অণুগল্পঃ মৌসুমী ঘোষ দাস
Posted in অণুগল্প
অণুগল্প
ফিরে দেখা
মৌসুমী ঘোষ দাস
বিকেল বেলা মালতি পুকুরঘাট থেকে গা ধুয়ে বাড়ি ফেরার সময় পথে প্রতিমা বৌদির সঙ্গে দেখা। মালতি জিজ্ঞেস করলো, “বৌদি, রুদ্রদা কখন এসেছে গো?”
রুদ্র প্রতিমার দেওর। পুরুলিয়ায় একটি ডেকোরেটর সংস্থায় কাজ করে। মালতি মনে মনে রুদ্রকে চায়, সে কথা প্রতিমা জানে। তবে রুদ্রও যে মালতিকে পছন্দ করে সে খবর কিন্তু প্রতিমার জানা নেই। তবে রুদ্রকে নিয়ে মালতির এই ন্যাকাপনা প্রতিমা একদম সহ্য করতে পারে না। তাই সে ঝাঁঝিয়ে উত্তর দিলো,“এখন আসবে কি? ঠাকুরপো আসবে সেই বড় দিনের ছুটিতে।’’
“সেকি? দুপুরে যখন ঘাটে বসে বাসন মাজছিলাম তখন যে পুকুর ঘাটের নিমতলায় রুদ্রদাকে দেখলাম দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে! আমি ঘাটের এপার থেকে বললাম, ‘কখন এসেছো?’ আমার কথা বোধহয় শুনতে পায়নি, তাই কোনও কথার উত্তর দিল না। বলো না গো বউদি, রুদ্রদা কখন এসেছে? কদিন থাকবে গো?”
রুদ্রকে নিয়ে মালতির এই আদিখ্যেতায় প্রতিমার গা জ্বলে গেলো।
“বললাম যে আসেনি, বড়দিনের ছুটিতে আসবে। যত সব ঢঙ!”বলে প্রতিমা হনহনিয়ে চলে গেলো।
সন্ধ্যেবেলা কুয়াশায় মোড়া বিদ্যুৎহীন গ্রাম আলোকিত হল লরির হেডলাইটের জোরালো আলোতে। একটা লরি এসে দাঁড়ালো প্রতিমাদের বাড়ির সামনে। গ্রামের লোক এসে ভিড় জমালো সেখানে। মালতিও ছুটতে ছুটতে এলো। দেখে, রুদ্র এসেছে। তবে জীবিত নয়, মৃত। তিন ভাঁজে ভাঁজ করা প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে রাখা হয়েছে দেহটা, যাতে পচা গন্ধ না ছড়ায়। তবুও প্লাস্টিকের মোড়ক ভেদ করে পচা গন্ধ আর সঙ্গে ধুপকাঠির উগ্র গন্ধ মিলে মিশে সারা গ্রামের সঙ্গে সঙ্গে মালতির মনটাও ভারী করে তুললো।
সঙ্গে আসা পুলিশ কর্মীটি জানালো, গতকাল দুপুরে কাজ করতে গিয়ে ইলেকট্রিক শক লেগে রুদ্রর মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে ওর পরিচয় জানা যাচ্ছিল না, পরে পরিচয় জানতে পেরে পরিজনদের কাছে দেহ নিয়ে আসা হয়েছে।
মালতি বিস্ময়ে বাক রুদ্ধ হয়ে গেল। এ কি করে সম্ভব? আজ দুপুরে যে, সে নিজের চোখে পুকুরঘাটে রুদ্রকে দেখেছে! তবে? সে কে ছিল? রুদ্রর আত্মা? মৃত্যুর পর আত্মা তার প্রিয়জনদের কাছে একটি বারের জন্য আসে, বা নিকটজনকে একটি বার দেখা দেয়, একথা কি তবে সত্যি? রুদ্র কি তাই আজ দুপুরে শেষবারের মত মালতিকে কিছুক্ষণের জন্য এসে দেখা দিয়ে গেছে?”
0 comments: