ধারাবাহিক - সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
Posted in ধারাবাহিক
ধারাবাহিক
এক কিশোরীর রোজনামচা - ৫
সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
এক কিশোরীর রোজনামচা - ৫
সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
Diary Entry -(03)
20th. June, 1942, Saturday.
গত কয়েকদিন ডাইরি লিখিনি। আবশ্যিই তার কারণ আছে। এই কয়েকদিন ধরে আমি আমার এই ডাইরি লেখার যে পরিকল্পনা বা চিন্তার বুনিয়াদটাকে কিছুটা পরিচ্ছন্ন এবং যুক্তিসিদ্ধ করার চেষ্টা করছিলাম। এর দরকারও ছিল। কারণ, এ’কথা ত’ সত্যি যে আমার বয়সী একটা মেয়ের, সাধারণ বিচারে, ডাইরি লেখার কোন বিশেষ উদ্দেশ্য বা অর্থ, সাদা চোখে দেখলে, থাকতে পারে না। এ’কথার মানে কখনই এ’টা নয় যে, আমি আগে কোনদিন এধরনের কাজ করি নি, বা আমি আগে কোনদিন ডাইরি লিখি নি, বা আমি ডাইরি লিখতে পারি না। আসলে সত্যিটা হ’ল সাধারণ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আমার কোন বন্ধু বা সমবয়সী মেয়ে, আমার মত তেরো বছর বয়সে, ডাইরি লেখার কথা ভাবে নি, বা, আমার মত কোন স্কুল ছাত্রী এই বয়সে মনের গভীরতম অনুভূতিগুলিকে এ’ভাবে ডাইরির মাধ্যমে জানাতে আগ্রহী হয় না। কিন্তু তাতে সত্যিই কি কিছু এসে যায়? অথবা এটা কি কখনও ডাইরি না লেখার কারণ হতে পারে? আসল কথা হল, আমি ডাইরি লিখতে চাই। আমি আমার মধ্যেকার চিন্তা ও সুপ্ত অনুভূতিগুলোকে বাইরে বের করে আনতে চাই। সেটা কেউ জানতে চাক বা না’চাক। যে চিন্তাগুলো নিয়ে আমার মধ্যে অসহিষ্ণুতা জমা হচ্ছে, সে গুলোকে আমি বাইরে বের করে আনতে চাই।
একটা প্রবাদ আছে, "কাগজ মানুষের চেয়ে অনেক বেশী সহিষ্ণু"।আমার রোজকার জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তাৎক্ষনিক বিষণ্ণতার অবকাশে এই কথাটাই বার বার আমার কাছে ফিরে আসে। আমি যখন একা একা আমার গালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে থাকি, তখন সেই একাকীত্বের মধ্যে আমার মনে হয়, দিন গুলো কেমন করে যেন থেমে গেছে। ঠিক তখনই ওই প্রবাদবাক্যটা আমায় উদ্বুদ্ধ করে চারপাশের একাকীত্ব থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতে, অথবা নিজের মধ্যে অন্য কাউকে নিয়ে, যে আমার ও আমার মনের সঙ্গী হতে পারে, ঘরে বসে থাকতে। তখনই মনে হয় ঠিকই ত’, কাগজকে সঙ্গে নিয়ে আমি বসে থাকতে পারি। কাগজই ত’ আমার একাকীত্ব কাটাতে পারে। এ’ ব্যাপারে ত’ কোন সন্দেহই নেই যে, কাগজ মানুষের চেয়ে অনেক বেশী সহিষ্ণু। তাই আমার এই পিজবোর্ড মোড়া নোটবই আমার সবসময়ের সঙ্গী । একেই আমি মর্যাদা দিয়ে ডাইরি নামে ডাকি। এটাই আমার আসল বন্ধু। আমার অনান্য বন্ধুরা, সে ছেলে বন্ধু বা মেয়ে বন্ধু যেই হোক না কেন, তাদের কেউ যদি এটা না’ই দেখল, তাতে কি’ই বা এসে যায়। এইবার মনে হচ্ছে, আমি ডাইরি লেখার সপক্ষে যথাযথ যুক্তি তৈরী করতে পেরেছি এবং, ডাইরি লেখার একেবারে গোড়ায় আসতে পেরেছি। অন্তত, নিজের কাছে একটা বিষয় আমার পরিস্কার হয়ে গেছে । তা’হল, কেন আমি ডাইরি লেখা শুরু করব, এবং, কেন তা’ শুরু করেছি। সব থেকে বড় কথা, এ’টাও বুঝতে পেরেছি , কেন আমার কোন বন্ধু নেই।
আসলে আমার মত তেরো বছরের একটা মেয়ের নিঃসঙ্গতা, এবং তার জন্য ডাইরির সাথে সখ্যতা, এইসব বিষয় গুলো একটু বিস্তৃত ভাবে বলা দরকার। তা’না হলে কেউ সহজে এটা বিশ্বাস করতে চাইবে না, যে, তেরো বছরের একটা মেয়ে সত্যিই এই পৃথিবীতে নিঃসঙ্গতার মাঝে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিতে পারে। অবশ্য বাস্তবে ত’ সত্যিই আমি এতটা নিঃসঙ্গ বা এতটা একা নই। আমাকে আমার প্রিয় বাবা, মা, আমার ষোল বছরের দিদি আদর ভালবাসা দিয়ে ঘিরে রেখেছে। আমি অন্ততঃ এমন তিরিশ জন লোকের নাম বলতে পারি, বা জানি, যাদের মধ্যে কম করে দু-এক জনকে আমি স্বচ্ছন্দে আমার বন্ধু বলে চিনিয়ে দিতে বা পরিচয় দিতে পারি। এমন কি’ আমার এমন একদল ছেলে বন্ধু আছে, যারা আমার এক পলকের দৃষ্টির জন্য অধীর ভাবে অপেক্ষা, হয় করে আছে, কিংবা অপেক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে । আর তা’না পেলে, অর্থাৎ আমার ‘পলক দৃষ্টির সামনে আসতে না পারলে, ক্লাসের মধ্যে রাখা আয়নার ভিতর দিয়ে দেখার চেস্টা করে আমি কার দিকে তাকিয়ে আছি! বিষয়টা ভাবতে যে বেশ ভাল লাগে, সে কথা অস্বীকার করতে পারি না। তবে এ’সব ছাড়াও আমার আত্মীয়- স্বজন, কাকা-কাকী আছেন। তাঁদের কাছে আমি খুবই প্রিয়। তাঁরা আমায় সত্যিও ভালবাসেন। আমার একটা স্নেহভরা বাড়ী আছে। এক কথায় আমার কিছুরই অভাব নেই। আমার অন্যান্য বন্ধুদের মতোই আমারও সব কিছু আছে। তাদের মতোই আমার আনন্দ, মজা, সবই আছে। কিছু কমও নয় কিছু বেশীও নয়। তবুও আমি কিছুতেই আমার পরিচিতদের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে, কোন অচেনা, বা স্বল্প পরিচিত কারুর সাথে যেচে কথা বলতে বা উপযাচক হয়ে আলাপ করতে পারি না। এটা সম্ভবতঃ আমার নিজের স্বভাবের জন্যই হয়। আমার এই অন্তর্মুখী স্বভাবের কারণেই আমি কারুর সাথে অকারণে ঘনিষ্ট হয়ে উঠতে পারি না। এটাই হল আমার মূল সমস্যা। হয়তঃ কোন কারণবশতঃ আমার মধ্যে এই ধরণের আত্মবিশ্বাসের খামতি গড়ে উঠেছে। এই খামতি আমার জন্মগত। তাই আমার মনে হয় এখন এব্যাপারে আর নতুন ভাবে কিছু করার নেই।
জন্ম ও স্বভাবগত এই খামতি মেটাতেই আমার এই ডাইরির অবতারণা। বাইরের জগতে না হোক, মনের জগতে আমার বন্ধুত্বের দৃষ্টি ও সীমানাকে প্রসারিত করার জন্যই আমার এই ডাইরি। আমি বার বার চেয়েছি আমার মনের দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে। নিজের অন্তর্মুখী প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে। এ’ভাবেই সেই প্রসারিত দৃষ্টি দিয়ে খুঁজে নিতে চেয়েছি আমার বন্ধুকে। বন্ধু ছাড়া নীরস জীবনের মাধুর্যহীনতা কখনই আমার কাম্য নয়। আমার এই ডাইরি যদি এ’রকমই বন্ধুহীন বাক্যালাপ হয়, তবে তা অন্যান্য অনেক ডাইরির মতো হয়ে ঊঠবে, একটি নীরস মাধুর্যহীন এক গদ্যকথা। তাই এই ডাইরিকে ঘিরে আমি আমার মনের দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে চেয়েছি। আমার মধ্যেকার বন্ধুত্বের মানসিকতাকে প্রসারিত করার মাধ্যম হল আমার ডাইরি। আর আমার সেই প্রসারিত দৃষ্টি দিয়ে খুঁজে নিতে চেয়েছি আমার বন্ধুকে। ডাইরি হয়ে উঠেছে আমার সেই বন্ধু, যাকে আমি ডাকব “কিটী” বলে। আমার ডাইরির পাতায় আমি চিঠি লিখব কিটীকে । আমার ডাইরির পাতায় কিটীকে চিঠি লিখতে শুরু করলে, কেউ বুঝতেই পারবে না, আমি কাকে কি বলতে চাইছি। সবার অজান্তে আমি এইভাবেই শুরু করব আমার জীবনের প্রাত্যাহিক কথা গুলো।
আমার বাবার যখন ছত্রিশ বছর বয়স তখন তিনি আমার মা-কে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় আমার মায়ের বয়স ছিল পঁচিশ। ১৯২৬ সালে আমার বড় বোন (দিদি) মারগটের জন্ম হয়। তখন আমরা ফ্রাঙ্ক ফোর্ট –অন-মেইন ( Frank fort-On-Main)-এ বাস করি। তারপর ১৯২৯ সালের জুন মাসে আমার জন্ম হয়। আমরা ছিলাম ইহুদি। জার্মানে থাকার অনুমতি আমাদের ছিল না। ১৯৩৩ সালে আমরা হল্যান্ডে দেশান্তরিত হই। সেখানে আমার বাবা ট্রাভিস এন. ডি. (Travias N.V.) কম্পানীর ম্যানেজিং ডাইরেকটর পদে যোগদান করেন। যে বাড়ীতে ট্রাভিস এন. ডি কোম্পানির অফিস ছিল। সেখানেই কোলেন এন্ড কোং- এরও অফিস ছিল। শুধু তাই নয়, এই দুই কম্পানির মধ্যে গড়ে ঊঠেছিল এক গভীর ও ঘনিষ্ট ব্যবসায়িক সম্পর্ক। আমার বাবাও ছিল কোলেন এন্ড কম্পানির একজন অংশীদার।
অ্যানি ও তার দিদি মারগট
আমাদের পরিবারের প্রায় সকলেই জার্মান শাসক হিটলারের জারী করা ইহুদি বিরোধী আইনগুলো বিষয়ে যথেষ্ট ভীত ও সন্ত্রস্ত ছিল। এ ব্যাপারে তারা সচেতনও ছিল। তাদের দৈনিক জীবনযাত্রায় এর যে স্পষ্ট প্রভাব পড়েছিল, সে কথা অস্বীকার করা যাবে না। ১৯৩৮ সালে হিটলারের নাৎসি বাহিনী শুরু করে ইহুদি সম্প্রদায়ের উপর সংগঠিত হত্যাসাধন ও লুন্ঠন। ইহুদিরাও তখন থেকে কেউ প্রাণের ভয়ে, কেউ সম্পদের ভয়ে, দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করে। এই সময়ই আমার দুই মামা জার্মান ছেড়ে আমেরিকায় পালিয়ে যায়। আমার দিদিমার (মায়ের মা) বয়স তখন প্রায় তিয়াত্তর বছর। দুই ছেলে পালিয়ে গেলে, তিনিও নিজের বাড়ি ছেড়ে আমাদের কাছে হল্যান্ডে চলে আসেন। তখনও পর্যন্ত মোটামুটি সব ঠিক ছিল। কিন্তু ১৯৪০ সালের পর থেকেই অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। অর্থাৎ ভাল সময় আমাদের ছেড়ে দ্রুত চলে যেতে শুরু করে। প্রথমে জার্মানির সাথে হল্যান্ডের যুদ্ধ, তারপর যুদ্ধে হল্যান্ডের পরাজয় এবং জার্মানির কাছে শর্তাধীন আত্মসমর্পণ। ফলতঃ হল্যান্ডে শুরু হল জার্মানির অবাধ প্রবেশ। বলা যায় এই সময় থেকেই আমাদের ইহুদিদের (বিশেষ করে হল্যান্ডে বসবাসকারী উদ্বাস্তু ইহুদি) জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। আমাদের জীবন ক্রমেই দুর্বিষহ হয়ে উঠতে শুরু করল। জার্মান ফুয়েরার একের পর এক ইহুদি বিরোধী ফরমান জারী করতে শুরু করলেন। ইহুদিদের যাতে সাধারণ নাগরিক থেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা যায়, তাই এক ফরমান জারী করা হয় যে, ইহুদিদের জামার উপরে ছ-কোনা বিশিষ্ট হলুদ রঙের স্টার বাধ্যতামূলক ভাবে লাগাতে হবে। ( এর উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় ইহুদিদের অন্যদের থেকে আলাদা করা। জার্মান শাসক কার্যত ইহুদিদের বাধ্য করেছিল হলুদ স্টার জামার ওপর এমনভাবে লাগাতে হবে, যাতে সেটা সহজেই দেখা যায় এবং তাদের ইহুদি বলে চিহ্নিত করা যায় )। এছাড়াও ইহুদিদের বাধ্য করা হয়েছিল শুধুমাত্র সাইকেলে যাতায়াত করতে। ট্রামে চড়ার ক্ষেত্রেও তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছিল। এমনকি তাদের গাড়ী চালানোর উপরও নিষেধাজ্ঞা ছিল। অর্থাৎ যাতে বোঝা যায় তারা সম্পূর্ণ আলাদা । সাধারণের সাথে মেলামেশা করার কোন অধিকার তাদের নেই। ফরমান মোতাবেক ইহুদিরা শুধু বেলা তিনটে থেকে পাঁচটার মধ্যে বাজার যেতে পারত। সেই সময়ের মধ্যে তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিষ কিনে নিতে হত। তারপর আর বাজার যাওয়ার অধিকার তাদের ছিল না। এর ওপর আবার, বাজারে তারা একমাত্র সেই সব দোকান থেকেই জিনিষ কিনতে পারত, যে সব দোকানের প্ল্যাকার্ডে “ইহুদির দোকান” বলে লেখা থাকত। জারী করা ফরমান অনুসারে, সন্ধ্যে আটটার মধ্যে তাদের নিজের নিজের বাড়ীতে ঢুকে পড়া বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি সন্ধ্যে আটটার পর তাদের নিজেদের বাগানে আলো জ্বেলে বসার অনুমতিও ছিল না। অবসর যাপনের কোন অবকাশ ইহুদিদের জন্য কিছুই ছিল না। সিনেমা, থিয়েটার বা অন্য যে কোন আনন্দ অনুষ্ঠানে যাওয়ার ক্ষেত্রেও ইহুদিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা ছিল। সামাজিক ভাবে অনুষ্ঠিত কোন অনুষ্ঠান বা খেলাধূলা সাঁতার, সরোবরে স্নান, টেনিস খেলা, হকি মাঠে হকি খেলা বা অনান্য যে কোন খেলাধূলায় ইহুদিদের অংশ গ্রহণ করতে দেওয়া হত না। এমনকি ইহুদিরা খীষ্টানদের সাথে দেখা করার অনুমতিও পেত না। ইহুদিদের ছেলেমেয়েরা কেবলমাত্র ইহুদি স্কুলেই পড়ার অনুমতি পেত। অন্য কোন স্কুলে যাওয়ার বা প্রবেশ করারই অনুমতি দেওয়া হত না। এরকম বহু ধরণের নিষেধাজ্ঞা ও ফরমান ইহুদিদের ওপর জারী করা হয়েছিল।
এককথায়, আমি যা বুঝি, ইহুদি হওয়ার কারণে ঔ সব কাজ গুলো আমি করতে পারতাম না। কারণ ইহুদি হওয়ার জন্য আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা ও ফরমান জারী করে, বাধ্য করা হয়েছিল ঔ-সব কাজগুলো না করতে, এবং শাসকের আদেশ মেনে চলতে। আমরা মেনে চলতাম। কিন্তু তা’ সত্ত্বেও জীবন ত’ আর থেমে থাকে না। এসব কিছু নিয়েই জীবন তার নিজের গতিতে এগিয়ে চলে। আমাদের জীবনও চলছিল তার নিজের গতিতে। আমার বন্ধু জোপী (Jopie) যেমন প্রায়ই কিছুটা “অজ্ঞ ঠাট্টার সুরে বলত” আমায়, “আসলে তোমরা কিছু করতেই ভয় পাও। কে জানে, হয়তঃ বা সেটা ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী আছে, এইজন্যই ভয়টা পাও।“ কিন্তু ও কি’ উপলব্ধি করত, আমাদের স্বাধীনতা ক্রমেই শাসকের ইচ্ছায় নিষেধাজ্ঞার জোরে আর ফরমানের দৌলতে সীমিত হয়ে গিয়েছিল। আর সেই সবকিছুকেই আমাদের বিনা প্রতিবাদে সহণীয় করে নিতে হয়েছিল। এবং সেটাই ছিল জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র উপায়।
১৯৪২ সালে, আমরা যখন হল্যান্ডে , তখন আমার দিদিমা (আমার মায়ের মা) মারা গেলেন। আমি আমার দিদিমাকে খুব ভালবাসতাম। কেউ জানে না আমার দিদিমার স্মৃতি আমার মধ্যে এখনও জীবন্ত। এখনও আমি তাঁকে ভালবাসি।
১৯৩৩ সালে হল্যান্ডে উদ্বাস্তু হয়ে আসার পর, ১৯৩৪ সালে আমি এখানে মন্টেসরী কিন্ডারগার্ডেনে ভর্তি হয়েছিলাম। এবং সেখানেই আমার পড়াশুনা শুরু হয়। বেশ ভাল ভাবেই তা’ চলছিল। ক্রমে আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠলাম। আর তখনই আমার মন্টেসরীতে পড়ার সময়কালও শেষ হল। তখন সময়টা ১৯৪১ সাল। আমার প্রিয় শিক্ষিকা ছিলেন শ্রী মতি কে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠার পর, শ্রীমতী কে –কে বিদায় জানাতে হল। মনে আছে সেদিন যখন বিদায় জানাচ্ছিলাম তখন দুজনেরই চোখ ভিজে গিয়েছিল। কেউই নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি। দুজনেই মনে মনে বেশ কষ্ট পেয়েছিলাম। ১৯৪১ সালে আমি আমার দিদি মারগটের সঙ্গে ইহুদি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। আমার দিদি মারগট তখন উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ স্তরে পড়ত। আর আমি ভর্তি হলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম স্তরে।
এতদিন আমাদের চারজনের জগত স্বাভাবিক এবং বেশ ভালভাবেই কাটছিল। বাইরের নিষেধাজ্ঞা আমাদের ভিতরের জীবনকে খুব একটা প্রভাবিত করতে পারে নি। আর এভাবে চলতে চলতেই আমরা বর্তমান সময়ে চলে এলাম।
টীকা -
জোপী - অ্যানির বন্ধু
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteধারাবাহিক লেখা পরার উপরি পাওনা হল নতুন এর সাথে আগের গুলো পরার সুযোগ ।খুব ভাল লাগল এটাও আর ছবি গুলো লেখাটাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলছে।
ReplyDeleteExcellent work. A young girl forced to hide and writing a diary she calls her only and real friend. As a NRI living in Germany and Bergen-Belsen, which is not far away from where I live, and where Anne Frank died, Anne Frank's diary always reminds us to be responsible that such heinous crime by the German Nazi regime shall never happen again. Shame on those who call Hitler a great leader.
ReplyDelete