ধারাবাহিক
পায়ের শব্দ
সোমঙ্কর লাহিড়ী
চুম্বকঃ- অ্যান্ডির ফ্ল্যাটে একটি মধ্য বয়স্কা কলগার্লের দেখা পায় কাঞ্চন। যাকে অ্যান্ডি কোথা থেকে পেয়েছে সেটাই মনে করতে পারে না। চলে যাওয়ার সময় তার ফোনের থেকে পাওয়া যায় অ্যান্ডি ও তার কিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি, সাথে অ্যান্ডির কোকেন নেওয়ার ভিডিও ক্লীপ। ফোনটা ফেলে দিয়ে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয় অ্যান্ডি। একটা রিসর্টের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অ্যান্ডি ও তাদের দল আর্মাডিলো বাগডোগরার প্লেন ধরে। সাথে দেখা যায় মুকেশ ও শীলাকে। তারা চা বাগানের ভেতরে সেই রিসর্টে গিয়ে পৌছয়।
৪
চা বাগানের অনেকটা ভেতরে সেই রিসর্ট যেখানে আজ সন্ধ্যা থেকে সারারাত ধরে চলবে পার্টি। রাস্তা থেকে বা চা বাগানের ভেতরে অনেকটা ঢুকলেও কোন ধারণা করা যাবে না এই ‘টি ভ্যালি’ রিসর্টটার বিশালত্ব সম্পর্কে।
পাহাড়ের গায়ের ঢাল বেয়ে বেশ খানেকটা উপরের দিকে উঠে গিয়ে শুরু হয়েছে “টি ভ্যালি” আর উপরের দিকে উঠে গেছে আরো বেশ অনেকটা। এক পাশে দেখা যাচ্ছে খাদ। গভীর, তবে খুব মারাত্মক নয়। নিজেকে উচ্চতায় আসীন দেখলে কেমন লাগে সেটার ধারণা পাওয়া যাবে, এর ধারে দাঁড়ালে। কিন্তু ঠেলে ফেলে কারোকে মারা যাবে কিনা, সেটা সম্পর্কে সন্দেহ থেকেই যাবে।
সেই খাদের ধার ধরে বাঁধান রাস্তা বেঁকে ঢুকে গেছে অনেকটা। তারপরে রয়েছে টেনিস, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদির কোর্ট। আরো পেরিয়ে রাস্তাটা নেমে গেছে নীচের দিকে সেখানে গিয়ে পৌঁছলে পাওয়া যাবে গলফ কোর্স। উপর থেকে প্যারা গ্লাইডিং এর ব্যবস্থাও রয়েছে এসে নামবে সেই গলফ কোর্সের মাঠেই।
এদের সবার পিছনে পাহাড়ের গা এলিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে “টি ভ্যালি”র বাঙ্কোয়েট যার দু পাশে রয়েছে দুতলা বিশিষ্ট টানা দুটো বিন্ডিং, যেখানে এসে লোকেরা থাকবে। অবাক হয়ে দেখতে হয় পাহাড়ের বিভিন্ন রক্মের সবুজ ও গোটা বিল্ডিঙের বিভিন্ন রকমের সবুজকে কি সুন্দর ভাবে মেলানো হয়েছে। কোথাও একটু চোখে লাগছে না। তাকিয়ে দেখলে মুখ থেকে বাহ! শব্দটা নিজে থেকে আপনা আপনি বেরিয়ে আসে।
অ্যান্ডিদের গাড়ি যাখানে থামল সেটা সেই রিসর্টের রেসিডেন্স বিল্ডিঙের পিছনের দিক। গাড়ি থামতে ডিপি নিজে অ্যান্ডি অ্যান্ড আর্মাডিলোকে রিসিভ করতে এলো।
অ্যান্ডির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ডিপি বলল,
আই থিংক ইউ ডোন্ট হ্যাভ এনি প্রবলেম রিচিং হিয়ার? কথাটা বলতে বলতে মাথাটা ঘুরে গেল শেলীর দিকে।
অ্যান্ডির উত্তরের আগেই ডিপি শেলীর দিকে ফিরে সামান্য ঝুঁকে ওর হাতটা ধরে সাহেবদের মতো হাতের উল্টোদিকে একটা প্রায় লালাসিক্ত চুম্বন দিয়ে সেই একই কথা জিজ্ঞাসা করল।
শেলী হাতটা কোনওক্রমে ছাড়িয়ে নিয়ে হেসে মাথা নাড়াল। অস্বাস্তিটা খুব সুক্ষ্মভাবে চোখে ফুটে উঠল।
প্রশ্নের কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে ডিপি সবাইকে বলল,
ওয়েলকাম টু দ্য টি ভ্যালি। আপনারা আসুন দেখুন আমার এই স্বপ্নের রিসর্টকে আমি কেমন করে সাজিয়েছি।
ঘটা করে সবাইকে বলল বটে কিন্তু নিজে শেলীর হাত ধরে সবার আগে আগে হাঁটতে শুরু করল, তারপরে মুকেশের দিকে তাকিয়ে বলল,
তু খ্যায়াল রাখনা সবকা।
আর্মাডিলোর সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
প্লীজ ফীল অ্যাট হোম।
ডিপি মুখ ঘোরানোর সাথে সাথে সবার মধ্যে একটা নিঃশব্দ হাসি স্রোতের মতো বয়ে গেল। অ্যান্ডি বলল,
মিঃ বাজোরিয়া উড ইউ মাইন্ড ইফ উই টেক সাম রেস্ট?
দুপক্ষই হাঁফ ছাড়ল, শেলী বাদে।
অ্যান্ডিঘরে ঢুকে মুকেশকে বলল,
টোক ফোক কিছু থাকলে দে।
আমি বললাম না, কি আমি সাথে করে আনিনি। আর রাতে পারফর্ম করবি, এখন থেকে নেশা করিস না ভাই। প্রোগ্রাম ঝুলে গেলে বাজে ব্যাপার হবে।
অ্যান্ডি ওর কথায় কান না দিয়ে ঘরে রাখা ফ্রীজের খুলে ভেতর থেকে একটা ভদকার বোতল বার করে নীট খানেকটা গলায় ঢেলে বলল,
আমার প্রফেশান নিয়ে নো জ্ঞান, ওকে। জয়েন্ট ফয়েন্ট থাকলে দে, না হলে ফোট এখান থেকে। আমার সোজা হিসেব, তুমি আমাকে খুশী রাখো, আমি তোমায় খুশি রাখবো, সেটা স্টেজ হলে গানে, নেশা হলে টাকায়, বিছানা হলে শরীর দিয়ে। ওকে। এখন মালের জোগাড়, ঠিক আছে?
মুকেশ ফোন বার করে কাকে যেন ফোন করল মিনিট দশেক বাদে দরজায় টোকা দিয়ে একজন একটা সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে গেল, ভেতরের সিগারেটগুলো দেখলে বোঝা যায় কাগজের ভেতরে তামাকের স্থান নিয়েছে গাঁজা।
অ্যান্ডি একটা ধরিয়ে টান লাগিয়ে ধোঁয়া ধরে রাখল বেশ খানেকটা সময়, তারপরে সেই ধোঁয়া নাক দিয়ে গলগল করে উগরে দিয়ে বলল,
শেলীটাকে ওই কুমড়োটা নিয়ে চলে গেল, এখন আমি কি এখানে বসে তোর গালে চুমু দেবো?
বাকি টিমকে সাথে থোড়া....
এই শালা, ঐ টুঙটুঙি গুলোর সাথে যা করার স্টেজে করব। তুই আমাকে জ্ঞান দিসনাতো। আমি ওদের ছাড়াও প্রোগ্রাম করে নিতে পারবো, ওরা আমাকে ছাড়া এক পা চলতে পারবে না। বিকজ আয়াম দ্যা স্টার অফ আর্মাডিলো। লোকে আমার গান শুনতে পয়সা দেয়, ওদের টুঙটুঙি আর ড্রাম শোনার জন্যে নয়। বাকি টিমকে সাথ থোড়া, মাই ফুট শালা।
মুকেশ হেসে বলল, চিল ম্যান চিল। ইতনা গুসসা আচ্ছা নেহী। আচ্ছা বস্ আমি একটু আমার ঘরে যাচ্ছি। তবে বস্ একটু বুঝে টেনো। রাতে অনেক হুজ্জত হাঙ্গামা করতে হবে তোমায়। ভেবো না, জ্ঞান নেহী দে রাহা হুঁ।
মুকেশ ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে অ্যান্ডি ড্রেস ছেড়ে তোয়ালে জড়িয়ে গেল ফ্রেশ হতে। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে একসাথে নীট ভদকা আর গাঁজা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। বেশ তুরীয় একটা ভাব ধীরে ধীরে ছড়িয়ে আচ্ছে গোটা শরীরটাতে। আরাম, একটা আরাম ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে অ্যান্ডিকে।
শাওয়ারটার নীচে দাঁড়িয়ে সেটা খুলে দিতেই পুরো নেশা একেবারে ক্যারা মেরে দিল। অ্যান্ডি প্রায় লাফিয়ে শাওয়ারের নীচ থেকে পালিয়ে নিজেকে বাঁচাল। বাপরে কী ঠাণ্ডা জল। নেশার একেবারে চুলকে চৌষট্টি হয়ে গেল এক ঝটকায়। প্রবল বেগে শাওয়ার থেকে পরা ঠান্ডা জলের ধারার দিকে ভীত চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগল অ্যান্ডি। যেন ওটা কোনভাবে এসে ওকে আক্রমণ করবে। কোনও রকমে হাত বাড়িয়ে শাওয়ারটা বন্ধ করে বাজোরিয়ার গুষ্টির ষষ্ঠিপুজো করে ঐ আধভেজা অবস্থায় বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে।
অমন সাধের নেশা চটকে যাওয়ায় মেজাজ তুরিয় টু তিরিক্ষি। রুম সার্ভিসকে ফোন করে গালি দেবে নাকি ঘরে ডেকে এনে গালি দেবে সেটা ভাবতে ভাবতেই ডোর বেল বেজে উঠল। অ্যান্ডি ভাবল বাবা! কি সার্ভিস! ভাবতে না ভাবতেই দরজায় নক! দরজাটা খুলতেই সামনে দেখল এক পরমা সুন্দরী মহিলা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। যার বয়েস কুড়ি থেকে দু হাজার যেকোন একটা হতে পারে বলেই মনে হলো অ্যান্ডির। মুহুর্তে ভাবল একে ঝাড় দেবো? এত সুন্দরী। বাট স্টিল আয়্যাম আ স্টার! হোয়াই নট?
দরজা খোলার সাথে সাথে এসি ঘরে ঘুরতে থাকা গাঁজার খোসবাই মহিলার নাকে ধাক্কা দিল, নাকটা সামান্য কুঁচকেই সোজা করে নিল। অ্যান্ডি শুরু করে দিল ঐ আধভেজা তোয়ালে জড়ানো অবস্থায়,
লুক হোয়াট ইউ হ্যাভ ডান টু মি? বার তিনেক লুক আর বার দুয়েক ডান ও বলে দিল হাফ নেশায়।
দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মহিলার মুখে একটা কৌতুকপূর্ণ হাসি খেলে গেল। তারপরে অ্যান্ডির ঐ দড়ি পাকানো চেহারাটার দিকে একবার তাকিয়ে কৌতুকপূর্ণ গলায় বলল,
কি হয়েছে স্যার?
গলার আওয়াজেও যে নেশা হতে পারে অ্যান্ডির জানা ছিল না। খানেকটা থতমত খেয়ে গিয়ে বলল,
বাথরুমের জল কি ঠাণ্ডা। বাপরে!! জমে মরে যাচ্ছিলাম প্রায়। বাই দ্য ওয়ে, আয়্যাম অ্যান্ডি, মেইন ভোকালিস্ট অফ আর্মাডিলো। বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিল সেই মহিলার দিকে।
তিনি সে সবে পাত্তা দিলেন না বিশেষ, ঘরে এলেন, বাথরুমের ভেতরে গিয়ে সব দেখে বললেন,
হোয়াই ডিডন্ট ইউ আক্টিভেটেড দ্য টেম্প কন্ট্রোল? হিয়ার ইস দ্য কী অ্যান্ড আ লি’ল প্যানেল বাই হুইচ ইউ ক্যান সেট ইয়োর সুটেবল টেম্পারেচার। আই থিংক ইউ ডিডন্ট নোটিস ইট।
অ্যান্ডির কানে যেন সুরের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল, সে আর থাকতে না পেরে বলল,
এভার থট অফ সিঙ্গিং অ্যাস অ্যা ক্যারিয়ার?
সেই মহিলা ঘরে এসে কোন কথার উত্তর না দিয়ে বাইরের দিকের জানলা দুটো খুলে দিল। তারপরে বলল,
মাই নেম ক্যারিস সাম মিউজিক, ইউ নো। অ্যায়্যাম শুভলক্সমি বাজোরিয়া, শুব্বু ডিপি’স বেটারহাফ, উই ইউজুয়ালি হায়ার মিউজিশিয়ান্স অ্যাজ পার আওয়ার নীডস। আই হ্যাভ হার্ড আল মোস্ট অল অফ ইয়োর নাম্বারস, কোয়ায়েট গুড। সো আই থট আই কুড কাম এন্ড গিভ ইউ অ্যা ভিসিট। বাট রাইট নাও ইউ আর মোস্ট আনইম্প্রেসিভ টু মি অ্যাজ অ্যা পার্সন। বাই দেন।
অ্যান্ডিকে একেবারে বোল্ড করে দিয়ে শুব্বু ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, আর ফিরে তাকিয়ে মৃদু একটা হাসি দিয়ে বলল,
ক্লীন ইয়োরসেলফ আপ, ফ্রম অল দ্য ইনটক্সিকেশান, অ্যান্ড ডোন্ট স্পয়েল দ্য শো ইন দ্য নাইট।
অ্যান্ডির হাঁমুখ আর বন্ধ হতে চাইছিল না। শুব্বু বাজোরিয়া চলে যাওয়ার পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে অ্যান্ডি বাথরুমে গিয়ে ঐ আগের ঠাণ্ডা জলের স্রোত সরাসরি নিজের শরীরের উপর দিয়ে বইয়ে দিল। বেশ খানেক বাদে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ফোন তুলে তার টুংটুঙির গ্রুপকে ফোন করে বলল,
এক রাউন্ড টিউনিংটা সেরে নিবি তো?
0 comments: