0

মুক্তগদ্য - কৃপা বসু

Posted in


মুক্তগদ্য


সত্তা
কৃপা বসু 




ঈশ্বরী ধর্ম ও যৌনতা

প্রব্রজ্যা ভেঙে স্নেহরঙের জলপট্টি মাথায় রাখে ও। উলের মতো পাক খেতে খেতে আমার মুখে নুয়ে পড়ে ওর নীরস আধফোটা বুক। বীজভাঙা সরল হাতে চুলে বিলি কেটে দেয়, ওর গা থেকে ঝিমধরানো কচি চাপাতার গন্ধ পাই আমি।

পাংশু পাঁজর ছুঁয়ে নির্মেদ ঝর্ণার মতো মোমদান হাতে সে যতবার এগিয়ে আসে, আমি পর্দা টেনে দিই ঘরের। আশরীর রসায়ন ভুলে আমি ওকে আমার মেয়ের মতোই ভালোবাসি তখন। 

যতবার দেখি ওর বয়স তেইশেই আটকে থাকে যেন, ওকে আমি সরসিবালা বলি। খরস্রোতা নদীর মতোই সহজ ওর মোলায়েম চুলের গিঁঠ। শিশিরস্নাত, শয্যাসংসক্ত এক রহস্যময়ী নারী,যার অক্ষতযোনি বেয়ে চুঁইয়ে পড়া রজঃস্রাবের লাল ছিটকে লাগে আমার শ্যাওলা পিঠে।

ওর তুলতুলে স্তনদ্বয়ের দিকে তাক করে লাল নীল হলুদ ফুল ছুঁড়ে দেয় শ্বাপদের দল। জপতে থাকা পবিত্র তসবি ছিঁড়ে ফেলি। মহাশূন্যের অলৌকিক নিয়মে ওর কাছে যাওয়া বারণ মোসলমান বলে। নাছোড়বান্দা আমিও দূর থেকে চেটে খাই ওর অশক্য পুষ্পনাভিমূল। জুতোর ফিতে ঘেমে ওঠে, ঘাতক বটের পাতা পায়ের কাছে ঝরতে থাকে ক্রমশ।

জিভের লকলকে তরোয়ালে কেটে ফেলি কমলালেবুর শরীর। বিসর্পিত অন্ধকার চিরে কান ঘেঁষে ঘ্যানর ঘ্যানর বাজে ''জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচোযুগোশোভিত মুক্তাহারে''। এক খাবলা নুন মুখে পুরে সুরভিত মদের নেশায় মেতে উঠি গয়বি-খেলায়। 

সে একাধারে আমার মেয়ে, স্ত্রী, মা, আমার প্রেমিকাও বটে, ও আমার সরসিবালা। বল্কল ত্যাগ করে কিরাতের মতো ফিরে আসি ময়লা কুঠিরে...


সত্তা

স্নেহ
বাউলানী থালায় ধোঁয়া ওঠা ডাল ভাতের গন্ধে মা রঙা আঁচল উড়তে দেখি...

আশ্রয়
বিচ্ছেদের নামতা গুনে ফেরা শঙ্খচিলের ডানায় হেমন্তের ঘ্রাণ মাখানো সেপিয়া বিকেল এঁকে রাখা।

অভিমান
বোবা টেলিফোন, একঝাঁক কথারা যার ভেতর কাঁটাতার হয়ে ঘিরে থাকে জামরুল বন।

ভয়
নীল স্কার্ট পরা মেয়েটির কনুই বেয়ে নেমে আসা কাঠি আইসক্রিমের তরল যে ছেলেটি তার সবুজ রুমালে আলতো করে শুষে ফেলে, তার ঘোলাটে চোখে মাঝেমধ্যে বারুদ-গন্ধী আগুন জ্বলে...

অনুযোগ
কানের পালকে পোঁতা একগাছা ধারালো সেফটিপিন। গুগল সার্চ করে একদিন ঠিক ব্লেড হয়ে ফিরবে তোমার ঠিকানায়।

বিচ্ছেদ
বিকেল পাঁচটায় ফ্ল্যাটের নীচে যে পুরুষ রজনীগন্ধা হাতে দাঁড়ায় রোজ তার ঠোঁটের কপাটে হার্ট সার্জারির রঙিন বিজ্ঞাপন ঝুলতে থাকে...

কান্না
চেরাই করা কাঠের পাঁজরে লেগে থাকে কুঠারের স্নেহওম। দিন গড়ালে আসবাবপত্রে পরিণত হয় ।

প্রশ্ন
আচ্ছা ডুবন্ত টাইটানিকের মতো তিরতির করে কেঁপে ওঠা সংসার নামের যাবতীয় অসুখ মুছে ফেলার ডিলিট বটন হয়না কেন?


জেহাদী অস্তিত্ব 

১.
জল আর পানিতে ঘেঁটে ফেলি জেহাদের নুন।
সাম্যবাদ আসলে সবুজ রঙের আলো,
নিভে গেলে অবোধ শিশু মুখস্থ করে সন্ধ্যার শাঁখ ও ভোরের আজান।

নগ্ন প্রেমিক প্রেমিকার নাভি ছুঁয়ে যায় ধর্মীয় চুম্বন।
দূরে কোথাও ছোট্ট কুয়োর জলে মধুক্ষরা চাঁদ শুয়ে পড়ে চুপচাপ।
নিমবৃক্ষে টাঙানো বৈরাগ্য শোক।

পান্তা ভাতের সাথে মেখে এভাবেই খেয়ে ফেলি নিজেরাই নিজেদের নিরীহ ভারত।

২.
সরসীকোল থেকে ঝরে যায় বাদামী রোদ।
আঙুলের চামড়ায় ঝোলে সময়ের ক্ষয়।
মেয়েলী গন্ধে ধুলো জমে ঈশ্বরের ক্ষমাহীন চোখে।

গায়ে যৌবন রঙ মেখে মেয়েটি তুলে নেয়
দায়িত্ব ভরা মোহর কলসী কাঁখে।
অনেকখানি নিঃস্ব হলে শেষ ট্রেনে ফেরে
ক্ষীণ হয়ে আসা বিহানআলোর কাছে।

৩.
পাখির ডানায় লেগে থাকা ভ্রমর-বিকেল
ব্রাশ দিয়ে সাফ করে কেউ রোজ।
ময়লা টিকিট শুষে নেয় ধুঁকতে থাকা শহরের এঁটো ঘাম।

খুরিতে লেপটে থাকা শেষ চায়ের মতো বিক্ষিপ্ত উষ্ণতা ভাগ করে নেয় সন্দিগ্ধ শিকড়।
গলার শিকলে টান পড়ে, দরজার বাইরে সফেদ
চাদর গায়ে হাঁটু মুড়ে বসে ক্ষয়াটে বসন্ত।

অদূরে জমির বুক থেকে ছিঁড়ে যায় ধানের পোশাক।

0 comments: