0

বিশেষ রচনা - শৌনক দত্ত

Posted in


বিশেষ রচনা




উনিশ মে'র রোদ্দুবেলায় 
শৌনক দত্ত 



সুস্মি তখনো আছে। গোঁ ধরেছে শিলচর যাবে। অগত্য স্ত্রীর কন্নায় কর্ম। শিলচর কেন বিখ্যাত, কেন যাবে, আমি অত্তসব জানিনা। সুস্মিকে প্রশ্ন করতেই বলে, 

-গ্লাসে ডুবে মরো! 

কি বলবো না ভেবেই বললাম, 

-যা বাবা মরতে যাবো কেন? 

আগের চেয়েও রাগান্বিত কন্ঠে সুস্মি বললো, 

-তুমি কি বাঙালী? 

চোখ ছানাবড়া হলো আমার। তখন কি জানতাম, উনিশে মে শিলচরে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে এগারোজন। আমার কাছে ভাষা আন্দোলন বলতেই বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারী। স্মুমি খুব রেগে গেছিলো। সেই রাগ ভাঙাতে ল্যাপিতে বসলাম। পড়ালেখা করলাম। আর তখন জানতে পারলাম, উনিশে মে’র আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া ভাষা দিবসের কথা। বেশ কয়েকদিন অনেক কিছু রপ্ত করলাম। তারপর আমাদের শিলচর ভ্রমণ। 


শিলচর ঐতিহাসিক ষ্টেশনচত্বর ঘুরে যখন লজে ফিরেছি তখন আমার এই কয়েকদিনের জ্ঞান ফলাবার সাধকে আটকে রাখতে পারলাম না। তাছাড়া সুস্মির সেইদিনের রাগের মোক্ষম জবাব দিতে বললাম, 
-ভাষা শহিদ দিবসের ইতিহাস আমি জানতাম না ভাবছো, আমি গোটা ইতিহাসটা জানি। 

সুস্মির উত্তরের আশা না করেই আপনমনেই বলতে শুরু করেছি।

-বাঙালীর প্রাণের ভাষা বাংলা। মাতৃভাষার অধিকারের জন্য বাঙালী প্রাণকে তুচ্ছজ্ঞান করেছে। মাতৃভাষার জন্য কোন জাতির এতখানি দরদ থাকতে পারে, তা বাঙালীরা প্রাণের বিনিময়ে প্রমাণ করেছে। বাহান্নর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রাণ দিয়েছেন সালাম, রফিক, সফিয়ুর, বরকত ও জব্বার। বাহান্নর চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে ১৯৬১ সালের মে মাসে বাংলা ভাষার ব্যবহার বন্ধ করার প্রতিবাদে ভারতের রাজ্য আসামের শিলচর শহরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন এগারো জন ভাষাশহীদ। দুঃখের বিষয় ইতিহাস তাঁদের তেমন মনে রাখেনি। আসাম রাজ্যের প্রধান ভাষা অহমীয়া হলেও বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ,কাছাড় এবং শিলচর হলো বাঙালীদের ঘাঁটি। দেশবিভাগের একবছর পর ১৯৪৮ সালে রেফারেন্ডামের মাধ্যমে সুরমা ভ্যালী (বর্তমান সিলেট বিভাগ) পূর্বপাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয় । কিন্তু বৃহত্তর সিলেটের তিন চতুর্থাংশ নিয়ে বরাক ভ্যালী থেকে যায় আসামে । ১৯৬১ সালে আসাম প্রাদেশিক সরকার শুধু অহমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারী ভাষা ঘোষণা করলে ক্ষোভ দানা বাঁধে বাঙালীদের ভেতর । ক্রমশঃ তা রূপ নেয় আন্দোলনের। প্রথমে সত্যাগ্রহ, পরে সহিংস । ১৯৬১ সালের ১৯ মে । আন্দোলনের চুড়ান্ত পর্বে এদিন শিলচরে সকাল ৬টা-সন্ধ্যা ৬টা ধর্মঘট পালন করে। বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে ভাষাবিপ্লবীরা যখন স্থানীয় রেলওয়ে ষ্টেশনে রেলপথ অবরোধ পালন করছিল, তখন নিরাপত্তারক্ষায় নিয়োজিত আসাম রাইফেলসের একটি ব্যাটালিয়ান তাদের বাধা দেয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আসাম রাইফেলস গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থনে প্রাণ হারান ১১ জন ভাষাবিপ্লবী। আহত হন অর্ধশতাধিক। রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হয়। এরপর আসামে বাংলাকে ২য় রাজ্যভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সেদিন মাতৃভাষার জন্য যে ১১ জন বীর শহীদ আত্মবলি দেন, তাদের মধ্যে ছিলেন পৃথিবীর প্রথম নারী ভাষাশহীদ, সতের বছরের তরুণী, কমলা ভট্টাচার্য। পৃথিবীর ইতিহাসে মাত্র দুজন নারী মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন- একজন শহীদ কমলা ভট্টাচার্য, দ্বিতীয় জন শহীদ সুদেষ্ণা সিংহ, যিনি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার স্বীকৃতির আন্দোলনে শহীদ হন।

সুস্মি হেসে ফেটে পড়ে। 

-ভাল, খুব ভাল! নেট ঘেঁটে তো ভালই বললে। এবার তবে একটি বই করে ফেলো। 
বিদ্রুপটা ঠিক গায়ে লাগলো। 

-তুমি কি বলতে চাইছো এটা ঘটনা নয়? পৃথিবীর প্রথম নারী ভাষাশহীদ কমলা ভট্টাচার্য নয়? 

-আমি তা তো বলছি না! তবে তুমি কি বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ভাষা আন্দোলনের কথা জানো? জানো কি আদিবাসী ভাষাশহীদ সুদেষ্ণা সিংহের কথা? 

পড়ুয়া আর জানুয়াদের সাথে এই এক সমস্যা তাদের সাথে কিছুতেই কিছু করে পেরে ওঠা যায় না। মনে মনে ভাবা কথাটা বলে ফেলতেই সুস্মি হেসে উঠলো। হাসির দমক থামিয়ে বললো, 

-শুনবে সেই ইতিহাস? 

বাইরে তখন গোধূলির আলো। পর্দার ফাঁকে মিঠে রোদ্দুর গলে পড়ছে সুস্মির মুখে। আমার আগ্রহ যে বেড়েছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে সুস্মি। ঠক ঠক দরজার আওয়াজে কথা থেমে গেলো। কফি অর্ডার করা ছিলো। কেয়ারটেকার কফি মগ নিয়ে ঢুকলো। কফি মগে চুমুক দিয়ে সুস্মি বলতে শুরু করলো,

-বরাক-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় শুরু হয়েছিল মাতৃভাষার দাবী … ভারতের উত্তর পূবাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের দুটি প্রধান উপত্যকা- একটি ব্রহ্মপুত্র, অপরটি বরাক। পার্বত্য কাছাড়, কাছাড়, হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ এই চারটি জেলা নিয়েই আসামের বরাক উপত্যকা। আর এই বরাক উপত্যকার নীচেই বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকা। উভয় উপত্যকার এক নির্ভীক প্রান্তিক জাতি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী। ভারতে আসাম রাজ্যের কাছাড়, পাথারকান্দি, হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ , ত্রিপুরা রাজ্য এবং মণিপুরে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের সংখ্যাধিক্য। বাংলাদেশে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জেই বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের অধিক বসতি দেখা যায়, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ছাড়াও দেশের অনেক জায়গাতেই নানান প্রয়োজনে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী জনগণ নিজেদের ঐতিহাসিক আবাস গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী এবং মৈতৈ মণিপুরী (মৈতৈদের ভেতর যারা ইসলাম ধর্ম পালন করেন তাদেরকে পাঙন/পাঙান বলা হচ্ছে) এই দুই ভিন্ন জাতিকে বরাবর রাষ্ট্রীয় নথিপত্র ও দলিল দস্তাবেজে ‘মণিপুরী’ হিসেবে দেখানো হয়। ভারতের মণিপুরসহ উভয় উপত্যকায় বরাবর একটি আন্তঃজাতিগত দ্বন্দ্ব আছে - কে মণিপুরী আর কে মণিপুরী নয় - তা নিয়ে। উভয় রাষ্ট্রের উভয় উপত্যকার রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম বরাবর এই আন্তঃজাতিগত দ্বন্দ্ব থেকে নানান ফায়সালা নিতে চায়। আর তা হচ্ছে কৌশলে ভাষিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভাষা ও জাতিগত অস্তিত্বকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমমর্যাদা না দেয়া। ভারতের মণিপুর অঞ্চলেই বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী জাতিদের ঠার বা ভাষার উদ্ভব। স্যার জর্জ গ্রিয়ারসন ‘লিংগুস্টিক সার্ভে অব ইণ্ডিয়া’ পুস্তকের ৫নং খণ্ডে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ‘বিষ্ণুপুরীয়া মণিপুরী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভারতের সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল ভাষিক সংখ্যালঘু জাতির সদস্যরা প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা লাভের জন্য নিজের মাতৃভাষায় পড়ালেখা করার মৌলিক অধিকার রাখে। রাষ্ট্রে প্রান্তিক জাতিদের কোনও জনমিতি, পরিসংখ্যান, তথ্য উপাত্ত জনগণের দলিল হিসেবে রাখা হয় না। যাও থাকে তার প্রায় পুরোটাই লোকদেখানো ও বানোয়াট। বাংলাদেশে যেমন ১৯৯১ কি ২০০১ সালের সকল আদমশুমারীতেই দেশের বাঙালি বাদে অপরাপর জাতিদের জনসংখ্যা বাড়ে কমেনি, সেরকম ভারতেও। ১৯৬১ সনের ভারতীয় জনপরিসংখ্যানে আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জের পাথারকান্দিতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের জনসংখ্যা মাত্র একজন নারী দেখানো হয়, অথচ সেখানে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের জনসংখ্যা ছিল ২২,০০০ এরও বেশী। অথচ ঐ একই জায়গার জনসংখ্যা ১৯৭১ সালে দেখানো হয়েছে ১০,১৬৪ জন। রাষ্ট্রের এই জনপরিসংখ্যানিক দলিল থেকে আমরা ধারণা করতে পারি প্রান্তিক জাতি বিষয়ে রাষ্ট্র কি ধরনের মনোযোগ ও উদ্যোগ বহাল রাখে। আর তা বরাক কিংবা সুরমা উপত্যকা যাই হোক না কেন। বরাক উপত্যকার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ভাষা আন্দোলন আমাদেরকে ভাষার লড়াই, জাতিগত অস্তিত্বের সংকট এবং রাষ্ট্রের আইনগত সিদ্ধান্তগ্রহণে কার্যকরী উৎসাহ ও ইশারা দিতে পারে। বরাক উপত্যকার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপঞ্জী (১৯৫৫-১৯৯৬) অনুযায়ী ১৯৫৫ সন থেকেই বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা মাতৃভাষার অধিকারের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেন। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলন(১৯৫৫-১৯৯৬) শুরু হয় ‘নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী মহাসভা’র ১৯৫৫ সালের দাবীর ভেতর দিয়েই, যেখানে তাদের দাবী ছিল আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বিষ্ণুপ্রিয়া শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদান। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং ভাষার অধিকারের দাবীতে ভাষা পরিষদের উদ্যোগে গড়ে উঠে ‘সত্যাগ্রহ আন্দোলন’। সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সাতটি দাবীর ভেতর ছিল : আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার স্বীকৃতি, আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে রাষ্ট্রীয় বেতার কার্যক্রমে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রচার, নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্য পরিষদকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, কেন্দ্র ও রাজ্য সভাতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের আসন সংরক্ষণ, সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের কোটা সংরক্ষণ, ভাষিক সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ১৯৬১ সালের আদমশুমারীর সংশোধন। সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালের ২ জুলাই ভাষা পরিষদ ভাষা দাবী দিবস পালন করে। ১৯৬১ সনের ২৫ জুলাই আসাম রাজ্যের শিক্ষা বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ১৯৬৩ সনের ২২ মার্চ শ্রী ডি এন বাজপেয়ি নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্য পরিষদের সাথে দেখা করেন। ভাষা পরিষদ ১৯৬৪ সালের ৭ জুলাই আসামের মূখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি মেমোরান্ডাম পেশ করেন। ১৯৬৪ সালেরই ২৮ জুলাই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক বিভাগের কাছে পাঠানো হয়। ১৯৬৫ সালের ২ থেকে ৮ জুলাই ভাষা দাবী সপ্তাহ পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা পরিষদ স্টেট বোর্ড অব ইলিমেন্টারি এড্যুকেশন এর সেক্রেটারি শ্রী কে কে শর্মার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে আসামে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে দ্রুত বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা চালুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। ১৯৬৭ সালের ২ জুলাই দাবী সপ্তাহ ১২ দিন দীর্ঘায়িত করা হয় এবং কাছাড় জেলার সর্বত্র পাবলিক সভা সমাবেশ করা হয়, এইসব সভায় আদমশুমারী জালিয়াতির বিরুদ্ধে জোরদার বক্তব্য রাখা হয়। ১৯৬৭ সালের নভেম্বরে ভাষা পরিষদ নিজেরাই নিজস্ব উদ্যোগে জনপরিসংখ্যান উত্থাপন করেন এবং কাছাড়ে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের জনসংখ্যা দেখান ৬৬,৬২৩ জন। ১৯৬৮ সালের মে মাস থেকেই স্কুল, কলেজসহ রাস্তা ঘাটে পিকেটিং, ধর্মঘট, গণশ্লোগানের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৮ সালের জুলাই মাসেই পাবলিক সভাগুলো আরো ব্যাপক বিস্তৃত হয় এবং ১৯৬১ সনের ঔপনিবেশিক আদমশুমারী প্রতিবেদন পোড়ানো হয়। ১৯৬৮ সনেরই ২৫ জুলাই আসামের শিক্ষামন্ত্রী জে বি হেগজার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের দাবীর প্রেক্ষিতে ভারত সরকারের ভাবনা তুলে ধরেন। একই সনের ৩০ আগস্ট কাছাড়ের জনগণ আবারও আসামের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবী দাওয়া সংবলিত মেমোরান্ডাম পেশ করেন। ১৯৬৯ সালের ১৫ অক্টোবর কাছাড়ের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী শিক্ষার্থী ও যুবসমাজ রক্ত দিয়ে রক্তস্বার কর্মসূচি পালন করে। এর পর পরই ভাষা আন্দোলন আরো চূড়ান্ত গণ রূপ নেয় এবং ব্যাপক ধর্মঘট, ধরপাকড়, বন্ধ কর্মসূচি চলতে থাকে। ১৯৬৯ সালের ২২ অক্টোবর কাতিগড়া বন্ধ কর্মসূচি থেকে ৭ জন ভাষাবিদ্রোহীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৯ সনে পূর্ব পাকিস্থানে একদিকে যেমন চলতে থাকে গণঅভ্যুত্থান একই দিকে বরাক উপত্যকায় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ভাষা আন্দোলন বন্ধ-ধর্মঘট- ঘেরাও-গ্রেফতারের ভেতর দিয়ে জনরূপ নেয়। নরসিংহপুর, রাতাবাড়ি, শালচাপড়া বন্ধ (৫-২৯ অক্টোবর, ১৯৬৯)। জাপিরবন্দ বন্ধ(৩০ অক্টোবর ১৯৬৯) থেকে ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়, এই প্রথম কোন নারী ভাষাবিপ্লবীও গ্রেফতার হন। মেহেরপুর বন্ধ (৩১ অক্টোবর ১৯৬৯) থেকে ৫ জন নারী আন্দোলনকারীসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পয়লা নভেম্বর, ১৯৬৯ সালের পিকেটিং থেকে ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়, ৩ নভেম্বর ১৯৬৯ গ্রেফতার হন ৩৮৫ জন, ১-৫ নভেম্বরের ভেতর তিন জেলার ডিসি অফিসে পিকেটিং করে চেয়ার দখল করে নেয়া হয়, ৪-৫ নভেম্বর ১৯৬৯ গ্রেফতার করা হন ১১১ জনকে। রাষ্ট্রের ধরপাকড় ও নির্যাতনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে ১১-১৩ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে শিলচর শহরে বিশাল গণসমাবেশের আয়োজন হয়। শিলচর, নরসিংহপুর, হাইলাকান্দি ও পাথারকান্দিতে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ফেলেন ভাষাবিপ্লবীরা, এই ঘটনায় সরকার ২৩৮ জনকে গ্রেফতার করে। ১৭ নভেম্বর ১৯৬৯ শিলচর বন্ধ থেকে ৩০০ জন সত্যাগ্রহীকে গ্রেফতার করা হয়। হাইলাকান্দির ও এস এ মাঠে বিশাল সমাবেশ ডাকা হয় একই সনের ২১ নভেম্বর, হাইলাকান্দি বন্ধ থেকে সবচে’ ব্যাপক ধরপাকড়টি হয় প্রায় ১৫০০ জন ভাষাবিদ্রোহীকে সরকার অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে। ১৯৬৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ‘ডিসি অব লিংগুস্টিক মাইনরিটিস ইন ইন্ডিয়া’ শিলচর আসেন এবং মহাসভার সাথে বৈঠক করেন।

কফি অনেকক্ষণ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। সুস্মি চুপচাপ কফিমগটা নাড়ছে আমার আগ্রহ আরো চরমে - তারপর কি হলো বৈঠকের শেষে? 


চলবে...

0 comments: