0

কবিতা - সুপ্রিয় মিত্র

Posted in


কবিতা


বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত

সুপ্রিয় মিত্র



১.


সমুদ্রের কাছে গেলে সমুদ্রও কিছুটা এগিয়ে আসে,
বয়ে আসা দ্রবীভূত নুন এই বলে দেয়
রক্ত জল হওয়া তার রক্ত এই
পায়ের সমীপে এসে ছুঁয়ে গেছে,
চামড়ার ভিতর সে বয়ে চলা রাঙা ভাইকে চায়।

রাঙা ভাই
ছোট ভাই
চোট থেকে ওঠো…

ওঠে। সমুদ্রের হৃদপিণ্ড সে দেখতে পায় না।
কোথা থেকে আসে এই জল-রক্তের লাবডুব লাবডুব?

অগত্যা,
পাহাড়ের কাছে গেলে
চামড়ার ভিতরে হৃদপিণ্ডের লাবডুব শুনে
আত্মীয় পাথর গড়িয়ে আসে। জড়িয়ে ধরতে চায়।
পাহাড়ের আলিঙ্গন এভাবে দেখতে হবে জেনে,
যে তুমি এগিয়ে আছ বয়সের তারতম্যে নত...
অর্থাৎ, আগে যাবে? যাবে, যেও, অন্য কোনও
প্রতিমায় তোমার যে ভঙ্গিমা তছরূপ, বিসর্জনে নাকাল তোমার নীল রঙের শূন্য তোমার চেয়ে থাকা
তোমার শীতোষ্ণ বাক্য, প্রকাশবিরূপ ওই পাথরে ধুকপুক,
কীভাবে বোঝানো যায়? যেতে দেওয়া কী সহজ!
আমার অশান্তিকে রক্ত সমীহ করে চলে।
কিংবা চলে না। বয়। ভয় পায়,
সমুদ্রের আমন্ত্রণ নিয়ে সে পাথর ভেঙে বেরিয়ে পড়বে
কতবার ভেবেছিল, সিদ্ধান্ত নিয়েওছিল ঠিক
তার চেয়ে জমাট বেঁধে থেমে যাবে… যেতে তো পারেই
এভাবেও তো সমর্পণ ভেবে নেওয়া যায়।
যায় তো। তবে যাবে। তোমাকে সে একা রাখবে না।


২.

ভালোবাসার প্রান্তরেখায় ওই বর্ষা, মেঘের পাপড়ি
ঝরে পড়বে ঘন হলে,
ঝরে পড়ছে, বলা হয়, এই যে নিয়ম বিরহ-মুগ্ধ, চোখ দিয়ে উপমা ঝরে পড়া,
হঠাৎ কোনও হাওয়ায় উলটে যাওয়া ছাতা
সেই ঝরে যাওয়া ধরে রাখে একা।
অন্ধকার। এমনই হলুদ আলো, যেন রোদ
জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে রাস্তায়-
একেই সুযোগ ব’লে, ছাতা, নিজের ধর্ম পালটে নেয়।
বৃষ্টি থেকে দূরে রাখতে
মানুষ তাকে এভাবে ভুজুংভাজুং কিছু
দিয়েছিল একদা সর্বদা।
এই তার স্মৃতি। স্পর্শ, আঘাত হয়ে পরিচিতি বদলে বদলে গেছে।
বিরোধের কুঁড়ির গভীরে বিপ্লবের রেণু মৌমাছিকে
নিরাসক্ত করে, সে জেনেছিল।
কতটা দূরত্বকে বলবে বিরহ, তাকে কত দিয়ে গুণ করলে
বিচ্ছেদের ভালো সংজ্ঞা হবে, এও ছিল জ্ঞাত। স্মৃতির বৃন্ত এই। ছিল ছিল। আলবাত ছিল।

কিন্তু ছিল না।
এমনই বর্ষা এল, এমনই স্মরণীয় সে,
যে তার চেয়েও শুকনো তার ফুলের মালা।
ঝরবে ঝরবে করে কবে থেকে গাঁথা হয়ে আছে।

0 comments: