0

কৈশোরনামা - প্রতিমা সেনগুপ্ত

Posted in


কৈশোরনামা


নেংটি আর কেলটি ঘরে ফিরল
প্রতিমা সেনগুপ্ত


তখন সবে সন্ধ্যা নেমেছে। চতুর্দিকে দিনের আলো মিলিয়ে যেতেই অন্ধকার ঘিরে ধরল। নেংটি একটু একটু করে নিজেদের ডেরা থেকে বেরিয়ে এলো বাইরে। ওরা ছোটো ইঁদুর। মাত্র তিন মাস বয়স। সাধারণত মায়ের সঙ্গেই বের হয় দু’জনে। কিন্তু আজ মা দিন–দুপুরে কোথায় যেন চলে গেছে! মা – আকারে ওদের চেয়ে অনেক বড়। চলাফেরায় অনেক চটপটে। আর রাস্তা–ঘাট সব মা’র চেনা। মা না থাকাতে, আজ ওরা দু’জনে গুটি গুটি বেরিয়ে পড়ল ওদের আস্তানা থেকে।

একটা মস্ত বড় বাড়ির এক্কেবারে উপরে চিলেকোঠার ঘর। সে ঘরে মেলা জিনিস। একটার উপর অন্যটা চাপানো। বাক্স–প্যাঁটরা, ভাঙা হাঁড়ি–কলসি, খবরের কাগজ, বইয়ের স্তূপ, বেঁটে–মোটা কাগজের পেটি, ভাঙা কোদাল, পুরানো ঠাকুরের মূর্তি এইসবে ভর্তি। তারই মধ্যে একটা মস্ত পেটি, সেটা ছিল একটা পুরানো টিভির বাক্স। তার ভিতর রাজ্যের খড়ের কুচি, কাগজের কুচি আরও নানা কিছু। এই বাক্সের ভিতরেই মা’র সঙ্গে থাকতো ওরা দুই ভাই। কেলটি একটু বড় আর নেংটি একটু ছোটো।

রোজ সন্ধ্যে নামলে, ওরা বাক্স থেকে বেড়িয়ে পড়ে মা’র সঙ্গে। আগে গোটা চিলেকোঠা ঘুরে বেড়াতো। তারপর চিলেকোঠা থেকে বেড়িয়ে ছাদে এবং নীচে নামতে শিখেছে। জলের পাইপ বেয়ে কেমন করে ছাদ থেকে দোতালায়, আবার দোতালা থেকে একতলায় নামা যায়, জানালার কার্নিশ থেকে এক লাফে নারকেল গাছের গুঁড়ি ধরে এক্কেবারে মাটিতে নেমে পড়া যায়, তা মা তাদের শিখিয়েছে। কিন্তু একা একা দু’জনে মিলে চিলেকোঠা ছেড়ে বের হয়নি কখনও।

আজ সাহস করে, দু’জনে মিলে মার দেখানো পথে প্রথমে ছাদে নামে, ছাদ তখন একদম সুনসান। একটু বাদে কেলটি এগিয়ে যায় জলের পাইপের কাছে। সঙ্গে নেংটিকেও ডেকে নেয়। তারপর দুই ভাই মিলে জলের পাইপ বেয়ে নীচে নামতে থাকে। দোতালার কার্নিশ বাঁচিয়ে নেমে যায় একতলায়। একতলার বাথরুমের কার্নিশের উপর দু’ভাই জড়াজড়ি করে বসে ছিল। এরপর কি করবে, ঠিক বুঝতে পারছিল না। ঠিক সেই মুহূর্তে পাশের কার্নিশ থেকে দু’টো চোখ জ্বল জ্বল করে উঠল। বিড়াল! এখন কি করে? কোনও মতে দু’জনে কাঁপতে কাঁপতে পিছু হঠতে থাকল। কিটকিট কিটকিট শব্দে দু’জনের দাঁতে দাঁত লেগে কর্তাল বেজে চলল। হুলোটা সেই মুহূর্তে উঠে দাঁড়িয়ে, বিষম রকমের চোখ পাকিয়ে, গোঁফ ফোলাতে আরম্ভ করল। নেংটি এক লাফে জলের পাইপ ধরে দু’পা নীচে নেমে, বাথরুমের জানালা দিয়ে সুড়ুত করে বাথরুমের ভিতরে ঢুকে পড়ল। সেই দেখে কেলটিও পিছন পিছন গিয়ে বাথরুমে উপস্থিত। জানলা দিয়ে ঢুকে দু’জনে মিলে এক দৌড়ে কমডের সিস্টার্নের পিছনে গিয়ে উপস্থিত হলো। যাই হোক, এভাবে বিড়ালের হাত থেকে কোনওমতে প্রাণ বাঁচলেও, কি–রকম সোঁদা সোঁদা, ভিজে ভিজে গন্ধের সম্পূর্ণ অপরিচিত – নতুন জায়গায় এখন কি করবে, কিভাবেই বা ওখান থেকে বেরোবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। দু’জনে জড়াজড়ি করে, সিস্টার্নের পিছনে, যেখানে দেওয়ালের সঙ্গে স্ক্রু দিয়ে জোড়া, তার উপর কোনও মতে বসে রইল।

হঠাৎ একটা জোর শব্দ হয়ে বাথরুমের দরজাটা খুলে গেল। তারপর আলো জ্বলে উঠল বাথরুমে। কেলটি আর নেংটির বুকের ভিতর ঢিপ্ ঢিপ্ শব্দ হতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে, সিস্টার্নের হাতলে জোর চাপ পড়ে। সিস্টার্নটা কাঁপতে কাঁপতে, প্রবল বেগে, সশব্দে প্রচুর জল বেরিয়ে যায়। কেলটি আর নেংটি সেই ঝাঁকুনিতে মাটিতে পড়ে যেতে যেত, কোনও মতে সামলে নেয়।

বাথরুমের লাইট নিভে গিয়ে, দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, কেলটি নেংটিকে বলে, ‘ভাই নেংটি, এ কিরকম অদ্ভুত জায়গারে? শিগগির চল পালাই।’

নেংটি বলে, ‘কোথায় যাবি রে? বাইরে বেরলে গোদা হুলো, আমাদের দু’জনকেই খেয়ে ফেলবে।’

কেলটি ঢোক গিলে বলল, ‘কিন্তু এটা কোন জায়গা বলতো? মা’র সঙ্গে এরকম কোনও জায়গায় তো আমরা আসিনি কখনও। এখান থেকে বেরবো কি ভাবে? চিলেকোঠায় ফিরবো কি করে? মা যদি চলে আসে – আমাদের তো দেখতে পাবেনা, বল? নেংটি বলল, ‘কোন দিকটা দিয়ে ঢুকলাম, এখন আর মনে করতে পারছি না। চল, কোথা দিয়ে বেরনো যায়, সেটা খুঁজে দেখি’।

দু’জনেই সিস্টার্ন থেকে নামলো মাটিতে। গোটা মাটিটা ঘুরে দেখল – কেবল একটা বালতি ভর্তি জল আর জল বেরোবার গর্ত, তাও ঝাঁঝরি দিয়ে বন্ধ। হঠাৎ বাথরুমের দরজার ছিটকিনি খোলার শব্দ হলো, দু’জনেই এক লাফে কমডের উপর উঠে পড়ল। কিন্তু সিস্টার্নের পিছনে পালাবার সময় ছিলনা। তাই দু’জনেই নেমে পড়ল কমডের ভিতর। নীচে নামতেই জল এবং তারপর একটা গর্ত। দু’জনেই গলে গেল সেই গর্ত দিয়ে। কিছুটা যাওয়ার পর পাইপটা যেখানে বেঁকে গেছে, বাঁকের ধারে দু’জনে মিলে বসে রইল। খানিক বাদে প্রচণ্ড জোর, সশব্দে, প্রচুর পরিমাণ জল ওদেরকে স্নান করিয়ে গায়ের উপর দিয়ে চলে গেল অনেক নীচে! আর একটু হলে দু’জনে জলের সঙ্গে ভেসেই যাচ্ছিল আর কি! কতক্ষণ যে দু’জনে মিলে দাঁতে দাঁতে কর্তাল বাজিয়ে কেটে গেল তার ঠিক নেই। তারপর এক সময় সব কিছু চুপচাপ দেখে, দু’জনে মিলে আস্তে আস্তে উঠে এলো উপরে।

কেলটি বলল, ‘যে করেই হোক এখান থেকে বেরোবার কোন উপায় বার করতে হবে রে।’

সারা রাত্রি, দু’জনে গোটা বাথরুম ঘুরেও সেই রাস্তাটা খুঁজে পায়নি যেটা দিয়ে তারা বাথরুমে ঢুকেছিল। ভোরের মুখে আবারও বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজে, দু’জনে মিলে ঢুকল গিয়ে পাইপের ভিতর এবং বারংবার জলস্রোত ওদেরকে ভিজিয়ে দিয়ে গেল।

দুপুরের দিকে বাথরুম খানিক শান্ত হলে, দু’জনে পাইপের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো। দু’জনেরই বেজায় খিদে পেয়েছে। বাথরুম থেকে বেরোবার পথও বার করতে হবে।

আশ্চর্য, বাথরুমের দরজাটা খোলা। দু’জনে গুটিগুটি বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে। একটা বড় ঘরের মধ্যে পৌঁছে দু’জনে ছুটে গিয়ে ঢুকল ফ্রিজের তলায়। কিন্তু এ জায়গাটা নিরাপদ নয়। তাছাড়া, খাবারের খোঁজ করাও দরকার। চারিদিক শান্ত দেখে, ছুটে গিয়ে ঢুকে পড়ল একটা আলমারির পিছনে। আবারও ইনভার্টারের পিছনে। এমনি ঘুরতে ঘুরতে এক সময় রান্না ঘরটা খুঁজে পেল। এ ঘরে কিছু খাবারের গন্ধ নাকে আসছিল। ঘরটা একদম ফাঁকা, তাই এক লাফে চড়ে বসল গ্যাস ওভেনের উপর। তারপর সিঙ্কের উপর। সিঙ্কের ঝাঁজরির মুখে কিছু ভাত পড়ে ছিল। দু’জন মিলে সে’কটি খেয়ে ফেললো। সিঙ্কের পাশে, একটা কালো রঙের প্যাকেটে কিসব? গুচ্ছের চা–পাতার পিণ্ড পেরিয়ে খুঁজে পেল আধ–খাওয়া আলু আর মাছের কাঁটা। দু’জনে এতেই খুশি। ঠিক তখনই, কাদের জুতো পায়ে চলাফেরার শব্দ শোনা গেল। দু’জনেই সিঙ্ক থেকে এক লাফে নেমে গ্যাস সিলিন্ডারের পিছনে গিয়ে লুকল। পায়ের শব্দ কমে যেতেই, আবারও রান্না ঘর থেকে বড় ডাইনিং–এ এসে ইনভার্টারের পিছনে চুপ করে বসে রইল। সন্ধ্যে নাগাদ কেলটি বুঝি একটু ঘুমিয়ে পড়ে ছিল। হঠাৎ কি একটা গায়ে লাগতেই, তিড়িং করে লাফিয়ে উঠল। কেউ ঘর ঝাঁট দিচ্ছে। ঝাঁটার মাথাটা ইনভার্টারের নীচে ঢুকে কেলটিকে জাগিয়ে দিল। কিন্তু নেংটি কোথায় গেল? এদিক ওদিক কোন দিকেই নেংটিকে দেখা গেল না। না ফ্রিজের তলায়, না ইনভার্টারের পিছনে। নাই শো–কেসের পাশে। ডাইনিং টেবিল আর টিভি স্ট্যান্ডের পিছনেও খুঁজে দেখল। নাহ! নেংটি কোথাও নেই। ঘরের মধ্যে আবারও চলা–ফেরার শব্দ হয়। চুপ করে টিভি স্ট্যান্ডের পিছনে বসে থাকে কেলটি। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি নামে। সুযোগ বুঝে কেলটি ডাইনিং থেকে সরে আসে বেডরুমে। মস্ত খাটের তলায় এক তারা খবরের কাগজ, ঝাঁটা টপকে কতগুলি দলা পাকানো প্লাস্টিকের পিছনে গিয়ে বসে। হঠাৎ মনে হলো, খাটের পাশে আলমারির নীচে কি যেন নড়ল? ঐ তো নেংটি। নেংটিকে দেখে আহ্লাদ আর ধরেনা। ওদিকে নেংটি এক লাফে, পাশের কাবার্ডের আধা খোলা দরজা দিয়ে গলে গেল কাবার্ডের ভিতর। বেরিয়ে এলো কাবার্ড থেকে, আবারও ঢুকে গেল। ঠিক সেই সময় বেডরুমে পায়ের শব্দ এবং কাবার্ডের পাল্লা খোলার শব্দ হল। সর্বনাশ, নেংটি তো ওটার ভিতরেই রয়েছে। কিন্তু নেংটিকে দেখা গেলনা। মনে হয় দরজা খোলার শব্দেই ও ভেতরে ঢুকে গেছে। কিছুক্ষণ পরে কাবার্ডটা বন্ধ হয়ে গেল।

কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পর, সব চুপচাপ দেখে কেলটি গুটিগুটি কাবার্ডের দিকে এগিয়ে আসে। কাবার্ডের দরজাটা খোলার জন্য হাতড়ায়। নেংটি তো ভেতরেই রয়ে গেল। কিন্তু দরজাটা এতো শক্ত করে বন্ধ – কোনও মতেই খোলা যাচ্ছে না।

কাবার্ডের ভিতর থেকে কে যেন দরজায় ধাক্কা দিল। ঐ তো, নেংটি কাবার্ডের ভিতর দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। দরজার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে, লাফালাফি করে ধাক্কা দিতে লাগল। কেলটি বুঝতে পারল, নেংটি ভিতরে আটকা পড়ে গেছে। সে বাইরের থেকে দরজার পাল্লা টানাটানি করার চেষ্টা করল। কিন্তু কোন ভাবেই খোলা যাচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করে দু’জনেই ক্লান্ত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ সব কিছু চুপচাপ। আবারও নেংটি একবার দরজার মাঝখানে ধাক্কায় আবার অন্য কোণায়। ক্লান্ত হয়ে পড়ে। চুপ করে বসে থাকে কাবার্ডের একটা তাকে। তাকে গুচ্ছের বই–খাতা। একটা ফাইলের কোণা দাঁত দিয়ে চিবিয়ে কুচিকুচি করে। এদিকে কেলটি বাইরের থেকে অনেক চেষ্টা করে দরজা সামান্য ফাঁক করতে পারল না। তখন গোটা দরজাটার সমস্ত কোণাগুলো খুঁজতে থাকে – কোথাও কোন ফাঁক আছে কিনা? দরজার একদম উপরে এক জায়গায়, দু’টো পাল্লার মাঝে কয়েকটা ট্রেনের টিকিট ভাঁজ করে গোঁজা। কেলটি আস্তে আস্তে টিকিট গুলো দাঁত দিয়ে কাটতে আরম্ভ করল। বেশ কিছুক্ষণ পরে, যখন টিকিটের বেরিয়ে থাকা অংশ প্রায় কুচি কুচি করে ফেলেছে, দুই পাল্লার মধ্যে ফাঁক হয়ে গেল। কেলটি তো মহা খুশি। এক লাফে কাবার্ড থেকে মাটিতে নেমে পড়ল। আর ঠিক তখনই ঘরের বাতিটা জ্বলে উঠল। মানুষের পায়ের শব্দ বেড়ে গিয়েছে। কেলটি এক দৌড়ে দেওয়াল ঘেঁসে ডাইনিং–এ পালিয়ে এলো, তারপর দরজা ফাঁকা পেয়ে বাথরুমে গিয়ে ঢুকল।

বাথরুমের বালতির পিছনে গিয়ে চুপ করে বসে ছিল কেলটি। কিছুক্ষণ বাদে বাথরুমের লাইট জ্বলে ওঠে। কেলটি ভয় পেয়ে এক লাফে সিস্টার্নের পিছনে পালিয়ে যাওয়ার সময়, সিস্টার্নের উপর রাখা কমড পরিষ্কার করার হাতল ওয়ালা ব্রাশে ধাক্কা খায়। ব্রাশটা গিয়ে কমডের ভিতরে পড়ে। কেলটি কোনওমতে সিস্টার্নের পিছনে চলে যায়। কিন্তু কে যেন সিস্টার্নের উপর লাঠির বাড়ি মারে। সেই শব্দে কেলটি ভয়ানক চমকে ওঠে। বুকের ভিতর ধড়াস্ ধড়াস্ শব্দ হতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সিস্টার্নের ঢাকনি খোলার শব্দ হয়। কেউ কিছু খুঁজছে। ঢাকনি খোলার ঝাঁকুনিতে কেলটি মাটিতে পড়ে যায়। তার সামনে একটা মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে কেলটিকে দেখে লাঠিটা মাটিতে ঠোকে। কেলটি এক লাফে কমডে উঠে, পাইপে ঢুকে পড়তে চায়। কিন্তু কমড পরিষ্কার করার ব্রাশটা পড়ে ওটার মুখ আটকে ফেলেছিল। নিরুপায় কেলটি, এক লাফে সিস্টার্নে চড়ে বসতে গেলেই, ঢাকনা খোলা সিস্টার্ন ভর্তি জলের মধ্যে ঝপাৎ করে পড়ে যায়। মানুষটি কেলটিকে খুঁজে না পেয়ে সিস্টার্নের ঢাকনা খুলেছিল। তাই কেলটি সোজা গিয়ে জলে পড়েছে। কিন্তু জলে পড়েই সে এক লাফে সিস্টার্নের ধারে উঠে বসে। চুপচুপে ভেজা কেলটির সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে ওঠে। বেচারা ভয়ও পেয়েছে খুব। কোথায় পালাবে? হঠাৎ উপর দিকে তাকাতেই জানলাটা চোখে পড়ল। এই জানলাটা দিয়ে ওরা বাথরুমে ঢুকেছিল। এক লাফে জানলাটায় চড়ে বসে। কিন্তু জানলাটা বন্ধ। এবার কি করবে? দুই পায়ে ভর দিয়ে জানালার তাকে বসে, দুই হাতে চোখ ঢেকে বসে থাকে কেলটি। বাঁচার আর কোন রাস্তা নেই! কিছুক্ষণ এভাবে বসে থেকে আবারও জানলা থেকে এক লাফে কমডে নামে। কিন্তু এবার কমডের মুখটা খালি ছিল। ব্রাশটা কেউ তুলে ফেলেছে। কেলটি সোজা ফুটো দিয়ে পাইপের মধ্যে চলে যায়। খানিক বাদে প্রচুর জলস্রোত তাকে ভিজিয়ে দিয়ে চলে যায়।

পাইপের ভিতর বসে কেলটি ভাবতে থাকে বাথরুমের জানলাটা বন্ধ কেন? ওটা দিয়েই তো ওরা বাথরুমে ঢুকেছিল। ওটা খোলা থাকলে, ওটা দিয়ে বেড়িয়ে জলের পাইপ বেয়ে চিলেকোঠায় চলে যাওয়া যাবে। মা কি করছে? ওদের কথা ভাবছে নিশ্চয়। নেংটি কি কাবার্ড থেকে বেরোতে পারল? কাবার্ডের দরজাটা কেলটি খুলে ফেলেছিল। সাত–পাঁচ ভাবতে ভাবতে কেলটি ঘুমিয়ে পড়ল।

হঠাৎ কে যেন তাকে ধাক্কা দিল। চোখ মেলে দেখে নেংটি বাসে আছে। দুই ভাইয়ের সে কি আনন্দ। দু’জনে মিলে খানিক নেচে নিলো। এরপর ওদের চিন্তা হলো, বাথরুম থেকে কিভাবে বেরোবে? জানলাটা খুঁজে পাওয়া গেলেও সেটা যে বন্ধ! গুটি গুটি দু’জনে পাইপ বেয়ে উঠে এলো একবারে সিস্টার্নের মাথায়। এক লাফে জানালার তাকে চড়ে বসল। আশ্চর্য! জানলাটা খোলা! কেলটি ডেকে নেয় নেংটিকে। জানলা দিয়ে বেরিয়ে, এক লাফে চড়ে বসে জলের পাইপে। তখন চারিদিক অন্ধকার। রাত্রি কাটতে এখনও অনেক সময় বাকী। দু’জনে মিলে এক দৌড়ে জলের পাইপ বেয়ে চলে আসে ছাদের কার্নিশে। চিলেকোঠার ঘরে মা নিশ্চয় খুব চিন্তা করছে ওদের জন্য। ওদের দেখে, মা যে খুশিতে কি করবে – তাই ভাবতে ভাবতে আর নাচতে নাচতে দুই সোনার টুকরো ছেলে, চলল চিলেকোঠার দিকে।

0 comments: