0

গল্প - ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

Posted in


গল্প


নিজস্বী 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী 

কেউ বলে প্রেম এক মিষ্টি অনুভব আবার কেউ বলে প্রেম এক মিষ্টি যন্ত্রণা যা হৃদয়কে কষ্ট দেয়। হয়ত সত্যি কিন্তু ওই যন্ত্রণা পাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়। প্রেম থেকে প্রেমিক প্রেমিকা পায় এক অদ্ভুত শিহরণ যা দেয় তাদের তৃপ্তি। মেটায় সমস্ত চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। জাতি, ধর্ম, ধনী, দরিদ্র এর প্রতিবন্ধক নয়। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন প্রেমের ইতিহাস তৈরি হয়েছে যা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ। এই নিয়ে লেখক, সাহিত্যিক, সিনেমা পরিচালক সকলে সেই প্রেমের প্রতীককে পাঠক এবং দর্শকের কাছে পরিবেষণ করে সৃষ্টি করেছেন এক অমূল্য রত্নের সম্ভার। মাঝে মাঝে কিছু গল্প অস্বস্তিকর হয়। মানুষ পছন্দ করেন না। কিন্তু অধিকাংশ গল্পই মানুষের মনে দাগ কাটে। তাই মানুষ সেই প্রেমী যুগল কে মনে রাখে এবং হয়ত বাস্তবে কেউ কেউ সেই উদাহরণকে নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করে। আমার গল্পটা এক তরুণ তরুণীর নিজস্বী নিয়ে লেখা। চেষ্টা করছি কিছু নতুন সৃষ্টি করতে। সক্ষম হয়েছি কিনা সেটা বিচারসাপেক্ষ। 



এখনকার ছেলে মেয়েদের প্রেমের মসলা আলাদা। তারা হাতে মোবাইল কানে ইয়ার ফোন আর ব্লু টুথ গুঁজে নিজেদের নিয়ে মসগুল থাকে। ছেলেদের জিনস প্যান্ট চারিদিকে কাটা, মেয়েদের শরীর দেখানোর অদম্য ইচ্ছা তাই সামনে পেছনে সবদিকেই কেমন এক অস্বস্তিকর পোশাক। কাউকে কিছু বলার উপায় নেই। হ্যাঁ ওরা তো স্বাধীন দেশের নাগরিক। যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। আমার আপনার কি? 

পার্কে গিয়ে দেখি অবাক কাণ্ড। একটি মেয়ে আর ছেলে দুজনে বাঁশের মতো এক লাঠি নিয়েছে, তার সামনে মোবাইল! কি হচ্ছে ব্যাপারটা, বুঝতে দেরি হলো। দেখি বটন টিপলেই ছবি উঠছে। সত্যি চায়নার প্রযুক্তিবিদরা এ দেশের ছেলে মেয়েদের মাথা কি করে খেতে হয় তার নিত্য নতুন উপায় বার করছেন। আমরা গাড়ল ওদের প্রযুক্তি নিজেদের দেশের জনসাধারণের ওপর চাপিয়ে বড় গলায় বলি “আচ্ছে দিন”। মানসী, মনিস দুই অন্তরঙ্গ প্রেমী যুগল। ওদের নিজস্বী তোলার স্বাদ বড় বিচিত্র। কখন নদীর বাঁধের ধারে, কখন শক্ত পাথরের ওপর। কখন বা চলন্ত মেট্রোতে। এক এক ছবি তোলে আর আপলোড করে মোবাইলে। মনিস বড়লোকের বকাটে ছেলে কিন্তু মানসী তো তা নয়। মানসী এই সহরে নতুন। দ্বিতীয় বর্ষ ইঞ্জিনিয়ারিঙের ছাত্রী। সাধারণ ঘরের মেয়ে। বাবা মা, মেয়েকে হস্টেলে রেখে নিশ্চিন্ত। মাস-গেলে মোটা টাকা মানসীর এখানকার ব্যাঙ্ক একাউন্টে ক্রেডিট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন মা রাতে একবার মেয়েকে ফোন না করলেই নয়। নানা প্রশ্ন। 

... হ্যাঁরে কি খাচ্ছিস? পড়াশুনো করছিস তো! ভালো রেজাল্ট করতে হবে মা। বাবার চাকরি আর বেশি দিন নেই। 

...এক সঙ্গে এতগুলো প্রশ্নের জবাবে মানসী হাঁপিয়ে ওঠে ..... ওঃ মা, আমি কি বাচ্চা? সব ঠিক আছে। তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। 

মায়ের মন কি বোঝে রে! জীও সিমের জন্য ভিডিও কল করেন মা। মেয়েকে একবার চাক্ষুষ দেখা। মনে শান্তি যাই হোক মেয়ে আমার ভালোই আছে। 

মনিস কলেজে টয়োটা ইনোভা নিয়ে আসে। রোজ নতুন নতুন সাজ। প্রচুর বন্ধু। মানসী ওর ফাঁদে পা দিয়ে নিজের সর্বনাশ যে ডেকে আনছে তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারলোনা। প্রত্যেক দিন ঘোরা, বেড়ান, দামী হটেলে খাওয়া আর গিফট পাওয়া। মানসীর রুম মেট অরুণা, ওকে অনেক বারুণ করে মনিসের সঙ্গে মেলা মেশা করতে। কিন্তু কোনও ফল হয়না। 



উলটে মানসী বলে, তুই বড় জেলাস। আসলে তুই সহ্য করতে পারিস না আমাকে আর মনিসকে এক সঙ্গে। একেই বলে, বিনাশকালে বিপরীতবুদ্ধি। অরুণা চুপ থাকতে বাধ্য হয়। 

এরমধ্যে মনিস বাবার ফার্ম হাউসে মানসীকে নিয়ে এক সন্ধ্যা বেলায় ওঠে। মনিস ড্রিংক করে। ফার্ম হাউসের দারোয়ানকে বলে বাইরে পাহারা দিতে। 

দারোয়ান গরীব হলেও তার নৈতিকতা বোধ আছে। সে মানসীর মধ্যে তার গ্রামের মেয়ের ছবি দেখতে পায়। সে বলে, বাবু আপনার বাবা জানলে আমায় আস্ত রাখবেন না। আপনি বিটিয়াকে তার বাসায় নিয়ে জান। আপনি আমার ছেলের মতন বাবু। এই বুড়ো বাপের কথাটা শুনুন। 

কথাগুলো শুনে মানসীর চৈতন্য উদ্রেক হয়। সে বুঝতে পারে সে এক ফাঁদে পা দিয়েছে। তাই হটাৎ ফার্ম হাউস থেকে দৌড়তে থাকে রাস্তার দিকে। রাস্তায় ছুটতে ছুটতে এক ভ্যান রিক্সা পায়। মানসী তাতেই উঠে পড়ে। গ্রামের রাস্তায় একা মেয়েকে সন্ধ্যা বেলায় ভ্যান রিক্সা বালা দেখে আশ্চর্য হয়। 

মানসী হাত জোড় করে ভ্যান চালককে বলে তার বড় বিপদ তাকে যেন নিয়ে যায়। একটা দশ টাকার নোট ও তার হাতে বাড়িয়ে দেয়। 

ভ্যান রিক্সা-ওয়ালা বোঝে কিছু একটা ঘটেছে। বাক্যব্যয় না করে জোরে প্যাডেল চালায়। 

মনিস ছাড়ার পাত্র নয়। সে তার ইনোভা ছোটাল মানসীর পেছনে। 

দারোয়ান তার পুরনো সাইকেল নিয়ে ছুটল ওদের পেছনে। কে জানে আজ কিছু অঘটন ঘটতে চলেছে কিনা। 

ইতিমধ্যে মনিস, মানসীকে প্রায় ধরতে চলেছে। ঠিক সেই সময় প্রচণ্ড জোরে ইনোভা গাড়ীটা ধাক্কা লাগে রাস্তার ধারের এক গাছে। আসলে মনিস প্রচুর ড্রিঙ্ক করেছিল তাই গাড়ী সামলাতে পারেনি। পাওয়ার স্টিয়ারিং একটু বেসামাল হলেই এক্সিডেন্ট অব্যর্থ। সেই হলো। 

চক্ষের নিমিষে এক দুর্ঘটনা ঘটে গেল। গাড়িটা প্রচণ্ড আওয়াজ করে থেমে গেল। ড্রাইভারের সিটের পাসের জানালা দিয়ে দেখা-গেল মনিসের মাথা-থেকে প্রচণ্ড রক্ত স্রাব হচ্ছে। 

এরমধ্যে দারোয়ান এসে পৌঁছে যায়। ভ্যান রিক্সা চালক গাড়ি থামিয়ে ঘটনা দেখার জন্য নেমে পড়ে। মানসী নির্জীব মানুষের মতন বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সে বিশ্বাস করতে পারেনা তার নিজের চোখকে। সে বুঝতে পারে এখন পুলিশের ঝামেলা হবে। বাবা মা’র কানে সব উঠবে। তার হয়ত পড়া বন্ধ হতে পারে...। 

নিজস্বী ছবিগুলো মোবাইল থেকে সব ডিলিট করে দেয়। কিন্তু মনিসের মোবাইল? সেটার কি করবে? 

0 comments: