0

ধারাবাহিক - সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

Posted in




ধারাবাহিক


এক কিশোরীর রোজনামচা - ১৭
সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়



Diary Entry - 15
2nd. September, 1942, Wednesday.



প্রিয় কিটী, 


ভীষণ বিরক্ত লাগছে। দুএক দিন আগে, শ্রী ও শ্রীমতী ভ্যান ড্যানের মধ্যে বেশ ভাল রকম ঝগড়া হল, আর তা’ আমাদের শোনার নামে, সহ্য করে যেতে হল ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তাদের ঝগড়া শেষ হয়। এ’রকম অভব্য ঝগড়া আমি বা আমরা, মানে মারগট, মা কেউই কোনদিন আগে দেখেছি বা শুনেছি বলে মনে হয় না। অসম্ভব চীৎকার করে নিজে নিজেকে আরেক জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ করা, প্রতিষ্ঠা করার যে অভদ্রজনিত চেষ্টা সেদিন দেখলাম, তার অভিজ্ঞতা অন্ততঃ আমার ত’ ছিলই না, মারগটেরও ছিল না বলে’ই আমার বিশ্বাস। কারণ আমরা কোনদিন আমাদের মা আর বাবাকে এ’রকম করে চীৎকার করে পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলতে বা দোষারোপ করতে দেখি নি। আমার মনে হয় মা আর বাবাও কোনদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না, যে তাঁরা নিজেরা নিজেদের সঙ্গে বা অন্য কারুর সঙ্গে, এ’রকম চীৎকার করে কথা বলছেন বা ঝগড়া করছেন। অথচ তুমি শুনলে অবাক হয়ে যাবে, ওদের মধ্যে বিরোধের মূল বিষয়টা ছিল অতীব তুচ্ছ এবং সাধারণ, যা’ নিয়ে আর যাই করা যাক না কেন, এ’ভাবে চীৎকার করে ঝগড়া করা যায় না। তবুও তাঁরা ঝগড়া করলেন, এবং নিজেদের শক্তি ক্ষয় করলেন। আসলে একটা কথা আছে না, প্রত্যেকের পছন্দ বা অপছন্দের প্রকরণগত আকৃতি বা প্রকৃতি একেবারে নিজস্ব। তুমি হাজার বললেও বা শেখালেও তারা নিজেদের বদলাতে পারে না। 


বিষয়টা বলি, ত’ না’হলে তুমি হয়ত ভাববে আমি বাড়িয়ে বলছি। ওনাদের মধ্যে বিরোধ বা ঝগড়ার বিষয় ছিল ওনাদের ছেলে, পিটার। তাই সারাটা ঝগড়া তাকেও চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য শুনতে হল। আর শুধু শুনতে নয়, সে’গুলো সহ্যও করতে হল। পিটার, তোমায় আগেই বলেছি, এমনিতেই অলস জবুথবু আর অহেতুক অভিমানী। তার প্রকৃতিটাই এ’রকম। তাকে বাড়ির সকলে যে খুব একটা গুরুত্ব দেয়, সেটা নয়। বরং সে একা একা থাকতেই বেশী ভালবাসে। গতকাল হঠাৎ পিটারের হাভভাবে এক অদ্ভুদ উদ্বিগ্নতা দেখা যায়। এর আগে সাধারণভাবে এই ধরণের উদ্বিগ্নতা কোনদিনই দেখা যায় নি। অল্প একটু খোঁজ বা জিজ্ঞাসা করতেই ওর উদ্বিগ্নতার কারণটা বোঝা গেল। পিটার সকালে উঠে দেখে, অর জিহ্বাটা হঠাৎই লালচে বর্ণের পরিবর্তে কেমন যেন নীলচে বর্ণের হয়ে গেছে। অবশ্য বেশীক্ষণ এটা ছিল না, ভাল করে মুখ ধুতেই আবার আস্তে আস্তে জিহ্বাটা আর পূর্বের লালচে আভায় ফিরে এল। আমার মনে হয়েছিল, জিহ্বাটা যত তাড়াতাড়ি নীলচে বর্ণের হয়েছিল, তার চেয়েও দ্রুত সে তার পূর্বের বর্ণে ফিরে আসে। এ’সব শুনে তুমি এখনই বুঝতে পারবে না, ঝগড়াটা কেন? আরও শোন, তারপর কারণটা খুঁজতে চেষ্টা করো। 


জিহ্বাটা তার পুরানো রঙে ফিরে এলে কি’হবে, পিটারের ধরণটাই যে অবাক করার মতো। জিহ্বাপর্ব মেটার পর দেখি, পিটার ঘুরছে, গলায় একটা বড় মাফলার জরিয়ে অনেকটা সেনাপ্রধানদের মতো করে পড়া। শুধু পড়েই ক্ষান্ত হয় নি, গলায় মাফলারটা পেঁচিয়ে পড়ে ঘাড় মাথা সোজা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কারণ কি? জিজ্ঞাসা করাতে বলল, তার না’কি ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যাথা, ঘোরাতে পারছে না। একমাত্র সোজা করে রাখলে একটু আরাম পাচ্ছে। এ’কে ত’ আমরা পরিভাষায় বা চিকিৎসার ভাষায় “স্টিফ-নেক” বলে থাকি। ভাল কথা, এটা না’হয় হোল। এরপর শুনলাম, তার না’কি বুকে, পেটে, কিডনিতে এমন কি, ফুসফুসেও ব্যাথ্যা। জান, আমার যেন মনে হচ্ছে, পিটার কোন একটা স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে, অথবা, বিশেষ কোন কারণে এই পরিস্থিতিতে এক অমূলক আতঙ্কের শিকার হয়ে পড়েছে, (পরিভাষায় এ’কে Hypochondria বলে, বলে শুনেছি। সত্যি পিটার যে রকম করছে, তাতে এ’ছাড়া আর কি’ভাবেই বা’ এটাকে ব্যাখ্যা করবে !! )। 


আমরা ভিতরে খুব ভাল আছি এ’কথা কি সত্যিই বলেতে পারি? বরং এ'টুকুই বলতে পারি, আমরা আছি, এখনও আমরা মানুষের মত বাস করছি। যদিও জানি, যে কোন সময় আমরা যদি ধরা পড়ি, তা’হলে আমাদের কিহবে তা’ আমরা জানি না। এই যে আমার মা আর শ্রীমতী ভ্যান ড্যান একই সাথে একই সঙ্গে আছেন, তাদের সম্পর্ক ওপর থেকে দেখলে মধুর আর সুন্দর বলে মনে হবে। তবুও দুজনেই দুজনার প্রতি আকৃষ্ট, এ’কথা কি বলা যায়? না, একেবারেই বলা যায় না। তাদের সম্পর্ক মধুর না, অম্লমধুর? কেন এ’রকম সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তারও একটা বিশেষ কারণ আছে। তোমায় একটা ছোট্ট কথা বা ঘটনা বলি, তা’হলে তুমি বুঝতে পারবে। জান প্রথম দিন থেকে আমাদের দুটি পরিবারের পোশাক পরিচ্ছদ, শয্যা সামগ্রী সব কিছু রাখার জন্য একটা কাবার্ড ছিল। হঠাৎ দেখি শ্রীমতী ড্যান, কোন কিছু না বলে ওর ভেতর থেকে ওনাদের ব্যবহার করা তিনটে বিছানার চাদর টেনে বের করে নিলেন। আসলে ওনার মনে হয়েছিল, বা ভেবেছিলেন, আমরা হয়তঃ ঐ গুলো ব্যবহার করি। এবং তা’ করি ওনাদের না জানিয়ে। কিন্তু উনি খুব ভাল করেই জানতেন যে ওখানে, মায়ের নিজের হাতে বোনা তিনটে খুব সুন্দর চাদর আছে। আর সে’গুলোই আমাদের ব্যবহার করার পক্ষে যথেষ্ট। ওর বাইরে আর চাদর আমাদের লাগেও না, বা লাগার কথা নয়। তাই ওনার ওই বের করে নেওয়ার ভঙ্গীটাই আমাদের কাছে বেশ বিস্ময়কর লেগেছিল। মা হয়তঃ বা’ কিছুটা অপমানিতও হয়েছিলেন। আমরা দেখলাম, ওনার দেখাদেখি, মাও, কাবার্ডের মধ্যে থেকে, বাধ্য হলেন আমাদের জিনিষগুলো বের করে নিতে। বিষয়টাকে তুমি কখনই দৃষ্টিসুখকর বলবে না। 


আরও একটা বিষয়ে শ্রী মতি ড্যানের মধ্যে বিদ্বেষ পোষা ছিল। আমরা সেটাও আগে থেকে বুঝতে পারিনি। তিনি কেন জানিনা, ভাবতেন, দুপুর বা নৈশ খাবারের সময়, আমরা শুধুই তাঁর বাসনগুলোই ব্যবহার করি। আর আমাদের নিজেদেরগুলো সরিয়ে এবং সজিয়ে রেখে'দি । সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তিনি আড়াল-আবডাল থেকে দেখার চেষ্টা করতেন, আমরা আমাদের বাসনগুলো কোথায় সরিয়ে রেখেছি। তিনি জানতেন, সেগুলো সামনে ছিল না। সেগুলো আনেক ভিতরে রাখা হয়েছিল, জায়গার অভাবে। চিলে কোঠার ছাদে একটা ভাঙ্গা প্যাকিং বাক্সের মধ্যে করে, আর সব ভাঙ্গা প্যানিং বাক্সের স্তূপের পিছনে সেগুলোকে একটা কার্ড বোর্ডের বাক্সের ভিতরে গাদাগাদি করে রাখা ছিল। এমন ভাবে ছিল যে চট করে সেগুলোকে বার করে নিয়ে আসার উপায়ও ছিল না। আসলে তিনি আমাদের এড়িয়ে, বা আমাদের চোখের আড়ালে সেগুলোকে খুঁজতে, বা বের করে আনতে পারতেন না। কারণ তা’ সম্ভবও ছিল না। বিষয়টা আমাদের ইচ্ছাকৃত না হলেও, এর ফলে, বাসনগুলো অক্ষত ছিল, আর সেটাই ছিল আমাদের কাছে অন্ততঃ একটা স্বস্তির বিষয়। কিন্তু ঐ যে বলে বিষয়টার সবকিছু স্বস্তিদায়ক হলেও, কোন কোন সময় ভাগ্যটাই খারাপ হয়। আর সেই খারাপ ভাগ্যের উৎস হলাম যথারীতি আমি। আমার ভাগ্যটাই খারাপ, তা’না হলে, গতকালই, নৈশ্য খাবারের সময়, আমার হাত থেকেই পড়ে শ্রীমতী ড্যানের স্যুপের বাটিটাই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল! প্রচণ্ড রাগটাকে কিছুটা ভিতরে চেপে, রাগমিশ্রিত বিরক্তিপূর্ণ গলায় শ্রীমতী ড্যান বেশ জোরের সঙ্গেই আমায় বললেন, “তুমি কি সাবধানে যত্নের সঙ্গে জিনিষ ব্যবহার করতে শেখনি? না, ব্যবহার করতে পার না? দেখলে ত’, আমার সুন্দর শেষ স্যুপের বাটিটা ভেঙ্গে ফেললে !!” আমি কি’ আর বলব !! 


মিঃ ভ্যান ড্যান অবশ্য তাঁর স্ত্রীর মতো ছিলেন না। তিনি আমার সাথে ভাল ব্যবহার করতেন। অবশ্য এটাও ঠিক এখানে আসার পর থেকেই মিঃ ভ্যান ড্যানের আমার প্রতি ব্যবহার আগের চেয়ে আনেক ভাল হয়েছে। তার আগে ত’ উনি আমায় মানুষ বলেই মনে করতেন না। প্রার্থনা করি, ওনার এই সুন্দর ব্যবহার যেন বজায় থাকে। অন্ততঃ আমরা যে’ ক’দিন এখানে আছি, সে ক’দিন যেন উনি আমাদের সাথে বিশেষ করে, আমার সাথে এ’রকমই ব্যবহার বজায় রাখেন। 


যাগকে, যে কথা বলছিলাম, মা কিন্তু ঐ ঘটনার পরদিন সকাল বেলায় আমায় বেশ ভালরকম বকুনি দিলেন। সঙ্গে ভাল ভাল কিছু উপদেশও দিলেন। আমি চুপচাপ শুনলাম। জানই ত’, মায়ের এইসব উপদেশাবলী আমার একদম অসহ্য লাগে। মা’ত আর নিরপেক্ষভাবে আমায় বকছে না। মা’ত জানে মিসেস ভ্যান ড্যান সাধারণভাবে আমার সঙ্গে কি’রকম ব্যবহার করেন, আর বিশেষকরে গতকাল আমায় কি’ভাবে কথাগুলো বললেন। উনি মোটেই আমার সাথে ভাল ব্যবহার করেন নি। তাই আমিও ওনার সাথে ভাল ব্যবহার করতে পারব না। আমি মা’ নই। তাই মা যদি ভাবে, আমি মায়ের নত অন্যের খারাপ ব্যবহার সহ্য করে নিয়ে, তার সাথে ভাল ব্যবহার করব, তা’হলে মা খুবই ভুল ভাবছে। অন্যের খারাপ ব্যবহার সহ্য করে, আমি ভাল ব্যবহার করব, এ’কথা যেন মা কখনই না ভাবে। 


মায়ের চেয়ে বাবার কথা শুনতে আমার বেশী ভাল লাগে। বাবা আমার কাছে সবথেকে প্রিয়। হয়তঃ কোন কোন সময়, বিশেষ কোন কারণে, আমায় বকাবকি করতেই পারেন। এবং করেনও। কিন্তু তাঁর এই রাগ বা বকাবকির স্থায়িত্বকাল সর্বাধিক পাঁচ থেকে দশ মিনিট। তারপর কাছে টেনে নিয়ে, বুঝিয়ে দেন আমার কি ভুল হয়েছিল, কেন ভুলটা করেছিলাম, ইত্যাদি। 


জান, এখানে দিনগুলো ক্রমেই কেমন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। ভাল লাগছে না। সারাদিন এক জায়গায়, একই লোকের মুখ দেখছি, একই রকম কথা শুনছি। সমস্ত জীবনধারণের বিষয়টাই কেমন আমাদের কাছে একঘেয়ে হয়ে গেছে। আমরা যেন সবসময় এখানে নতুন কিছু একটা খুঁজি। না’হলে বাঁচব কি’করে? এরই মধ্যে গত সপ্তাহে বেশ একটা রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটেছিল। সেই গল্পটা তোমায় বলি। আমাদের একঘেয়ে জীবনের পথে বেশ লোমহর্ষক। 


ঘটনাটা ঘটেছিল। একটা বইকে নিয়ে। বইটা ছিল মেয়েদের বিষয়ে লেখা, তাদের সমস্যা, তার সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে লেখা। আমি অবশ্য পড়িনি। কেননা আমায় পড়তে বারণ করা হয়েছিল। তাছাড়া, বইটার ওপরে স্পষ্ট করে লেখা ছিল, “প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বইটি লেখা হয়েছে”। অতএব, আমি প্রাপ্তবয়স্ক নই, তাই আমি পড়ার উপযুক্তও নই। কিন্তু গোলমালটা হলো অন্যত্র। হঠাৎ পিটারের বিশেষ আগ্রহ জন্মাল বইটা পড়ার জন্য। এবং তার আগ্রহের বিরুদ্ধে কারুর কোন কথাই শুনতে সে আদৌ উৎসাহী ছিল না। 


এই প্রসঙ্গে প্রথমেই তোমায় একটা কথা বলে রাখি। তা’হলে তুমি ব্যাপারটা আরও ভাল করে বুঝতে পারবে। এখানে আসার পর পরই দেখেছি, এখানে কিছু বই আছে। তাছাড়াও মিঃ কোপহৌস ( Mr. Koophuis ) সময়ে সময়ে এসে সেই সব বইগুলো দেখাশুনা করেন আর তখন বেশ কিছু বই দিয়ে যেতেন। নিয়মানুসারে আমি লক্ষ্য করেছি, এখানে যে সব বই আছে সেগুলো ত’ বটেই, উপরন্তু মিঃ কোপহৌস যে বই গুলো দিয়ে যেতেন, সে সব কিছু পড়ার আবাধ স্বাধীনতা ছিল পিটার আর মারগটের। আর আমি ছোট ( !! ) বলে, যত কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল শুধু আমার ওপর। 


যাই হোক, এই বইটা মিঃ কোপহৌস যখন দিয়ে গেলেন পড়ার জন্য, তখন থেকেই গণ্ডগোলের শুরু। আগেই বলেছি, বইটার উপর লেখা ছিল, “মহিলাদের সমস্যা সংক্রান্ত পুস্তক” , এবং “প্রাপ্তবয়স্কদের পড়ার জন্য”। এখান থেকেই বা এটা দেখেই, পিটারের বইটা পড়ার আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে গেল। যেমন করে হোক বইটা পড়ার জন্য সে পাগলের মতো হয়ে গেল। ওকে যখন প্রাথমিক ভাবে বারণ করা হোল, তখন ও ভাবল, বইটা পড়ার অনুমতি মারগট পেলে ও’ কেন পাবে না? আর ও’ যদি না পায়, তাহলে মারগটও যেন না পায়। আসলে ওর মূল চিন্তা ছিল, বইটা পড়ার অনুমতি ওদের দুজন, মারগট আর পিটার নিজে, পাবে ত’? মিঃ কোপহৌস যখন বইটা আমাদের অ্যানেক্সে এসে দিয়ে গেলেন, তখন পিটারের মা শ্রীমতী ভ্যান ড্যান নীচের তলায় কারুর সাথে আস্তে আস্তে কথা বলছিলেন। সেই অবকাশে, পিটার মিঃ কোপহৌসের কাছ থেকে বইটা নিয়ে, চট করে ওটার মলাটের ওপরে চাপা দিয়ে, বিশেষ করে ওর মা আর অন্যান্য বড়দের নজর থেকে তৎক্ষণাৎ লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করল। ওর ইচ্ছা বা মতলব, যাই বল না কেন, ছিল সবার চোখের আড়ালে বইটা লুকিয়ে চিলেকোঠায় নিয়ে গিয়ে পড়ে ফেলবে। এ’তে ওর পড়াও হবে, আর কেউ জানতেও পারবে না। এইভাবে প্রথমে দুএক দিন বেশ সুন্দরভাবে লুকিয়ে চিলেকোঠায় নিয়ে যাওয়া এবং ওর পড়া দুই-ই বেশ ভালই চলছিল। ওর বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গিয়েছিল, ওর মা কিছুই জানেন না, কিংবা ও কেন চিলেকোঠায় যাচ্ছে, বা ওখানে কি করছে, এ’সব নিয়ে তিনি আদৌ কিছু লক্ষ্য করছেন না বা, সবটাই অন্ধকারে আছেন। কিন্তু পরে দেখা গেল, ওর মা সবটাই জানতেন, ও’ কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, কি পড়ছে, এ’সব কিছুই তিনি ভাল মতই জানতেন। কেবল তিনি কাউকে কিছু বলেননি। আসলে এটা ছিল ওনার কৌশল। শ্রীমতী ড্যান চাইছিলেন, পিটারের বাবার নজরে বিষয়টা আসুক। আর তাই তিনি অপেক্ষা করছিলেন, কতক্ষণে পিটারের বাবা মিঃ ভ্যান ড্যানের কানে বা চোখে ঘটনাটা আসে। স্বাভাবিকভাবেই মিঃ ড্যান বিষয়টা জানতে পারলেন, এবং ভয়ানক রেগে গেলেন। তিনি সরাসরি পিটারকে কিছু না বলে, সোজা ওর কাছে গিয়ে, ওর হাত থেকে বইটা প্রায় ছিনিয়ে কেড়ে নিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, এ’তেই পিটার যথেষ্ট ভয় পেয়ে যাবে, সে আর কাউকে কিছু বলবে না, বইটা পড়া বন্ধ করে দেবে। অথবা বইটার দিকে আর ফিরেও তাকাবে না, সুতরাং পড়া ত' দূরের কথা। কিন্তু তিনি জানতেন না, বইটা বাবা হিসাবে পিটারের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার ফলে, তাতক্ষনিকভাবে পিটার কিছু না বললেও, বইটা সম্পর্কে তার আগ্রহ বিন্দুমাত্র কমল না ত’ বটেই, উপরন্তু, শতগুণ বেড়ে গেল। বিশেষ করে বেড়ে গেল, কারণ,বাবা যখন বইটা পড়াতে রেগে গিয়ে, নিজে কেড়ে নিলেন, তখন ওর ধারণাই হয়ে গেল, যে, বইটাতে নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু আছে, যা' বেশ উত্তেজক এবং চিত্তাকর্ষক। পিটার তখন থেকেই চিন্তা করতে শুরু করে দিল, কি’ভাবে, মা আর বাবার চোখের আড়ালে বইটা সে জোগাড় করবে এবং ওদেরকে লুকিয়ে কি’ভাবে সে ওটা পড়বে। এরই মধ্যে আবার শ্রীমতী ড্যান “অতি বুদ্ধিমতীর” মত, প্রায় সবার সামনেই মাকে জিজ্ঞাসা করতে গেলেন, উনি বইটা নিয়ে কি ভাবছেন ! মা গভীরভাবে কিছু না ভেবেই, উত্তর দিলেন,” আমি বইটা দেখি নি, তবে যা শুনছি, তাতে করে আমার মনে হচ্ছে, মারগটেরও এখন এইসব বই পড়ার কোন দরকার নেই। দরকার হলে অন্য সব বইগুলো পড়তে পারে। এটাকেই পড়তে হবে এর কি মানে আছে?” অর্থাৎ মা প্রায় ঘুরিয়ে শ্রীমতী ড্যান কে বলেই দিলেন, পিটার আর মারগটের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। প্রথমত, মারগটের অহেতুক কৌতূহল নেই, সে আগেও এই ধরনের বই পড়েছে। আর মেয়েরা যেটা পড়তে পারে, বা তাদের যেটা পড়া দরকার, সেটা ছেলেদের সবসময় পড়ার দরকার না’ও হতে পারে, কারণ মেয়েদের শরীরের বিকাশ ছেলেদের চেয়ে কিঞ্চিৎ দ্রুত গতিতে হয়। তাই তারা কোন একটা বিষয়ে, যতটা সচেতন,বা যতটা সচেতন হওয়া উচিৎ, ততটা ছেলেদের ক্ষেত্রে দরকার পড়ে না। দ্বিতীয়ত, আর যেটা বোঝালেন, তা’হল, কোনরকম নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কে, তাঁর মেয়ে মারগটের এই রকমের অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় কৌতূহল নেই। তাকে যদি বারণ করা হয়, তবে সে সেটা শুনবে এবং মেনে চলবে। তৃতীয়ত, মা এটাও বেশ স্পষ্ট করে শ্রীমতী ড্যানকে জানিয়ে দিলেন, যে, মারগট স্কুলে ফোর্থ স্ট্যান্ডারে পড়ে। মন ও বুদ্ধিতে অনেক বেশী পরিপক্ক। সে কখনই পিটারে সমতুল্য নয়। তাই তার যেটা পড়া মানায়, পিটারের সেটা মানায় না। শ্রীমতী ভ্যান ড্যান সরাসরি মাকে কিছুই বললেন না, মানে প্রতিবাদ কিছু করলেন না। তবে একমত হলেন কি’না সেটাও বোঝা গেল না। শুধু বললেন, তাঁর মতে, অন্ততঃ নৈতিকভাবে বাবা-মার উচিৎ ছেলে-মেয়েদের এই সব বই পড়া থেকে বাধা দেওয়া। 


এরপর মনে হয়েছিল, ব্যাপারটা বোধহয় এখানেই শেষ হয়ে গেল। সত্যি কথা বলতে আমরাও ভেবেছিলাম, বিষয়টা শেষ হয়ে গেল। কিন্তু পিটারের মনে অন্য কিছু ছিল।পিটার অপেক্ষা করছিল, কখন সবাই ব্যাপারটা ভুলে যায়, এবং সকলের চোখ এখান থেকে অন্য দিকে ঘুরে যায়। ও’ কেবল কান খাড়া করে রেখেছিল, কেউ বিষয়টা নিয়ে কথা বলছে কি’না, বা, ওর বইটা লুকিয়ে পড়া নিয়ে আর কেউ কিছু আলোচনা করছে কি’না, তা’ শোনার জন্যে। যখন দেখল আস্তে আস্তে সবাই বিষয়টা ভুলে গেছে এবং আর কোন আলোচনা হচ্ছে না, তখন প্রথমেই ও বইটা নিয়ে নিজের কাছে গোপনে লুকিয়ে রাখল। পিটার একটা কথা জানত, যে, সন্ধ্যে সাতটা সাড়ে সাতটা থেকে আটটা সাড়ে আটটা পর্যন্ত অ্যানেক্সের সবাই লুকানো স্যুইং দরজা দিয়ে বেরিয়ে, পাশের অফিস ঘরে বসে রেডিওতে খবর শুনবে, এবং তা’ বেশ মন দিয়েই শুনবে। 


পিটার কি করল জান? পিটার ঠিক সাতটার সময় আমরা যখন পাশের অফিস ঘরে বসে খবর শুনতে ব্যস্ত, তখন, সে নিঃশব্দে, সেই মহামূল্যনবান বইটা নিয়ে, চুপিচুপি সবার অজান্তে, চিলেকোঠায় গিয়ে বইটা পড়তে শুরু করল। সত্যি বলছি, আমরা কেউই কিছুই বুঝতে পারতাম না, যদি পিটার খবর শেষ হওয়ার আগেই নীচে নেমে আসত। ওর উচিৎ ছিল খবর শেষ হওয়ার আগে, মানে, সাড়ে আটটার আগে, নীচে নেমে আসা, এবং চুপচাপ আমাদের সঙ্গে মিশে যাওয়া। কিন্তু মহামূল্যবান বইয়ের নেশা ও কাটাতেই পারল না। বরং নিষিদ্ধ বইয়ের নেশায় এতটাই মোহাবিষ্ট হয়ে গেল, যে, সময়ের ব্যাপারটাই ওর আর খেয়ালের মধ্যেই ছিল না। আমরা যখন খবর শুনে আবার আমাদের সেই অ্যানেক্সে ফিরে এলাম, তখনও পিটার চিলেকোঠায় বসে বই পড়ে চলেছে। শেষে ঠিক যখন ওর বাবা মিঃ ভ্যান ড্যান খবর শুনে ঘরে ঢুকলেন্‌ তখনই ও নীচে নেমে এল। পিটার জানতই না যে ওর বাবা সেইমাত্র ঘরে ঢুকেছে। এরপর কি হল তা’ তুমি সহজেই অনুমান করতে পার। ওর বাবার বিশাল হাতটা একবার ওপরে উঠে ওর গালে সজোরে থাপ্পড় হয়ে নেমে এল, আর অন্য একটা হাত, সজোরে একটা হ্যাঁচকা টান মেরে পিটার হাত থেকে বইটা কেড়ে, টান মেরে আছড়ে ফেললেন, তবে মাটিতে নয়, পাশের খাবার টেবিল ওপর। বলা যায়, বইটাকে খাবার টেবিলে ছুঁড়ে ফেলা হলো। ফলাফল, খাবার টেবিলের ওপর বইটা আছড়ে পড়ে, আধখোলা অবস্থায় পড়ে থাকল। আর পরবর্তী থাপ্পড় আর সজোরে গালে পরার আগেই, পিটার কোনক্রমে লাফ দিয়ে, থাপ্পড় এড়িয়ে, আবার চিলেকোঠায় উঠে পালিয়ে বাঁচল। ওকে, ওর বাবা বারবার নেমে আসতে বলা সত্ত্বেও পিটার ওখান থেকে নামার চেষ্টা ত’ করলই না, উপরন্তু, ছাদের আরও ভিতরে ঢুকে যেতে থাকল, যাতে কোনভাবেই ওর বাবা ওর নাগাল না পায়। 


এইসব নাটকীয় ঘটনা যখন ঘটে চলেছিল, তখন আমরা সবাই টেবিলে চুপচাপ বসে। কোন মন্তব্য না করে শুধু দেখছি, এরপর কি হয়!! পিটারের দিকেও আমরা কেউই তাকাচ্ছি না। পিটারও ওপরে বসে থাকল, কেউ তার দিকে ফেরেও তাকাল না। পিটার ওখানে বসে কি করছে, ও নেমে আসে কি’না, এ’সব ব্যাপারে যেন ভারবার কারুর কোন তাগিদই নেই। আদৌ কেউ চিলেকোঠায় বসে আছে, এটাই যেন আমরা কিছুই জানি না। আমরা আমাদের খাবার খেয়ে নিলাম, তারপর যে যার মত শুতে চলে গেলাম। পিটার খেল, কি খেল না, শুতে গেল কি’ গেল না, এ’সব বিষয়ে যেন কোন মাথাব্যাথা কারুরই কিছু নেই। পিটারও ওপরেই বসে থাকল, নীচে নেমে খেতেও এল না। আমরা শোওয়ার পর সে কখন যেন শুতে গেছে, রাত্রে আর কিছুই খায়নি। আমরাও খাবার সময় তখন এমন ভাবে গল্প করছিলাম, যাতে মনে হয় কিছুই হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল পিটারকে অগ্রাহ্য করা। সত্যিই তোমায় বলছি, আমরাও খাবার সময়, পিটারের প্রতি অগ্রাহ্য বোঝাতে গিয়ে বেশ উচ্চস্বরে কথা আর গল্প করতে করতে খাচ্ছিলাম। 


এমন সময় হঠাৎ আমাদের কানে এল দূর থেকে ভেসে আসা একটা তীব্র শব্দে হুইসেলের আওয়াজ। শুনে মনে হল আমাদের খুব কাছেই হুইশেল বাজছে। হঠাৎ আমাদের কানগুলো কেমন যেন একমুখী হয়ে গেল, আমাদের খাওয়া, গল্প করা, উচ্চস্বরে কথা বলা সব বন্ধ। চারদিকের নিস্তব্ধতার মধ্যে শুধু আমাদের ভয়ে পাঁশুটে হয়ে যাওয়া মুখগুলো বারবার এর ওর দিকে তাকাচ্ছিল, আর নিজেদের প্রিয় মানুষগুলোকে কাছে, আরও কাছে পাওয়ার চেষ্টা করছিল। আমাদের ভয়ার্ত দৃষ্টির মধ্যে যেন অপেক্ষা করছিল আমাদের প্রত্যেকের জীবনের শেষ মুহূর্তের শেষ হুইশেলের আওয়াজ ভাল করে শোনার জন্যে। বিশ্বাস কর, সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল আমার জীবনটা আমার হাতের মুঠোর মধ্যে চলে এসেছে, আর সে যেন কিছুর জন্যে অপেক্ষা করছে। এরই মধ্যে, চিলেকোঠা থেকে পিটার ভয়ার্ত স্বরে, চিমনীর পাশ দিয়ে ফিস ফিস করে,বলল,” ওরা ধরতে এলেও আমি কিন্তু কিছুতেই নীচে নেমে আসব না।“ 


হঠাৎ করে শব্দটা শুনে, মিঃ ভ্যান ড্যান চমকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর কোল থেকে ন্যাপকিনটা পড়ে গেল। ভয়ে তাঁর মুখটা পাংশুটে বর্ণের হয়ে গেছে। তিনি চাপা স্বরে বেশ দৃঢতার সঙ্গে বললেন, “অনেক হয়েছে, আর বোধহয় আশা নেই, বল সব কে কি করবে?” শান্ত শীতল আমার বাবা তাঁর ভয়ার্ত ঠাণ্ডা হাতটা নিজের হাতের মধ্যে চেপে ধরে, বললেন, “ভয় কি আমরা সবাই ত’ আছি।“ অর্থাৎ এখনো শেষ আশার সময় আসেনি। দুজনেই ভীত, দুজনেই হুইসেলের আওয়াজে আতঙ্কিত। আবার দুজনে পরস্পরের ভয়ার্ত হাত ধরে, একে অপরের সহায়ক হতেও পিছপা নন। এবার দুজনে একসাথে চিলেকোঠায় উঠে গেলেন। পিটারকে টেনে নামিয়ে আনলেন। পিটার অল্পকিছু বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়ত করেছিল, কিন্তু তাঁদের কাছে তখন ঐ সব তুচ্ছ। অনেক বড় বাধার সম্মুখীন হওয়ার মানসিক প্রস্তুতিতে তখন তাঁরা একে অপরের সহায়ক শক্তি হয়ে উঠতে তৎপর। তাই পিটারের বাধা তখন তাঁদের গ্রাহ্য করার মতো অবকাশ ছিল না। পিটার নীচে নেমে আর কাউকে কোন কথা না বলে, সোজা নিজের ঘরে ঢুকে গেল। ইত্যবসরে, হুইসেলের আওয়াজও দূরে সরে গেছে। পিটার কারুর সঙ্গে কোন কথা না বলে, সোজা ঘরে ঢুকে বেশ একটু শব্দ করেই দরজাটা বন্ধ করে দিল। আমরা সবাই আবার চমকে দরজার দিকে তাকালাম। হুইসেলের আওয়াজ সরে গেলেও, আমরা জানি না আমরা নিরাপদ কি’না, বা কতক্ষণ নিরাপদ! শুধু বুঝলাম, আপাতত নিরাপদ। আচ্ছা, তোমার কি মনে হয়, আমরা ধরা পড়ে যাব, এই ভয়টাই করছিলাম, না’কি মারা যাব এই ভয় করছিলাম? তবে এটা ঠিক আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আর এতকাছে থেকে ভয় এই প্রথম পেলাম।


সেদিন, এই সবের পর আবার আমরা আমাদের খাওয়াদাওয়া আবার শুরু করলাম। একটু থেমে, বাবা বললেন যতক্ষণ, আছি ততক্ষণ ত’ খেতে হবে। শ্রীমতী ভ্যান ড্যান খেতে খেতে, সবার চোখের আড়ালে এক পিস রুটি ছেলের জন্যে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বামীর নজর এড়িয়ে করতে না পারার জন্যে, তাঁর সে চেষ্টা ব্যর্থ হল। তাঁর স্বামী মিঃ ভ্যান ড্যান কঠোর ভাবে চোখের ভাষায়, নিষেধ করেন, আর শ্রীমতী ভ্যান ড্যান কোনভাবেই সেই নিষেধকে অগ্রাহ্য করতে পারলেন না। মিঃ ড্যান কঠোর ও স্পষ্ট ভাষায় বললেন,, “পিটার যদি তার কৃতকর্মের জন্যে নিঃশর্ত ক্ষমা না চায়, তবে এবার থেকে ওকে ওই চিলেকোঠাতেই থাকতে হবে। অন্যথা কিছু হবে না।“ আমরা, বলতে বাবা, মা মারগট (আমিও বলেছিলাম) বেশ জোরের সাথেই ওনার কথার প্রতিবাদ করলাম। আমাদের মত ছিল, আজকে সারা রাত ও তার কৃতকর্মের জন্যে খেতে না' দেওয়ার মতো কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এরপর এটা নিয়ে বেশী টানাটানি করা ঠিক হবে না। তা’ছাড়া বাবা আর মা বললেন, পিটারকে যদি চিলেকোঠায় থাকতে বাধ্য করা হয়্‌ তাহলে ওর হঠাত করে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। জ্বর হতে পারে। তখন আমরা আবার নতুন এক বিপত্তিতে পড়ব। কারণ আমরা ত’ আর ইচ্ছামত ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা করাতে পারব না। আবার হয়তঃ প্রয়জনীয় ওষুধ কিনেও আনতে পারব না। অন্যের ওপর নির্ভর করতে হবে, তাদের অসুবিধা হতে পারে। 


পিটার অবশ্য শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি। সবাই তাকে বারণ করা সত্ত্বেও সে চিলেকোঠায় গিয়েছিল। কারুর কথাই শোনেনি। তার বাবা মিঃ ভ্যান ড্যান তাকে এব্যাপারে আর বিশেষ কিছু বলেননি। সকাল বেলায় আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি, রাত্রে সে ঘরের মধ্যে বিছানাতেই ঘুমিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন সকাল হতেই, সে আবার যথারীতি চিলেকোঠায় উঠে গেল। তার বাবাও কিছু বললেন না। সবকিছু দেখে আমার বাবা তাকে স্নেহার্দ্র গলায় নীচে নেমে আসার জন্যে বললেন। তিনি তাকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন, চিলেকোঠায় থাকলে আমাদের কোন না কোন ভাবে বিপদ বাড়তে পারে। চারদিকে কে আমদের দিকে নজর রাখছে, সেটাই হয়ত আমরা বুঝতে পারছি না। সে তখন কোঁচকানো মুখে নেমে এলেও, আবার কিছুক্ষণ পর বাবা চলে যাওয়ার পর, সে আবার উঠে গেল। এইভাবে বিরক্তি, কোঁচকানো কপাল, আর নিজস্ব একগুঁয়ে মনোভাব নিয়ে টানা তিন দিন সবাইকে বিরক্ত করে মারল। এই সময় কারুর সাথেই সে প্রায় কোন কথাই বলছিল না। তারপর আস্তে আস্তে সময়ের টানে আবার সবকিছু আগের মতো, নিঃশব্দ গতিতে চলতে লাগল, বা বলা ভাল কাটতে লাগল। আমরাও আবার আগের মতোই হয়ে গেলাম। 

ইতি
তোমার অ্যানি 




0 comments: