0

অণুগল্প - স্বাতী ব্যানার্জ্জী

Posted in


অণুগল্প


ভয়
স্বাতী ব্যানার্জ্জী 



পাপাইকে নিয়ে আর পেরে উঠছে না অনুজা। প্রতিটি ইউনিট টেস্টে ধারাবাহিক খারাপ রেজাল্ট করছে। শুধু তাই নয়, মিথ্যে বলছে। হয়তো পাঁচ পেয়েছে,বলছে পনেরো। খাতা লুকিয়ে রাখছে। সেদিন তো একপ্রস্হ ঝগড়াই হয়ে গেল সুবিমলের মায়ের সাথে। সে নাকি পাপাইয়ের খাতা ছিঁড়ে দিয়েছে। আচ্ছা করে শুনিয়ে দিয়েছে অনুজা মিতালীকে। ওর ছেলে পাপাইয়ের খাতা ছেঁড়ে কোন সাহসে? কিন্তু মুশকিল অন্য জায়গায়। পাপাই কিছুই মনে রাখতে পারছে না। পড়তেও চাইছে না। যত দিন যাচ্ছে উত্তরোত্তর খারাপ নম্বর পাচ্ছে। একটা চাপা দুশ্চিন্তা নিয়েই স্কুল করছে অনুজা। নিজের ক্লাসে আশিজন ছাত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে অনুজা। পাপাইয়ের কিছু একটা অসুবিধে হচ্ছে। এগুলি তারই ফলশ্রুতি। কিন্তু অসুবিধাটি কি তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না সে।

আজ ফাইভের ক্লাসে গিয়ে চুপ করে বসেছিল সে। ইউনিট টেস্ট চলছে। দীপা মেয়েটি চুপ করে বসে আছে। মেয়েটি পড়াশোনায় ভালো। সে অঙ্ক না কষে চুপ করে বসে আছে কেন? মিসকে তাকাতে দেখেই মাথা নিচু করে লেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে দীপা। অনুজাও অন্যদের দেখতে থাকে। পরীক্ষা চলাকালীন গুঞ্জন বাড়লে মাঝেমধ্যে হালকা ধমক দিচ্ছে। এরমধ্যেই দীপা এসে আরেকটি প্রশ্নপত্র চায়। তার প্রশ্নটি নাকি ফ্যানের হাওয়ায় উড়ে গেছে। বিনাবাক্যব্যয়ে অনুজা অতিরিক্ত প্রশ্নগুলির থেকে একটি দিয়ে দেয়।

পরদিন বড়দি অনুজাকে ডেকে পাঠালেন। প্রধান শিক্ষিকার ঘরে দীপা এবং তার মা বসে আছে। বসে আছে কুসুমমঞ্জরী এবং তার মাও। কুসুমমঞ্জরী কাঁদছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বড়দির দিকে তাকাতেই তিনি বলেন দীপার মায়ের অভিযোগের কথা। কাল অঙ্ক পরীক্ষায় মায়ের নির্দেশে প্রশ্নপত্রে উত্তরগুলি লিখে রেখেছিল দীপা। কুসুমমঞ্জরী সেই প্রশ্নটি ছিঁড়ে দিয়েছে। তখন মিস দীপাকে একটি নতুন প্রশ্ন দেন কিন্তু দীপার মা উত্তরগুলি না দেখলে কি করে বুঝবেন মেয়ে পরীক্ষা কেমন দিয়েছে? মিস ক্লাসে থাকতেও দুষ্টু মেয়েটির এত সাহস হয় কি করে? দীপার দৃষ্টিতে স্পষ্ট অনুনয়। কুসুমমঞ্জরী কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে এসব সে করেনি।

মুহূর্তে পাপাইয়ের সমস্যা স্পষ্ট হয়ে যায় অনুজার কাছে। একটি চেয়ারে বসে সে। দীপা আর কুসুমকে ক্লাসে যেতে বলে কুসুমের মাকে আশ্বস্ত করে এই বলে যে তার কোনও দোষ নেই। কুসুম দীপার সাথে একবেঞ্চে তো বসেইনি, অনেক দূরে বসেছিল। প্রশ্ন সে ছেঁড়েনি। কুসুমের মা একটু আশ্চর্য হলেও কিছু না বলে চলে গেলেন। এবার দীপার মায়ের সাথে কথা শুরু করে সে। বড়দির সামনেই। ভদ্রমহিলা ভীষণ অসন্তুষ্ট। "অপরাধীকে পেয়েও কেন ছেড়ে দিলেন মিস?"

"ছাড়িনি তো! আপনিই আসল অপরাধী।" বাকস্তব্ধ হয়ে যায় দীপার মা। দীপার কালকের খাতাটি নিয়ে আসে অনুজা। কিচ্ছু লেখেনি সে। "আপনি এত চাপ দিয়েছেন মেয়েকে যে সে যে অঙ্ক বুঝতে পারছে না,করতে পারছে না তা আপনাকে সাহস করে বলতে পারেনি। তার উপর সব অঙ্ক কষে তার উত্তর লেখার চাপ। যে অঙ্ক সে করেইনি তার উত্তর কোথায় পাবে। আপনার রোষের হাত থেকে বাঁচতে একটি মিথ্যে বলে সে আমার কাছে প্রশ্ন নেয়। মরিয়া হয়ে বন্ধুর ঘাড়ে মিথ্যে দোষ চাপায়। শুধু আপনার ভয়ে। এই ভয়ের জন্যে আজ কুসুমমঞ্জরীর ক্ষতি হতে চলেছিল। ভবিষ্যতে আরও অনেকের হবে যদিনা আপনি দীপার ভয় ঘুচিয়ে ওর বন্ধু হয়ে ওঠেন।"

অনেকক্ষণ কথা বলেন দীপার মা। নিজের ভুল মেনে কথা দেন দীপাকে নতুন করে ভালোবাসার। পাপাইয়ের ভয় ঘুচিয়ে বন্ধু হবার অঙ্গীকার করে হালকা মনে স্টাফরুমে ফিরে মিতালীকে ফোন করে সে। ক্ষমা চাইতে। এটুকু শাস্তি অনুজারও প্রাপ্য।


0 comments: