুধুমাত্র অনুভূত হয় তাঁর প্রকাশ ভঙ্গিমায়। এই গ্রন্থে কিছু নামীদামী ব্যক্তির সম্বন্ধেও লেখা আছে। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা ‘সুভাষদাকে নিয়ে পথ চলা’ যেন এক প্রামাণ্য দলিল। আছে নির্বাচিত কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কথা। সূচনাটা এই রকমের:
‘১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে পড়ন্ত এক দুপুরবেলায় প্রথম দেখেছিলাম সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে। সেই প্রথম দেখাতেই তাঁর সংগে অনেকটা পথ হাঁটবার যে সুযোগ মিলেছিল সেদিন, পায়ের ক্ষতিতে অশক্ত হয়ে পড়বার আগে পর্যন্ত অব্যাহত ছিল সেটা। এত দীর্ঘকাল জুড়ে কত যে পথ হেঁটেছি তাঁর সঙ্গে, কত যে বলবার কথা, শুনবার অবাধ অবকাশ। সাহিত্য জগতে আমার মেলামেশা খুব অল্পই, বড়োদের সংগে তো একেবারেই কম। সেই অর্থে আমার পক্ষে সুভাষদার সান্নিধ্য ছিল এক ব্যতিক্রম, আনন্দময় ছিল সে অভিজ্ঞতা, সহজের নিঃশ্বাস ছিল তাতে।’
একজন সৎ সার্থক শিল্পীর মতোই প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যেই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর নিত্য গতিময় ছন্দ এবং নিয়ত রূপান্তরের চিহ্ন।
তিনিই একজন প্রকৃত মানুষ যিনি সবসময়েই ব্যক্তিনিরপেক্ষ, রাজনৈতিক বিশ্বাসনিরপেক্ষ। যে সমস্ত পঞ্চাশের আত্মোপলব্ধি কবি সত্তরের দশকে এসে দেশের সামাজিক বাতাবরণকে অনাবৃত করেছেন, শঙ্খ ঘোষ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
‘প্রবন্ধের কাছে অনেক পাঠকের একটা সুনির্দিষ্ট দাবি তৈরি হয়ে যায় সংগত ভাবেই সেখানে তাঁরা আলোচনা শুনতে চান বিস্তারে আর বিশ্লেষে।’(শব্দ আর সত্য)। বর্তমান প্রবন্ধটি সেই পাঠকদের ব্যাহত করবে কারণ, শঙ্খ ঘোষের ভিন্নমুখী প্রতিভার প্রকাশ এই স্বল্প পরিসরে এবং নিশ্চয়ই স্বল্পজ্ঞানে সম্ভব নয়। এ শুধু তাঁর সাহিত্যসাগরের একমুঠো মণিমাণিক্যের মূল্যায়ন এবং তাই নিয়েই প্রতিবেদকের এই ধৃষ্টতা।
ভালো লাগলো বেশ!
ReplyDeleteভালো লাগে নি ।
ReplyDelete