0

গল্প - শাশ্বতী মজুমদার

Posted in


গল্প


সার্কেল 
শাশ্বতী মজুমদার


সমস্ত আয়োজন করে শুতে অনুভার রাত হয়েছিল। এবারে সে নিজেই বন্ধুদের খাওয়াবে। এই উৎসাহটা সে সব ক্ষেত্রে পায় না। তখন চেনা দোকানের নম্বরে ফোন মারে। সময় বলে দিলে ওদের ডেলিভারির ছেলেরা খাবার ঘরে পৌঁছে দেয়। তখন রকমারি খাবার প্লেটে পরিবেশন করে দিলেই তুমি মুক্ত। তেমন তেমন ক্ষেত্রে তো তাও করতে হয় না। নিজেরাই নিয়ে নেয়। আজ যারা আসছে তারা ওর রান্নার প্রবল অ্যাডমায়ার। তাছাড়া পার্টির পরিকল্পনাটাও ওদের একজনের। প্রস্তাবটা অনুভার বেড়ে লেগেছিল। মেনোপজ হওয়ার সেলিব্রেশন। এই একটা কথায় ও মনে মনে ফিল করছিল বুক থেকে একটা বড়ো চাপ নেবে গেল। অনেকবার তো সে এই দিনটাকে কামনা করেছে। কারণ সে জানত ইমার্জেন্সি পিলগুলো ভালো নয়, অনেকরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু ঐ মুহূর্তগুলোর পূর্ণ সাদ থেকে সে অনীলাভকে বঞ্চিত করতে চাইত না, বিশেষ করে যখন সে মুখ ফুটে বলত ভীষণ ভেতরে করতে ইচ্ছে করছে। আবার জয়িতার মতো নারীবাদীও সে নয় যে এমন একটা চরম ক্যাথারসিসের মুহূর্তে ঝাঁঝিয়ে উঠবে এত ইচ্ছে যখন তখন অপারেশনটা করিয়ে নাও না, আর কাকে কনসিভ করাবে। সে জানপ্রাণ দিয়ে প্রেম করে। তাই চুপ করে সকালে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে ফেরার পথে একটা ওষুধ খেয়ে নেয়। এখন আর বোধ করি সে চাপটা রইল না। এটাকে এত সহজ করে বুঝতে সাহায্য করেছে ব্রততী। তাই শনিবারটা ছুটি পেয়ে ওদের দুপুরে ডেকে নিয়েছে। এ বিষয়ে অনীলাভ যদিও কিছু জানে না। সে শনিবারগুলো শহরে থাকে না। সপ্তাহ শেষটা সে তার বহুকালের ফোটগ্রাফির শখ মেটাতে ব্যয় করে। এবারে তো সপ্তাহ খানেক নেই। একটা ডকুমেন্টারি করছে রেবতীর সঙ্গে।





এলার্ম বাজার আগেই অনুভার ঘুম ভেঙে গেল। একটা ঊনত্রিশ বছরের পুরনো অস্বস্তি পায়ের মাঝে সে অনুভব করল। তবে কি? হাত রাখলেই বুঝতে পেরে যেত কিন্তু মনে হল যদি স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। সে বোঝে যদিও সে গত সন্ধ্যে থেকে প্রবল দৌড় ঝাঁপ করছে কিন্তু সে নানা শঙ্কায় আছে। এরপর কী হবে? সে কি আর অনীলাভ কাছে এলে কিছু অনুভব করবে না? কিংবা জার্মান পানু ভিডিওগুলো, যেগুলো সে প্রায়ই দেখে অসময়ে ইচ্ছে পূরণ করে? নাকি তার ভেতরে এমন মরুভূমি জন্ম নেবে যাতে আছাড় খেয়ে পড়বে অনীলাভ? আর তারপর...। এই তারপরটা এত অন্ধকার যে চেম্বার অফ সিক্রেটের মতো তাকে নিয়ে ভাবতে, প্রশ্ন করতে ও গুগুল নেড়ে ঘেটে দেখতেও সে ভয় পায়। তাই কিছুক্ষণ জেগে চুপ করে শুয়ে থাকে অনুভা। 




অনুভার ভাবনাটা ছিঁড়ে যায়। ও ঘর থেকে লাজু চেঁচাচ্ছে। লাজু, লাজবন্তী, অনুভার বারো বছরের মেয়ে। তিনরুমের ফ্ল্যাটের দক্ষিণমুখো ঘরটি ওর রাজত্ব। দূরের স্কুলের ছাত্রী লাজুর অবশ্য রাজকার্য ভোগের বেশি সময় নেই। ওই যা ছুটির দিনে ডালা সাজিয়ে বসে। কী হল মেয়েটার? ও তো ন'টার আগে কোনদিন চোখ মেলে নি।





-চল অনুভা এবার বেরতে হবে। রোদটা আর নেই। একটা জয়েন্ট বানাবি? খেয়ে উঠি। 

-বন্ধুগণ আর মিনিট পনেরো অপেক্ষা করো। কেকটা অন দ্যা ওয়ে। ওটা খেয়ে চুলোয় যাও।

-কেক? কী বেশরম মেয়েছেলে মাইরি তুই?

-পার্টিই তো দিচ্ছিলি না, এখন কেকও অর্ডার করেছিস? 

- টপে কী লিখে দেবে দ্য কেক? 

- এলেই দেখতে পাবি।




দুপুরে খেয়েদেয় লাজু বসেছিল কম্পিউটার খুলে। একবার উঠে কেকটা নিচ থেকে ডেলিভারি নিয়েছে। কেক কাটার প্রস্তুতি শেষ। এবার ডাক দিল অনুভা লাজুকে। জনগণ খানিকটা অবাক। কেকের ওপরের লেখা "কনগ্রেচুলেশন লাজবন্তী"।

- ওমা লাজুর এখন কীসের রেজাল্ট?

- আগে বলবি তো অনু। কিচ্ছু আনিনি মেয়েটার জন্য। যাহ্‌... 

লাজু খানিকটা লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে। অনুভা লাজুকে জড়িয়ে ধরে। বন্ধুগণ লাজুর আজ ভোর থেকে পিরিয়ড শুরু হয়েছে। সুতুরাং সেলিব্রেশন তো মাংগতা হ্যায়।

0 comments: