undefined
undefined
undefined
ধারাবাহিক - প্রিয়াংকা চ্যাটার্জী
Posted in ধারাবাহিক
পর্ব-৩
তক্ষশীলা অভিযানের পরবর্তী অধ্যায় :
দারুকের অপসারণের পর কুমার তক্ষশীলা শাসন করতে থাকেন। ইতিমধ্যে তার মনে সেই আশ্রয়দাত্রী পঞ্চদশ বর্ষীয়া কন্যা মহাদেবী, এক বিশেষ স্থান নিয়েছে। তার শান্ত স্নিগ্ধ রূপ বড় মনলোভা। দেরী না করে কন্যার পাণিপ্রার্থী হয়ে তার পিতাকে মনের ভাব ব্যক্ত করেছেন কুমার। কন্যার পিতাও আনন্দিত। কন্যার মৃদু হাসি ব্যক্ত করেছে, এ বিবাহে তার অসম্মতি নেই। বিবাহ সম্পন্ন হয় জাঁকজমকের সাথেই।
সেদিন সকাল থেকেই ব্যস্ততা। কুমার যাবেন মৃগয়াতে। কিন্তু প্রস্থানের আগে খবর আসে তক্ষশীলার উত্তর দিকের গ্রামে দস্যুরা লুটপাট করছে। সহদেব বললেন
---কুমার আমি যাচ্ছি উত্তরে। আপনি মৃগয়াতেই যান।
আশ্চর্যজনক ভাবেই কুমারের হাতের মঙ্গলময় ধাগা হারিয়ে গেল, অনেক খুঁজেও পাওয়া গেল না। জলপূর্ণ মঙ্গলঘট গেল উল্টে। মহাদেবীর মন বড় ব্যাকুল। এ যে অশুভ!
অশুভ লক্ষণ দেখা দিলেও, কুমার সেগুলিকে অগ্রাহ্য করে অল্প কিছু সৈন্যসহযোগে মৃগয়া গেলেন।
মৃগয়া কালীন প্রথম দিবসে বনের গভীরে প্রবেশ করেন তারা। বড় গভীর অরণ্য। দারুক স্থানীয়, তাই এই বিষয়ে সে অভিজ্ঞ। ঘন জঙ্গল, কোনো কোনো স্থান সূর্যালোকের অভাবে অন্ধকার। দ্বিতীয় দিনে অকস্মাৎ কিছু সৈন্য অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেদিন কুমার, দারুক ও গুটি কয়েক সৈন্য মিলে ধাওয়া করেন এক হরিণের পেছনে। হরিণটির পেছনে যেতে যেতে অরণ্যের গভীরে, বেশ দূরে এসে পড়েন কুমার। ক্ষীণস্রোতা এক নদী, সামনেই এক পাথরের মন্দির।
এদিকে সহদেব উত্তরের গ্রামে উপস্থিত হয়ে দেখেন কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনাবলী ঘটেছে। ঠিক এই সময়, তার পত্রবাহক আসে। কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তির পত্র, পড়ে তার মুখ অতিশয় গম্ভীর হয়ে ওঠে। সেনানিধানকে ঐ স্থানের দায়িত্ব দিয়ে তিনি নির্গত হন, বিশেষ কার্যে। সহদেবের ভ্রূকুটি ব্যক্ত করে জটিল কোনো সমস্যা।
সহদেব গোপন বার্তা পায়, কুমারের সমূহ বিপদ। সহদেবের পিতা রাধাগুপ্তই কুমারের সুরক্ষা জন্য তাঁকে পাঠিয়ে ছিলেন। সময়ে না উপস্থিত হলে ঘটবে অনর্থ। সমস্ত কিছু যেন জটিল এক চক্রান্ত। সহদেব দ্রুতবেগে এগিয়ে যান।
মৃগয়ায় হরিণের পেছনে ধাবমান কুমার ক্ষুধায় তৃষ্ণায় ক্লান্ত । তৃষ্ণা নিবারণ করে কুমার কৌতুহলবশতঃ ঐ পাথরের মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেলেন। দেখেই মনে হয় শতাব্দী প্রাচীণ এক স্থাপত্য। মন্দিরে প্রবেশ করে দেখেন এক ভীষণদর্শনা কালীমূর্তি। সেদিন ঘোর অমাবস্যা। মন্দিরমধ্যে এক সুমিষ্ট সুবাস, আচ্ছন্ন করে তোলে কুমারের মনকে। কিছুপরেই কুমারের মাথা ঝিমঝিম করতে লাগে এবং তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ধীরে ধীরে জ্ঞান ফেরে কুমারের। অনুভব করলেন তার হাত পা বাঁধা। যখন চক্ষু মেলে চাইলেন, দেখলেন একখণ্ড পাথরের উপরে তিনি শুয়ে আছেন। কালোবস্ত্র পরে কেউ বিড়বিড় করছে। পুঞ্জীভূত সেই অন্ধকার কুমারের মনকে যেন আচ্ছন্ন করছে। ঘোর কেটে ধীরে ধীরে আলোকবিন্দুর উদ্দেশ্যে লক্ষ্য করতেই চমকে দেখেন --দারুক! সে এক অদ্ভূত সুরে গুনগুন করে চলেছে, একমনে মন্ত্রপাঠ করছে কি দুর্বোধ্য ভাষায়। ভয়ে কুমারের অন্তস্থল অবধি কেঁপে ওঠে। ঐ পুঞ্জীভূত অন্ধকার হতে সৃষ্টি হয় এক অপরূপা রমণীর , সম্পূর্ণ নগ্ন তিনি। ওনার আবির্ভাবের সাথেই চারিদিক তীব্র কটু গন্ধে ভরে উঠল। দারুক নতমস্তকে তাঁকে প্রণাম করে, তার কনিষ্ঠাঙ্গুলিতে একটি অঙ্গুরীয় পরিয়ে দেন। তিনি বললেন
--অঙ্গুরীয় আমার, কিন্তু তুই কেন আমাকে আহ্বান করলি?
-- প্রতিশোধ মাতা! চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ধননন্দকে হত্যা করে মগজের সিংহাসন অধিকার করেন। আমি সেই ধননন্দের পুত্র। চন্দ্রগুপ্ত মগধ আক্রমণ করেন যখন, আমার মাতা তক্ষশীলায় ছিলেন। ধননন্দকে হত্যার পর মাতা এই নগরীর এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে লুকিয়ে থাকেন। সেখানেই জন্ম দেয় এক পুত্র সন্তানের। সেই ব্রাহ্মণ ছিলেন এই মন্দিরের পূজারী। বাল্যকালে আমিও এসেছি মন্দিরে সেখানেই সন্ধান পাই এক প্রাচীন পুঁথির। অনেক পরিশ্রম করে সেখান থেকে সন্ধান পাই এই দুষ্প্রাপ্য অঙ্গুরীয়র। মৌর্য বংশের নাশ আমার লক্ষ্য মাতা, ঐ সিংহাসন আমার। কুমারের আত্মাকে আমি উৎসর্গ করেছি মাতা। প্রসাদ গ্রহণ করুন।
রমণী ধীরে ধীরে কুমারের দিকেই অগ্রসর হতে লাগলেন। দুর্গন্ধ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেল। সেই কামিনী কুমারের শরীরকে স্পর্শ করা মাত্র কুমার অনুভব করলেন, কি শীতল সে স্পর্শ। ভীষণ পরিচিত এই মুখ। মনে পড়ে স্বপ্নে দেখেছিলেন এই মোহময়ীকে। সেই রমণী কুমারের উপরে উপবেশন করেন। মোহাবিষ্ট হয়ে কুমার তাকিয়ে রইলেন। তারপর সর্পের মত কুমারকে জড়িয়ে ধরলে আসতে আসতে আবার চেতনাহীন হয়ে পড়ে কুমার।
সহদেব মৃগয়াস্থলে এসে জানতে পারেন, কুমার এখনো ফিরে আসেন নি। শঙ্কাকুল চিত্তে গহন অরণ্য মধ্যে পথের সন্ধান করতে করতে, সহদেব উপস্থিত হয় সেই পাথরের মন্দিরের সামনে। তিলেকমাত্র সময় নষ্ট না করে মন্দিরের ভেতরে উপস্থিত হয় সহদেব, সেই ঝিমধরা গন্ধ পাওয়া মাত্রই মুখমধ্যে বস্ত্র খণ্ড বাঁধে, এই গন্ধ তার চেনা। সংজ্ঞাহীন করতে এক বিশেষ জড়িবুটি ব্যবহার করা হয়। ধুনোর সাথে দহন করলে চেতনার বিলুপ্তি ঘটে। কালীমাতার মূর্তির ঠিক পিছনে একটি কক্ষ। অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে কক্ষ, মশাল জ্বলছে, খাঁড়া হাতে দাঁড়িয়ে আছে দারুক, মুখে পৈশাচিক হাসি। সহদেব দারুকের পেছনে থাকায় দারুক তাকে দেখতে পায়নি। তরোয়াল নিয়ে তিলার্ধ সময় নষ্ট না করে ধড় হতে মুন্ড নামিয়ে দিল সহদেব। মুহুর্তের দেরী হলে কুমারকে হারাতে হত চিরতরে। কুমার তখনো চেতনাহীন।
দারুন!!! ভাই, দারুন!!!
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deleteটানটান উত্তেজনা নিয়ে এগোচ্ছে পুরো গল্পটা... বেশ ইন্টারেস্টিং গল্প...
ReplyDelete