0

প্রবন্ধ - উত্তম বিশ্বাস

Posted in


প্রবন্ধ


অথঃ সম্পাদক সমাচার
উত্তম বিশ্বাস



“একাকী গায়কের নহে তো গান, মিলিতে হবে দুইজনে-
গাহিবে একজন খুলিয়া গলা,আরেকজন গাবে মনে” 

(গানভঙ্গ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

সাহিত্যের বিচারে সবার শীর্ষে যদি থাকে সহৃদয় পাঠকের হৃদয়; তবে, অবশ্যই দ্বিতীয় দাবীদার স্বয়ং লেখক। কেননা একজন লেখক তাঁর সদ্যজাত সন্তানকে যেভাবে বুকের ওপর, কোলের ওপর বা শিয়রে রেখে পরম আদরে, বিস্ময়বিস্ফারিত দৃষ্টিতে যেভাবে বারবার নিরীক্ষণ করেন, এবং তাঁর সৃষ্টির স্বাদ অনুভব করতে থাকেন; তার সঙ্গে জগতে আর কারও তুলনা চলে না। সম্পাদকের প্রসঙ্গ আসে যদিও অনেক পরে। কিন্তু, সম্পাদককে পুরোপুরিভাবে অস্বীকার করলে সবই অন্ধকারে থেকে যায়। তিনি হলেন সৃষ্টি কর্মের দ্বিতীয় স্রষ্টা। সৃষ্টিকর্তার সমর্পিত সাহিত্যসম্ভারকে একত্রে সুষমামণ্ডিত করে বিশ্ববিহারী পাঠকের দরবারে পৌছে দেওয়াই তখন তাঁর একমাত্র ব্রত। তার জন্য তাঁকে বহুপাঠের অভ্যাস আয়ত্ব করতে হয়; হয়ে উঠতে হয় সংবেদী, তথাবহু ভাষায় পারঙ্গম। তিনি হয়তো লেখকের মত লেখাটিকে বুকের ওপরে রাখেন না; তবে রাখেন একান্ত পর্যবেক্ষণে, সযত্নে নজরদারিতে। সেক্ষেত্রে তিনি এতটাই সজাগ যে, ধুলো আর ছাইদানসম্ভূত অবহেলা কখনওই তাঁর সম্পাদকীয় টেবিলকে স্পর্শ করতে পারে না। আর যদি বা করে তাহলে জানতে হবে সারস্বত সাম্রাজ্যে অচিরেই বন্ধ্যা যুগের সূচনা হতে চলেছে।

বহুপাঠের অভিজ্ঞতা যদি একজন সম্পাদকের প্রধান গুণ হয়, তবে বহু মতের সমন্বয়সাধনকারী হিসাবেও তাঁকে কেন গণ্য করা যাবে না?কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্যিক পত্রপত্রিকা ছাড়া গ্রাম গঞ্জের অধিকাংশ পত্রপত্রিকাই হলো সাহিত্যের আদি আঁতুড়ঘর। সেখানেও আজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে নানামতে, নানাদলে, নানা রঙে রঞ্জিত হয়ে উন্মোচিত হচ্ছে ছোট, বড়, মাঝারি সব পত্রপত্রিকার মোড়ক। আনুষ্ঠানিক তিথি নক্ষত্রের ক্ষেত্রেও হরেকরকমবা। কোথাও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান, কোথাও বা রাজকীয় আড়ম্বর; কোথাও বা প্রতিষ্ঠিত প্রেক্ষাগৃহ; আবার কারও ভাগ্যে ভাঙাচোরা পার্টিঅফিস, বুড়ো শিবতলা চায়ের দোকান, দুর্গাদালান কিম্বা অসহায় নিঃসন্তান দম্পতির দুঃখে ভাসা স্যাঁতসেঁতে বারান্দা! কোথাও বেলোয়ারি, আবার কোথাও বা নিভুনিভু কালি পড়া হ্যারিকেনের আলো। আড়ম্বর, আয়োজনের রকমফের যাই থাক না কেন আমীর অথবা ফকিরনন্দনের উভয়ের জন্মলগ্নের যে দ্যুতি; যে আলো, তা সবার ক্ষেত্রেই সমানভাবে স্বর্গীয়। এইখানে সম্পাদক হলেন সমকালের চারণকবি। তাঁর কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, হাতে দুঃসাহসী বর্শা ফলক। তিনি যেন ডাকহরকরার মতো ছুটে চলেছেন আবহমানের চিঠি কাঁধে নিয়ে। পথের প্রতিবন্ধকতা বলতে তিনি কখনও হয়ে ওঠেন নিজেই নিজের কাছে অন্তরায় : আবার কখনও বা রাজনীতি, গোষ্ঠীগত মতপার্থক্য আবার কোথাও কোথাও বাদ সাধে টাকাকড়ির মতো আপাত তুচ্ছ অথচ সেকেলে সমস্যা। সম্পাদক নিজেই নিজের অন্তরায় কখন হয়ে ওঠেন? যখন কিনা তিনি ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিজেকে প্রমান করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। ব্যক্তিগত ভাবাবেগ, ইগো, সমকালকে মান্য করতে একান্ত অনীহা - ইত্যাদি কিছু অভ্যাস যখন সম্পাদকের কলমকে গ্রাস করে; বুঝতে হবে তাঁর চারপাশে চীনের প্রাচীর তৈরী করতে তিনি একাই যথেষ্ট! তবে সম্পাদক যে সবসময় স্বতন্ত্র হবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন তাও নয়;যুদ্ধ তো আসলে একার জন্য নয়। অথচ কি নিষ্ঠুর নিয়ম; শেষমেশ পরাজয়ের ভার একমাত্র সেনাপতির কাঁধেই বর্তায়। একটু সজাগ দৃষ্টি রাখলে আজকাল আকছার দেখা যায় সরস্বতীর আঙিনায় কত ভাঙাভাঙির গল্প, কত নিত্যনতুন কীর্তিকলাপ।দল আর উপদলীয় বিভেদের প্রতি এই যে ঝোঁক, এ দায় সবই কি সম্পাদকের? তা বোধহয় কক্ষনো নয় ! 

সবই তো হলো; এবার আসা যাক লেখা সংগ্রহের কথায়। লেখা সংগ্রহই হল একজন সম্পাদকের প্রকৃত লড়াই। এখানে তিনি মৌ-ভিক্ষুক, বিন্দু বিন্দু মধু আহরণ করে তিল তিল ক’রে গড়ে তোলেন স্বপ্নের মোহরকুঞ্জ। আনুষ্ঠানিক দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যায় এভাবেই:‘আগামী বৈশাখেই আমাদের নববর্ষ সংখ্যা প্রকাশিত হবে। কালবৈশাখীর ঝটিকা ভিন্ন যেমন নববর্ষকে কল্পনা করা যায় না,তেমনই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।ঝরা পাতার দেশে,বাণিজ্য আর বিষণ্ণতার দেশে দুরন্ত এক ঝটিকা মাত্র।নিম্নোক্ত ঠিকানায় যত দ্রুত সম্ভব লেখা পাঠান। রাজনীতি এবং অতি যৌনতায় আমাদের অধিক আসক্তি না থাকলেও যুগ ও জীবনের দর্পণ দর্শনকারীর অভিজ্ঞতা ভাগাভাগিতে আমাদের আপত্তিও নেই।’ একসময় আঙ্গুলের করগোনা দিন ফুরিয়ে আসে। প্রত্যাশা থাকে ছোটখাটো একটা পাহাড়ের রূপ নেবে সম্পাদকীয় দপ্তর। কিন্তু বাস্তব বলে উলটো কথা। লেখা যা দু’একটা আসে সবই প্রায় উঠতি বয়সের তরুণ ছেলেছোকরা দলের আবেগমথিত প্রেমকাতর বিহ্বলতা; অথবা গৃহকোণে আবদ্ধ কোন অবলা রমণীর নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গের একান্ত করুণ আর্তি। অর্থাৎ,দিই,দিচ্ছি করেও যেসকল আপাত প্রথিতযশা স্বস্বক্ষেত্রে স্বনামধন্য, লোকনন্দিত মসিজীবীগণ প্রতিশ্রুতমান লেখাটিকে ঝিঙে মাচার ফুল করে ঝোলাতে থাকেন, তাঁদের উঠোনের ধুলোর উত্তরীয় উড়িয়ে আবারও হাজির হন সম্পাদক সন্ন্যাসী।

এরপর আসে বাছাই পর্ব। এখানেও চরম বিড়াম্বনায় ফেলে দেন বিজ্ঞাপনদাতা,পার্টিকর্মী সমাজবন্ধু,ধর্মীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, আপাত দুর্বল লেখক অথবা সৌখিন সাহিত্যের পৃষ্টপোষক মহোদয়গণ। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই সনাতন পাঠক,অথবা এমন কেউ যাঁর যুগের চাহিদা অথবা সময়ের পরিবর্তনের দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। এঁদের হাতগলে যে লেখাগুলো আসে, সেগুলো হয় কৃষ্ণের অষ্টত্তরোশতনাম, না হলে ফেলে আসা দেশভুঁই-এর সেদিন সুদিন,অথবা নিদেন পক্ষে মারকাটারি দলীয় ইস্তেহার। এইখানে সম্পাদকের এক্কেবারে হাড়িকাঠে গলা। ছুঁচো গিলতে গেলেই পত্রিকার কৌলীন্য হারায়, আবার উগরালেও সারস্বত নিলাম; পাকাপাকিভাবে পথের ভিখিরি। এ প্রসঙ্গে উৎসরণ পত্রিকা (নাম পরিবর্তিত) দপ্তরে আসা এক অধ্যাপক তান্ত্রিকের চিঠি উল্লেখ করা হল :‘মাননীয় সম্পাদক,আমার তন্ত্রসাধনার প্রকরণ ও দেহসন্ধি বিষয়ক লেখাখানি শুনেছি আপনি ঘৃণাভরে ছুঁড়ে ফেলেছেন। ফেলুন। আপনার পত্রিকা তার চাইতেও আরও কদর্য, আরও যৌনতাগন্ধী লেখাকে পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দিয়ে থাকে এমন হাজারকুড়ি উদাহরণ আমি পাতার পর পাতা উল্টিয়ে প্রমাণ করে দিতে পারি।যাই হোক, এতদিন যাবত আমি যে বিজ্ঞাপনটি দিতাম, তা বন্ধ হলো। আর, আমার প্রেরিত কালী মায়ের ছবিটি আমার চেম্বারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করলে কৃতার্থ হব। আর হ্যাঁ,ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপনের জন্যে আমার চেম্বারে আসবেন না।’

ইতি,

অধ্যাপক পি. সারথি (নাম পরিবর্তিত)

গোল্ড মেডেলিস্ট 

তবে কি সেই অর্থে সাহিত্যরসসিক্ত লেখা ছোটপত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরে আসে না?আসে তো হাজার বার। তবে নিতান্তই হাতে গোনা। প্রত্যন্ত বঙ্গদেশের আনাচেকানাচে অলিগলি ফুঁড়ে অগনিত ব্যাঙের ছাতার মত জন্ম নেওয়া লিটিল ম্যাগাজিনই তো আসলে সাহিত্যের আদি আস্তানা। সেখানে যদি লেখা না আসেতবে ভাষাপ্রকৃতির বাস্তুতান্ত্রিক বিপর্যয় ঘটার সমূহ সম্ভাবনা আছে যে।

লেখক লেখা জমা দিয়ে অধীর আগ্রহে দিন গুনতে থাকেন;আর সম্পাদক থাকেন গভীর উৎকণ্ঠায়।! সম্পাদকীয় কলমে তিনি চাবুক কষাবেন, নাকি প্রুফ সংশোধনের পরে হাজির হবেন পুষ্পশরে সজ্জিত হয়ে,কিম্বা সমকালীন ঘটনাপ্রবাহের ভেরী বাজিয়ে প্রথম পাতাতেই ছেপে দেবেন তাঁদের আত্মম্ভরিতার আর্যগাথা? মোড়ক উন্মোচনী অনুষ্ঠানেও সেই একই টেনশানের টানাপোড়েন। মঞ্চের ভিভিআইপি আসনে উপবিষ্ট থাকবেন কোন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক অথবা প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ যাঁর হাতে সাহিত্যের সমুন্নতি অথবা আদ্যশ্রাদ্ধ উভই সম্ভব। তাই হয়তো মাঝে মাঝে সম্পাদকীয় কলমে উঠে আসে এমন অগ্নিবীণার তাপ,‘আর কতদিন ঘরের স্ত্রীর গয়না বন্ধক রাখব? আর কতদিনই বা ক্ষুধার্ত শিশুপুত্রটি কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়লে প্রুফের কাগজ বগলে চেপে চোরের মতো ঘরে ঢুকব? স্ত্রী আর বসতভিটার আব্রু রক্ষা করার দায় যেমন একান্ত গৃহস্বামীর; ঠিক তেমনই নবাগত ভোরের প্রত্যাশায় প্রসারিত কথাগুলোকেও আমি কিছুতেই মরে যেতে দিতে পারিনা।দীর্ঘদিনের সন্ন্যাসব্রত পরিহার ক’রে তাই বাহুবলীদের শরনাপন্ন হতে বাধ্য হলাম।’

সম্পাদক ছুটছেন। ধুলো ওড়া পথ, উসকো খুসকো চুল, আলুথালু বেশ, দূর শহরের অন্ধ গলিতে ঘিঞ্জি প্রকাশনা পাড়া -এমন দৃশ্য আজ আর কল্পনা না করাই ভাল। কেননা, সম্পাদক মহাশয়ও সপ্রভ দুটি চোখ নিয়ে বাঁচেন। তিনিও বোঝেন কৌলীন্য আর চমৎকারিত্বের অভিন্ন প্রকাশনা। খণ্ডে খণ্ডে সুসজ্জিত হয়ে ওঠে সাহিত্যের পাতা। মাঝে মাঝে গুঁজে দেওয়া হয় টুকরো বিনোদনী বিজ্ঞাপন, দোকান দক্ষিণা,শোকস্মৃতি; হারানো সন্তাপ অথবা পঞ্চায়েত ও পার্টি পক্ষের দরাজহস্ত কৌশলী কারুকাজ। এভাবে হাপ পেজ, ফুল পেজ, কভার পেজের বরাত পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে সম্পাদকের খেরোর খাতা।

সম্পাদকের কাছে লেখক হলেন আত্মার আত্মীয়, আর পাঠক হলেন তাঁর প্রকৃত সরকার। এ দুয়ের মধ্যে সেতুবন্ধন করাই হলো তাঁর কাজ। কিন্তু, তারপরেও যখন ছোটখাটো অঙ্কুশ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অমনি তিনি শরনাপন্ন হন রবিঠাকুরের ‘বড় খবর’এর কাছে। অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে এই ভেবে যে, নিতান্ত চপ মুড়ি কিম্বা সৌজন্য সংখ্যার বিনিময়ে আর কতদিন এভাবে খালিপেটে সাহিত্যসাধনা করা যায়, যেখানে পেটেভাতের কোনও ব্যবস্থাই নেই? আলাদিনের আলোহীন, রাজভবনের উত্তরীয়হীন সাহিত্যসাধনা, আর লখাইকে কলার মান্দাসে শুইয়ে রেখে মনসার ভাসান শোনা বন্ধ করে বাড়ির পথে পা বাড়ানো সেই একই বীতরাগীয় ব্যথা আর কী! যার উপশম সম্পাদক সাধকেরও অজানা। তবু ইচ্ছে শক্তির নিয়মে গুচ্ছ গুচ্ছ পত্রপত্রিকার জন্ম হয় গ্রামবাংলার মাটিফুঁড়ে। দুর্ভিক্ষের দেশই বোধহয় অপুষ্টিজনিত শিশুর জন্ম দেয় সবচেয়ে বেশি। কেননা সেখানে আর কোনও খাদ্য না থাক, সমতাড়নার যৌনগন্ধী শরীর তো অন্তত মুখের কাছে মজুত থাকে! অর্থাৎ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়, পুরুষের সন্তান জন্ম দেওয়ার অধিকারকেই যেখানে অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচনা করা হয়;সেখানে সন্তানের বাঁচা বাড়ার দায়দায়িত্বও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এসে পড়ে তারই কাঁধে। টিমটিম করে জেগে থাকা লণ্ঠনের আলোয় ঘন ঘন মিটিং ডাকেন সম্পাদক মহাশয়। সময়ের সঙ্গেসঙ্গে পঞ্চাশের উদ্দীপনা থিতিয়ে আসে পাঁচে। আবার, এই পাঁচজন অতি উৎসাহীরমধ্যেও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে গোষ্ঠীগত মতবিরোধ। তাঁরাও বিভাজিত হতে হতে এসে ঠেকেন আড়াই থেকে তিনে। এ প্রসঙ্গে একটি সম্পাদকীয় দপ্তরের বার্ষিক আলোচনা চক্রের কিছুটা বক্তব্য তুলে ধরা হল, - ‘এই মর্মে আমরা একমতে উপনীত হলাম যে,প্রতি সংখ্যায় প্রচ্ছদ অঙ্কনের জন্যে নামী দামী চিত্রশিল্পীর পেছনে দৌড়তে যে পরিমাণ অর্থব্যয় এবং সময়ের অপচয় হয়, তা না ক’রে আমরা আরও কিছু গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য একত্রে পথে নামতে পারি (অবশ্য গমকল , ডেন্টাল , গুড়বিক্রেতা কোনওকিছু বাছবিচার না করে) এবং অন্যান্য পত্রিকাগুলো বিশেষত যারা নাচাগানা হৈ হুল্লোড় খানাপিনায় অধিক ব্যস্ত থাকছেন; আমরা তাঁদের অন্ধ অনুসরণ না করে, রাত জেগে কাহিল না হয়ে, সেই সুযোগে ভোরের ট্রেন ধ’রে যদি দ্রুত ‘পাতিরাম’ বা ‘ধ্যানবিন্দুর’ মতো নজরনন্দন টেবিলগুলোকে আমরা ক্যাপচার করতে পারি তবেই বোধহয় সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব। আর যদি তা না পারি,ম্যাড়ার গোয়ালে যতই সংখ্যায় সদস্য বাড়ুক গুঁতোগুঁতিরও… ইত্যাদি ইত্যাদি!’

একালে সস্তায় লেখা পাওয়া যায় গুচ্ছগুচ্ছ। কিন্তু ভালমানের প্রচ্ছদ চিরকালই দুর্মূল্য। একজন লেখক আর চিত্রশিল্পীর মধ্যে এইখানে আজ বাদশা- গোলামের ব্যবধান। এইভাবে সম্পাদক বিপুল স্বপ্নসম্ভাবনা নিয়ে পথ চলতে চলতে কখনও হয়ে ওঠেন পথহারা লুনি;আবার কখনও বা হতাশা ও বৈরাগ্যের ধুলিজাল উড়িয়ে হয়ে ওঠেন বিদ্রোহী ভিসুভিয়াস। কেননা, বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না! সামান্য ছত্রাকের মত ক্ষণজীবী অনাম্নী লিটিলম্যাগকে সম্বল ক’রে পৃথিবীতে কতজন সপমাদক ধনশালী হয়েছেন আমার জানা নেই। তবে কি শুধুমাত্র যশ খ্যাতি অথবা আত্মপ্রচারের মোহ? তাও নয়। আমার মনে হয় এসব ব্যতিক্রমীগণ জীবনের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সম্মিলিত কুসুমকুঞ্জের আত্মপ্রকাশ ঘটানোকেই তাঁদের একমাত্র নেশা ক’রে তোলেন। আর, এইখানে সম্পাদক হলেন মহাকালের আজ্ঞাবাহী এক সত্য সঞ্চালক। এও এক সুগভীর আসক্তি।

সবশেষে বলা যেতে পারে, সংসারে আপনার খেয়ালে যে যার মতো ভেসে যাচ্ছে। যাক। আত্মীয় বন্ধু সুজন চলে গেছেন এপার থেকে ওপারে -সেদিকে সম্পাদকের একদম খেয়াল নেই। যখন তাঁর বিরামবিহীন যাত্রা অন্তিমের পথে পূর্ণ অভিসারে তখনও তিনি সম্পূর্ণ সজাগ। হঠাৎ হয়ত বুনো ফুলের গন্ধে পথিমধ্যে সহযাত্রীকে থামতে বলে নিজেই উঠে গিয়ে মুঠো ভর্তি বুনো ফুল তুলে নিয়ে আবার এসে শুয়ে পড়েন নিজের বিছানায়। তারপর পথের দুধারে ছড়াতে ছড়াতে চলেন আপন খেয়ালে। তিনিই সারস্বত সাম্রাজ্যে প্রকৃত সম্পাদক অমরার অমৃতকুঞ্জে যিনি আদি চিত্রগুপ্ত।


0 comments: