0

গল্প - সৌম্য ব্যানার্জী

Posted in

গল্প


নৈনং ছিন্দন্তি
সৌম্য ব্যানার্জী


একটা কাজে ভারতীয় জাদুঘরে গেছিলাম আগের শনিবার। কাজ হয়ে যাওয়ার পর ভাবলাম একটু ঘুরে দেখি। অনেকদিন দেখা হয়নি। ওমা! দেখি, অস্ত্রশস্ত্রের বিভাগটা পার্মানেন্টলি বন্ধ হয়ে গেছে! ক্ষুণ্ণ মনে ফিরে এলাম।

প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র আমাকে চিরকাল আকর্ষণ করে। সেই কথাই অমৃতদাকে বলছিলাম। জাদুঘরে যা এককালে দেখেছি, সেই সব তলোয়ার, বর্শা, কুঠার তুলতেই আমার মতন লোকের যাকে বলে ইয়ে হয়ে যাবে। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শারীরিক ক্ষমতা যে কমছে, সেটা জেনেটিক্সের দৌলতে এখন প্রমাণিত সত্য। যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ হয়নি। কিন্তু এখনকার যুদ্ধে মানুষের শরীরের ভূমিকা নগণ্য। এখন যার অস্ত্র যত বেশি স্বয়ংক্রিয়, সে তত বড় যোদ্ধা।

ছোটবেলায় মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি মিউজিয়মে মুর্শিদ কুলি খাঁর কুমীর-পিটিয়ে-মারা বাঁশ দেখেছি। সে বাঁশ তুলতে এখন কম করেও চার-পাঁচ জন সমর্থ পুরুষ লাগে। মাইসোর প্যালেসে টিপু সুলতানের অভিশপ্ত তলোয়ারও দেখেছি। একদা জনপ্রিয় একটি টিভি সিরিয়ালে টিপুর নাম ভূমিকায় যিনি অভিনয় করতেন, শুনেছি সেই অভিনেতার নাকি সে তলোয়ার হাতে নিয়ে একেকটি শট দেওয়ার পর ফিজিওথেরাপি লাগতো! জাদুঘরগুলোতে যে সব বর্ম বা শিরস্ত্রাণ দেখা যায়, সে সব পরে যুদ্ধ করা তো দূরের কথা, দু’পা চলতেই হুমড়ি খেয়ে পড়বে এখনকার অনেক বাঘা বাঘা ব্যায়ামবীর।

কিন্তু ভারতবর্ষের ইতিহাসের নিরিখে এসবও নেহাতই হালের কথা। আর যদি ইতিহাসের গণ্ডী পেরিয়ে পুরাণ-মহাকাব্যের যুগে ঢুকে পড়া যায়, তাহলে ওই রামায়ণ-মহাভারতের অস্ত্রগুলো, মানে অর্জুনের গাণ্ডীব, ভীমের গদা, কৃষ্ণের চক্র... সেসব যে কিরকম জিনিস ছিলো, ভগবানই জানেন!

অমৃতদা জানলেও জানতে পারে, এরকম একটা সন্দেহ আমার ছিলো। ওকে মাঝে মাঝে ওই যুগের মানুষ বলেই মনে হয়। ইতিহাসের দুঁদে অধ্যাপক। সংস্কৃত সাহিত্যেও অবাধ বিচরণ। বিপজ্জনক রকমের পণ্ডিত।বছর আষ্টেক আগে কর্মসূত্রে আমার সঙ্গে পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা। এমনিতে স্নব, দুর্মুখ বলে কুখ্যাত লোকটা কি কারণে যেন আমাকে খানিকটা প্রশ্রয় দেয়। আমিও ওর গল্প আর বিচিত্র থিয়োরিগুলো শোনার জন্য কিছুটা ওর খামখেয়ালিপনা সহ্য করি। তাই সেদিন ওর ড্রয়িং রূমে বসে কফি খেতে খেতে কথাটা ওকে জিজ্ঞেসই করে ফেললাম। বিশেষ করে কৃষ্ণের সুদর্শন চক্রের কথা। চক্র জিনিসটা আক্ষরিক অর্থে কেষ্টবিষ্টুর ছবি বা মূর্তি ছাড়া আর কোনও দেবতার হাতে কখনও দেখিনি। শত্রুকে ঘায়েল করে সেটা নাকি আবার ক্ষেপণকারীর হাতে ফিরে আসতো। অস্ট্রেলীয় উপজাতিদের ব্যুমেরাং-এর মতন নাকি...?

‘‘না।’’ অমৃতদা গম্ভীর গলায় আমায় থামিয়ে দিলো। ‘‘ব্যুমেরাং দ্যাখোনি কখনও?’’

‘‘দেখেছি তো... একটু ছড়ানো এল-এর মতন দেখতে।’’

‘‘হুঁ। সেটা কখনও টার্গেট হিট করে ফিরে আসতে পারে বলে মনে হয়?’’

‘‘না। তবে ফস্কালে ফিরে আসে বলে শুনেছি। চক্র কি তবে...?’’

‘‘হ্যাঁ। শত্রুর শিরঃচ্ছেদ করে ফিরে আসতো। ফেরতা ক্যাচ নেওয়াটাই ছিলো আসল বাহাদুরি।’’

‘‘কট আ্যান্ড বোওল্ড!’’ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো!

কিন্তু অমৃতদার চোখের কোণে একটু হাসির আভাস দেখলাম। ‘‘হুঁ। খানিকটা ওইরকমই। একটা রেজ়র-শার্প মেটাল ডিস্ক, যেটাকে ফুল স্পীডে রোটেট করিয়ে ছাড়া হতো টার্গেটের গর্দান তাক করে, প্যারাবোলিক কার্ভে। এইম ঠিক থাকলে ঘ্যাঁচাং এবং রিটার্ন ক্যাচ। মোটামুটি এই ছিলো চক্রের আ্যাপ্লিকেশন প্রিন্সিপ্ল।’’

অমৃতদা কফিতে চুমুক দিলো। বুঝলাম, আজ গুরুদেবের মূডটা নেহাতই ভালো আছে। তাই অনেকদিনের প্রশ্নটা তাক বুঝে করে ফেললাম। ‘‘কিন্তু অস্ত্রটা তো খালি বিষ্ণু আর কৃষ্ণ ছাড়া আর কারও হাতে কখনও দেখিনি। আর কেউ কি ওটা ইউজ করতো না?’’

অমৃতদা একটু হাসলো। ওর শখের জিপো লাইটার দিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। তারপর বললো, ‘‘তুমি তো খেলাধুলো করেছো। কি মনে হয়? চক্র জিনিসটা কন্ট্রোল করা কি খুব সহজ কাজ ছিলো?’’

‘‘না, তা ছিলো না। কিন্তু তাই বলে আর কেউ কোনওদিন...?’’

‘‘মহাভারতীয় মহাবীররা, মানে অর্জুন, কর্ণ, ভীষ্ম, দ্রোণাচার্যরা সবাই প্রধানত ধনুর্বিদ। ভীম-দুর্যোধন-বলরামদের মতন পালোয়ান গোছের কয়েকজন গদাধারী। একমাত্র কৃষ্ণকেই মহাভারত বলছে সর্বাস্ত্রবিদ। অর্থাৎ, সব রকমের অস্ত্রচালনায় পারঙ্গম। যেমন শার্ঙ্গ ধনু ব্যবহার করতেন, তেমনি কৌমুদকী গদাও চালাতে পারতেন। কিন্তু সুদর্শন চক্র ছিলো তাঁর বিশেষ অস্ত্র। ট্রেডমার্ক ওয়েপন বলতে পারো। নিজেকে বাকি সবার থেকে আলাদা করে দেখার একটা প্রবণতা সবসময়ই ছিলো ভদ্রলোকের। স্টার্ক হলুদ কাপড়, মাথার ময়ূরপালক তার সাক্ষ্য।’’

‘‘অন্য কেউ কোনওদিন চক্র ব্যবহার করার চেষ্টাও করেনি বলছো?’’

‘‘করেছিলো। একটা মজার গল্প আছে... বনপর্বের সময়কার। অশ্বত্থামা দেশভ্রমণে বেরিয়ে কিছুদিন দ্বারকায় কৃষ্ণের অতিথি হয়ে ছিলেন। সেই সময় তাঁর নজর পড়েছিলো সুদর্শনের উপর। অশ্বত্থামা নিজে কম বীর ছিলেন না। ওইরকম ভয়ংকর একটা অস্ত্রের প্রতি তাঁর আকর্ষণ হওয়াটাই স্বাভাবিক। পরখ করে দেখতেই পারতেন। কিন্তু তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ হঠকারিতায় অস্ত্রটা চেয়েই বসলেন কৃষ্ণের কাছে।’’ অমৃতদা নিজের স্বভাবসিদ্ধ স্টাইলে পজ় নিলো একটা।

‘‘তারপর?’’ লোকটার গল্প বলার ক্ষমতা নিয়ে কোনও কথা হবে না!

‘‘কৃষ্ণ অবাক হলেন। বললেন, আমি তোমার উচ্চাকাঙ্খার প্রশংসা করছি। কিন্তু ঘটনা হলো, অর্জুনও কোনওদিন সুদর্শন চায়নি আমার কাছে। তবে তোমার যখন ইচ্ছা হয়েছে, চেষ্টা করে দ্যাখো।’’ সিগারেটে একটা লম্বা টান দিলো অমৃতদা। ‘‘মহাভারত বলছে, অশ্বত্থামা নাকি সে চক্র তুলতেই পারেননি। অতটা না হলেও, ধরে নিচ্ছি জিনিসটা একেবারেই কায়দা করতে পারেননি দ্রোণি। তাই আর ও নিয়ে উচ্চবাচ্চ করেননি।’’

বলা বাহুল্য, গল্পটা জানতাম না। আমার মহাভারতের দৌড় রাজশেখর বসু পর্যন্ত। তাতে এ গল্প নেই। কিন্তু সে যাক...। ভারতীয় পুরাণের আরেক চক্রায়ুধ, অর্থাৎ বিষ্ণ‌ুর কেসটা কি? জিজ্ঞেস করলাম আমার পুরাতত্ত্বের এনসাইক্লোপিডিয়াকে।

‘‘ওটা বেশ ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার।’’ সিগারেটে আরেকটা মোক্ষম টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো অমৃতদা। ‘‘নরমালি পুরাণের টেন্ডেন্সি হচ্ছে পূর্বজ কৃতীদের অ্যাট্রিবিউটস পরবর্তী কালের স্টলওয়র্টদের উপর চাপানো। যেমন ইন্দ্র, মনু, কশ্যপ, ভৃগু, ভরদ্বাজদের ক্ষেত্রে হয়েছে। কিন্তু এই কৃষ্ণ ভদ্রলোক নিজের জীবদ্দশাতেই এমন লার্জার দ্যান লাইফ একটা ইমেজ পরিগ্রহ করে ফেলেছিলেন যে, তাঁর অনেক ক্যারেক্টারিস্টিক অ্যাট্রিবিউট ইতিহাসের টাইমলাইনে পিছন দিকে ঠেলে গিয়ে স্বয়ং পুরাণপুরুষ বিষ্ণুর ঘাড়ে চেপেছে। ওই চক্র আর শ্যামকান্তি তার এগ্জ়াম্প্ল। শুধু বিষ্ণু না, কৃষ্ণের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট রামচন্দ্রের উপরেও, বঙ্কিমী ভাষায়, প্রক্ষিপ্ত হয়েছে। তুলসীদাসের রামচরিতমানসে বালক রামচন্দ্রের দুষ্টুমি সেইরকমই ব্যাপার। আদারওয়াইজ আপাদমস্তক সুবোধ, সুশীল রাজপুত্র রামচন্দ্রের অমনধারা দুষ্টুমি করার কোনও স্কোপ ছিলো না।অন্তত ওরিজিন্যাল রামায়ণে তেমনটা লেখেনি।’’

ঠিকই কথা। রামচন্দ্রের চরিত্রের সঙ্গে দুষ্টুমি ব্যাপারটা একেবারেই যায় না। তিনি যেন একাধারে মহাভারতের যুধিষ্ঠির আর অর্জুন... শান্ত, ধীরোদাত্ত মহাবীর...

বোধ হয় বীরত্বের কথা ভাবতে ভাবতেই তলোয়ারের কথা মনে এলো। ক’দিন আগে তলোয়ার নিয়ে গুগল করছিলাম। নানা দেশের নানান যুগের সরু-মোটা, লম্বা-বেঁটে, সোজা-বাঁকা হরেক রকম তলোয়ার দেখছিলাম।কিন্তু আশ্চর্য কথা হলো, আমাদের পুরাণ-মহাকাব্যে ও অস্ত্রটার প্রায় ভূমিকা নেই বললেই চলে। অথচ ইওরোপ থেকে চীন অবধি বাকি সব মিথোলজিতে তলোয়ারের ছড়াছড়ি। ভারতীয়রা কি তলোয়ার ব্যবহার করতো না? প্রশ্নটা করাতে উত্তরে পেলাম একটা আপাত-অপ্রাসঙ্গিক পাল্টা প্রশ্ন...

‘‘ডুয়েল-এর বাংলা কি?’’

প্রথমটা একটু চমকালাম। তারপর খানিক ভেবে বললাম, ‘‘দ্বন্দ্বযুদ্ধ?’’

‘‘ওটা জোড়াতালি দেওয়া শব্দ। মহাকাব্যে পাবে না।’’

‘‘তাহলে?’’

‘‘মহাকাব্যে, বিশেষ করে মহাভারতে যে শব্দটা বার বার এসেছে, সেটা হলো দ্বৈরথ। শব্দ থেকেই অর্থ পরিস্কার।’’

‘‘হ্যাঁ। দুই রথের মোকাবিলা।’’

‘‘ইয়েস। সুতরাং বুঝতেই পারছো যে সেই ফরম্যাটের ডুয়েলে তলোয়ার জিনিসটা কোনও কাজেই আসতো না। দ্বৈরথ ছাড়া ছিলো আর দু’রকমের সিঙ্গল কমব্যাট। এক, মল্লযুদ্ধ, যাতে অস্ত্র লাগতো না। দ্বিতীয়,গদাযুদ্ধ। সেইটাই ছিলো সিঙ্গল অ্যান্ড ক্লোজ় কমব্যাটের আল্টিমেট ফরম্যাট... এবং এটা বুঝতেও অস্ত্রবিশারদ হতে হয় না যে, যে লোকটা গদা নিয়ে লড়ছে, তার সঙ্গে তলোয়ার নিয়ে পেরে ওঠার সম্ভাবনা খুবই কম।’’

‘‘তা বটে। তাহলে কি সে যুগে ভারতবর্ষে তলোয়ার ব্যবহার হতো না?’’

‘‘কেন হবে না? বিলক্ষণ হতো। দামাস্কাসের মতন না হলেও আমাদের বিদিশার তলোয়ারেরও বেশ খ্যাতি ছিলো। কিন্তু পুরাণ-মহাকাব্যের যুগে তলোয়ার বা খড়্গ ছিলো সাধারণ সৈনিকের অস্ত্র। বড়জোর নকুল-টকুলদের মতন নিতান্তই মধ্যম মানের যোদ্ধাদের। কোমরে সবারই ঝোলানো থাকতো এক পীস করে। মাঝে মধ্যে ব্যবহারও হতো। ভীম যেমন রক্ত খাবার জন্য দুঃশাসনের বুক চিরেছিলেন অসি দিয়ে। কর্ণ আর অশ্বত্থামাও বার দুয়েক পরস্পরের দিকে খড়্গ নিয়ে তেড়ে গেছেন। অশ্বত্থামা তো সৌপ্তিক পর্বে পাণ্ডবশিবিরের ঘুমন্ত যোদ্ধাদের সবাইকে ওই খড়্গ দিয়েই কচুকাটা করেছিলেন। কিন্তু সেগুলো একটাও প্রপার যুদ্ধের এগ্জ়াম্প্ল নয়।’’

তা নয়, ঠিকই। তাহলে ঘটনা হলো, পাশ্চাত্তের মহান তরবারিটি প্রাচ্যে এসে সব গরিমা হারিয়ে সাধারণ সৈনিকের অস্ত্রে পরিণত হলো। সত্যিই, অসিযুদ্ধের কথা তো কোনওদিন পড়িনি রামায়ণে বা মহাভারতে। যা পড়েছি, বেশির ভাগই রথের উপর থেকে তীরন্দাজির গল্প। রথারূঢ় অর্জুন নাকি একাই দশ হাজার লোকের মোকাবিলা করতে পারতেন! ভীষ্ম-দ্রোণাচার্যরাও প্রায় সেরকমই। বাড়াবাড়ির চূড়ান্ত, যাকে বলে!

কথাটা অমৃতদাকে বলতেই ও একটু গম্ভীর হয়ে গেলো। খানিকক্ষণ ভুরু কুঁচকে থেকে তারপর বললো, ‘‘সম্পূর্ণটা বোধহয় বাড়াবাড়ি নয়। আজ থেকে একশো দেড়শো বছর আগেও মানুষের শারীরিক ক্ষমতা যে পর্যায়ে ছিলো, এখন আর সেরকম ভাবা যায় না। রামমোহন রায় আস্ত পাঁঠা খেতেন। রবীন্দ্রনাথ চল্লিশ কিলোর কালী মূর্তি মাথার উপর তুলে ছুঁড়ে ফেলতে যাচ্ছিলেন। এঁরা কেউ সো-কল্ড ব্যায়ামবীরও ছিলেন না। সুতরাং আজ থেকে সাড়ে তিন-চার হাজার বছর আগেকার মানুষের কিরকম শারীরিক ক্ষমতা ছিলো, ভাবো। বিশেষ করে প্রোফেশনাল ওয়রিয়রদের। বেশির ভাগই ক্ষত্রিয়। কিছু ব্রাহ্মণও ছিলেন, পরশুরাম, দ্রোণ, কৃপাচার্য,অশ্বত্থামাদের মতন। এঁরা সারা জীবন ব্যায়াম আর অস্ত্রাভ্যাস করেই কাটাতেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় ভীষ্মের বয়স হিসেব অনুযায়ী একশো পেরিয়েছে... এবং তিনিও কুরুক্ষেত্রের বয়োঃজ্যেষ্ঠ যোদ্ধা নন! তাঁর কাকা,শান্তনুর ভাই বাহ্লীকও যুদ্ধ করেছিলেন। দ্রোণাচার্যের বয়স তখন বলাই আছে সাতাশি। দ্রূপদ তাঁর সমবয়সী সহপাঠী। কৃপাচার্যও ওইরকমই হবেন। সুতরাং তখনকার হেল্থ কোশেন্টটা বুঝতে পারছো।’’

অমৃতদা একটু থামলো। কফিতে শেষ চুমুকটা দিয়ে মাগটা নামিয়ে রাখলো। তারপর বললো, ‘‘একটা চার ঘোড়ায় টানা রথ, সেটার একজন চালক বা সারথি এবং তার সওয়ার ধনুর্ধর রথী... এই ফরম্যাটটা পৃথিবীর আর কোনও মিথোলজিতে এত ব্যাপক ভাবে আসেনি। ইজিপ্টে বা গ্রীসেও রথ ব্যবহার হতো, কিন্তু ওরা রথযুদ্ধের এই উৎকর্ষে পৌঁছতে পারেনি। অন্তত ওদের ইতিহাস-পুরাণে তার নিদর্শন নেই। ’’

‘‘হুঁ।’’ আমি বললাম। ‘‘কিন্তু আমাদের মহাকাব্যে যা নিদর্শন আছে, তার কতটা সত্যি? আই মীন, ব্রহ্মাস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, বরুণাস্ত্র, বৈষ্ণবাস্ত্র, ইন্দ্রজিতের নাগপাশ, অর্জুনের সেই সেমসাইড করানো ত্বাষ্ট্র অস্ত্র... এসব কি সত্যিই ছিলো নাকি?’’

অমৃতদা একটু হাসলো। ওর টিপিক্যাল বাঁকা হাসি... ‘‘আজকাল তো তাইই বলছেন না নব্য পণ্ডিতরা? প্রাচীন ভারতীয়রা নাকি সুপারসনিক জেট চালাতো, নিউক্লিয়র যুদ্ধ করতো, প্লাস্টিক সার্জারি করে কাটা মুণ্ডু জোড়া দিয়ে দিতো...?’’

আমিও হেসে ফেললাম। ‘‘বলছে, ভারতীয় সভ্যতা নাকি তিরিশ হাজার বছরের পুরনো।’’

কিন্তু অমৃতদার মুখটা দেখলাম একটু গম্ভীর হয়ে গেলো। ‘‘হাসির কথা নয় হে! একটা জাতির হীনম্মন্যতা কোন পর্যায়ে পৌঁছলে সে জাতির ইতিহাসকে গ্লোরিফাই করার এরকম মরিয়া চেষ্টা হয়, ভাবো। রীতিমতন সোশ্যাল সাইকোলজির গবেষণার বিষয়। সত্য আর বিশ্বাসের লড়াইটা চিরকালীন। কিন্তু দীর্ঘদিনের গবেষণালব্ধ জ্ঞান আর প্রমাণিত সত্যকে নস্যাৎ করে দিয়ে যখন যুক্তিহীন বিশ্বাসকে কোনও জাতির ইতিহাসের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়, তখন বুঝতে হবে সে জাতির ইন্টেগ্রিটি তলানিতে পৌঁছেছে।’’

খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর একসময় হাত নেড়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে অমৃতদা বললো, ‘‘যাক... ওসব নিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই। ইন্ডিভিজুয়াল কর্মফলের মতন একটা জাতিগত কর্মফলও থাকে, যেটা সব জাতিকেই ভোগ করতে হয়... কিন্তু যেটা তুমি বলছিলে, রামায়ণ-মহাভারতে যেসব অস্ত্রপ্রযুক্তি বা ওয়েপন টেকনোলজির কথা আছে, সে সব সত্যিই সে যুগে ছিলো কি না... তাই তো?’’

‘‘হ্যাঁ... মানে, পৃথিবীর আর কেনও দেশে অতদিন আগে অত ভয়ংকর সব অস্ত্রের কথা শোনা যায় না!’’

‘‘না, তা যায় না বটে। তবে প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের মতন সমৃদ্ধ অন্য কোনও দর্শনের কথাও কিন্তু শোনা যায় না আর কোনও দেশের পুরাণ বা ইতিহাসে।’’

আমি থ! দর্শন আর অস্ত্রপ্রযুক্তি এক হলো? কিন্তু অমৃতদা বলছে যখন, কোথাও একটা কিছু কানেকশন আছে। ও চুপ করে কি ভাবছে দেখে বললাম, ‘‘না, তাও যায় না। তবে দু’টোর মধ্যে কি কোনও যোগসূত্র আছে?’’

অমৃতদা একটু হাসলো। তারপর কেটে কেটে আস্তে আস্তে বললো, ‘‘সে যুগের সব থেকে বড়, সব থেকে বিধ্বংসী যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার ঠিক আগে সেই দর্শনের সারাৎসার বলা হয়েছিলো সব থেকে বেশি অস্ত্রক্ষমতাসম্পন্ন সে যুদ্ধের শ্রেষ্ঠ বীরকে।’’

এভাবে ব্যাপারটা ভাবিনি কখনও। চিরপরিচিত দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো... দু’দিকের সৈন্যসমাবেশের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কপিধ্বজ রথ... তার উপর জোড়হস্ত, নতজানু মহাবীর অর্জুন, যিনি ইচ্ছে করলে ব্রহ্মশির বা পাশুপতের মতন অস্ত্র দিয়ে কয়েক মুহূর্তে চরাচর ধ্বংস করতে পারেন... আর তাঁর সামনে বরাভয়ের মুদ্রা নিয়ে দণ্ডায়মান ঈশ্বরপ্রতিম সেই মানুষটি, যিনি অস্ত্রধারণ না করেও সে যুদ্ধের নিয়ন্তা...

‘‘নগরপত্তনে কোনওদিনই খুব একটা মনোযোগ দেয়নি আর্যরা। তাদের সভ্যতা বহুদিন অবধি প্রধানত কৃষিভিত্তিক ছিলো।’’ অমৃতদার কথায় আমার চটকা ভাঙলো। ওর কথা বলার এই ভঙ্গিটি আমার অতি পরিচিত।লেকচার মোড। নড়েচড়ে বসলাম।

‘‘আর্যসভ্যতার চরম উৎকর্ষের জায়গা ছিলো দু’টো... যুদ্ধক্ষেত্র আর ঋষিদের আশ্রম। তাই তারা ওই দুই ক্ষেত্রে বাকি বিশ্বের থেকে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিলো। জ্ঞানচর্চায় আর যুদ্ধবিদ্যায়। মিশরীয়রা যখন পিরামিড বানাচ্ছে, সুমেরীয়রা নৌবাণিজ্য করছে, চীনারা মোঙ্গোলীয় বর্বরদের আটকানোর জন্য দেওয়াল তুলছে, আর্য ঋষিরা তখন জ্যোতিষচর্চা করছেন, আয়ুর্বেদ নিয়ে গবেষণা করছেন আর এক অসাধারণ মূর্ছনাময় ভাষায় বেদ-বেদান্ত-ব্রাহ্মণ-আরণ্যক রচনা করছেন।

‘‘আর্যদের ওরকম একটা জায়ান্ট ফিলোজ়ফিক্যাল লীপ নেওয়ার পিছনেও কারণ ছিলো। কিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ। তোমার প্রশ্ন হলো, ভারতীয় পুরাণ মহাকাব্যে মেনশন্ড দিব্যাস্ত্রগুলো সত্যি সত্যি ছিলো কি না।অবভিয়সলি, সব কিছু ছিলো না। অনেকটাই কবিকল্পনা। কতগুলো পসিবিলিটির লিটেরারি ম্যানিফেস্টেশন। কিন্তু কিছু অবশ্যই ছিলো। বারুদ জাতীয় এক্সপ্লোসিভের ব্যবহার বহু প্রাচীন। ক্ষেপণাস্ত্রে তার প্রয়োগ খুব আশ্চর্য কিছু নয়। বরং যেটা আজ এসে আশ্চর্য মনে হতে পারে, হওয়াটাই স্বাভাবিক, সেটা হলো সে যুগের মানুষের অস্ত্রক্ষমতা। পাওয়ার অ্যান্ড প্রিসিশন। ধাবমান রথের উপর থেকে তীর ছুঁড়ে ছ’সাতশো মিটার দূরের আরেক ধাবমান রথের চাকার হিঞ্জ ভেঙে দেওয়া বা রথীর ধনুক কেটে দেওয়া... আধুনিক মানুষের কল্পনার বাইরে। এক দিকে এই, আর অন্য দিকে ব্রুট স্ট্রেংথ। গদার বাড়ি মেরে হাতির মাথা ফাটিয়ে দেওয়া বা শালগাছ উপড়ে তাই দিয়ে ঠেঙিয়ে মানুষ মারা... সেও এখন চূড়ান্ত এগ্জ়াজেরেশন মনে হবে। কিন্তু সে যুগে হতো না। তখন মানুষের ওরকম ক্ষমতা ছিলো। শুধু জন্মগত স্বাস্থ্য নয়, সেই সঙ্গে ছিলো নির্ভেজাল হাইজীন আর নিয়মিত, অক্লান্ত অনুশীলন। আর তার সঙ্গে মাইলের পর মাইল জুড়ে সমতল ভূমি, যেটা রথযুদ্ধের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়, এই সব কিছু মিলিয়ে মহাভারতের যুগে মানুষের যুদ্ধক্ষমতা ওইরকম একটা অবিশ্বাস্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছিলো।

‘‘কিন্তু এমন নয় যে সেরকমটা আর কোথাও ছিলো না। পৃথিবীর সর্বত্রই তখন শক্তিশালী, অ্যাগ্রেসিভ মানুষের বাস, এবং সবাইকেই বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত যুদ্ধ করতে হতো। তাহলে শুধুমাত্র এখানে, এই ভারতবর্ষের বুকে যুদ্ধবিদ্যার অমন অগ্রগতি কিভাবে সম্ভব হলো?’’

আমি যাকে বলে ক্লূলেস! তাকিয়ে আছি অমৃতদার মুখের দিকে। ও ধীরে সুস্থে আরেকটা সিগারেট ধরালো। তারপর একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করলো... ‘‘বেদ ক’রকমের?’’

আমি প্রথমটা একটু থতমত খেয়ে তারপর বললাম, ‘‘ঋকবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ আর অথর্ববেদ... এই তো?’’

‘‘কনভেনশনালি তাই। কিন্তু এ ছাড়াও আরও দু’টো বিষয় বেদের পর্যায়ে পড়তো সেকালে। একটা সবাই জানে। আয়ুর্বেদ। আরেকটা?’’

আমি যথারীতি নিরুত্তর।

‘‘আরেকটা হলো ধনুর্বেদ।’’ অমৃতদা একটু সময় নিলো। ‘‘সুতরাং বুঝতেই পারছো, কি লেভেলে রিসার্চ হতো বিষয়টা নিয়ে। শুধু ক্ষত্রিয় যোদ্ধারা নন, ব্রাহ্মণ ঋষিরাও গবেষণা করতেন ধনুর্বিদ্যা নিয়ে। ভরদ্বাজ,পরশুরাম, অগ্নিবেশ, শরদ্বানরা সেইরকম ঋষি। আর সেই গবেষণার বিষয় যে শুধু শরক্ষেপণের কৌশল নয়, অস্ত্রপ্রযুক্তিও, সে কথা বলা বাহুল্য। দ্রোণাচার্য তাঁর গুরু অগ্নিবেশের কাছ থেকে ব্রহ্মশির পেয়েছিলেন, যেটা ইন টার্ন দিয়েছিলেন অর্জুনকে আর অশ্বত্থামাকে। কর্ণ ব্রহ্মাস্ত্র পেয়েছিলেন পরশুরামের কাছ থেকে। আমার ধারণা, এই সব বিশেষ বিশেষ অস্ত্রগুলি একেকজন গবেষকের নিজস্ব উদ্ভাবন ছিলো, যার নির্মাণ এবং প্রয়োগ কৌশল তাঁরা সযত্নে গোপন রাখতেন এবং শুধুমাত্র যোগ্য উত্তরসূরিকে দিয়ে যেতেন।’’

খানিকক্ষণ সব চুপচাপ। অমৃতদা সিগারেট টানছে। আমি টেবিলের উপর রাখা খালি কফি মাগ দু’টোর দিকে তাকিয়ে ভাবছি, যদি এই পর্যায়েই যুদ্ধবিদ্যা আর অস্ত্রপ্রযুক্তি ছিলো ভারতবর্ষে, তাহলে সে সব গেলো কোথায়? অমৃতদার দিকে তাকালাম।

‘‘ভাবছো সেসব টেকনোলজি গেলো কোথায়, তাই তো?’’ অমৃতদা আমার মনের কথা পড়ে নিলো। অবশ্য তাতে খুব অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই প্রশ্নটাই ন্যাচরালি আসবে সবার মনে। মাথা নাড়লাম।

‘‘এই প্রশ্নেরও উত্তর লুকিয়ে আছে ওই মহাভারতের যুদ্ধের মধ্যে।’’ অমৃতদা সিগারেট নেভালো। ‘‘দু’দিক মিলিয়ে এগারো আর সাতে আঠেরো অক্ষৌহিনী সেনা। অক্ষৌহিনীর হিসেবটা যদি ওরকম অযুত-নিযুত-কোটি নাও হয়, তবু যে একটা বিশাল সংখ্যক মানুষ সে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো, তাতে সন্দেহ নেই। ভাবো, কি পর্যায়ে ধ্বংস হয়েছিলো! ওই ডায়মেনশনের যুদ্ধ সেযুগে আর কোথাও হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।আর্যাবর্তের মোটামুটি আশি শতাংশ যুদ্ধক্ষম পুরুষ জনসংখ্যা শেষ হয়ে গেছিলো কুরুক্ষেত্রে। এবং সেই সঙ্গে সম্পদ। বিপুল সম্পদ। মোটামুটি দেশটাকে নিংড়ে নিয়েছিলো কুরু-পাঞ্চালের সেই সংঘর্ষ, যেটাকে এখনও অনেকে পাণ্ডব আর কৌরবদের জ্ঞাতিবিবাদ বলে ভুল করে।

‘‘সে যাক... কথা হলো, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর এ দেশের সাধারণ মানুষ হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলো যুদ্ধ জিনিসটা কি ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। যাকে বলে একেবারে ধুদ্ধুরি নাড়িয়ে দিয়েছিলো সে যুদ্ধ ভারতবর্ষের।তাই তার পরের প্রায় এক হাজার বছর এ দেশে অপার শান্তির সময়। ষোড়শ মহাজনপদের উত্থান ও সমৃদ্ধি সেই সময়ে। শিল্প, সংস্কৃতি, অর্থনীতি... সব কিছুর পরম উৎকর্ষ দেখেছিলো ভারতবর্ষ সেই হাজার বছরে।গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর বর্ধমানরা সেই স্বর্ণযুগের মানুষ। তাই তাঁরা অমন অপার্থিব আনন্দ, ওরকম নিগূঢ় শান্তির বাণী প্রচার করতে পেরেছিলেন। অত শান্তি, সমৃদ্ধির জীবন পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনও কোথাও মানুষ কাটিয়েছে বলে আমার জানা নেই।

‘‘কিন্তু সেই অনাবিল শান্তির নেতিবাচক ফলটি হয়েছিলো যুদ্ধবিদ্যা প্রায় বিস্মরণ হয়ে যাওয়া। ওই সময়ের মধ্যে সেরকম বড় কোনও ইনভেশনও হয়নি, তাই স্বভূমি ডিফ়েন্ড করারও দরকার পড়েনি ভারতবাসীর।নিশ্চিন্ত, নিরুপদ্রব জীবন কাটাতে কাটাতে দেশের মানুষ বিপদের চিন্তাটাই ভুলে বসেছিলো। তাই তিনশো খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের বাহিনীর সামনে তারা প্রথমটা হতচকিত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো। অবশ্য আলেকজান্ডারের অভিযান যে উত্তরভারতেই থেমে গেলো, তারও কারণ তৎকালীন ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। আলেকজান্ডারের হাতে তখন ছিলো মেরে কেটে তিরিশ হাজার সৈন্য, আর মগধের রাজা ধন নন্দের নাকি শুধু হাতিই ছিলো ছ’ হাজার।

‘‘সে যাই হোক, আলেকজান্ডারের আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় শৌর্যের মিথটা ভেঙে পড়লো, আর গ্রীকদের প্রায় পিছন পিছন এসে হাজির হলো শক-হুণের দল। তারপর একের পর এক হানাদারদের ঢেউ। ততদিনে শান্তি আর কমপ্লেসেন্সির খাঁচার ভিতর ঢুকে পড়া ভারতবাসী সেসব ধাক্কা সামলাতে পারলো না। শক-হুণরা তাও আধা-বর্বর যাযাবর জাতির স্ট্রে ইনভ়েডর ছিলো। ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্রের গভীর জঠরে হজম হয়ে মিলেমিশে গেছিলো। কিন্তু বাই দ্য টাইম তুর্কীরা এলো, ততদিনে দেশটার রাজনৈতিক কাঠামোতে ঘুন ধরে গেছে। মাঝে সপ্তম শতাব্দীর মাৎস্যন্যায়ের খাওয়াখাওয়িতে সব ওলোট-পালট হয়ে গেছে। মগধের পাল রাজারা কিছুদিনের জন্য হাল ধরেছিলেন বটে, কিন্তু শেষের দিকে তাঁরাও কাগজের বাঘে পরিণত হয়েছিলেন। তাই তুর্কীদের অর্গানাইজড ফ়োর্সেস প্রায় বিনা প্রতিরোধে ভারতবর্ষ দখল করে ফেললো, আর সেই সঙ্গে শেষ হয়ে গেলো যুদ্ধবিদ্যার উৎকর্ষের একটা অসাধারণ লেগ্যাসি।’’

অমৃতদা থামলো। আমি অন্যমনস্ক ভাবে সিগারেট ধরালাম। গীতার ছবিটা কেন জানি না আবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো... আর সেই সঙ্গে একটা মেঘমন্দ্র স্বর মাথার ভিতর রেজোনেট করতে লাগলো... নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি, নৈনং দহতি পাবক...

0 comments: