2

প্রবন্ধ - পল্লববরন পাল

Posted in

প্রবন্ধ


সুভাষ, ‘যত দূরেই যাই’ ও আমরা
পল্লববরন পাল



এক

স্টাইলটা কুড়ি বছর পুরনো
মেড্‌-ইন-মুম্বাইয়ের চেয়ে ঢের পুরনো,
দু’হাজার বছর ধরে নাগাড়
সুপারডুপার হিট নায়কের পেটেন্ট নেওয়া
সিক্সপ্যাক উলিডুলি মেষশাবক স্টাইলে
(মুম্বাইমার্কা কোমর ভাঙা ঝিংচ্যাক ছ’টা বাজতে পাঁচ নয়,
রীতিমতো খালি গা মেরুদণ্ড টানটান, ঋজু)
দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত
শুয়েছিলো টেবিলের ওপর
সুভাষ মুখুজ্জের ‘যত দূরেই যাই’ – ১৯৬২
ত্রিবেণী প্রকাশন, দুই শ্যামাচরণ দে স্ট্রীট, কলকাতা বারো
উৎসর্গ – বন্ধু অশোক ঘোষকে
সাতান্ন পাতার বই - আটাশটা কবিতা
মলাটে পূর্ণেন্দু পত্রী – দাম তিন টাকা

যদিও দু’হাজার বছর বয়সী
সেই ছোকরা স্টারের কথা মনে হলেই
যে চার লাইন পেরেক ঠোকে
আজীবন
আমার মগজের ক্রুশকাঠে,
সেটা ১৯৬৬-তে প্রকাশিত ‘কাল মধুমাস’এর
খোলা দরজার ফ্রেমে –
ল্যাম্পপোস্টে ফাঁসি যাচ্ছে দেখ,
ল্যাম্পপোস্টে
দেখ, ফাঁসি যাচ্ছে
পুরোনো বিজ্ঞপ্তির ছেঁড়া চাটাই
ফাঁসিতে লটকে থাকা নয়
শুধু যাওয়া
তীব্র এক গতি
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি 
আমাদের ডালভাতচচ্চড়ি বাঙালি স্মৃতিতে 
ক্ষুদিরাম দীনেশ গুপ্ত আর ওনার পরে
সেই প্রথম
সেই প্রথম অন্য কেউ, মানে অন্য কিছু ... মানে
এ ম্যাঁ –
শেষোব্দি ছেঁড়া চাটাই?
ঈশ্‌শ্‌

সে যাই হোক,
আসলে টেবিলের ওপর খালি চায়ের কাপের পাশে
‘যত দূরেই যাই’ খুলে রেখে
বাজারের ব্যাগ হাতে উঠে গিয়েছিলেন বাবা
ঠিক উল্টোদিকে খোলা পাতায়
ইস্কুলের হোমটাস্ক করাবেন বলে 
ভাঙনধরা অজয়নদীর বাঁকে
বাড়ির দাওয়ায় বেত হাতে রাগীরাগী কুমুদ মল্লিক,
কিন্তু গোঁফগজা বয়সের নিষিদ্ধ আকর্ষণে
কৌতূহলী ঘাড় রাজহাঁসের মতো বাড়িয়ে দেখি
উরিস্যাবাশ!
সামনের বইয়ের পৃষ্ঠায় আরও এক
পরমাসুন্দরী নদী
পায়ে তার ঘুঙুর বাঁধা
পরনে
উড়ু-উড়ু ঢেউয়ের
নীল ঘাগরা

সে নদীর দু’দিকে দুটো মুখ।

এক মুখে সে আমাকে আসছি ব’লে
দাঁড় করিয়ে রেখে
অন্য মুখে
ছুটতে ছুটতে চলে গেল। - [যেতে যেতে]

ব্যাস, এক ঝটকায়
ঝুলি উপচানো রূপকথার ব্যাঙ্গমা জলে 
মুহূর্তে ধুয়ে মুছে সাফ
অজয়, কুমুদ, রাঢ় বাঙলা, হোমটাস্কের টেবিল
আমার হাপ্প্যান্ট-ইশকুল
আমি যত দূরেই যাই
আমার সঙ্গে যায়
ঢেউয়ের মালা-গাঁথা
এক নদীর নাম –
আমি যত দূরেই যাই

আমার চোখের পাতায় লেগে থাকে
নিকোনো উঠোনে
সারি সারি
লক্ষ্মীর পা... - [যত দূরেই যাই]
নদীর সেই ‘আসছি’মুখে
লক্ষ্মীছেলের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই 
কার্ণিশ টপকে
পাঁচিল ডিঙিয়ে
একমুখ থেকে অন্যমুখ
উৎস থেকে মোহনা
বড়ো হয়ে যেতে যেতে
তারপর সেই রাজকন্যা
আমার আঙুলে আঙুল জড়ালো।
আমি তাকে আস্তে আস্তে বললাম -
তুমি আশা,
তুমি আমার জীবন।
গোঁফদাড়ি বীর্যপাতে গোবেচারী অভিজ্ঞতা -
সেই রাক্ষুসিই আমাকে খেলো - [যেতে যেতে]


দুই

ছোটোবেলায় ধোপাদের কাপড়কাচার শব্দ শুনতেন তিনি বাড়ির পিছনে, তাঁর কানে লেগে ছিল সেই তাল, আর ছিল লোকমুখের স্পন্দের উপর ভর করার সাহস, কথার চালগুলি ভালো করে লক্ষ করবার ইচ্ছে। ভেবেছিলেন, লিখতে হবে ঠিক তেমন করে, যেমনভাবে কথাবার্তা বলে লোকে, ছন্দকে তুলে আনতে হবে কেবল সেইখান থেকে। আর, ঠিক সেখান থেকে তুলতে পেরেছেন বলেই বাংলা অক্ষরবৃত্তে একটা স্বাভাবিক বাচন তৈরি হয়ে গেছে তাঁরই কবিতার পথ ধরে।’ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবি হয়ে ওঠার প্রস্তুতিপর্ব শুনিয়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ, কুড়ি বছর আগে তাঁর সময়ের জলছবিতে।বহরমপুরে এক সন্ধ্যার অন্ধকারে পথ হাঁটতে হাঁটতে সুভাষ আর শঙ্খ কথা বলছিলেন। অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মাত্রারীতিতে তিনি যে প্রায় বৈপ্লবিক এক বদল এনে দিয়েছেন, তা নিয়ে সুভাষ উত্তর দিচ্ছিলেন শঙ্খের প্রশ্নের, বলছিলেন, বিশ্লেষণ করা ছন্দজ্ঞানের দরকার হয় না কবির, দরকার হয় কেবল বোধময় ছন্দজ্ঞানের।

[কলকাতার কড়চা - আনন্দবাজার পত্রিকা - ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮]

বাঁদিকের বুক-পকেটটা সামলাতে সামলাতে
হায়-হায়
লোকটার ইহকাল পরকাল গেল।

অথচ
আর একটু নীচে
হাত দিলেই সে পেত
আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ
তার হৃদয়

লোকটা জানলই না। -[লোকটা জানলই না]

‘যত দূরেই যাই’ রচনাকাল সাতান্ন থেকে ষাট -
সুভাষের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ।
এর আগে পদাতিকোত্তর
আটচল্লিশে ‘অগ্নিকোণ’ আর পঞ্চাশে ‘চিরকুট’।
মাঝখানের দীর্ঘ সাত-আট বছর

[যদিও এর মাঝখানে সাতান্নয় ‘ফুল ফুটুক’]
একসাথে হুমড়ি খেয়ে পড়লো এই গ্রন্থে।
কেমন ছিলো সেই পটভূমি?

পঞ্চাশের নভেম্বরে জেল থেকে বেরিয়ে
গভীর আর্থিক সংকট।

একান্নয় ‘পরিচয়’ – দ্বৈত অর্থে -
পত্রিকা ও গীতা
সম্পাদনা ও বিয়ে।

“বিয়ে বলতে কোন অনুষ্ঠান নয়, রেজিস্ট্রি। তখন সবে একটা নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বুক ওয়ার্ল্ড’-এ এডিটর হিসাবে হাফ চাকরী পেয়েছি। ৭৫ টাকা মাইনে। ধুতির ওপর বন্ধু রামকৃষ্ণর কাছ থেকে ধার করা একটা ডোরাকাটা সার্ট চড়িয়ে বিকেলে ছুটির পর হাঁটতে হাঁটতে সোজা চলে গিয়েছিলাম রেজিস্ট্রি আপিসে। সে রাত্রে বাড়ি ফিরিনি। ইউরোপ থেকে গীতা সদ্য দেশে ফিরে চৌরঙ্গীটেরাসে কুড়ি টাকায় চার তলায় একটা সিঁড়ির ঘর ভাড়া নিয়েছিল। তাতে ছিল শুধু একটা তক্তপোশ ফেলার জায়গা...”।

বিয়ে সম্পর্কে গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা –

“তারপর যেতে যেতে, যেতে যেতে এক কবির সঙ্গে দেখা। সেই কবির দুদিকে দুটো মুখ। এক মুখে কবিতা, অন্য মুখে মিছিলের শ্লোগান। সেই শ্লোগানের সুর ধরে ধরে মিছিল থেকে কবিকে পাকড়ানো গেল। কেননা, সত্যি বলতে কী, কবিতার দিকের মুখটা – যারা জানে তারাই জানে – একেবারে বদ্ধ উন্মাদের এবং কোনো চিকিৎসা নেই।”

পার্টির নির্দেশে বাহান্নয় বজবজ।
চটকল সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে
ব্যাঞ্জনহোড়িয়া গ্রামের এঁদো পুকুরপাড়ে
কুঁড়েঘরের ছেঁড়া ছাদের ফাঁকে আটকে থাকা
যেন মধুচাঁদের আলোয়
আস্তিন গুটিয়ে শুরু যৌথলড়াই - 

“সকালে চটকলের মজুরদের বোনাসের দাবিতে গেট মিটিং-এ সামিল, দুপুরে মেয়েদের নিরক্ষরতা দূর করতে সাজ্জাদার বাড়িতে দাওয়ায় মাদুর পাতা স্কুলে পড়ানো, বিকেলে পোল্ট্রি তৈরী করার তোড়জোড়।... চটকলে গেটমিটিং এ গেলাম। সুভাষ টেবিল বইছে, আমি চেয়ার। কিন্তু মজুর নেতারা এসব ছোটো কাজে হাত দেন না। শুধু ‘বোনাস চাই, বোনাস চাই!’ বলে লম্বা বক্তৃতা দেন।”

চুয়ান্নয় পুনর্মূষিক – ফের কলকাতা।
যাপনভঙ্গিতে যুক্ত হলো
বজবজের গদ্য অভিজ্ঞতা –
গদ্য লিখছেন একে একে
আমার বাঙলা(১৯৫১), ভূতের বেগার(১৯৫৩),
কত ক্ষুধা(১৯৫৩), যখন যেখানে(১৯৬০)।
মাঝখানে নিজস্ব কবিতার বই ফুল ফুটুক(১৯৫৭)।

কবিতাকে ভাঙতে শুরু করলেন
উন্মাদ পদাতিক
নতুন আঙ্গিকের অন্বেষণে –
অনুবাদ করছেন নাজিম হিকমতের কবিতা(১৯৫২) থেকে
নিকোলা ভাপ্‌ৎসারভ – দিন আসবে(১৯৬১) –
এই সময়ের সুভাষ প্রসঙ্গে
কবি-সমালোচক তরুণ স্যান্যাল –

সেতারের মা-পা তারে হৃদয়ের অসীম যেমন বেজে ওঠে, যা অনন্তের সঙ্গে সীমাবদ্ধ শব্দের সম্পর্ক রচনা করে, সেই আসল পরম, মানুষের সেই অনন্তকে অর্জন করেছিলেন সুভাষ বজবজে। পঞ্চাশের দশকের একেবারে গোড়ায়। ভাবছিলেন কবিতার কী গড়ন হবে, গড়ন দিলেন নাজিম হিকমতের কবিতা – নিজের মতো করে। বাবরালির চোখের আকাশ দেখে দেখে বাংলা কবিতাকে সুভাষ তখন খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছেন সালোমানের হাত ধরে। 

এই সালোমান বাবরালিরা
সুভাষের বজবজের সহযোদ্ধা।
চটকলের কাঁধেকাঁধ মজুরভাই -
অমরত্ব পেয়েছেন বিভিন্ন সময়ে
সুভাষের কবিতায় –
সে নিয়ে কথা হবে
অন্য কোথা অন্য কোনোখানে। 
এ তো গেলো কাঁধ ছুঁয়ে থাকা ঘরেলু ইতিহাস।
কিন্তু কবির তো সীমান্ত-কাঁটাতার নেই
আর সুভাষ তো আপামাথা আন্তর্জাতিক।

উনপঞ্চাশের চীন বিপ্লব
পাঁচের দশকে বাহান্নর ভাষা
তিপ্পান্নয় স্তালিনের মৃত্যু ও ক্রুশ্চভের উত্থান
পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে সাজাতে
ভবিষ্যৎ কথা বলছে, শোনো,
ক্রুশ্চভের গলায়।

নির্বিবাদে নয়, বিনা গৃহযুদ্ধে
এ মাটিতে
সমাজতন্ত্র দখল নেবে। [মুখুজ্জের সঙ্গে আলাপ]
‘যত দূরেই যাই’এর প্রেক্ষাপট
ঊনষাটের খাদ্য আন্দোলন অবধি বিস্তৃত –

কলকাতা সেই থেকে মুঠো-শ্লোগান
কলকাতা সেই থেকে মিছিলপথ
গুলি মৃত্যু ধর্মঘট প্রতিবাদ
রাস্তায় সারিবদ্ধ লাঠির শরশয্যা,
দু-নলের অনলে দুমদাম
মুখাগ্নি;
তারপর কাঁদুনে গ্যাসের মতো
ধোঁয়ার কালো গাড়ি
আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে...

হাতে হাতে ফিরছে একটা ফর্দ –
নিহতের
আহতের
নিখোঁজের। -[গণনা]

এই যে একটামাত্র শব্দকে
একটা আস্ত লাইন বিস্তৃতি ও সম্মান দেওয়া -
টানা গদ্যে লিখতে লিখতে
কোনো একটি শব্দকে উল্টো কমায় বাঁধা
বা বোল্ড হরফ নয়,
তার চেয়েও বড়ো
অনেক
এক একটা শব্দের পাশে অসংখ্য অদৃশ্য শব্দ
একটা মৃত্যুর পাশে নীরব আরো অনেক মৃত্যু

তাদের সংরক্ষণ

সেইসব হতদরিদ্র উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন
জানলায় বসা চড়াইটার ডানায় হঠাৎ
অসীম আকাশ বেঁধে দেওয়া

শরীর পেয়ে গেলো নব্য বাঙলা কবিতা
যে লড়াকু জীবনের ছবি আঁকতে চাইছিলেন সুভাষ
ঠিক সেই রকমই
মেদহীন
টানটান ধারালো
গদ্যময়
ঘামবৃষ্টিস্নাত 


তিন

এবং
এমনই এর তীব্র নেশা ও আকর্ষণ,
টানা গদ্যে কবি সুভাষকে লেখা অসম্ভব
মানে সুভাষের কবিতাপাঠের আসল আনন্দটাই মাটি -
তাই এই সুভাষিত স্টাইলেই আমার গঙ্গাপুজো।
গঙ্গা বলতেই মনে পড়লো
পশ্চিমের আকাশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে
যেন কোনো দুর্ধর্ষ ডাকাতের মতো
রাস্তার মানুষদের চোখ রাঙাতে রাঙাতে
নিজের ডেরায় ফিরে গেল

সুর্য। - [ দিনান্তে]
গোধূলিকে এভাবে এর আগে আর কেউ এঁকেছেন কি?
বা আঁকতে পেরেছেন কি?
চতুর্থ ও পঞ্চম লাইনের
মাঝখানের ব্যবধানটা লক্ষ্য করুন
একটু বিরতি ও
স্পেস
গঙ্গার বহমানতা, ডাকাতের চোখ রাঙানি বা
ডেরায় ফেরার জন্য এক দুই তিন পা ফেলা
ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক নিস্তব্ধতা
এবং সর্বোপরি
একটা আস্ত লাইন জুড়ে একটা শব্দ
যেন পর্দায় মহানায়কের এন্ট্রি

এইভাবে কবিতায় চিত্রনাট্য রচনা
সম্ভবত বাঙলা কবিতায় অভিনব ও প্রথম।

জগদীশ ভট্টাচার্য লিখেছেন –
‘যত দূরেই যাই’- গ্রন্থে কবি সুভাষের তৃতীয় জন্ম। শিল্পী হিসাবে এটি তাঁর নবতর অভ্যুদয়-দিগন্তের ইশারা বহন করে এনেছে। সুভাষের কবিভাষায় গদ্য যে কখন বিশুদ্ধ পদ্যের প্রাণধর্ম লাভ করে তা যেন স্পষ্ট বুঝতে পারা যায়না। ধ্বনিকারদের ভাষায় তাঁর গদ্যে পদ্যধর্মের এই অভিব্যঞ্জনা অসংলক্ষ্যক্রম। মিতভাষণ সুভাষের স্বভাবধর্ম। ‘যত দূরেই যাই’ গ্রন্থে তাঁর এই পরিশীলিত কলাকৃতি যেন চারুশীলনের উচ্চশিখরে আরোহণ করেছে।

সেই থেকে সুভাষ মুখুজ্জে
আমাদের প্রজন্মের কাছে
উৎস থেকে মোহনা আর
মোহনা থেকে উৎসে
অনন্ত অনর্গল সন্ধান সফর –
কী সন্ধান, তাও কি ছাই জানি তখন?
সেই থেকে আমাদের বয়ঃসন্ধির
রক্তের রঙ লাল 
সেই থেকে আমাদের পিঠ-ব্যাগে
লী ফকের বেতালের সঙ্গে মার্ক্সের পুঁজির গলাগলি 
সেই থেকে
পৃথিবীতে গাঁক গাঁক করে ফিরছে
যে দাঁত-খিঁচোনো ভয়,
আমি তার গায়ের চামড়াটা
খুলে নিতে চাই।
সেই থেকে
হে বিষাদ,
হাতের কাছ থেকে সরে যাও
আগাছাগুলো নিড়োতে হবে। - [পায়ে পায়ে]
আগুনের ওপরে দড়ি বেয়ে হেঁটে যাওয়া সেই টলমল সময়
যখন এ বাঙলায় শাসকের মুখোমুখি
আস্তিনখোলা যুদ্ধে জয়স্বপ্নে উত্তাল শোষিতের দল
আর ও বাঙলায় নিপীড়িতরা
পশ্চিম থেকে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনবে বলে
হাঁটুতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছে
সমস্ত জড় স্থবিরতাগুলো চোখের সামনে জলজ্যান্ত হয়ে উঠছে
এক একটা চিত্রকল্প চামড়ায় কাঁটা বাগিয়ে
রোজ রোজ আমাদের সজারু করে তুলছে –
... বাড়িগুলোর গায়ে
চাবুক মারছে বিদ্যুৎ
... গাছগুলোকে চুলের মুঠি ধরে
মাটিতে ফেলে দিতে চাইছে হাওয়া
... বন্ধ জানলায় নখ আঁচড়াচ্ছে
হিংস্র বৃষ্টি। - [দূর থেকে দেখো]

দাঁড়ানো মানুষগুলোকে বগলদাবা করে
তুলে নিয়ে
বেলা দশটার ট্রাম
ঝুলতে ঝুলতে চলে গেল। - [পোড়া শহরে]

উদাহরণ এ বইয়ের সর্বত্র

মুড়ি মুড়কি
আলোগুলোকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে
দরজা দেবার শব্দে
এখুনি ঘর অন্ধকার করবে
এই শহর। - [কে জাগে]

মাথায় লাঠির বাড়ি খেয়ে পড়ে যাওয়া
গাঁয়ের হাড়-জিরজিরে বুড়োর মতো
রাস্তাটা
একদৃষ্টে তার মুখের দিকে চেয়ে রয়েছে - - [রাস্তার লোক]
তালিকা ল্যাম্পপোস্টের ছায়ার মতো
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েই চলেছে
কিছুতেই হাত টেনে ধরতে পারছিনা
...দরজায় পিঠ দিয়ে বাইরে গভীর রাত ...
চোখে রেখেছিল হাত টেবিলের বাতিদান - [ছাপ]

... ছেলেটা বই নিয়ে বসল মাদুরে
সামনে ইতিহাসের পাতা খোলা - ...
বাপের–আদরে-মাথা-খাওয়া ছেলের মতো
হিজিবিজি অক্ষরগুলো একগুঁয়ে
অবাধ্য –
যতক্ষণ পুজোর জামা কেনা না হচ্ছে
নড়বে না। - [কেন এল না]
এক সে বঢ়কর এক -
চিত্রকল্পের এই নাগরিক ম্যাজিকের
ভুরি ভুরি উদাহরণ
পৃথিবীটা যেন রাস্তার খেঁকি-কুকুরের মতো
পোকার জ্বালায়
নিজের ল্যাজ কামড়ে ধ’রে
কেবলি পাক খাচ্ছে;
আর একটা প্রকাণ্ড ফাঁকা প’ড়ো বাড়িতে
তার বিকট আর্তনাদই হল
জীবন - [পা রাখার জায়গা]

পশ্চিমের সব জানলাই
হাট করে খোলা।

গরাদের এপারে দেখো –
কয়েদির ডোরাকাটা পোশাকে
এক টুকরো রোদ
মেঝেতে মাথা ঠেকিয়ে
হাঁটু মুড়ে
যেন মগরেবের নমাজ পড়ছে। - [বারুদের মতো] 

কাকে বাদ দিই?
গোটা বইটাই টুকে দিতে ইচ্ছে করছে
আসলে
অবনঠাকুর ছবি লিখতেন
আর সুভাষ মুখুজ্জে কবিতা আঁকতেন
‘যত দূরেই যাই’ সেই জয়যাত্রার শুভমহরৎ

সেই থেকে সুভাষ মুখুজ্জে
বাঙলার অকালপক্ক লালবাদী উন্মাদ কৈশোরের
দিগদর্শক
স্বপ্নমলাট
সিংহকেশর
একচ্ছত্র উত্তমকুমার


চার

যত দূরেই যাই ১৯৬৪তে পেলো
সাহিত্য আকাদেমির স্বীকৃতি। 
সাতান্ন পাতার বই 
সাতান্ন হাজার পাতা টানা গদ্য লিখলেও
গলা শুকিয়ে কাঠ
তেষ্টা তীব্রতর 
প্রিয় নারীসঙ্গমের পরে যেমন

মনে হয় –

আরও কত দূরে পূর্ণতা?

এই গ্রন্থে কবিভাবনা গল্পরূপের রূপক ও রূপকথার মিশ্রশিল্প দিয়ে গড়া। তাতে ব্যক্তিচৈতন্যের সাধারণীকৃতি সহজতর হয়েছে। কিন্তু মিতভাষণে যাঁর সহজসিদ্ধি, তাঁর পক্ষে গল্পকবিতা লেখার যে বিপদ দেখা দিতে পারে, সেই বিপদ দেখা দিয়েছে কোনো কোনো দীর্ঘ-কবিতায়। ‘পা রাখার জায়গা’, ‘মেজাজ’, ‘ফলশ্রুতি’ প্রভৃতি কবিতা রসোত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অতিকথন দোষদুষ্ট। [জগদীশ ভট্টাচার্য]

ভাপ্‌ৎসারভের অনুবাদ করতে গিয়ে
[দিন আসবে – ১৯৬১]
একাধিক কবিতার শরীরে গল্প বুনেছেন।
হয়তো হাত পাকানো সেখানেই।
‘যত দূরেই যাই’য়ে এরপর অসংখ্য - 

অমনি একটি কবিতা ‘পাথরের ফুল’। মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু উপলক্ষে লেখা। রবিন্দ্রনাথের তিরোধানে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘বাইশে শ্রাবণ’ কবিতাটি এই প্রসঙ্গে মনে পড়বে। দুটি কবিতার শিল্পরীতির মধ্যে একটা অলক্ষ্য যোগ কোথায় যেন রয়েছে। দুটিই অসামান্য কবিতা। [জগদীশ ভট্টাচার্য]

ফুলকে দিয়ে
মানুষ বড় বেশি মিথ্যে বলায় বলেই
ফুলের ওপর কোনোদিনই আমার টান নেই।
তার চেয়ে আমার পছন্দ
আগুনের ফুলকি-
যা দিয়ে কোনোদিন কারো মুখোশ হয় না। -[পাথরের ফুল]

সত্যি বলছি, বিশ্বাস করুন –
এই কবিতা পড়ার পরদিন থেকে
রমণীয় আগুনের ফুলকি
আমাকে ফুলের সমস্ত ব্যথা রাতারাতি ভুলিয়ে ছেড়েছে,
আমার বয়সী অর্থাৎ
ছয়দশকে স্কুল বা কলেজপড়া
আস্ত একটা জাতকে
এই কবি
টেনে এনেছেন অমোঘ বামপন্থী সমাধানে –
[পৃথিবীতে আর কোনো কবি এযাবৎ পেরেছেন কি?]
সেই থেকে আমি
ফুলবিরোধী
মুখোশহীন
একটা গোটা প্রজন্ম।
এখুনি
রক্তে রক্তে শোনা যাবে
জলদগম্ভীর মহাকালের হাঁক
‘কে জাগে?’

ভালোবাসার গা থেকে
ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে
তারস্বরে সগর্বে বলে উঠব
‘আমরা’।। -[কে জাগে]

গল্পকবিতার আরো ভুরি ভুরি জনপ্রিয় উদাহরণ আছে এ বইয়ে
‘রাস্তার লোক’ আর ‘কেন এল না’ পরপর দুটি –
কী সব অভিনব বিষয় –
মাথা উঁচু করে হাটতে চাওয়া একটি লোক
ও একটি রাস্তা –
সামনে পা ফেলতে গিয়ে
লোকটা হঠাৎ
শিউরে পিছিয়ে এল।
ইস্‌, আরেকটু হলেই সে মাড়িয়ে দিয়েছিল
মায়ের কোল-ছেঁড়া
একটা দুধের বাচ্চাকে।

তারপর ভালো ক’রে তাকিয়ে বুঝল
আসলে তার মনেরই ভুল;
আজ অন্তত –
এ রাস্তার কোথাও
কোনো লাশ
পড়ে নেই।
যে কোনো পাঠক পড়তে পড়তে
ঐ লোকটির
শরীরে ও সময়ে
মিশে যাবেন অজান্তেই।

... ব’লে গেল
মাইনে নিয়ে সকাল-সকাল ফিরবে।
পুজোর যা কেনাকাটা
এইবেলা সেরে ফেলতে হবে।

ব’লে গেল।
সেই মানুষ এখনও এল না।

কড়ার গায়ে খুন্তিটা
আজ একটু বেশি রকম নড়ছে।
ফ্যান গালতে গিয়ে
পা-টা পুড়ে গেল। ...
খুব ছোটোছোটো এক্কেবারে আটপৌরে
খেটে খাওয়া নুন আনতে পান্তা ফুরনো জীবনের
হাড়হিম করা ছবি আঁকতে আঁকতে
লম্ফের আলোয় ইয়াব্বড়ো ছায়া
কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে চললো
‘কেন এল না’র গল্প -
একটু এগিয়ে দেখবে ব’লে
ছেলেটা রাস্তায় পা দিল।
মোড়ে ভিড়;
একটা কালো গাড়ি;
আর খুব বাজি ফুটছে। ...

তারপর অনেক রাত্তিরে
বারুদের গন্ধে-ভরা রাস্তা দিয়ে
অনেক অলিগলি ঘুরে
মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে ...
[‘রাত্তির’ শব্দটা লক্ষ্য করুন –
এই পরিবারের দৈনন্দিন জীবনে
কোথাও কোনো 
‘রাত্রি’র জ্যোৎস্না-টোৎস্না নেই
বরং আছে তেলকুপির কম্পমান
হাঁউমাঁউখাঁউ ছায়াময় অনেক বড়ো
ভয়ের
খিদের
‘রাত্তির’]

কবিতার শেষটুকু বলে দিয়ে অপরাধী হতে চাইনা।
অবশ্য এ কবিতা পড়েনি,
এ বাঙলায় এমন কেউ আর...
আছে? সত্যি অবিশ্বাস্য! 
যারা পড়েননি,
তারা এখনও কেন বেঁচে আছেন? ছিঃ!

পরপর তিনটি –
‘পা রাখার জায়গা’, ‘মেজাজ’ ও ‘ফলশ্রুতি’।

প্রথম ও তৃতীয়টিতে সেই নাগরিক পথচলতি চিত্রকাব্য,
দুটো ছোট্টো উদাহরণের লোভ সামলাতে পারছিনা
ছোকরার আক্কেল দেখে এক বুড়ো
ছানি-কাটা চোখের চশমাটা তার মুখের গোড়ায়
দূরবীনের মতো করে ধরে,
ডান হাতের লাঠিটা মাটি ছেড়ে ঈষৎ তুলে,
মুখ বুঁজে নাকের দুটো বড় ফুটো দিয়ে
আর হাতের লাঠিটা দিয়ে খুব জোরে
‘হুঃ’ আর ‘ঠকাস’
এই দুটো শব্দ বার ক’রে
যেদিক থেকে উজিয়ে এসেছিল সেই দিকেই ফের
চলে গেল। - [পা রাখার জায়গা]

বাসগুলো মোড় নিত হুমহাম শব্দে;
তাদের বন্ধ খাঁচায় গর্‌র্‌ গর্‌র্‌ করত
ছোট ছোট বাঘের বাচ্চা,
ট্রামগুলো চলে গেলেই
তারের খেলা দেখাতে দেখাতে যেত
ছুরিতে শান দেবার একটানা হিসহিস শব্দ।
ফুটপাথের কোলের কাছে কোথাও
তৃষ্ণার জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ত খাদে –
সামনে একটা থাম থাকায় দেখা যেত না। -[ফলশ্রুতি]
এর মধ্যে যদি কেউ ‘অতিকথন’এর অসুখ খুঁজে পান
দুঃখিত, আমি তাঁর সুস্থ কবিতাবোধ নিয়ে 
ভরপুর সংশয়ে আছি।
আর চিত্রকাব্যের এই সুক্ষ্ম কারুকার্য বিস্তারে কারুর কি
‘পথের পাঁচালী’ ‘মহানগর’ ‘পরশপাথর’-দের মনে পড়ছে?
সে প্রসঙ্গে বলি – বজবজ থেকে ফেরার পর কিন্তু
পাঁচের দশকের শেষ থেকে বেশ কিছুকাল 
সত্যজিতের সঙ্গে যৌথ সম্পাদনা করেছেন
‘সন্দেশ’ পত্রিকার।
কে কার দ্বারা সমৃদ্ধ, কে জানে?

‘মেজাজ’?
সে তো ইতিহাস! 
থলির ভেতর হাত ঢেকে শাশুড়ির বিড়বিড়
আর কালো বউয়ের গটগট
দু’জনের পারস্পরিক আটপৌরে ঠোকাঠুকি
শেষ অবধি পৌঁছতে পারে
কোথায়, কোন উচ্চতায় -
শাশুড়ি-বৌমা নিয়ে ইদানিং
টিভিসিরিয়ালে হুড়োহুড়ি মারামারি –
এনারা কেউ কি ‘মেজাজ’ পড়েছেন?
বউ বলছে – ‘একটা সুখবর আছে’।
পরের কথাগুলো এত আস্তে যে শোনা গেল না।
খানিক পরে চকাস চকাস শব্দ,
মা হয়ে আর দাঁড়াতে লজ্জা করছিল।
কিন্তু তদন্তটা শেষ হওয়া দরকার –
বউয়ের গলা, মা কান খাড়া করলেন।
বলছে – ‘দেখো, ঠিক আমার মতো কালো হবে’।
এরপর একটা ঠাস ক’রে শব্দ হওয়া উচিৎ।
ওমা, ...
নাঃ, এটাও এরপর আর বলা যাবেনা।
যারা পড়েছেন, তাদের দাড়ি-কমা অবধি মুখস্থ
কাজেই বাকিটা স্মৃতি থেকে পড়ে নিন।
আর বাকিরা? দেরি করবেন না,
আর নতুন করে পড়ার ধৃষ্টতা না দেখিয়ে বরং
সোজা চুল্লিতে ঢুকুন।

আরে! মুখুজ্জে মশাই যে! নমস্কার, কী খবর?
আর এই লেখা-টেখা সংসার-টংসার এই নিয়েই ব্যস্ত।
তা বেশ। কিন্তু দেখো মুখুজ্জে, ...
এই শুরু।
‘মুখুজ্জের সঙ্গে আলাপ’।
কেউ একজন চায়ের দোকানে ডেকে নিয়ে গিয়ে
মুখুজ্জেকে বলছেন
নিতান্ত সাদামাটা গদ্যে – নিছকই আড্ডাধোঁয়া ভঙ্গি
...তার চেয়ে এসো, চেয়ারটা টেনে নিয়ে
জানলায় পা তুলে বসি।
এক কাপ চায়ে আর কতটা সময়ই বা যাবে?

দেশলাই? আছে।
ফুঃ, এখনও সেই চারমিনারেই রয়ে গেলে।
তোমার কপালে আর ক’রে খাওয়া হল না দেখছি
বুঝলে মুখুজ্জে, জীবনে কিছুই কিছু নয়
যদি কৃতকার্য না হলে।
নিপুণ হাতের ইঞ্জেকশনের মতো
কখন যেন অজান্তে ছুঁচ ঢুকে গেছে ভিতরে।
সিধেসাদা গদ্য সংহত হচ্ছে গম্ভীর ব্যাঞ্জনায় –
কে যেন ‘অতিকথন’এর অভিযোগ করেছিলেন,

দেখুন তো পরের ক’লাইন –

আকাশে গুড়গুড় করছে মেঘ –
ঢালবে।
কিন্তু খুব ভয়ের কিছু নেই;
যুদ্ধ না হওয়ার দিকে।
আমাদের মুঠোয় আকাশ;
চাঁদ হাতে এসে যাবে।
এর চেয়ে আর কত সংক্ষিপ্ত হবে?
ছ’লাইনেই তো সব কথাই বলা হয়ে গেলো
এবার তো শুধু বিস্তার -
ধ্বংসের চেয়ে সৃষ্টির,
অন্ধকারের চেয়ে আলোর দিকেই
পাল্লা ভারী হচ্ছে।
ঘৃণার হাত মুচড়ে দিচ্ছে ভালবাসা।
পৃথিবীর ঘর আলো ক’রে-
দেখো, আফ্রিকার কোলে
সাত রাজার ধন এক মাণিক
স্বাধীনতা।...

আড্ডার গোল-গোল নিরামিশ শব্দগুলো
কিছু বুঝে ওঠার আগেই শাণিত ছুরির মতো
লকলক করে উঠলো -
ধনতন্ত্রের বাঁচবার একটাই পথ
আত্মহত্যা।
দড়ি আর কলসি মজুত
এখন শুধু জলে ঝাঁপ দিলেই হয়। ...
রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে আপনি
একমত না হতেই পারেন, কিন্তু
মেটাফর? কিকরে পাশ কাটাবেন?
কী সহজ বিশ্লেষণ আমাদের এই সমাজের?
যার হাত আছে তার কাজ নেই,
যার কাজ আছে তার ভাত নেই,
আর যার ভাত আছে তার হাত নেই। ...

গদিতে ওঠবস করাচ্ছে
টাকার থলি।
বন্ধ মুখগুলো খুলে দিতে হবে
হাতে হাতে ঝনঝন ক’রে ফিরুক।
বুঝলে মুখুজ্জে, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না
আড় হয়ে লাগতে হবে।

এ এক অদ্ভুত সময়, কবি।
সারা পৃথিবী জুড়ে যখন
একসূত্রে সংহত হচ্ছে দুর্বিনীত মৌলবাদ।
ধ্বংস হচ্ছে বামিয়ান ব্যাবিলন সহ
মানুষের সমস্ত সুন্দর সম্ভ্রান্ত ইতিহাস।
মানুষের বোধ থেকে বিদায় নিয়েছে বিবেক
শিক্ষা বা মননে নয়
অর্থের অঙ্কে শ্রেণী নির্ধারণ হচ্ছে মানুষের।
মিথ্যার সন্ত্রাস ক্রমশ জিতে যাচ্ছে সব যুদ্ধে
ভেঙে নুয়ে পড়ছে
সভ্যতার সুস্থ শিরদাঁড়া
আগুনের আঁচ নিভে আসছে
তাকে খুঁচিয়ে গনগনে ক’রে তোলো।
উঁচু থেকে যদি না হয়
নীচে থেকে করো।

সহযোদ্ধার প্রতি যে ভালবাসা একদিন ছিল
আবার তাকে ফিরিয়ে আনো;
যে চক্রান্ত
ভেতর থেকে আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে
তাকে নখের ডগায় রেখে
পট্‌ ক’রে একটা শব্দ তোলো।।

দরজা খুলে দাও,
লোকে ভেতরে আসুক।

মুখুজ্জে, তুমি লেখো।।
সুস্থ সভ্যতার স্বার্থে
নিপীড়িত মানুষের স্বার্থে
মুক্তির লড়াইয়ের স্বার্থে

মুখুজ্জে, তুমি আবার লেখো 

2 comments:

  1. হ্যাঁ; কে আছে যে বাবা ও ছেলের ঘরে ফেরা-না-ফেরার কবিতাটির শেষটুকু জানেন না ? বা মুখুজ্জের সংগে আলাপচারিতা?অন্ততঃ আমার প্রজন্মের?
    আমার একটাই অনুযোগ বর্তমান প্রাবন্ধিকের কাছে-- 'ছেলে গেছে বনে' কেন বাদ গেল? আর 'এই ভাই' কাব্যে নিপুণ শিল্পসিদ্ধি ও চিন্তার ক্লান্তি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারই অপরাধ - সত্যি, এতোদিন পরে আপনার মন্তব্যটা পড়লাম! ছিঃ।
      উত্তরে জানাই, এই প্রবন্ধটা নিতান্তই 'যত দূরেই যাই' কাব্যগ্রন্থ নিয়ে লেখা। সেই সূত্রে কবি সুভাষের জীবনের জড়িত অংশের উল্লেখটুকু আছে। 'ফুল ফুটুক' নিয়ে সদ্য একটা প্রবন্ধ লিখেছি।'ছেলে গেছে বনে' 'এই ভাই' নিয়েও লেখার ইচ্ছে আছে। দেখি।
      ভালো থাকবেন। pallabbaran@yahoo.com

      Delete